অমিত শাহ ও বিজেপির এনআরসি আর নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কাটাছেঁড়া

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ২৪, ২০১৯ 0 Comments A+ a-

মোদী ও অমিত শাহের বঙ্গ ভঙ্গ রাজনীতি

কিছুদিন আগে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ মালদায় এসে দলীয় সভা করে বাংলা দখল করার স্বপ্নের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালেন। ১৯শে ফেব্রুয়ারি চার লক্ষ মানুষের জমায়েত করিয়ে ব্রিগেড সমাবেশে মমতা বন্দোপাধ্যায় যে ভাবে ২২-২৩টি ছোট-মাঝারি-বড় বিজেপি-বিরোধী দল কে একত্রিত করে মোদী সরকারের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে নিজের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অভিলাষা কে সুপ্ত ভাবে প্রকাশিত করলেন, তাতে বিজেপি'র অনেক হিসেবেই ভণ্ডুল হতে পারে। এই ব্রিগেড সমাবেশের পর থেকেই বিরোধী ঐক্য কে কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির তাবড় নেতারা একের পর এক ভাষণ দিয়ে জনতা কে বোঝাবার চেষ্টা করছেন যে মোদীর কোন বিকল্প হয় না। এরই মাঝে অমিত শাহের বাংলায় আগমন কয়েকটা কারণে ভীষণ চর্চিত হয়ে ওঠে এবং তাই এই সফরের পিছনের রাজনীতিকে গভীরে গিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে।

ডিসেম্বর মাসে বিজেপি'র বহু চর্চিত তিনটি রথ যাত্রা কে জনতার চাপে আদালত কে নিষিদ্ধ করতে হয় এবং এর ফলে অমিত শাহের রাজ্যে এসে ঘটা করে মন্দিরের ঘণ্টা বাজিয়ে বিজেপি'র ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফেব্রুয়ারি মাসে জল মাপতে নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে সভা করতে আসতে চেয়েছিলেন। বিজেপি'র পরিকল্পনা হলো হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়ে, সাম্প্রদায়িক হানাহানি লাগিয়ে যে করেই হোক পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের ২২টি জিতে সর্ব বৃহৎ দল হওয়া। অথচ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দ্বারা যে ভাবে সরকারি শক্তি ব্যবহার করে চার লক্ষ মানুষের ভিড় জোগাড় করা সম্ভব সেই ভাবে নরেন্দ্র মোদী’র দ্বারা বা বিজেপি'র দ্বারা তৃণমূল শাসিত পশ্চিমবঙ্গে বাস, ট্রেন ও ট্রাক বোঝাই করে লোক আনা সম্ভব নয়। তাই রাজ্য বিজেপি কায়দা করে নরেন্দ্র মোদী'র সভা পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আর ফাঁকে এসে অমিত শাহ সংখ্যালঘু মুসলিম জনবহুল মালদা জেলায় সমাবেশ করে হিন্দুত্ববাদী জিগির তুলে গেলেন আর তরুপের তাসের মতন ব্যবহার করলেন এনআরসি ও নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৬’র মতন জনবিরোধী অস্ত্রগুলি।

অমিত শাহ বললেন যে আসামে এনআরসি প্রক্রিয়ায় নাম বাদ চলে যাওয়ায় কোন বাঙালি হিন্দু কে আতঙ্কিত হতে হবে না, মোদী সরকার নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৬ ব্যবহার করে তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়াবে। এই ভাষণে তিনি বলেন যে “হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ কারুরই এনআরসি নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।” এই কথা তিনি ঠিক এমন সময়ে বললেন যখন শুধু আসাম নয় বরং সমগ্র উত্তর পূর্ব ভারত জুড়ে চলছে নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৬ বিরোধী এক সুতীব্র আন্দোলন। বিজেপি'র সঙ্গ ত্যাগ করে অগপ’র মতন তীব্র অহমীয় উগ্র জাতীয়তাবাদী দলগুলি কিন্তু আজ বিরোধী শিবিরে যোগদান করেছে। মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, প্রভৃতি রাজ্যে এই বিলের বিরোধিতা করেছে বিজেপি'রই জোট সঙ্গীরা।

এরই মধ্যে আসামে বিজেপি'র অভ্যন্তরে বাঙালি হিন্দু বনাম আসামি বিরোধ তীব্র হয়ে ওঠায় হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মতন সংঘের সবচেয়ে নাম করা নেতাদেরও রাম মাধবের মতন আরএসএস নেতাদের শরণাপন্ন হতে হয়। রাম মাধবের নেতৃত্বে বিজেপির নেতারা আসামে যখন দ্বন্ধ নিরসনে ব্যস্ত ঠিক তখন বিজেপি সভাপতি বাংলা'র মাটিতে দাঁড়িয়ে কেন হঠাৎ করে আগুনে ঘি ঢালার কাজ করলেন জোর গলায় ঘোষণা করে যে সমস্ত বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা বাঙালি হিন্দুদের সরকার আইন করে নাগরিকত্ব দেবে? বিজেপি’র কি আসাম, ত্রিপুরা সহ অন্যান্য উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিতে নিজের শক্তি ধরে রাখার কোন ইচ্ছা নেই? বিজেপি কি বাঙালি ভোট পেতে সমগ্র উত্তরপূর্বে নিজের জমি হারিয়ে দিতে রাজি? এটা কি বিজেপি'র নতুন বাঙালি প্রেম?

আসলে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের এই বাঙালি হিন্দু প্রীতি দেখানো আর মোদী সরকারের নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৬, পাশ করানোর প্রচেষ্টার মধ্যে নিহিত আছে এক গূঢ়  অভিসন্ধি। প্রথমতঃ অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী সহ সমগ্র সংঘ পরিবার জানে যে সংবিধানের ধারা ১৪ অনুসারে ভারত রাষ্ট্র মানুষের মধ্যে (নাগরিক ও অনাগরিক নির্বিশেষে) ধর্ম, জাতি, ইত্যাদির ভিত্তিতে কোন ধরণের প্রভেদ করতে পারবে না। সেই জায়গায় একটি ধর্মের মানুষ কে নাগরিকত্ব থেকে বেছে বেছে বঞ্চিত করার পরিকল্পনা আসলে সংবিধানের ভিত্তিকেই আক্রমণ করে। এই কারণেই দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ে চ্যালেঞ্জ করা হলে এই আইন ধোপেও টিকবে না।

দ্বিতীয়তঃ এনআরসি’র ভিত্তি হলো আসাম চুক্তি ১৯৮৫, আর এই চুক্তি অনুসারে আসামে ২৪শে মার্চ ১৯৭১ এর পর থেকে প্রবেশ করা মানুষদের বিদেশী হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তাঁদের নাগরিকত্ব খারিজ করা হবে। জনবিরোধী ও তীব্র জাতি-বিদ্বেষী (পড়ুন বাঙালি বিদ্বেষী) এই এনআরসি কে বিজেপি পূর্ণ সমর্থন করে, তবে ধর্মের ভিত্তিতে। এই এনআরসি’র চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় নাম ওঠেনি ৩.২ কোটি মানুষের মধ্যে ৪০ লক্ষ মানুষের, যাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই বাঙালি, হিন্দু ও মুসলিম উভয়ই। এবার বিজেপি'র আনা নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৬, অনুসারে মুসলিম বাদে যে সকল উদ্বাস্তু মানুষ বাংলাদেশ থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে এসেছেন তাঁরাই নাগরিকত্ব লাভ করবেন।

যদি বিজেপি'র আনা সংশোধনী আইন মেনে নাগরিকত্বের শেষ দিন নতুন ভাবে নির্ধারণ করা হয় তাহলে বাঙালি মুসলিমরা কেন ২৪শে মার্চ ১৯৭১ এর হিসেবে ‘বিদেশী’ হিসেবে গণ্য হয়ে নিজেদের অধিকার হারাবেন? কী কারণে মুসলিমদের সাথেই শুধু আসাম চুক্তি, ১৯৮৫, অনুসারে বিমাতৃসুলভ ব্যবহার করা হবে? কেন ভারতের সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা কে এই নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৬, এর মাধ্যমে লঙ্ঘন করা হবে? এই সমস্ত প্রশ্নগুলো উঠলে বিজেপি বা তার ভাড়াটে বাহিনীর পক্ষে জবাব দেওয়া সম্ভব না, শুধুই ধর্মীয় ঘৃণার জিগির তুলে এক দল লোককে ক্ষেপিয়ে তুলে মেরুকরণ করার চেষ্টা চালানোই বিজেপি ও মোদী সরকারের পক্ষে সম্ভব। আর আজ আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে তাই করার চেষ্টা তারা চালাচ্ছে।

এবার ধরুন বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমের প্রশ্নে। ইসলামিক ফ্যাসিবাদের অত্যাচার থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আর তারপরে বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসামে এসেছেন লক্ষ লক্ষ বাঙালি হিন্দুরা। আসামে বহু বাঙালি মুসলিমরাও এসেছেন একটু রোজগারের আশায়, একটু পেট ভরে দুই বেলা খেতে পাওয়ার আশায়। তবে উদ্বাস্তু মুসলিমদের থেকে আসামে ব্রিটিশ শাসকদের দ্বারা উত্তরবঙ্গের থেকে, বিশেষ করে বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলাগুলি থেকে বহু মুসলিম কৃষক পরিবার কে আসামে নিয়ে আসা হয় ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে যাতে তারা চাষাবাদ করে সরকারের খাজনা বাড়াতে পারে। তাই দক্ষিণ আসামের বা নমনি আসামের বহু জেলায় মুসলিম বাঙালিদের সংখ্যা বেশি। তেমনি শিলচর সহ সমগ্র বরাক উপত্যকায় বাঙালি হিন্দুদের সংখ্যা অনেক বেশি।

বাংলাদেশ থেকে ইসলামিক ফ্যাসিস্ট আক্রমণের কারণে ছিন্নমূল হয়েছেন যে সমস্ত বাঙালি হিন্দুরা, ঐতিহাসিক কারণেই তাদের একটা অংশ এখনো একটা ইসলাম বিদ্বেষে ভোগেন এবং তাই তাদের পক্ষে স্বাভাবিক ভাবে বাঙালি মুসলিমদের সাথে মিলেমিশে থাকা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে পড়ে, ফলে তাঁরা অচিরেই বিভেদকামী ও বাঙালি-বিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী শক্তির হাতের পুতুল হয়ে ওঠা শুরু করেন। অনেক বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুরা বিজেপির প্রচারের বিরুদ্ধে গিয়েও তাদের বাঙালি ঐতিহ্য কে বাঁচিয়ে রেখেছেন এবং বাঙালি মুসলিমদের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছেন হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ কে ও অহমীয় উগ্র জাতীয়তাবাদীদের পরাস্ত করতে।  

নিজের জন্মভূমিতে, নিজের মাটিতে মানুষের যদি দুই বেলার আহারের বন্দোবস্ত হয়, তাঁদের মাথার উপর যদি ছাদ থাকে আর তাঁদের প্রাণ যদি নিরাপদে থাকে তাহলে সেই মানুষদের কোন ভাবেই ছিন্নমূল হয়ে ভেসে বেড়াতে হয় না। ১৯৭১ সালের পর থেকেই ভারতের নয়া উপনিবেশ হিসেবে বাংলাদেশ টিকে আছে আর তাই অনেক বাঙালি মুসলিম ও হিন্দুরা কৃত্রিম সীমানা পেরিয়ে নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যে দুই বেলা করে কম্মে খেতে আসামে এসেছেন। এই বাঙালি মুসলিম ও আসামে যুগ যুগ ধরে শোষণ, বঞ্চনা ও অত্যাচার সয়ে বাস করা বাঙালি মুসলিমেরা মিলে একটা বড় ভোট ব্যাঙ্কে পরিণত হয়েছেন এবং এই ভোট ব্যাঙ্কটা থাকলে বিজেপি বা অহমীয় উগ্র জাতীয়তাবাদীদের ভোটে সুবিধা করা মুশকিল আর তাই এই ভোট ব্যাঙ্ক ভাঙ্গা এদের দুইজনের পক্ষেই প্রচন্ড দরকারি।

তাই এনআরসি দিয়ে যখন অহমীয় উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তি ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালিদের জোর করে আসামের থেকে ভিটেচ্যুত করে আবার একবার উদ্বাস্তু বানাতে চায়, ঠিক তখনই বিজেপি চেষ্টা করে নেপোয় মারে দই’র মতন জোর করে বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব প্রদান করে অহমীয় উগ্র জাতীয়তাবাদীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বাঙালি মুসলিমদের করতে চায়। এতে বিজেপি'র এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব হবে।

অহমীয় ও বাঙালি মুসলিম মিলিয়ে দেখলে আসামে মুসলিম জনসংখ্যা ভোটের ফলাফল নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের অর্ধেকের বেশি কে যদি ভোটার তালিকা থেকেই বাদ দেওয়া যায় তাহলেও কিন্তু বিজেপি বা অহমীয় উগ্র জাতীয়তাবাদীদের অনেক লাভ। আর যদি আসামে কয়েক লক্ষ বাঙালি হিন্দু ভোটার কে নাগরিকত্ব দিয়ে থিতু করানো যায় তাহলে সেই পথ ধরে পশ্চিমবঙ্গের উদ্বাস্তু বাঙালি হিন্দুদের কাছেও বিজেপি নিজের গ্রহণ যোগ্যতা বাড়িয়ে তুলতে পারবে। আসামের জনসংখ্যায় বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুদের যদি একটি প্রকান্ড শক্তি হিসেবে স্থাপন করা যায় তাহলেই পশ্চিমবঙ্গে ও ত্রিপুরায় বিজেপির পোয়াবারো হবে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা আসন সংখ্যা হলো ৪২ আর সমগ্র উত্তরপূর্বের সাত ভগিনী রাজ্যের মিলিত লোকসভা আসন সংখ্যা হলো ২২। ফলে বিজেপি'র পক্ষে বাঙালি আর বিশেষ করে বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তু ভোট ব্যাঙ্কটিকে স্বযত্নে লালনপালন করা ও সাম্প্রদায়িক গরল ঢেলে এই সম্প্রদায়টিকে বাঙালি মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাঁতিয়ে তোলা অত্যন্ত লাভজনক। এরই সাথে সমগ্র উত্তরপূর্বে আদিবাসী, উপজাতি খ্রিস্টান ও পেগান জনগণের উপর হিন্দুত্ববাদের প্রতিপত্তি কায়েম করার জন্যেও কিন্তু বাঙালি হিন্দুদের ব্যবহার করা যাবে খুবই সহজে।

অনেকে যদি মনে করে থাকে যে বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তুরা বিজেপির নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৬, এর মাধ্যমে লাভবান হবেন তাহলে তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। বাঙালি হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেয়ে বেশি একটা ভোট ব্যাঙ্ক বানানো, মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ধ্বংস করা ও এই বাঙালি হিন্দু বনাম বাঙালি মুসলিম দ্বন্ধের সুযোগ নিয়ে সমস্ত উত্তরপূর্বের থেকে সম্পদ লুঠ করার প্রক্রিয়া কে তীব্র করে তুলবে বিজেপি আর এর লাভ তুলবে হাতেগোনা কিছু হিন্দি-ভাষী বেনিয়া মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিরা ও তাঁদের মালিক - বৃহৎ বিদেশী একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজি।

আজ সঠিক লাইন এনআরসি বিরোধিতা করা ও নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৬ সমর্থন করা নয়, আজ সঠিক লাইন নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৬ বিরোধিতা ও এনআরসি সমর্থন করাও নয়। সঠিক লাইন হলো গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে, অর্থনৈতিক সমতা ও জনতার হাতে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ক্ষমতার জন্যে বৃহৎ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে তোলা আর এই কাজে আসামে ও পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করা সকল গরিব মানুষের অংশগ্রহণ খুবই জরুরী। এই অংশগ্রহণ করাবার জন্যে প্রথমে খেটে খাওয়া গরিব বাঙালি হিন্দু, বাঙালি মুসলিম, বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ, বিভিন্ন  জনজাতির মানুষ ও অহমীয় হিন্দু ও মুসলিমদের একত্রিত করতে হবে কে আসল মিত্র আর কে আসল শত্রু তা চিনিয়ে দিয়ে।

জনগণ যদি শ্রেণীসংগ্রামের রাজনীতি কে  আঁকড়ে ধরতে পারেন, একটি প্রগতিশীল, বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব যদি জনগণ কে আগুয়ান হয়ে পথ দেখাতে পারে, নিজ সৃজনশীল দক্ষতা কে ব্যবহার করে যদি ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রাম কে সঠিক রণনীতি ও রণকৌশল অনুসরন করে পরিচালনা করা যায় তাহলে অমিত শাহের বাঙালি মননে ও চেতনায় বিরাজ করে রাজত্ব করার সাধ ঘুঁচিয়ে দেওয়া সম্ভব।

২২-২৩টি সংসদীয় দলের রামধনু রঙের সুবিধাবাদী জোটের দ্বারা ভোটের মাঠে বিজেপি কে কোথাও কোথাও ল্যাং মারা সম্ভব হলেও, আরএসএস দ্বারা প্রচারিত মুসলিম-বিদ্বেষ ও হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদী রাজনীতির রেশ কিন্তু কাটবে না বরং তলে তলে বেড়ে চলবে আর পাঁচ বছর পরে আবার পুনরায় তীব্র শক্তি নিয়ে ফিরে আসার চেষ্টা চালাবে। তাই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ কে খতম করার পথ হলো গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং যে সকল উৎপাদন সম্পর্ক এই শত্রুদের সমর্থন করছে ও রসদ যোগাচ্ছে তাদের উৎখাত করা।

অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদী'র বাংলা কে দখল করে নিজেদের ঘাঁটি বানানোর প্রচেষ্টা কে  রুখে দিতে, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ সহ নানা জায়গায় বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা কে আটকাতে আজ এক বৃহৎ ও ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম দরকার, যে সংগ্রাম এই বিজেপি ও আরএসএস এর সরবাহ লাইনকে কাটতে সক্ষম হবে ও বাংলার রাজনৈতিক পুণ্য ভূমিতে সাম্প্রদায়িক হিংসা, বিদ্বেষ ও মানুষে-মানুষে বিভেদের রাজনীতি’কে  চিতা কাঠে তুলতে পারবে। সেই সংগ্রাম গড়ে তোলার লক্ষ্যে আজ সমস্ত গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল ফ্যাসিবিরোধী মানুষ কে একত্রিত করে পথে নামতে হবেই। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, আর তাই আমাদের লেনিনের মহান উক্তি - “বিলম্ব মানেই মৃত্যু” মনে রেখে নিজেদের গতি ও মনের প্রসারতা, দুটোই বাড়াতে হবে।

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে