মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় নয়া ফ্যাসিবাদের বিজয়

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৬ 0 Comments A+ a-

(এই প্রবন্ধটা লিখেছিলাম ট্রাম্পের ভোটে জেতার পরেই কিন্তু মোদীর নোট বাতিলের ঘোষণার পরে এই লেখাটা প্রকাশ করতে পারিনি অন্যান্য লেখার চাপে। - লেখক ৬ই ডিসেম্বর ২০১৬)

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ?

কুসুমকুমারী দাসের এই পংক্তিগুলো আজ মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয় দেখে আবার মনে পড়ে গেল। আট বছর আগে এই রকমই এক নভেম্বরে, সারা মার্কিন দেশ জুড়ে এক উল্লাসের জোয়ার উঠেছিল। মিথ্যাবাদী, পরদেশ দখলকারী, যুদ্ধবাজ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চূড়ামণি ওয়াল স্ট্রিটের কর্পোরেশনগুলোর দালাল জর্জ বুশের পতন আর এক কৃষাঙ্গ স্পষ্ট বক্তা ও স্বপ্নের ফেরিওয়ালা বারাক ওবামার মার্কিন দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার উপলক্ষে সেদিন ছিল বিজয় উল্লাস। কৃষাঙ্গরা, অভিবাসী জনগণ, মেক্সিকো থেকে টানেল খুঁড়ে পেটের ক্ষিদে নিবারণ করতে আসা গরিব মেক্সিকানরা, মুসলমান সম্প্রদায় - এরা সবাই ভেবেছিল এবার এদের উপর জাতিগত, বর্ণগত, এবং আর্থিক শোষণের অবশেষ হবে, পুলিশি সন্ত্রাস নিকেশ হবে, এবং মার্কিন দেশ এক সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও ইনক্লুসিভ দেশ হয়ে উঠবে। বিগত আট বছর ধরে মার্কিন জনগণ দেখেছেন, খেটে খাওয়া মানুষ দেখেছেন, কৃষাঙ্গ-মেক্সিকান-মুসলমান সবাই দেখেছেন, কি ভাবে ধীরে ধীরে ওবামা তার কৃষাঙ্গ - গরিব দরদী - উদারতার খোলস থেকে বেরিয়ে এসে আর এক যুদ্ধ বাজ, কৃষাঙ্গ হত্যাকারী, কর্পোরেট দালাল হিসেবে নিজেকে প্রতিপন্ন করে নিজের ভোট ব্যাঙ্ক সেই অসংখ্য গরিব মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কি ভাবে ইরাক থেকে সেনা সরানোর কথা ঘোষণা করে সেই ইরাকে আবার ইসলামিক স্টেট্ বা দায়েশ নামক ইসলামী সন্ত্রাসী বাহিনী কে ডলার আর অস্ত্র সরবাহ করে গড়ে তুলেছে মধ্য প্রাচ্যে মার্কিন সামরিক আধিপত্য কায়েম রাখতে, কি ভাবে সিরিয়ার সরকার কে উচ্ছেদ করতে ইসলামিক স্টেট্ ও আল কায়েদা ঘনিষ্ঠ সংগঠনগুলোকে স্বাধীনতা সংগ্রামী সাজিয়ে পাঁচ বছর ধরে ধীরে ধীরে সিরিয়াকে ধ্বংস করেছে, প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়েছে ও লক্ষ লক্ষ মানুষ কে উদ্বাস্তু করে ছেড়েছে সারা বিশ্বে।

সেই ওবামার সাথী আর মার্কিন শাসক শ্রেণীর খাস সমর্থক পরিবারের বধূ - হিলারি ক্লিন্টন তাই যখন নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বললো যে সে নাকি কর্পোরেট ও বড় বড় ব্যাঙ্কের সাথে লড়াই করে মার্কিন সাধারণ জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে তখন ফিক ফিক করে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছিলেন মানুষ। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থে ডেমোক্র্যাটদের বড় বড় বুলি, বার্নি স্যান্ডার্স এর সমাজতন্ত্রী ভাষণবাজি কিন্তু একটা বড় প্রশ্ন তুলেছিল - তোমরা যদি এতই খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষপাতিত্ব করার দল তা হলে তোমাদের শাসনকালেই কেন পিষে মরতে হলো আমাদের ? নিজেদের ফাঁপা ও দেউলিয়া রাজনীতি দিয়ে ডেমোক্র্যাট দল জনগণ কে আর বোকা বানাতে পারেনি, আর সেই সুযোগটা নিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। সরাসরি ফ্যাসিবাদী রাজনীতি কে মার্কিন দেশের রাজনীতির শীর্ষে এত নগ্ন ভাবে বোধহয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কেউই আনতে পারেনি। ফ্যাসিবাদ চিরকালই শ্রমজীবি মানুষের মধ্যে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভ কে কাজে লাগায় জাতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করে ক্ষমতার আলিন্দে প্রবেশ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গো-হারা হেরে যখন বিষাদ ও বিক্ষোভ জার্মানির পথে পথে বিরাজ করছিল আর সামগ্রিক ভাবে বলশেভিক বিপ্লবের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল ঠিক তখনই জার্মান জনগণের, জার্মান শ্রমিকদের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অংশের ক্ষোভ কে ধনী পুঁজিপতিদের থেকে সরিয়ে ইহুদিদের আর বামপন্থীদের দিকে নিক্ষেপ করাই ছিল হিটলারের ক্ষমতায় আসার চাবি কাঠি। এই ঘৃণার বাতাস পুঁজিপতিদের ঘাড়ের উপর ঝুলন্ত বলশেভিক বিপ্লবের খাঁড়াটা দূর করে দিয়েছিল আর হিটলার কে এনে দিয়েছিল জার্মান একচেটিয়া পুঁজির সার্বিক সমর্থন। আজ ডোনাল্ড ট্রাম্পও একশত বছর পরে সেই একই ধরণের পন্থা অবলম্বন করে নিজের ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করছে মার্কিন দেশে আর এই কাজে তার সবচেয়ে বড় সমর্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেমোক্র্যাটদের আর তথাকথিত মার্কিন উদারতাবাদীদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা আর কর্পোরেট-ব্যাঙ্ক  রাজত্বের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত সাধারণ শ্রমজীবি মার্কিন জনগণের ক্ষোভ, যার প্রতিফলন হয় ট্রাম্পের পক্ষে জনাদেশে। ঠিক যে ভাবে সাম্রাজ্যবাদের পীঠস্থান ব্রিটেনের শ্রমজীবি মানুষ দলে দলে ভোট দিয়েছিলেন ব্রেক্সিট এর পক্ষে আর দেখিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে লেবার পার্টির দেউলিয়াপনার বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, যে ক্ষোভের জন্ম হয়েছিল লেবারের সংস্কারপন্থী শ্রমিক আন্দোলনের নির্লজ্জ ভাবে বৃহৎ পুঁজির দালালি করা দেখে, টোরি সরকারের বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে রাষ্ট্রীয় কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো বন্ধ করার ফলে, আর এই ক্ষোভ কে ব্রিটেনের ফ্যাসিবাদীরা উগ্র জাতীয়তাবাদের কবলে এনে উস্কে দিয়েছে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ক্রোধে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নাগরিকদের, শ্বেতাঙ্গ মানুষদের, উচ্চবিত্ত আর শ্রমজীবি মানুষের পশ্চাৎপদ অংশের সমর্থন জিতেছে এই বলে যে ও সেই ছেলে যে কাজে বড় করে দেখাবে, ন্যাকার কান্না কাঁদবে না বরং মানুষের ভাষায় মানুষের কথা বলবে। ঠিক যে ভাবে একদিন হিটলারের মতন, মুসোলিনির মতন ফ্যাসিবাদীরা সমাজতান্ত্রিক বুলি ছুটিয়ে, সামাজিক ন্যায় ও জাতি গঠনের, জাতিকে শ্রেষ্ঠ করে তোলার দাবি করে নির্বাচনে জিতে এসেছিল ঠিক তেমনি করেই ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতে এসেছে। সেই শ্বেতাঙ্গদের, সেই উচ্চবিত্ত আর ধনিক শ্রেণীর সমর্থন পেয়ে যারা বহুদিন ধরে আর কৃষ্ণাঙ্গ, মেক্সিকান, আরব বা এশিয়ানদের আর নিজেদের দেশে সহ্য করতে পারছে না। “নোংরা জাতির” লোকগুলোকে নিজেদের সাথে এক বাসে-ট্রেনে চাপতে দেখলে যাদের গা ঘিনঘিন করে, যারা মনে করে এই অভিবাসী ও কৃষ্ণাঙ্গদের জন্যেই মার্কিন দেশ পিছিয়ে পড়েছে, বেকারি বেড়েছে, যারা মনে করে বিশ্বের সকল সমস্যার মূল হলো ইসলাম ধর্ম আর এই ধর্ম আর এই ধর্মে বিশ্বাসীদের শেষ করে ফেললেই পৃথিবী একেবারে স্বর্গের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে, ঠিক তাদেরই মনের কথা তাদের ভাষায় বলে আর তাদের ভুল ও বিকৃত চেতনা কে সঠিক আখ্যা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছে ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ব্যক্তি, কিন্তু তাকে ভোট দেওয়া মার্কিন ভোটার সমাজের ২৫ শতাংশ মানুষ কিন্তু তার নীতির প্রতি নিজেদের সমর্থন কে ব্যক্ত করেছে। তারা বুঝিয়েছে যে শত নিন্দা সত্বেও তারা কিন্তু ট্রাম্পের সাথে দাঁড়াতে চায় কারণ ট্রাম্প তাদের আর্থিক উন্নয়নের কথা বলে, তাদের চাকরির কথা বলে, তাদের বর্ণের হৃত গৌরব কে পুনরায় স্থাপন করার কথা বলে, ওই এশিয়ান আর মেক্সিকানদের দেশ থেকে তাড়িয়ে, মুসলমানদের তাড়িয়ে, আমেরিকার সম্পদে সাদা মানুষের অধিকারের কথা বলে। তাই শ্বেতাঙ্গ উচ্চবিত্ত ও পশ্চাৎপদ মার্কিন শ্রমজীবি মানুষের কাছে, “বাবু শ্রমিক” শ্রেণীর কাছে আজ ট্রাম্প সেই বড় কাজ করা খোকার নব নির্মিত রূপ, মসীহ, রক্ষাকর্তা। দু-চারটে মেয়ের শ্লীলতাহানিতে এই রক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গ উচ্চবিত্তদের খারাপ লাগার কোন কারণ নেই, কারণ সেই শ্লীলতাহানির মধ্যেই পুরুষতন্ত্রের বিজয় দেখে শ্বেতাঙ্গ স্ট্রেট পুরুষেরা। শ্বেতাঙ্গ শ্রমজীবি জনগণ ওয়াল স্ট্রিটের প্রিয় পাত্রী হিলারি ক্লিন্টন কে ধিক্কার জানিয়ে বুঝিয়ে দিলেন যে ট্রাম্প কে দেওয়া তাঁদের ভোট আসলে হিলারির নকল গরিব প্রেমের বিরুদ্ধে একটা বিরাশি সিক্কার থাপ্পড়।    

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভোটে জিতে আসা এক আলাদা ধরণের আবহাওয়ার সৃষ্টি করেছে দুনিয়া জুড়ে। বহুবছর বাদে মার্কিন নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী কে নিয়ে নাচানাচি করছে না কর্পোরেট মিডিয়া গোষ্ঠীগুলি, যার মানে দাঁড়াচ্ছে যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় হয়তো অনেকগুলো কর্পোরেট সংস্থার পক্ষে শুভ নয়। বিশ্বায়ন আর নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির দুনিয়ায় মার্কিন কর্পোরেট জগৎ গোটা বিশ্বের অর্থনীতির উপর তার মালিকানা কায়েম করেছে আর তার ফলে সমস্ত দেশের কর্পোরেট মিডিয়াগুলোই তেড়ে ফুঁড়ে ট্রাম্পের বিরোধিতা করেছিল সমগ্র নির্বাচন প্রচার পর্ব জুড়ে। বেশির ভাগ কর্পোরেট মিডিয়া আমাদের কে দেখিয়েছিল যে ট্রাম্প আসলে একটা বর্ণ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে পরিপূর্ণ একজন ফ্যাসিস্ট এবং একজন মুনাফাখোর পুঁজিপতি। আমার মনে হয় এই ব্যাখ্যার সাথে কেউ দ্বিমত হবেন না আর যে কোন সুস্থ চেতনার মানুষ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষই মানবেন যে ট্রাম্প আসলে একটা ফ্যাসিস্ট এবং ওর শাসনে বিশ্বের পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হবে। কিন্তু তার মানে কি এই যে হিলারি ক্লিন্টন যদি রাষ্ট্রপতি হতেন তাহলে বিশ্বের পরিস্থিতি বদলে যেত, শান্তি, ঐক্য, আর সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আমেরিকা সহ সমগ্র বিশ্ব জুড়ে যেত, সমগ্র দুনিয়ায় কেউ মার্কিন বোমা আর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারাতেন না আর বৃহৎ একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির মালিকানাধীন সংস্থাগুলো, ওয়াল স্ট্রিটের কুমিরেরা শ্রমজীবি মানুষের টাকা থুড়ি ডলার আর চুরি করতো না? সমগ্র নির্বাচন প্রচার কালে হিলারি ক্লিন্টন নিজেকে শ্রমজীবি মার্কিন নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষাকারী হিসেবে দেখাতে চেয়েছিল আর ট্রাম্প কে একজন অসহিংসু পুঁজিপতি যুদ্ধবাজ হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল। অথচ ট্রাম্প হিলারি ক্লিন্টনের চেয়ে বেশি করে ওয়াল স্ট্রিট আর বৃহৎ ব্যাঙ্কের রোষানলের শিকার হয়েছিল। এই অদ্ভুত পরিস্থিতির যদি বস্তুগত মূল্যায়ন করি তাহলে দেখা যাবে যে ট্রাম্প আসলে মার্কিন শাসক শ্রেণীর চরম প্রতিক্রিয়াশীল অংশের প্রতিনিধি, যারা মুখোশ খুলে নিজেদের ভয়াবহ চেহারা প্রকাশ্যে দেখিয়ে পশ্চাৎপদ জনতার অবচেতনার সুযোগ নিয়ে ব্যাপক লুট ও শোষণের রাজত্ব বহাল করতে চায়, আর অন্যদিকে হিলারি ক্লিন্টন বর্তমানে শক্তিশালী সেই শাসক শ্রেণীর প্রতিনিধি যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে সমান পরিমানের লুট ও শোষণের রাজত্ব কায়েম রাখতে চায়।  শোষণ ও লুন্ঠনের পরিমাণে দুই প্রতিদ্বন্ধির মধ্যে ফারাক না থাকলেও কি ভাবে লুট ও শোষণ করা হবে তাই নিয়ে ছিল বিস্তর মতভেদ। আর তাই মার্কিন কর্পোরেট দুনিয়ার মধ্যেও ধরেছিল ফাটল এবং শেষ পর্যন্ত দেখা গেল সবচেয়ে নগ্ন ভাবে শোষণ ও লুণ্ঠনে বিশ্বাসী শক্তিই নির্বাচনের বৈতরণী পার করলো।

যে কোন রাজনৈতিক নেতার মতনই ট্রাম্পও নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছুড়ে ফেলে দেবে আস্তাকুঁড়েতে যদিও মুসলমান ও অন্যান্য অভিবাসীদের বিরুদ্ধে এবং কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নতুন করে রাষ্ট্রীয় উস্কানিতে বিদ্বেষ আর হিংসার জোয়ার হয়তো আছড়ে পড়তে পারে, কারণ বিশ্বের চলমান প্রবণতার সাথে তাল মিলিয়ে এবার মার্কিন শাসক শ্রেণীও খোলাখুলি বলবে যে মার্কিন দেশের সমস্ত সমস্যার কারণ হলো মুসলমানরা, আর্থিক সংকট আর বেকারির কারণ হলো মেক্সিকানরা আর অন্য্ অভিবাসীরা আর সামগ্রিক ভাবে বেড়ে চলা অপরাধের কারণ হলো কৃষ্ণাঙ্গরা। ফলে লাগবে সাম্প্রদায়িক ও বর্ণ বিদ্বেষী দাঙ্গা হাঙ্গামা আর সেই সুযোগে একের পর এক জন বিরোধী আইন পাশ করিয়ে নিজেদের শোষণ আর লুন্ঠনের রাজত্ব কে আরও শক্তিশালী করে তুলবে ট্রাম্প সরকার। যদিও ভারত থেকে মার্কিন দেশে গিয়ে থিতু হওয়া ব্রাক্ষণত্ববাদী অভিবাসীদের সবাই  ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিল নিজেদের মুসলমান ও কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষ থেকে, বর্ণ বিদ্বেষের বিপুল জোয়ার থেকে তারা কিন্তু নিজেদেরকেও বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না কারণ ফ্যাসিবাদ ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলে এমনকি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদেরও। ফলে গতকাল যারা ইহুদিদের তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ে আওয়াজ ওঠায়নি আজ তাদের যখন গ্যাস চেম্বারে নিয়ে যাওয়ার জন্যে গাড়ি আসবে তখন ওদের পাশেও কেউ দাঁড়াবে না। পৃথিবীর সোজা হিসেবে তো এটাই। আন্তর্জাতিক মঞ্চে কিছু নিন্দা আর কিছু বাছাই করা বিশ্লেষণ দিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কটূক্তি করা ছাড়া বিশ্বের কোন শক্তির ক্ষমতা নেই ট্রাম্পের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠানোর। ভারতে আরএসএস ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্প কে তাদের নতুন মালিক হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার দাবি জানাচ্ছিল, অনেকে আবার ট্রাম্পের বিজয় কামনা করে যজ্ঞ করেছিল, ফলে এবার তো বুক বাজিয়ে বলার সময় এসেছে যে যজ্ঞে ফল মেলে হাতেনাতে নামাজে মেলে না। ব্রাক্ষণত্ববাদের ধেই ধেই নাচার আওয়াজে প্রতিবেশী পাকিস্তান-আফগানিস্তান ও মধ্য প্রাচ্যের জনগণের ভয় পাওয়ার কিছু নেই, বোমা তাঁদের উপর যেমন পড়ছিল তেমনিই পড়বে, আইএস গোষ্ঠীর চাঁদার অঙ্কে ট্রাম্প সাহেব কে কোন কাটছাঁট সিআইএ করতে দেবে না। আমরা মানুষ মারার কারখানা বন্ধ হতে দেখবো না বরং দেখবো নতুন সমীকরণে কারখানার ম্যানেজার বদল হতে। ওবামা দ্রুত সুর পাল্টে বলেছে যে মানুষ যেন ট্রাম্প কে একটা সুযোগ দেন। ওয়াল স্ট্রিট বেজায় চটে গেছিল হিলারি ক্লিন্টনের পরাজয়ে, কিন্তু এবার আবার রাগ, দুঃখ ভুলে ট্রাম্পের গোষ্ঠীর সাথে হাত মিলিয়ে চলতে রাজি মার্কিন শাসক শ্রেণীর সর্ব বৃহৎ অংশ।

মার্কিন আক্রমণ থেকে দুনিয়ার জনগণের নিস্তার নেই, মার্কিন সমর্থিত ইসলামিক স্টেটের সন্ত্রাসী ও তথাকথিত “স্বাধীনতা সংগ্রামী” জঙ্গীদের বোমায় সিরিয়ার শিশুদের রক্ত গড়াতেই থাকবে, মার্কিন মদতপুষ্ট জায়নবাদী ইজরায়েলের বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্যালেস্টাইনের সাধারণ মানুষ মরতে থাকবে, মার্কিন মদত প্রাপ্ত সৌদি আরব নির্লজ্জ ভাবে বিমান হানা করে ইয়েমেনের রাস্তা নিরীহ জনগণের রক্তে লাল করে দেবে, মার্কিন মদতপুষ্ট পাকিস্তান সরকার ও পাকিস্তানের ইসলামিক মৌলবাদী শক্তিগুলো পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে মৃত্যুর খেলায় নামবে আর খুন করবে নিরীহ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাদের, মার্কিন মদতপুষ্ট ইসলামিক সন্ত্রাসবাদীরা সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে দিতে থাকবে হিংসা আর মৃত্যুর ধোঁয়া। অন্যদিকে এই সন্ত্রাসের ধুঁয়ো তুলে মার্কিন জনগণের উপর পুলিশি রাষ্ট্রের কড়া পাহারা চাপাবে নয়া প্রশাসন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে শুরু করবে বিদ্বেষমূলক অভিযান আর নিজেদের তল্পি বাহক এশিয়া-আফ্রিকা-দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন শাসক গোষ্ঠী কে দিয়েও এই মার্কিন অভিযান কে বিশ্বের কোনায় কোনায় প্রয়োগ করাবে, ফলে বিভীষিকা শুধুই আজ বিভিষীকা থাকবে না, বরং বড় বেশি জোরে আমাদের সকলকেই ধীরে ধীরে কামড়াবে। আর যে সব সাবর্ণ শ্বেত চামড়া প্রেমী ‘ভদ্দরলোক’ ভাবছেন যে এবার ট্রাম্পের শাসনে মুসলমানদের বেশ ভালো করেই জবাই করা যাবে, তাদের জেনে রাখা উচিত যে একবার মার্কিন মুলুক থেকে মুসলমানদের মেরে তাড়ানোর পরেই ট্রাম্প ভক্তদের নজর পড়বে ওই দেশে পড়াশুনা বা চাকরির সূত্রে পৌঁছানো তাদের ভাই-বোন বা সন্তানদের উপর, কারণ শত চেষ্টা করেও তারা তো আর বর্ণ বদল করতে পারবে না।ফলে যারা ডালে বসে সেই ডালকেই কাটছিল তারা কিন্তু শীঘ্রই মাটিতে পড়বে। সোনার ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প এসেছে, ট্রাম্পেট থুড়ি দামামা বাজছে চতুর্দিকে একচেটিয়া পুঁজির নয়া ফ্যাসিবাদী খলনায়কের, সারা দুনিয়ার জনগণ যদি আজ উঠে না দাঁড়ান তাহলে কিন্তু ভবিষ্যৎ হবে বিপন্ন। পর্বতে ধোঁয়া দেখা দিচ্ছে, কোথাও তো আগুন লেগেছেই।           


 

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে