মোদের কথা মোদের ভাষায়- পর্ব ১ - ঐতিহাসিক ভাষা শহীদ দিবস ২১শে ফেব্রুয়ারির শপথ

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ২০, ২০১৮ 0 Comments A+ a-

দেখতে দেখতে আবার একটা বছর কেটে গেল আর আবার ফিরে এল একুশে ফেব্রুয়ারি। আমার মনে হয় ভাষা শহীদ আর শ্রেণী সংগ্রাম বা সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের শহীদদের কিন্তু স্বপ্নটা একটা জায়গায় গিয়ে মিলে গেছে - এক অত্যাচার, আগ্রাসন ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নে।

তবে সত্যি বলতে কি বাঙালি জাতি আজ একটি পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষিত উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা কিন্তু একটা হীনমন্যতায় ভোগা শুরু করেছে এবং নিজের জাতীয় পরিচয় কে মিটিয়ে দিতে বাংলাদেশ হোক বা পশ্চিমবঙ্গ, তাঁরা কিন্তু হিন্দি, উর্দু এবং ইংরাজীর গর্তে নিজেদের পরবর্তী প্রজন্ম কে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ফেলছে।

আজ বেশি পড়ার নেই, আমার বক্তব্য আপনাদের কাছে তুলে ধরতে শুরু করলাম ভিডিও ব্লগিং এবং এই ভিডিও ব্লগিং এর সিরিজের নাম হল - মোদের কথা মোদের ভাষায়। ভিডিওটা দেখুন ও জানান আরও কি ভাবে উন্নত করা যায় এই ব্লগিং এর স্তর কে।


ঢপের চপ আর চপের ঢপ - মোদীর অর্থনীতি'র বিশ্লেষণ

বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০১৮ 0 Comments A+ a-


এই কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের ২০১৫ সালের বিখ্যাত “তেলেভাজা’ও  শিল্প বটে” গোছের ভাষণের হিন্দি সংস্করণ - পকৌড়া বানানোর মাধ্যমে রোজগারের বন্দোবস্ত করে সরকার মানুষ কে দুইবেলা দুই মুঠো খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে গোছের আলপটকা মন্তব্য করে দেশ জোড়া আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেছিলেন। আমাদের ছোটবেলায় শেখা সেই বিখ্যাত প্রবচন - বাংলা আজ যা চিন্তা করে ভারত কাল তা ভাবে - ভীষণ ভাবে মনে পড়ছিল, প্রাণে আনন্দের হিন্দোল জেগেছিল।

যাই হোক, মোদীর উক্তির বিরোধিতা করার নামে কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের সমর্থনকারী ধনিক ও উচ্চ মধ্যবিত্ত সমাজের শিক্ষিত সেন্ট মাখা লোকেরা আবার সারাদিন পরিশ্রম করে দুই মুঠো খাবার জোগাড় করা চপ-তেলেভাজাওয়ালা মানুষদের নিয়ে জঘন্য মজা করা শুরু করলো, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মোদী সরকারের জনগণ কে কর্মসংস্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা কে আক্রমণ না করে তেলেভাজা ও চপ বিক্রেতা শ্রমজীবি মানুষের সাথে মোদী বা অমিত শাহ কে এক করিয়ে দেখিয়ে সেই গরিব মানুষগুলোকে উল্টে অপমান করা শুরু করলো প্রিভিলেজড বিরোধীরা। আর এই বিরোধিতা কে আবার অস্ত্র করে মোদী সরকার দেখালো যে বিরোধীরা কি চরম ভাবে নাকি গরিব আর খেটে খাওয়া মানুষকে অপমান করছে।  

এরই মধ্যে এল ভারত সরকারের রেল ও জাতীয় বাজেট যার মধ্যে তেলেভাজা কে শিল্প বানাবার কোন প্রকল্প যদিও ছিল না তবে ঢপের চপ অনেকগুলোই ছিল। সেই ঢপের চপ শিল্প কে ঠেকা দিতে খুন রাহাজানি করে রাজনীতিতে হাত পাকানো গুজরাটি বেনিয়া অমিত শাহ আবার নিজের প্রথম সংসদীয় ভাষণে ভীষণ করে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন বিরোধীদের। কর্ম সংস্থান হিসেবে চা থেকে চপ বিক্রেতাদের নিজেদের শ্রম দিয়ে দুই পয়সা কামানো কে বিজেপির কৃতিত্ব হিসেবে তুলে ধরলো আরএসএস এর পাকা মাথা শাহ।

আজ প্রায় দুই সপ্তাহ পরে আমি এই বাজেট নিয়ে বিশ্লেষণ করতে বসছি কারণ আজ মোটামুটি বাজেট নিয়ে উদ্দীপনা বাজারি কাগজগুলোয় শেষ হয়েছে এবং আমাদের সামনে অরুণ জেটলির ঝুলির থেকে অনেক বেড়াল ম্যাও ম্যাও বলে চিৎকার করে ঝাঁপিয়ে বেরিয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরের বাজেটের সমীক্ষা করার এবং বিশ্লেষণ করার এর চেয়ে ভাল সময় আর হয় না। তবে সময়ের অভাবে আমরা শুধু কৃষি ও স্বাস্থ্যের মধ্যেই বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখাবো ঢপের চপ কাকে বলে। যদি সমস্ত খাতের বিশ্লেষণ করতে বসি তাহলে একটি মোটা বই লেখা হয়ে যাবে আর প্রকাশিত হলে  অবশ্যই সেই বই নিষিদ্ধ হয়ে যাবে “মোদী-ফাইড” ভারতে।

ঢপের চপ নং ১: কৃষক-মুখী বাজেট  


বাজেট পেশ করার সময়ে অরুণ জেটলি জোর গলায় বলেছেন যে ২০২২ সালের মধ্যে ভারতের কৃষকদের আর্থিক অবস্থার এমন উন্নয়ন সরকার করবে যে তাঁদের আয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এই লক্ষ্যে নাকি মোদী সরকার এতদিনে একটি দুর্দান্ত রণনীতি তৈরি করেছে এবং তাঁরা নাকি কৃষকদের অঘোষিত ফসলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়তা মূল্য চাষের খরচের উপর হিসেব করে তাতে ৫০ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি করাবেন।

এই ঢপের চপ কিন্তু অরুণ জেটলি ২০১৬-১৭ এর বাজেট থেকে কড়াইতে বারবার করে ভেজেছেন। প্রথমতঃ সরকার বলেছিল যে ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আর্থিক আয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে, আর এই বক্তব্য এই নিয়ে দুইবার সংসদে শোনানো হয়েছে। কিন্তু কৃষকদের এই আয় বাড়ানোর দাবি আসলে এতই বেশি ঠুনকো যে প্রথম বর্ষেই এর ফাঁপা শাঁসের ব্যাপারে জানা যায়। দুইটি কারণে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার দাবিটি অর্থনীতির সাধারণ সূত্রেই খন্ডনযোগ্য:

প্রথমতঃ ভারতবর্ষের ৪৯ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবি হওয়া সত্বেও দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে কৃষির অবদান কিন্তু কমতে কমতে  মাত্র ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে। এর সাথে সাথে কৃষির বৃদ্ধির হার, যা ২০১১ সালের ভিত্তিতে ধরলে ২.১ শতাংশের কাছাকাছি। যদি কৃষকদের আর্থিক আয় দ্বিগুণ করতে হয় তাহলে কৃষির বৃদ্ধির হার ১২.৪ শতাংশ হতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের বৃদ্ধির দর হুড়হুড় করে পড়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক আর্থিক তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের আস্থা থাকা সত্বেও ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনের বৃদ্ধির দর ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে ৬.৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় কৃষির মতন একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ খাতের বৃদ্ধি যদি ১২.৪ শতাংশে ঠেলে তুলতে হয় তাহলে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির দরকে চূড়ান্ত ভাবে বাড়িয়ে তুলতে হবে, যা একেবারেই অসম্ভব এবং এক আকাশ কুসুম কল্পনার নামান্তর।

দ্বিতীয়ত্বঃ ভারতবর্ষের আর্থিক সমীক্ষার হিসেবে ১৫টি রাজ্যের কৃষকের বাৎসরিক আয় গড়ে ₹২০,০০০ এবং ২০২২ সালে এই আয় কে যদি দ্বিগুণ করা যায় তাহলে তা দাঁড়াবে বাৎসরিক ₹৪০,০০০, অর্থাৎ যদি আমরা কৃষকদের আয় কে দ্বিগুণ করেও  তুলি, তাহলে গড়ে একটি কৃষক পরিবারের আয় হয়ে দাঁড়াবে মাসে ₹৩,৩৩৩।  আবার ২০২২ সালের মুদ্রাস্ফীতি ও প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির নিরিখে এই অর্থ বর্তমানের ₹২,৫০০ এর বেশি হবে না। অর্থাৎ পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষা করার পরেও কৃষকেরা থেকে যাবেন ঠিক সেই একই তিমিরে। তাঁদের আর্থিক অবস্থার কোন মূল পরিবর্তন হবে না।

এই ঢপের চপের  সাথে সাথে অরুণ জেটলি ঘোষণা করেছিলেন যে কৃষকদের জন্যে তাঁর সরকার এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যতে অঘোষিত শস্যের ক্ষেত্রে চাষের খরচের উপর ৫০ শতাংশ মুনাফা বৃদ্ধি করাবেন। আসলে এই প্রকল্পটি বিনা শর্তে প্রযোজ্য নয়। প্রথমত আমাদের বুঝতে হবে যে সমগ্র ভারতের মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কৃষকই  ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল বিক্রি করতে পারেন। এই সংখ্যার সিংহভাগ হল বৃহৎ সামন্তপ্রভুরা ও ধনী কৃষকেরা। মধ্য কৃষক, দরিদ্র কৃষকদের শুধু ফোঁড়েদের কাছে ফসল বিক্রি করে সন্তুষ্ট হতে হয় এবং সেই বিক্রির ফলেও তাঁদের প্রভূত ক্ষতি প্রতি বছর হয়েই থাকে, বিশেষ করে সবজি, আলু, তেলবীজ ইত্যাদি ফসলে। রাইস মিল মালিক থেকে গমের খরিদ্দার’রা কৃষকদের যতটা সম্ভব ঠকিয়ে এবং শোষণ করে ফসল হাতিয়ে নেয় এবং এর ফলে কৃষকদের আর্থিক দুর্দশার কোন সীমা থাকে না।

ফসলের উপর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট থেকে নেওয়া। স্বামীনাথন কমিশন দেশের কৃষকদের দুর্দশা নিয়ে সমীক্ষা করে একটি রিপোর্ট তৈরি করে যার মূল ছিল কৃষি ব্যবস্থার উপরিকাঠামোর সংস্কার। কংগ্রেসের শাসনকালে, ২০০৬ সালে, এই কমিটির রিপোর্ট কৃষকদের দুরাবস্থা কে দূর করার কিছু প্রস্তাব দেয় যা তৎকালীন সরকার ঠান্ডা ঘরে ফেলে দেয় এবং এই রিপোর্ট কে বাস্তবায়িত করার প্রতিশ্রুতি বিজেপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে দেয়।  

ক্ষমতায় আসার পরে নীতিগত স্তরে স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট নিয়ে মোদী সরকার ফিসফিস করে আলোচনা করলেও প্রয়োগের স্তরে কিছুই হয়নি। এই বারের বাজেট এই সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট এবং দেশের শাসকশ্রেণীর পেটোয়া সংবাদ মাধ্যম এই বাজেটের মধ্যে স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্ট কে প্রয়োগ করার আকাশ কুসুম গল্প শুনিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করলো যে বিজেপি সরকার নিজের প্রতিশ্রুতি মতন কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করার বন্দোবস্ত করেছে। তবে এই  স্বামীনাথন কমিশনের গালগল্প ঢাকঢোল পিটিয়ে শুনিয়েও মোদী সরকারের পক্ষে বেশিক্ষণ শাঁক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখা সম্ভব হয়নি।

স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব অনুসারে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যতে কৃষকদের চাষের গড়পড়তা সামগ্রিক খরচের অনুপাতে অন্তত ৫০ শতাংশ মুনাফা বেশি হওয়া উচিত; কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইস্তাহারে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তাঁরা চাষের খরচের উপর ৫০ শতাংশ লাভের বন্দোবস্ত করবে। এবার কৃষিতে খরচের কয়েকটি খাত স্বামীনাথনের রিপোর্টে উল্লেখিত হয়। এর মধ্যে “A2+FL” হল চাষের জন্যে করা খরচ, যেমন বীজের দাম, সার ও কীটনাশকের দাম, ট্রাক্টরের ভাড়া, সেচের খরচ এবং সর্বোপরি কৃষকের নিজের ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মজুরিহীন-শ্রমের আর্থিক মূল্য সমূহের যোগফল। এই  “A2+FL” চাষের সার্বিক খরচের একটা হিসেবে দিলেও এটা কোনমতেই চাষের সর্বাঙ্গীন খরচ নয় যা স্বামীনাথন কমিশনের রিপোর্ট - “C2” বলে উল্লেখিত করেছে।  এই “C2” হল চাষের সর্বাঙ্গীন খরচ, যা উপরোক্ত “A2+FL” এর সাথে চাষের জমির বাজারদরে ভাড়া, চাষের কাজে ব্যয় হওয়া ঋণের মূল ও সুদ ইত্যাদির যোগফল। ফলে  “C2”  কিন্তু  “A2+FL” এর চেয়ে আরও ব্যাপক ভাবে কৃষি খরচের সকল উপাদানের যোগফল কে নির্দিষ্ট করে এবং আমাদের কৃষির মূল খরচ কে অনুধাবন করতে সাহায্য করে।

মোদী সরকারের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের মাধ্যমে কৃষকদের তাঁদের চাষের খরচের উপর ৫০ শতাংশ লাভের গল্প আসলে “A2+FL” এর উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা চাষের খরচের উপর দেওয়া হবে। বর্তমানে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য এই “A2+FL” এর উপর ৪০ শতাংশ লাভ রেখে হিসেবে করা হয়ে থাকে তবে সেই হিসেবে কৃষকের ক্ষতি বেশি হয়। মোদী সরকার যদি এই লাভের উক্ত হার কে ৫০ শতাংশ করে তাহলে মাত্র ১০ শতাংশ আসল বৃদ্ধি হবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রধান ডাঃ স্বামীনাথনের মতে কৃষকদের চাষের খরচের “C2” এর উপর ৫০ শতাংশ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়া উচিত যাতে তাঁরা খেয়ে-পড়ে বাঁচতে পারেন।

তবে জোতদার-জমিদার ও মহাজনদের সামন্ততান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার রক্ষক বিজেপি কোন ভাবেই বড় বড় ফোঁড়েদের, মহাজনদের লাভের অঙ্ক কমিয়ে দিতে সরকারি ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে “C2” এর উপর হিসেবে কষে ৫০ শতাংশ মুনাফা বাড়াতে পারবে না।  কারণ তাতে বিজেপির মূল গ্রামীণ ভিত্তিটা কংগ্রেস বা অন্যান্য দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির দিকে ঝুঁকে যাবে।
কৃষকদের সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে যে আর একটা চতুর ছলনা অরুণ জেটলি করলেন তা হল কৃষকদের অঘোষিত শস্যের উপরই একমাত্র এই সহায়ক মূল্যের বৃদ্ধি করানো হল, অর্থাৎ আপনি যদি ঘোষিত শস্যের চাষ করেন, যেমন ধান বা জোয়ার, তাহলে কিন্তু আপনি কৃষকদরদী সাজা মোদী সরকারের সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির কোন লাভই ঘরে তুলতে পারবেন না।

এবার এই কৃষকদরদী সরকারের তথাকথিত কৃষকমুখী বাজেটের স্বরূপ কে দেখতে গেলে আপনাকে জানতে হবে যে আদতে এই বাজেটে কৃষির জন্যে ঠিক কত টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের মোট বাজেটের ২.৩৮ শতাংশ কৃষির জন্যে বরাদ্দ ছিল, ২০১৮-১৯ এর বাজেটে সেই বরাদ্দ কমে হল ২.৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ কৃষকের জন্যে বাজেট বলে সেই বাজেটে কৃষির জন্যেই বরাদ্দ হঠাৎ করে কম কেন করা হল? হয়তো বা এটাই মোদীর উন্নয়নের প্রকৃত মডেল।  

গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষের কৃষির মন্দার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় যে এমএনরেগা প্রকল্প (১০০ দিনের কাজ), তার বরাদ্দ ২০১৭-১৮ সালেও ছিল ₹৫৫,০০০ কোটি, আর ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষেও অরুণ জেটলি এই প্রকল্পের জন্যে এক পয়সাও বরাদ্দ বাড়াননি, যদিও এই প্রকল্পের ভরসায় কৃষিজীবি পরিবারের মানুষেরা বছরে নানা ভাবে ছোট ছোট প্রকল্পে শ্রম দিয়ে নিজেদের সংসার চালাতেন। বর্তমানে মোদী সরকার দুর্নীতি দমনের নাম করে এমএনরেগা প্রকল্পটি কে বিশ বাওঁ জলে ঠেলে দিয়েছে এবং এর সাথে সাথে গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষদের ঠেলে দিয়েছে এক অন্ধকার গহ্বরে।

রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষের সংশোধিত বরাদ্দ হলো ₹৪,৮০০ কোটি, যদিও কৃষি’র প্রতি দরদ দেখানো মোদী সরকার সেই খাতে ২০১৮-১৯ এর বাজেটে বরাদ্দ করেছে মাত্র ₹৩,৬০০ কোটি। এই বরাদ্দ কে যদি ভবিষ্যতে সংশোধিত অনুমানে বাড়ানো হয় তাহলেও সেই অর্থ ₹৪,০০০ কোটি টাকার বেশি যে বাড়বে না সে কথা বলাই বাহুল্য। ফলে কৃষির শ্রীবৃদ্ধির যে সকল বুলি মোদী সরকার ফোয়ারার মতন ছোটাচ্ছে তার ফল কিন্তু নেহাতই শূন্য হতে চলেছে।


কৃষকদের স্বল্প সুদে বা বিনা সুদে ঋণ দানের বা খারাপ ফলনের কারণে ঋণ মকুব করার কোন ঘোষণা মোদী সরকার করেনি। বিজেপি সরকার যদিও লোক দেখানোর জন্যে উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানে ঋণ মকুবের প্রকল্প নিয়েছে, তবে তা কৃষকদের একটি ভীষণ ছোট অংশ’কেই প্রভাবিত করতে পারবে। গ্রামাঞ্চলে একমাত্র জোতদার-জমিদার ও ধনী কৃষকরা সরকারি এবং প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিতে পারে, আর মধ্য কৃষক, দরিদ্র কৃষক ও ভূমিহীন কৃষকেরা কিন্তু সেই সুযোগ কখনোই পাননা। ফলে গরিব ও মধ্য কৃষকদের নিজ খরচ চালানোর জন্যে, চাষ করার জন্যে, সন্তানদের পড়াশুনো, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খরচ বা বিয়ের খরচ মেটাতে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার দ্বারা সৃষ্ট কুচক্রী সকল মহাজন ও সাহুকারদের সামনে হাত পাততে হয়।

চড়া সুদে টাকা ঋণ নিয়ে কৃষকেরা আর কোন ভাবেই তা পরিশোধ করতে পেরে ওঠেন না এবং তার ফলে নিজ জমি থেকে তাঁদের উৎখাত করে দেওয়া হয়। মহাজনদের এই দাপট কে ভাঙ্গার সাহস অতীতের কোন সরকারই আর দেখাতে পারেনি এবং তেমনিই এবারের বাজেটে কৃষকদের ঋণের সমস্যা সমাধান করার কোন কথা না বলে, দরিদ্র ও মধ্য কৃষকদের জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক স্বল্প বা বিনা সুদের ঋণের কথা না বলে নরেন্দ্র মোদী সরকার যে ভাবে নিজেদের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট কে কৃষক দরদী সাজাবার চেষ্টা করলো তা ঢপের চপ বেচার চেয়ে কোন অংশে কম নয়।

ঢপের চপ নং ২: স্বাস্থ্য বীমা যোজনা


মোদী সরকার ঘোষণা করেছে যে দেশের ১০ কোটি গরিব পরিবার কে, পরিবার পিছু ₹৫ লক্ষ করে স্বাস্থ্য বীমা দেওয়া হবে এবং এর ফলে গড়ে পাঁচ জন সদস্য এক-একটি পরিবারে থাকে বলে ধরে নিলে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ এই প্রকল্পের অধীনে আসবেন। ধরেই নিলাম যে ভীষণ সাধু উদ্যোগ, বিশেষ করে যখন দেশের ছয় লক্ষ মানুষ প্রতিবছর “পকেটের খরচের” কারণে দারিদ্র সীমার নীচে স্খলিত হন। কিন্তু যেহেতু নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির ঢোল বাজিয়ে মোদী সরকার জনগণ কে সরকারি খরচে স্বাস্থ্য বীমা দেওয়ার ওবামীয় প্রকল্পের একটি ভারতীয় সংস্করণ ভারতে চালাবার চেষ্টা করছে তখন অনেক প্রশ্ন মনের মধ্যে না জেগে পারছে না।

প্রথমতঃ  এই প্রকল্পের খরচ কে যোগাবে? স্বাস্থ্য একটি রাজ্যের তালিকাভুক্ত বিষয় এবং রাজ্য সরকার কে বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কি ভাবে কোন স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু করতে পারে? এনডিটিভি ২৪x ৭ চ্যানেল দ্বারা অনুষ্ঠিত একটি আলোচনা সভায় পশ্চিমবঙ্গের অর্থ মন্ত্রী অমিত মিত্র প্রশ্ন তোলেন যে এই প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ মাত্র ₹২,০০০ কোটি কেন? যদি ২,০০০ কোটি কে ৫০ কোটি মানুষের মাথা পিছু ভাগ করা হয় তাহলে বাৎসরিক ₹৪০ টাকা হয়। এই ₹৪০ বীমা প্রিমিয়াম দিয়ে ₹৫০০,০০০ বীমা অঙ্কের বরাদ্দ করা সম্ভব কি করে - যখন বিশেষ করে একটি পরিবারে নানা বয়সের মানুষের উপস্থিতি থাকে এবং সকল বয়সের “স্বাস্থ্য ঝুঁকি” একে অপরের চেয়ে একেবারে আলাদা? কি করে সম্ভব এত অল্প বরাদ্দ দিয়ে এত বড় প্রকল্প চালানো?

আমরা যদি একটু গভীরে গিয়ে দেখার চেষ্টা করি তাহলে দেখতে পাব যে আদতে সরকারি ভাবে প্রচলিত স্বাস্থ্য বীমার মধ্যে প্রধান ছিল রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনা যা ইউপিএ -১ এর আমলে, ২০০৮ সালের থেকে শ্রমজীবি মানুষের চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ চালানোর জন্যে চালু করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক। এই প্রকল্পে মূলতঃ গরিব শ্রমজীবি মানুষদের ₹৩০,০০০ অবধি স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা দেওয়া হয়। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করার সময়ে অরুণ জেটলি এই প্রকল্প কে নয়া ভাবে প্রস্তুত করে জন সমক্ষে নিয়ে আসেন। ২০১৬ সাল অবধি সাড়ে ছয় লক্ষ পরিবারের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় চার কোটি দশ লক্ষ পরিবার কে এই প্রকল্পের অধীনে আনা যায়, অর্থাৎ প্রায় ১৫ কোটি মানুষ কে এই প্রকল্পে যুক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠে। ভারতের ৬২৫টি জেলার ৫২০টি জেলা এই প্রকল্পের অধীনে আসে। এই সময়েই অরুণ জেটলি এই প্রকল্পের বীমা রাশি ₹৩০,০০০ টাকার থেকে বৃদ্ধি করে ₹১০০,০০০ করার কথা প্রস্তাবনা করেন।

২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের জন্যে নরেন্দ্র মোদী সরকার বরাদ্দ করেছিল ₹১,৫০০ কোটি আর এই প্রকল্পের আসল দাবি করা অর্থের পরিমাণ যদিও ₹৩০,০০০ থেকে বেড়ে ₹১০০,০০০ হতে পারেনি, তবুও হঠাৎ কিসের ভরসায় মাত্র ₹৫০০ কোটি বেশি দিয়ে ৫০ কোটি মানুষ কে ₹৫০০,০০০ টাকার বীমা প্রকল্পের অধীনে আনা যাবে তা কিন্তু এক এমন অদ্ভুত প্রশ্ন হয়ে থেকে যাবে যার জবাব কারুরই জানা থাকবে না। তবুও বাজেট অধিবেশনের পরেই, ১লা ফেব্রুয়ারি টিভি সাক্ষাৎকারে মোদী সরকারের নীতি আয়োগের প্রধান অমিতাভ কান্ত বলেছিলেন যে মোদী সরকার এই প্রকল্পের ৬০ শতাংশ খরচ বহন করবে এবং রাজ্য কে ৪০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। এই ভাবে রাজ্যের কাঁধে বন্দুক রেখে নিজ রাজনৈতিক অভিসন্ধি পূরণ করার ঘৃণ্য চেষ্টা করে মোদী সরকার কিন্তু নিজেরই রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা কে আরও একবার সুস্পষ্ট করে জনসমক্ষে তুলে ধরলো।

এই স্বাস্থ্য বীমা যোজনার থেকে বেরিয়ে আসার বলিষ্ঠ ঘোষণা মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার আগেই করে দিয়েছেন। তামিলনাড়ু ও কেরলে অনেক আগের থেকেই সরকারি স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প চলছে এবং সরকারি হাসপাতালগুলোয় এই পরিষেবা রুগীদের দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু কয়েকটি রাজ্য বাদে দেশের বেশির ভাগ রাজ্যে বিজেপির সরকার তাই এখনই  এই প্রকল্প কে অন্য রাজ্যে চালাতে বিজেপি কে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই রকম একটি স্বাস্থ্য বীমা যোজনা বেচে সরকার কি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিজ দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হতে পারবে?

ভারতবর্ষের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সরকারের জনস্বাস্থ্যের খাতে টাকা খরচ করতে অনীহা। একটি সর্বজনীন, স্বতঃপ্রণোদিত এবং চরম প্রতিষেধক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কে গড়ে না তুললে, গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শহর, মহকুমা, জেলা ও রাজ্য স্তরে জনতার টাকায় চলা হাসপাতালগুলোর পরিকাঠামো কে উন্নত না করলে, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা-বিজ্ঞানের শিক্ষা কে প্রসারিত করে দেশে প্রচুর সংখ্যার গুণসম্পন্ন ডাক্তার না বানাতে পারলে, প্রতিটি এমবিবিএস থেকে স্পেশালিস্ট ডাক্তার কে ডিগ্রি বজায় রাখতে অন্তত পক্ষে পাঁচ বছর করে গ্রামাঞ্চলে প্রতিষেধক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কাজ করতে বাধ্য না করাতে পারলে, সরকারি খরচে সমস্ত ধরণের আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা করে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর চড়া দামে সেই পরিষেবাগুলোর কালোবাজারি করা কে ধ্বংস না করলে, এবং সমস্ত ওষুধ ও পথ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে ভারতের মতন একটি বিবিধ, কৃষি-প্রধান, বিশাল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের - শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি জনতার স্বাস্থ্য কে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

অথচ, বছরের পর বছর, একের পর এক নানা রঙের আর নানা ঢঙের সরকারগুলো জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কে ধ্বংস করতে কোন সুযোগই ছাড়েনি। সরকারি হাসপাতালগুলোর পরিকাঠামো কে জেনেশুনে ধ্বংস করে, সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাক্তার, নার্স ও সহকারী কর্মী না রেখে, সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির উন্নয়ন না করে, নানা ধরণের ওষুধের দামের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে এবং সর্বোপরি কম পয়সায়, গরিবের জমি ঠকিয়ে কেড়ে নিয়ে বৃহৎ দেশি ও বিদেশী কর্পোরেশনগুলো কে রক্তচোষা বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে মানুষ কে শোষণ করতে দিয়ে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কে তিল-তিল করে ধ্বংস করা হয়েছে। বর্তমানে সরকারের পক্ষে এই সকল বড় কর্পোরেশনগুলোকে, বৃহৎ মুৎসুদ্দি দালাল পুঁজিপতিদের চটানো সম্ভব নয়।  এর ফলে সরকার কোন ভাবেই এই রক্তচোষা হাসপাতালগুলো কে জাতীয়করণ করে জনগণ কে সমর্পিত করতে পারবে না। তাই দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা পাঁকে ডুবেই শ্বাস বন্ধ হয়ে মরবে আর মরবে গরিব মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, দানা মাঝির মতন মানুষ যাঁরা নিজের পরিজনের মৃতদেহ পিঠে করে ছুটবে, কোটি কোটি গরিব মানুষ পিঠে করে ছুটবে মৃত পুঁতিগন্ধময় আমাদের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার শব।
জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কে ঢেলে না সাজিয়ে সেই জায়গায় বৃহৎ দেশি-বিদেশী লগ্নি পুঁজির মালিকানাধীন বীমা কোম্পানিগুলো কে স্বাস্থ্য বীমা বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা কামাবার সুযোগ করে দিয়ে আসলে মোদী সরকার জনগণ কে ঢপের চপ খাইয়ে নিজের মালিকদের হাতে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য কে তুলে দিচ্ছে। এই মানুষের স্বাস্থ্যের সাথে কদর্য খেলা চলছে গরিবের সেবা করার নাম নিয়ে, আর এই ভাবে গরিব মানুষ কে ভাতে মেরে, জলে মেরে, নিশ্বাসে বিষ দিয়ে মেরে এবার তাঁর স্বাস্থ্যের থেকেও মুনাফা কামিয়ে ভারতের শাসক শ্রেণী আরও ফুলে ফেঁপে উঠবে আর মোদী সরকার ভেজে যাবে ঢপের চপ।

বর্তমানে এই রাজনৈতিক ঢপের চপের সমাধান কোন ধরণের নির্বাচনী ভাঁওতাবাজির দ্বারা সম্ভব নয়, কারণ শুধু বিজেপি বা নরেন্দ্র মোদীই নয় বরং ডান-বাম মিলিয়ে সকল ধরণের সংসদীয় রাজনৈতিক দলই তাঁদের টিকি বেঁধে রেখেছে মার্কিন একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির নেতৃত্বাধীন বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ ও ডব্লিউটিও’র মতন সাম্রাজ্যবাদী সংস্থাগুলোর কাছে। এদের রাজনীতি ওই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বার্থেই পরিচালিত হয়। তাই এদের রঙ আলাদা হলেও, এদের ঢং আলাদা হলেও, এরা আদতে সব এক। এদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্ধ পুঁজির বিভিন্ন গোষ্ঠীর নিজস্ব দ্বন্ধের প্রতিফলন, আর এর ফলে এই দলগুলির কোনটি যদি আগামীদিনে ভারতবর্ষে মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি কে ভোটে হারিয়ে সরকার গড়েও ফেলে, তবুও ভারতবর্ষে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ সকল ক্ষেত্রেই সঙ্কট ঘনীভূত হতে থাকবে।  কারণ এই সঙ্কট পুঁজির অভ্যন্তরীন সঙ্কট আর এর থেকে পরিত্রান পাওয়া যেতে পারে একমাত্র বিপ্লবী সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের নিজস্ব সরকার ও রাষ্ট্র গড়ে তুলে; পুঁজির এক দালাল কে সরিয়ে অন্য দালাল কে সিংহাসনে বসিয়ে নয়।

যতদিন পর্যন্ত জনগণের নিজ রাষ্ট্র ও সরকার গড়ার স্বার্থে সঠিক ভাবে এক বৃহৎ সংগ্রাম গড়ে তোলা না যাচ্ছে, যতদিন পর্যন্ত খেটে খাওয়া মানুষ কে বিজেপি’র ঘৃণ্য রাজনীতির স্বরূপ চিনিয়ে দেশের মাটি, জল, আকাশ আর সম্পদের উপর বিদেশী কর্পোরেট শক্তির আগ্রাসন কে না রোখা যাচ্ছে, ততদিন কিন্তু নানা ধরণের ভড়ং বাজি করে নিজেকে গরিব দরদী সাজিয়ে বৃহৎ একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির সেবা নরেন্দ্র মোদী ও তার মোসাহেবেরা করে যাবে। ঢপের চপ খাইয়ে জনগণ কে মারার চেষ্টা কে বন্ধ করার দ্বায়িত্ব আজ আমাদের সকলের আর এই কাজে গড়িমসি করলে জনগণ এবং ইতিহাস আমাদের কোন কালেই ক্ষমা করবে না।

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে