নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০'র (NEP 2020) বিরুদ্ধে আজ আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নেই

মঙ্গলবার, আগস্ট ০৪, ২০২০ 0 Comments A+ a-

নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০, NEP 2020

নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ (NEP 2020)  ঘোষণা করল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী'র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি'র (বিজেপি) সরকার। নয়া শিক্ষানীতিতে স্কুল এবং উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কারমুখী পদ্ধক্ষেপ গ্রহণ করা হলো। শিক্ষা নীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের অধিকার শুধু মাত্র কেন্দ্রের কুক্ষিগত করা হলো।

সরকার এই শিক্ষানীতি কে ছাত্র-ছাত্রীদের সুশিক্ষা ও ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলের কথা বললেও আসলে এই শিক্ষানীতির দ্বারা শিক্ষাক্ষেত্র কে বেসরকারিকরণ ও মুক্ত চিন্তার পরিসর কে শেষ করে যান্ত্রিকতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এই শিক্ষানীতিতে অন্তর্ভুক্ত ভোকেশনাল এডুকেশন ও স্কুল স্তরে পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করে মূল ধারনায় নামিয়ে আনার মানে ছাত্র-ছাত্রী দের যন্ত্রে পরিণত করা। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা'র (WTO) শিক্ষানীতি মেনে স্কিলড লেবার বা দক্ষ শ্রমিক  তৈরীর চক্রান্ত ও দেশের হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স কে গুরুত্ব না দিয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলিতে সস্তায় খাটানোর জন্য স্কিলড লেবার তৈরী করা, এই হলো এই শিক্ষানীতির মূল লক্ষ্য।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচলিত অর্থনৈতিক বৈষম্য কে, সরকারি এবং বেসরকারি নির্বিশেষে সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অভিন্ন রেগুলেশন চালু, আঞ্চলিক ভাষায় অনলাইন কোর্সে জোর ও ই-লাইব্রেরিতে জোর দিয়ে, আরো তীব্র করে তোলা হলো।

শুধুমাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মাতৃভাষায় জোর দিয়ে সরকার মাতৃভাষায় সকল স্তরে শিক্ষা গ্রহণের ও শিক্ষান্তে কাজের অধিকার ও দাবিকে নাকচ করে দিল। এবং এমফিল তুলে দিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী এক বছরের জন্য করে দিয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থাকে শেষ করে দিলো। আগেই CBCS সিস্টেম এর মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রকে বেসরকারি কোম্পানির অধীনে নিয়ে চলে এসেছে সরকার।

"এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত" এর আওতায় ৬-৮ ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রজেক্ট এর অপশন দিয়ে আসলে তাদের মধ্যে বিজেপির "এক দেশ, এক আইন, এক ভাষা" এই প্রচার ও শিক্ষাক্ষেত্রে গৌরিকিকরণ এর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সংস্কৃত ভাষা কে প্রায় বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে ঘুরিয়ে অহিন্দিভাষীদের উপর হিন্দি চাপিয়ে দিতে চাইছে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের অভীষ্ট অর্জন করতে।

গরীবের উপর লেখাপড়া করার বোঝা বাড়াতে ১২ বছরের প্রচলিত স্কুল শিক্ষা কে ৫+৩+৩+৪ এর ভিত্তিতে ১৫ বছরের যেমন করে দেওয়া হল তেমনি শিশু শ্রমের বয়েসের সীমারেখা পার করেই যাতে গরীব কিশোরেরা লেখাপড়া ছেড়ে দেয় তার ব্যবস্থা করে রাখলো এই জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০। ক্লাস নাইন থেকে টুয়েলভ চারটি সেমিস্টার। উচ্চমাধ্যমিকে, কলা ও বিজ্ঞানে কোনো ভেদ থাকবে না। স্নাতক স্তরে পুরো কোর্স না করেই পাওয়া যাবে সার্টিফিকেট। এই সবের ফলে গরীবের পড়াশুনো অসমাপ্ত থেকে যাবে। 

এই নীতি অনুযায়ী অধ্যাপকদের বেতন, পেনশন এর দায় নেবে না কেন্দ্রীয় সরকার। 

বিজেপি যখন ক্ষমতায় আসে তখন মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বাৎসরিক দুই কোটি করে চাকরি দেওয়া হবে দশ কোটি বেকার কে, বেকারত্ব দূর করা হবে। তবে দীর্ঘ ছয় বছরে চাকরি তো কেউ পাইনি উপরন্ত বেকরত্বের হার বেড়েছে ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ হারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী সরকারি ক্ষেত্রে জায়াগ ফাঁকা থাকলেও সেখানে চাকরির সিট কমিয়ে কর্পোরেট কোম্পানি গুলিকে নিজেদের মাটি শক্ত করতে সাহায্য করেছে বিজেপি সরকার।
 
পরিবেশ-বিরোধী EIA 2020'র মতোই নয়া শিক্ষানীতি প্রয়োগ করে সরকার শিক্ষাকে কর্পোরেটগুলির প্রতিষ্ঠানে পাকাপাকি ভাবে পরিণত করলো। লকডাউনের আড়ালে একের পর এক সরকারের জনবিরোধী ও কর্পোরেট স্বার্থের জন্য আনা আইন গুলি দেখে এটা সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে এই সরকারের একটিও নীতি ও আইন জনগণের পক্ষে কথা বলেনা। দেশের সমস্ত সম্পদ ও প্রতিষ্ঠান গুলি এই জনবিরোধী আইনের মাধ্যমে ও দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য  তীব্র করে আসলে কর্পোরেট সংস্থাগুলোর হাতেই তুলে দিচ্ছে।

নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০'র দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নষ্টের বিরুদ্ধে ও সকল জনবিরোধী কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থ রক্ষা আইনের বিরুদ্ধে আজ আন্দোলনে নামতেই হবে।

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে