ফ্যাসিবাদের উথ্বানে কমিউনিস্টদের সঙ্কট এবং বিপ্লবীদের করণীয় কাজ

বৃহস্পতিবার, জুন ০৬, ২০১৯ 0 Comments A+ a-

ফ্যাসিবাদের উথ্বানে কমিউনিস্টদের সঙ্কট এবং বিপ্লবীদের করণীয় কাজ

কমিউনিস্টরা শেষ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ বামপন্থার প্রতি নাকি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছেন এবং জনগণ নাকি সারা বিশ্বের মতন ভারতবর্ষেও দক্ষিণপন্থী ফ্যাসিস্টদের নিজ রক্ষাকর্তা হিসেবে বেছে নিয়েছেন, এই নিয়ে প্রতিনিয়ত গাদা গাদা, বা বলতে গেলে গিগাবাইট-গিগাবাইট কন্টেন্ট প্রকাশিত হচ্ছে। বামপন্থী বলতে ঠিক কাকে বোঝানো হচ্ছে সে বিষয়ে যেমন কোন স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হচ্ছে না ঠিক তেমনই সিপিএম ও সিপিআই জাতীয় উঁচু দরের চরম সংশোধনবাদী ও সোশ্যাল-ফ্যাসিস্ট বা সামাজিক-ফ্যাসিবাদী পার্টিগুলির অধঃপতন কে কেন যে সামগ্রিক ভাবে বাম ও কমিউনিস্ট শক্তির পতন হিসেবে দেখানো হচ্ছে তারও কোন জবাব নেই।

যদিও ১৯৬৭ সালে নকশালবাড়ি'র কৃষক আন্দোলনের উপর গুলি চালিয়ে দুইটি শিশু সহ ১১ জন কমিউনিস্ট আন্দোলনকারীদের হত্যা করার মধ্যে দিয়ে সিপিএমের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে হাতেখড়ি যা পশ্চিমবঙ্গে দলটির সাড়ে তিন দশকের শাসনের শেষ প্রান্তে বারবার সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম বা লালগড়ে শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের, কৃষক ও সাধারণ জনতার রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে সিপিএমকে একটি পাক্কা সামাজিক-ফ্যাসিবাদী শক্তিতে পরিণত করে, তবুও কমিউনিস্টদের হেয় করতে যেমন এককালে চরম কমিউনিস্ট-বিরোধী সংবাদমাধ্যমগুলো ক্রুশ্চেভ, ব্রেজনেভ, গর্বাচেভ প্রভৃতির কাজকর্ম কে কমিউনিস্টদের কাজকর্ম বলে প্রচার করতো, তেমনি আজ ভারতবর্ষে বারবার সিপিএম কে কমিউনিস্ট সাজিয়ে জনমানসে বিভ্রান্তি ও হতাশা ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সিপিএমের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব সেইদিন দেশের মানুষ দেখেছিলেন যখন এই দল কংগ্রেসের সাথে হাত মিলিয়ে কলকাতা সহ সমস্ত পশ্চিমবঙ্গে নকশালপন্থী বিপ্লবীদের হত্যা করা শুরু করে। কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের খুন করতে কংগ্রেসের ন্যায় সিপিএমের কোনদিন হাত কাঁপেনি। আজ যখন বলা হচ্ছে যে সিপিএমের ভোট বিজেপি'র খাতায় চলে যাচ্ছে, যখন সিপিএম কে দেখিয়ে "বামের রাম হওয়া" জাতীয় কুৎসিত কমিউনিস্ট বিরোধী রটনা করে সামগ্রিক কমিউনিস্ট আন্দোলন কে বিজেপি ও হিন্দুত্বের দোসর হিসেবে দেখানো হচ্ছে, তখন মানুষের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধির স্বার্থে আমাদের দুইটি আশু কর্তব্য পূর্ণ করতে হবে।

প্রথমতঃ আজ বিপ্লবী কমিউনিস্টদের স্বার্থে এটা দেখানো প্রয়োজন যে সিপিএম চিরকালই শাসক শ্রেণীর সাথে ঘর করে এসেছে, যে সিপিএম কোনদিনই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের চরম বিরোধিতা করেনি বা কেরলে নিজের ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখার জন্যে আরএসএস এর সাথে মারামারি করলেও কোথাও হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ কে উৎখাত করতে লড়াই করেনি, বরং চিরকাল এই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের সাথে সিপিএম গোপনে লিপ্ত থেকেছে।

যখন ১৯৮৯ সালে কংগ্রেস কে আটকাতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ জনতা সরকার গড়ার চেষ্টা করেন প্রাক্তন জনতা পার্টির নানা নেতা ও গোষ্ঠীকে এক করে, তখন কিন্তু বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাম জন্মভূমি আন্দোলনে বিজেপি পুরোদস্তুর শরিক ও নেতৃত্বের ভূমিকায় আসীন। সারা ভারত জুড়ে যখন লাল কৃষ্ণ আদবানি ও অন্যান্য বিজেপি নেতারা অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির গড়ার উগ্র হিন্দুত্ববাদী জিগির তুলে দেশের মধ্যে হিংস্র ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা লাগাবার পরিকল্পনা করছে বিজেপি'র রাজনৈতিক উত্থানের স্বার্থে তখন কিন্তু জ্যোতি বোসদের বিজেপি'র অটল বিহারী বাজপেয়ীর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে ব্রিগেড সভা করতে গায়ে বাঁধেনি, বিজেপি ও সিপিএমের জোট কিন্তু ওই রাম মন্দির আন্দোলনের ছায়ায় গড়ে উঠেছিল। সেই বাজপেয়ী’র সাথে জ্যোতি বোস হাত মেলায় যে বাজপেয়ী’র হাতে তখনো ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংগঠিত নেলি হত্যাকাণ্ডের রক্ত লেগে ছিল।

জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা বা এনডিএ'র অংশ হিসেবে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খাল কেটে কুমির ঢোকানোর মতন পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তে প্রান্তে জোট সঙ্গী বিজেপি ও আরএসএস কে জায়গা করে দিচ্ছিলেন, যখন উত্তরবঙ্গের আদিবাসী অঞ্চলগুলোতে আরএসএস এর প্রচারকরা একের পর এক জঙ্গি তৈরির শিবির তৈরি করে, ইস্কুল গড়ে শিশুদের  জঙ্গি তৈরি করার কারখানা শুরু করে তখন কিন্তু জ্যোতি বোস বা তাঁর উত্তরসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কোন টু শব্দ করেননি। আওয়াজ তুলেছিল বিপ্লবী কমিউনিস্টরা, যার ফলে তাঁদের সিপিএম, তৃণমূল ও বিজেপির যৌথ হামলার মোকাবিলা করতে হয়েছে।

প্রায় এক দশক বাদে, যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতার মধ্যগগনে আসীন হলেন ৩৪ বছরের জনবিরোধী বাম সরকার কে উচ্ছেদ করে, তখন আর শাসকপার্টির লোক হওয়ার জন্য মানুষের নাস্তিক সাজার দরকার হলো না। শুরু হলো ধর্ম ও রাজনীতির ঘৃণ্য ব্যভিচার, তখনো কিন্তু আসল সমস্যার দিকে চোখ না ঘুরিয়ে এই সরকারি বামেরা মানুষের কাছে শুধু নিজেদের ক্ষমতায় ফেরানোর দাবি নিয়ে গেছে। বারবার বলেছে তৃণমূল আসল শত্রু এবং তৃণমূল কে সরাতে যা খুশি করা যাবে। যখন ইমাম ভাতা দেওয়ার নাম করে তৃণমূল মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব খাটাবার চেষ্টা করে, তখন কিন্তু সিপিএম কে দেখা যায়নি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে, সিপিএম কে পাওয়া গেছিল বিজেপি’র পাশে বসে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জাবর কাটতে।

আজ যারা সিপিএমের ভরাডুবির কথা বলছেন, বা সিপিএম ও বিজেপি’র অশুভ আঁতাতের কথা বলছেন তাঁরা কিন্তু ভুলে গেছেন যে সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে এমন দুর্দশা সেই ২০০৮ থেকেই শুরু হয়। এখনো এমনকি কোন কলা গাছকেও যদি সিপিএমের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড় করানো হয় তাহলে সেই কলা গাছই জিতে যাবে। এর পরেও সিপিএম নেতৃত্বের দম্ভে ও মেজাজে কোন পরিবর্তন আসেনি। আসলে তাঁরা যে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন বিমান বোস, সূর্য মিশ্র বা সিপিএমের বড়, মেজ, সেজ বা ছোট কোন নেতার ব্যবহার বা আদব কায়দায় তা কখনো ফুটে ওঠেনি। অমায়িক হয়ে, দম্ভহীন হয়ে, অনুতপ্ত হয়ে এবং আত্মসমালোচনা করে জনগণের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার জায়গায় তাঁদের মধ্যে তীব্র হয়ে ওঠে যেনতেন প্রকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে ক্ষমতাচ্যুত করার অভিলাষ। তাঁরা ক্ষমতায় ফিরতে চান, লড়াইয়ে নয় আর তাই তাঁদের কাছে শত্রুর শত্রু বিজেপি অছ্যুৎ নয়।

২০১৪ সালে বিজেপি রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে দুটি আসন ও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যখন তিনটি আসন লাভ করে ঠিক তখন থেকেই তৃণমূলের সন্ত্রাস রোখার অছিলায় তৃণমূল স্তরে বিজেপি, আরএসএস ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সাথে একধরণের গাঁট বাঁধে সিপিএমের নেতৃত্ব। ২০১১ সালে ক্ষমতার সাথে সাথে নিজের হার্মাদ বাহিনীকেও হারায় সিপিএম। যেহেতু তৃণমূল সেই হার্মাদ বাহিনীর মালিক হয়ে সিপিএমের দিকে ধেয়ে আসে, ৩৪ বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে জনমানসে সঞ্চিত ঘৃণা ও ক্রোধের বারুদে আগুন জ্বালিয়ে সিপিএমের নেতা ও কর্মীদের উপর নামিয়ে আনে অত্যাচারের খাঁড়া, তখন ভোটের স্বার্থে গড়া ঠুনকো সংগঠন এমনিই ভেঙে যায়। এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ গড়া তো দূরের কথা কোন ভাবে নিজের সংগঠনের লোকেদের বাঁচাবার কোন ক্ষমতা সিপিএমের আর থাকে না।

সিপিএম নেতারা ২০১১ সাল নাগাদ বলতেন যে ক্ষমতা চলে যাওয়ায় তাঁদের দলের নাকি বেনোজলও চলে গেছে এবং যা পরে থাকছে তা নাকি খাঁটি সোনা। তবে তাঁরা একথা মানুষ কে জানাননি যে তাঁদের দলে যা ছিল তার সবটাই বেনোজল আর ওই বেনোজল চলে যাওয়ার পরে হাতে থাকলো পেন্সিল আর সংগঠন সরে গেল ফেসবুকের দুনিয়ায়। গ্রামে গ্রামে যে তৃণমূল বিরোধী ভোটগুলো নিজের দিকে তাও টেনে রাখতো সিপিএম তাও ধীরে ধীরে বিজেপি’র খাতায় চলে গেল কারণ বিজেপি তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়তে পেরেছে আরএসএস এর জঙ্গী বাহিনী কে ব্যবহার করে। আবার এই বিজেপিতে তৃণমূল বিরোধী হিন্দু ভোট চলে যাওয়ার ফলে এই ভোট ব্যাঙ্কের গেরুয়াকরণ ভীষণ সহজ হয়ে যায় বিজেপির কাছে। সিপিএম তখন অথৈ জলে পড়ে প্রথমে কংগ্রেসের হাত ধরে নিজের ভোট কংগ্রেসের খাতায় তুলে দেয় ও পরে আবার বিজেপি’র সাথে গোপন আঁতাত গড়ে তৃণমূল কে নির্মূল করতে।

সিপিএমের এই ভাবে বিজেপিতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সাথে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ কে নির্মূল করার লক্ষ্যে তার শক্তির মূল উৎস যে আধা-সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্ক তাকে উচ্ছেদ করার জন্যে চালিত জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের কোন সম্পর্ক নেই। প্রতি পদে, প্রতি মোড়ে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের সংগ্রাম কে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাথে সাথে লড়তে হচ্ছে সংশোধনবাদের বিরুদ্ধেও। আর এই লড়াইয়ে সিপিএম বিপ্লবী কমিউনিস্টদের ও দেশের আপামর শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষের শত্রু হিসেবে আজ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সিপিএম ও সংশোধনবাদ কে পরাস্ত না করে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ কে পরাস্ত করার স্বপ্ন একটা দিবাস্বপ্ন মাত্র। যে বা যাঁরা ভাবছেন সিপিএমের সাথে বা তথাকথিত বামফ্রন্টের শরিকদের সাথে এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলবেন তাঁরা যে শুধু জনতাকে বোকা বানাচ্ছেন তাই নয়, তাঁরা নিজেদেরকেও ঠকাচ্ছেন।

দ্বিতীয়তঃ আজ এটাও সত্য যে ফ্যাসিবাদের এই উত্থানের ফলে দেশজুড়ে শ্রমিক-কৃষকের লড়াইয়ে ধাক্কা লেগেছে, ধাক্কা খেয়েছে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের কাজও। এর সাথে সিপিএমের বেইমানির চেয়ে বেশি সম্পর্ক হলো আজ বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলনের উপর জেঁকে বসে থাকা নয়া-সংশোধনবাদী রাজনীতির, যা মানুষ কে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও মাও সেতুঙের চিন্তাধারার যে সফল প্রয়োগ চারু মজুমদার নকশালবাড়ি গড়ে তুলে দেখিয়ে গেছেন, সিপিআই(এম-এল) পার্টি গড়ে শিখিয়ে গেছেন, তার থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে । নানা ধরণের সংস্কারবাদী ও পরিচয় রাজনীতির গরল কে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও মাও সেতুঙের চিন্তাধারার মধ্যে মিশিয়ে এক ভেজাল রাজনীতির কারবার চালিয়ে মানুষকে ঠকাচ্ছে এক দল তথাকথিত বিপ্লবী।

অন্যদিকে, আরএসএস কর্মীরা জনগণের গভীরে মিশে যাচ্ছেন, স্বাচ্ছন্দ্যে শ্রমিক-কৃষকের মধ্যে বাস করছেন, তাঁদের শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়ার অছিলায় ছোটবেলার থেকেই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের দর্শনে দীক্ষিত করছেন। অথচ তথাকথিত বিপ্লবী কমিউনিস্টদের আস্তানা হয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ, নানা ধরণের আলোচনা সভা যেখানে শুধুই বুদ্ধিজীবীরা ভিড় করেন এবং নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেখানে আবার শ্রমিক ও কৃষকের দেখা মেলা ভার। যদিও বা কিছু তথাকথিত কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা, বিশেষ করে ছাত্র যুব সম্প্রদায়ের থেকে উঠে আসা নব্য বামেরা, শ্রমিকদের মধ্যে বা কৃষকদের মধ্যে সংগঠন করতে যান, তাঁরাও আবার বাড়ি ভাড়া করে থাকেন, নানা ধরণের তত্ত্ব কথা শুনিয়ে জনগণের ঘাড়ে বসে খান, নিজেরা কায়িক শ্রম দেন না, তাঁরা নিজেরা শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করা যে কী কষ্টসাধ্য তা অনুমান করতে পারেন না। ফলে কষ্টসাধ্য জীবনযাপন না করা, সাধারণ মানুষের সাথে অমায়িক হয়ে না মেলামেশা করায়, এলিটিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঁচিলের মধ্যে নিজেদের একঘরে করে রাখায় এই তথাকথিত বিপ্লবীদের সম্পর্কেও জনমানসে ঘৃণার ও তাচ্ছিল্যের আবহ তৈরি করতে সংঘ পরিবারের কর্মীদের বেশি সময় লাগে না।

যখন ফ্যাসিবাদের উত্থান হয় তখন তার পিছনে থাকে বর্তমান ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অবিশ্বাস, তাঁদের রাগ আর এক আমূল পরিবর্তনের আশা, যা ফ্যাসিবাদী শক্তি তাঁদের মধ্যে জাগিয়ে তোলে। নরেন্দ্র মোদী কে শিখন্ডি করে বিজেপি ও আরএসএস আসলে মানুষকে একটা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছে। তাঁরা দেখিয়েছে যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কে বদলে দিতে সক্ষম নরেন্দ্র মোদী। মোদী সরকারের জনপ্রিয়তা যে শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত ও শহুরে মধ্যবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ সে কথা মেনে চলা হবে ধৃষ্টতা। ভারতের নানা প্রান্তের গ্রামাঞ্চলেও, দরিদ্র ও মাঝারি কৃষকের মধ্যেও বিজেপির চেয়ে বেশি হলো মোদীর জনপ্রিয়তা, কারণ আরএসএস মোদী ও হিন্দুত্ববাদ কে ভাগ করেছে প্রতিটি শ্রেণী ও জাতির মানুষের চেতনার দিকে ও চাহিদার দিকে তাকিয়ে। বৃহৎ একচেটিয়া বিদেশী পুঁজি ও তার সহচর দেশী মুৎসুদ্দি পুঁজির যেমন দরকার তেমন লাগামহীন লুঠ ও শোষণের গ্যারান্টি ফ্যাসিবাদ সেই শ্রেণীগুলোকে দেয়, বৃহৎ জোতদার ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিকে দেয় কর্পোরেট লুঠের বখরার আশ্বাস, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের দেয় চাকুরী, ব্যবসা, কর ছাড়, সহ উগ্র দেশপ্রেমের টনিক, অন্যদিকে গ্রামীণ ও শহুরে গরিব কে, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষ কে হিন্দুত্বের উগ্রতার অংশীদার করে তাঁদের মধ্যে এক ক্ষমতায়নের অনুভবের সঞ্চারণ করে, তাঁদের এক মিথ্যা আত্মসম্মানবোধ দিয়ে আচ্ছন্ন করে, তাঁদের হিন্দু ধর্মের নামে ক্ষেপিয়ে আজ আরএসএস ও বিজেপি মোদী'র প্রতি জনসমর্থন তৈরি করতে পেরেছে।

ঠিক যখন দেশজুড়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে, হিন্দুরা ও হিন্দুধর্ম আক্রান্ত এই জোয়ার তুলে, কমিউনিস্টদের ধর্মদ্রোহী ও মুসলিম তোষণকারী বলে চিহ্নিত করে ও দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা কে পরিবর্তন করার জিগির তুলে আরএসএস ও বিজেপি মোদী'র প্রতি সমর্থনের বন্যা তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে, বিরোধী মতবাদকে পিষে দিচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে জনতা যে সংবিধান ও ব্যবস্থার চেয়ে মুক্তি চাইছে, সেই সংবিধানকে রক্ষা করার কথা বলে, যে ধর্মের প্রতি মানুষের মোহ চূড়ান্ত সেই মোহ কে শেষ না করে নানা ভাবে হিন্দু ধর্মের উপর আম্বেদকরীয় কায়দায় হামলা করে (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী কায়দায় নয়) নব্য বামেরা ও তথাকথিত কিছু বিপ্লবী সাজা আঁতেল ধরণের লোকেরা জনগণ কে আরএসএসের দিকেই ঠেলে দিচ্ছেন।

যখন সংবিধান বদলে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের কথা জোর করে প্রচার করছে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ তখন সেই হিন্দুরাষ্ট্রের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো জনগণের সামনে সহজ ভাষায় স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা না করে, জনগণ কে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাঁদের সমস্যার সমাধানের কথা না বলে, জনগণ কে এই পঁচাগলা ব্যবস্থা ও তাঁরা যে সংবিধানের উপর ক্ষিপ্ত তার বিরুদ্ধে যে কমিউনিস্টরা এক বিকল্প ব্যবস্থা, যা সম্পূর্ণ নতুন এক ব্যবস্থা হবে, গড়তে চায়, সে কথা না বলে, শুধু সংবিধান বাঁচাও ও এই ঘৃণ্য ব্যবস্থা কে বাঁচাবার কথা বলে মিছিল মিটিং করলে যে জনগণের থেকেই দূরে সরে যেতে হয়, কমিউনিস্ট আর লিবারেল গণতন্ত্রীদের মধ্যে পার্থক্যটা মুছে যায়, সে কথা তথাকথিত বিপ্লবী কমিউনিস্টদের হয়তো আজও বোধগম্য হচ্ছে না। কারুর লেজুড় না হয়ে, স্বতঃস্ফূর্ততার পিছনে ধাওয়া না করে বরং জনগণের মধ্যে রাজনীতি দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ততা সৃষ্টি করার কাজ কে আজ অনেক তথাকথিত বিপ্লবীই আর ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না।

যে মুহূর্তে সারা দেশ জুড়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর গোরক্ষক নামক হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করছে, মানুষ কে খুন করছে তাঁদের ধর্মীয় পরিচয়ের জন্যে, এবং রাষ্ট্রের মদতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভীত ও সন্ত্রস্ত করে রাখার চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে কলকাতা'র মতন কিছুটা নিরাপদ শহরে দাঁড়িয়ে বা কেরলের মতন নিরাপদ রাজ্যে দাঁড়িয়ে বিফ ফেস্টিভ্যাল করা, জনসমক্ষে পৈতে পুড়িয়ে বা হিন্দু ধর্মের তীব্র সমালোচনা করার মধ্যে দিয়ে আসল সংগ্রাম, অর্থাৎ যে সকল অঞ্চলে সংখ্যালঘু মুসলিমরা আক্রান্ত সেখানে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও মাও সেতুঙের চিন্তাধারা দিয়ে মানুষ কে জাগ্রত করা, শ্রেণী সংগ্রামের আগুনে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ কে জ্বালিয়ে দেওয়া ও তার শক্তির উৎস আধা-সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্ক কে উচ্ছেদ করার কর্তব্য কে এড়িয়ে যাওয়া আসলে চূড়ান্ত মাত্রার সুবিধাবাদী রাজনীতি। উদারনৈতিক গণতন্ত্রীদের সাথে এহেন নব্য বামেদের বা তথাকথিত কিছু বিপ্লবীর লাইনের কোন গুণগত পার্থক্য থাকছে না। এর ফলে ধর্মভীরু, রাজনৈতিক ভাবে পশ্চাৎপদ, সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যাপক শ্রমিক-কৃষকের মধ্যে, শোষিত মেহনতি মানুষের মধ্যে নিজেদের হিন্দু-বিরোধী ও মুসলিমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে, কমিউনিস্টদের সম্পর্কে আরএসএস এর ছড়ানো বিষাক্ত প্রচারকেই শক্তিশালী করে তুলে শ্রেণী সংগ্রামের পিঠেই ছুরি মারছে এই তথাকথিত বিপ্লবীদের দল।

সিপিএম যে বিজেপি'র দোসর হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছে এবং সেই ঘটনা কমিউনিস্ট আন্দোলনের যতটা ক্ষতি করেছে তার চেয়েও ভয়ানক ক্ষতি কিন্তু বিপ্লবী সাজা একদল পাতি বুর্জোয়া আঁতেলদের দল করছে। শ্রমিক-কৃষক থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে, পরিচয় সংগ্রাম কে শ্রেণী সংগ্রামের উপরে স্থান দিয়ে, কোন ধরণের বিকল্প পরিকল্পনা ছাড়া, মানুষ কে রাজনীতি দিয়ে, শ্রেণী সংগ্রামের যুদ্ধ ক্ষেত্রে পোড় না খাইয়ে শুধু আঁতলামি করে, গ্রন্থকীটের মতন অমার্ক্সীয় তত্ত্ব আউরে শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি, জাত ব্যবস্থা ও গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে নাটক করে, মানুষের আশু সমস্যাগুলো নিয়ে লড়াই না করে, মানুষের জন্যে বিকল্প ন্যারেটিভ তৈরি না করে শুধুই আরএসএস ও বিজেপির তৈরি ন্যারেটিভের সীমারেখার মধ্যে নিজেদের বন্দি রেখে এই তথাকথিত বিপ্লবীরাও বিপ্লবের ঢের ক্ষতি করেছে।

করণীয় কী?


বর্তমানে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের কর্তব্য হচ্ছে ব্যাক টু দ্য রুট, বা নিজ শিকড়ে ফিরে যাওয়া। শ্রেণী সংগ্রামের কোন বিকল্প নেই। জনগণের কাছে ছাত্র হিসেবে ফিরে যাওয়া, তাঁদের সৃজনশীলতার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, তাঁদের চেতনার মান বুঝে তাঁদের সম্পূর্ণ রাজনীতি দিয়ে নতুন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষককে নেতৃত্বে উন্নীত করা যাতে তাঁরা বিপ্লবের লড়াইয়ে, নিজেদের শ্রেণীর মুক্তির সংগ্রামে তাঁদের মহান ভূমিকা পালন করতে পারেন। এর জন্যে দরকার শ্রমিক ও কৃষকের সাথে একাত্ম হওয়া। শহরের নিরাপদ জীবনযাপন ছেড়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ ছেড়ে, ভাল চাকরি ও ভবিষ্যতের ডাক কে উপেক্ষা করে, "আমার কী হবে?" সেই চিন্তা কে জয় করে, মূলতঃ আত্মস্বার্থকে চূর্ণ করে, সংশোধনবাদ কে নাকচ করে, জনগণের স্বার্থে আত্মত্যাগ করা। গ্রামে গিয়ে দরিদ্র-ভূমিহীন কৃষকের বাসায় আশ্রয় নেওয়া, তাঁদের সাথে শ্রম দেওয়া, শ্রমের মর্যাদা করা, তাঁদের রাজনীতি দেওয়া ও শ্রেণী সংগ্রামের লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করা, শ্রেণীর মাস্টার হওয়ার চেষ্টা না করে তাঁদের ভাল ছাত্র হওয়ার চেষ্টা করা, তাঁদের বিশ্বাস করা ও তাঁদের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা এবং সর্বোপরি তাঁদের উদ্ভাবনীয় সৃষ্টিশীলতার উপর ভরসা রেখে তাঁদের নেতৃত্বে উন্নীত করার চেষ্টা আজ জরুরী কাজ।

যাঁরা গ্রামে যেতে পারছেন না কোন কারণে তাঁদের আজ শ্রমিকদের এলাকায় গিয়ে প্রচার ও প্রসারের দ্বায়িত্ব পালন করা উচিত। শ্রমিকের লড়াই যে বিশ্বমুক্তির লড়াই, টাকা আনা পাইয়ের নয় বরং মর্যাদার লড়াই সে কথা আজ জোর দিয়ে বলার সময় এসেছে।  বাড়ি ভাড়া না নিয়ে রাজনীতি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা শ্রমিকদের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করা, কোন ধরণের কাজ জোগাড় করে শ্রমের বদলে নিজের খরচ চালানোর চেষ্টা করা, ও পদে পদে মানুষ কে পার্টির চেতনার স্তরে উন্নীত করার চেষ্টা করা আজ বিপ্লবী কমিউনিস্টদের কর্তব্য।

এর সাথে সাথে সমস্ত বুর্জোয়া অভ্যাস যেমন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু এলিটিস্ট চক্রের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে বাইরে বের হবার অভিপ্রায় হারানো, শুধু মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে গন্ডিবদ্ধ থাকা, ইত্যাদি ত্যাগ করতে হবে। বাড়িতে গৃহ শ্রমিক না রেখে বরং নিজের কাজ নিজে করা, শ্রেণীর মানুষের সাথে অমায়িক হয়ে ব্যবহার করা, যে ভাবে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদীরা অতীতের কমিউনিস্টদের নকল করে জনগণের সাথে সহজ সরল জীবনযাত্রা আয়ত্ত করে মিশে গেছে তার বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদেরও মানুষের মধ্যে যাওয়ার ও তাঁদের একজন হয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করতে হবে নিজের বুর্জোয়া শিক্ষাব্যবস্থায় অর্জিত ডিগ্রি বা ডক্টরেট থেকে নিজেকে গাড়ির গিয়ারের মতন নিউট্রালাইস করে, জনগণের ছাত্র হিসেবে তৈরি হয়ে।

ঐক্যবদ্ধ হতে হবেই


আজ অনেকগুলো ছোট বা মাঝারি কমিউনিস্ট পার্টি নানা ভাবে বিপ্লবের কথা বলছে ও সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছে। কিছু দল এখনো নকশালবাড়ি’র রাজনীতির কথা, চারু মজুমদারের কথা, আজও বলেন। আজ একজন বিপ্লবী কমিউনিস্ট এই রকম অনেক দলের একটির হয়তো কর্মী বা সমর্থক হতে পারেন এবং সেই দলের রাজনীতির সাথে অন্য দলের রাজনীতির হয়তো অনেক তফাৎ। তবে যেহেতু তিনি বিপ্লব চান এবং তিনি মনে করেন তাঁর পার্টির দৃষ্টিভঙ্গী সঠিক তাই বলে তিনি অন্য দলের কর্মীদের বা সমর্থকদের যদি হেয় করেন, তাচ্ছিল্য করেন বা কথায় কথায় খোটা মারেন তাহলে বিপ্লবী ঐক্য বলে কোন কিছুই তৈরি করা সম্ভব নয়।

সিপিএমের সাথে আসন  ভাগাভাগি করার দর কষাকষি করে যে ভাবে সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন সহজেই “বৃহৎ বাম ঐক্যের” কথা বলতে পারে ভোটের বাজারে কিছু প্রণামী কুড়াতে, সেই জিনিসটা হয়তো বিপ্লবী কমিউনিস্টদের ক্ষেত্রে এত সহজ নয়। তবে সহজ না হলেও অসম্ভব তো নয়। হৃদয়ের গভীর প্রসারতা কমিউনিস্টদের বড় গুণ। বিপ্লবের স্বার্থে, শ্রেণীর স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে যেহেতু তাঁরা লড়াই করেন তাই তাঁদের সঙ্কীর্ণতাবাদ থেকে মুক্ত হয়ে সমগ্র বিপ্লবী কমিউনিস্ট শক্তির সাথে ঐকবদ্ধ হওয়ার মানসিকতা রাখতেই হবে এবং তা প্রয়োগ করতেই হবে যাতে ফ্যাসিবাদের আক্রমণের মুখে শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষের প্রতিরোধ কে শক্তিশালী করা যায়, যাতে শ্রেণী বিভক্ত না হয়ে যায়।

করণীয় কাজগুলি সব বিপ্লবী কমিউনিস্টদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেখানেই কমিউনিস্টদের মনে হবে যে তাঁরা কঠিন সংগ্রাম না করেই সহজেই বিজয় অর্জন করে ফেলবেন সেখানেই সংশোধনবাদ যে বিপ্লবী সত্ত্বা কে ধ্বংস করার জন্যে দরজায় কড়া নাড়ছে সে কথা বুঝতে হবে। সিপিএম শুধু সিপিএমেই গন্ডিবদ্ধ নেই, সিপিএমের বিষাক্ত হাওয়ায় আজ কমবেশি অনেকগুলো কমিউনিস্ট নামধারী দল আক্রান্ত হয়েছে। বামফ্রন্টের শাসনকালে যেসব তথাকথিত বিপ্লবীরা লড়াইয়ের ময়দান থেকে দূরে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সেমিনার আর পদযাত্রা করে জীবন কাটিয়েছেন এই যুগে এসে তাঁরা যে সত্যিই প্রতিরোধে কোন ভূমিকা নেবেন সে কথা আশা করা হবে শিশুসুলভ আকাশ কুসুম কল্পনা করা।

বর্তমানে আমাদের হাতের কাছে যা আছে, আমাদের পাশে যে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের ও আমাদের আশেপাশে যে শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষ আছেন তাঁদের নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে এবং একমাত্র মার্কসবাদ-লেনিনবাদ মাও সেতুঙের চিন্তাধারার ব্যাপক প্রচার করে, মানুষের দৈনন্দিন সমস্যায় তত্ত্ব কে প্রয়োগ করে, বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা জনগণ কে বুঝিয়েই তাঁদের মধ্যে প্রবেশ করা ফ্যাসিবাদের বিষ কে নির্মূল করা সম্ভব। তাই প্রতিটি কমিউনিস্টেরই কাজ হওয়া উচিত প্রতিটি অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও সেই প্রতিরোধে সামিল হতে শ্রেণী কে উদ্বুদ্ধ করা। আর এই শ্রেণী কে উদ্বুদ্ধ করতে তাঁদের শ্রেণীর কাছে, অর্থাৎ শিকড়ে ফিরতেই হবে, মূলটা ধরতেই হবে। এলাকা ভিত্তিক লেগে-পড়ে থেকে কাজ না করলে পঞ্চাশ বছর পরেও শুধু দিবস পালনেই তাঁরা সীমিত থেকে যাবেন এবং ইতিহাস তাঁদের ক্ষমা করবে না একথা কিন্তু সবাইকেই মাথায় রাখতে হবে। 

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে