ভাঁওতাসন

সোমবার, জুন ২৯, ২০১৫ 0 Comments A+ a-

যোগের নামে জনতার পয়সায় নাটক দেখানোতে বিজেপি সরকার যে খুবই করিত্কর্মা হয়ে উতরে যাবে অনেকেই ভাবতে পারেনি। কয়েক হাজার রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কর্মী সমর্থক, সরকারী কর্মচারী, আমলা, পুলিশ, মোক্তার সবাইকে জুড়ে এক মেলা বসানো হলো রাজপথে ২১শে জুন এবং ধারাবাহিক ভাবে সমস্ত বহুজাতিক কর্পোরেটদের মালিকানাধীন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে চলল সরাসরি প্রচার।  ভারতের জনতার ২০০০ কোটি টাকা আচমকা ছু মন্তর হয়ে গেল মোদী ম্যাজিকে। আর মানুষ শীর্ষাসনে থিতু হয়ে থাকলেন, কারণ বাজার যে ভারী কেরামতি আর প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে ভালো বাজারীকরণ কে জানেন?

প্রথমে যোগ দিবস স্থাপন করে নিজের ব্র্যান্ড ইমেজ এর পালে টেনে নিল মোদী বাবু হাওয়া, তারপর সূর্য নমস্কারের নামে শুরু হলো হিন্দু মুসলমান বিভেদের জঘন্য রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক সমীকরণের খেলা।  মাঠে নামল আরএসএস, অন্যদিকে মিম নেতা ওয়াইসির চেলা চামুন্ডারা, চলল হই চৈ এবং মিডিয়া দেশের সমস্ত খবর থেকে নজর ঘুরিয়ে এনে দিল শুধু যোগ, এবং এতে বিয়োগ হলো কৃষকের আত্ম হত্যা, শ্রমিক বিরোধী সরকারী চক্রান্ত, সুষমা - ললিত মোদী - রাজে কেলেঙ্কারী, এমন কি জমি অধিগ্রহণ আইন নিয়ে কোনও আলোচনা।  নিন্দুকরা বললো ম্যাগি নিয়ে নেস্টলে ফিরে আসার প্রচেষ্টায় রত থাকলেও বহুজাতিক পুঁজির গোলাম মিডিয়া এই নিয়ে একদম চুপচাপ।

সেদিন আবার মহামান্য গৃহ মন্ত্রী বলে ফেলল যে সন্ত্রাসবাদীরা ভীষন জ্ঞানী (কথায় আছে "স্ব জাতি - স্ব জাতিকে" চেনে) এবং তাদের নাকি জ্ঞানের বিকাশ দিয়ে দেশ গঠনের স্বার্থে যোগ অভ্যাস করা উচিত। ডালের দাম আকাশ ছোঁয়া, খাদ্য দ্রব্যের দাম কমছে না, পেট্রলের দাম বাড়ছে, বেকারত্ব কম হলো না, আর সব প্রশ্নের একই জবাব - যোগ করো - আসন করো।  এক কালে বাঙালিকে কাঁচকলা খেতে বলেছিল এক নেতা, শুনেছি নির্বাচনে তাকে কাঁচকলা দেখিয়েছিল বাঙালি জাতি, কিন্তু বিজেপির বেলায় কি এক যাত্রায় পৃথক ফল হবে ? সে জবাব তো সময়ই দেবে কিন্তু ২০০০ কোটি টাকায় নিজের প্রচার আর যোগের প্রচার করে গরিব দেশের গরিব মানুষের কি উপকার করলো মোদী ও তার সরকার তার জবাব আজ মানুষের কাছে বেশি প্রয়োজন।
২০০০ কোটি টাকা মুখের কথা নয়, লক্ষ্ লক্ষ মানুষ যে দেশে ক্ষুধার্থ হয়ে প্রতি রাতে ঘুমোতে যায়, যে দেশে বহু শিশু জন্মের পর অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা যায় , যে দেশের বহু কৃষক কে প্রকৃতির রোষানলে বলি হওয়া ফসলের কারণে, বা কম মূল্যে ধান - গম - আলু বিক্রি করার দরুণ আত্মহত্যা করে ঋণমুক্ত হতে হয়, যে দেশের অধিকাংশ মানুষ কে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় পরিবহন মাধ্যমে বাদুর ঝোলা হয়ে যাতায়ত করতে হয়, সে দেশে এই টাকা অনেক অন্য প্রকল্পে খরচা করে মানুষের কল্যাণে লাগানো যেত।

যে দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষক, এবং কৃষি কর্মে যাদের জীবন ব্যতীত হয় তাঁদের সমস্ত জীবন কাটে মাঠে কঠিন পরিশ্রম করে। বাইসেপ ফোলাতে তাঁদের জিম যেতে হয় না, তাঁদের লাঙ্গল - কাস্তেই এই কাজে পূর্ণ ভাবে সিদ্ধ। তাই যোগের দরকার তাঁদের নেই, অন্যদিকে শহুরে উচ্চ মধ্যবিত্ত ও ধনিক শ্রেনীর কায়িক শ্রমের ঝুলি শুন্য, তাই তারা পয়সা খরচা করে শরীর ঠিক রাখার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়।  তাদের স্বার্থেই তৈরি হয় অজস্র জিম, যোগ কেন্দ্র, আধ্যাত্মিক রিসর্ট, প্রভৃতি।  তাই দেখা যায় যখন শিষ্য মোদী দেশের সামনে রাজপথে যোগ কলা দেখাচ্ছে তার সাগরেদ রামদেবের সাথে তখন গুরু আদবানি একটি হিমাচল প্রদেশ স্থিত প্রাক্তন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী শান্তা কুমারের যোগাশ্রমে অংশগ্রহন করছে।  এর মাধ্যমেই চলছে সহস্র বছর প্রাচীন এক কলার বাণিজ্যকরণ, কারণ বাজারের চেয়ে বড় এই সমাজে কিছু নাই, যা কিছু নশ্বর তার স্থান এই বাজারেই।  

অবাক হয়ে চেয়ে  দেখি  কোনও রাজনৈতিক দলই জনগণের টাকায় সরকারী মোচ্ছব করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলো না, বরং যে সমস্ত মানুষ, বিশেষত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এই কর্মকান্ডের বিরোধিতা করলেন তাঁদের ভারত ছেড়ে চলে যাবার আদেশ জারি করলো আরএসএস নেতারা। 
তাহলে কি যোগ করা খারাপ কিছু? না।  যোগ শারীরিক ও মানসিক ভাবে পর্যদুস্ত হওয়ার পরে কোনো মানুষকে আবার সতেজ করার এক চমত্কার কলা। কিন্তু এটি একান্তই একটি ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয় যে সে যোগ করবে না করবে না। সরকার বা রাষ্ট্র যদি তাঁর উপর এই যোগ করার চাপ দেয় সেটা একটি ঘৃণ্য পদক্ষেপ এবং তার বিরোধিতা করা সকল প্রগতিশীল মানুষের কর্তব্য। জনস্বার্থ রক্ষা হয় এমন কোনো কারণ ছাড়া করদাতা সাধারণ মানুষের টাকা সরকার কি অধিকারে খরচা করতে পারে সে কথা জনগণ জানতে বাধ্য।
             

ফ্ল্যাট - বাড়ি - প্রমোটারী - ইতিকথা

সোমবার, জুন ২৯, ২০১৫ 0 Comments A+ a-

কারণে অকারণে আমি মাঝে মধ্যে পৌঁছে যাই পুরানো কলকাতার অলিতে গলিতে, কোনও এক অজানা টানে, আর চোখ ভরে দেখি পুরানো দিনের ভাস্কর্য, মিশ্রিত শিল্প কলার নিদর্শনে তৈরি এই শহরের বাড়িগুলি, আর ইতিহাসের গন্ধ শুঁকে চলতে থাকি। কিছুদিন আগেই দেখলাম পিকু সিনেমাটা, যদিও আমি কলকাতায় বড় হইনি, তবুও বাংলা বইয়ে পড়া গল্পগুলির থেকে তৈরি হওয়া এক নস্টালজিয়া আমায় ঘিরে ধরল। সতিই কলকাতার ইতিহাস আর তার এই প্রাচীন নিদর্শন বাড়িগুলি কি আর বেঁচে থাকবে ?সেই লম্বা ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁত মাজতে মাজতে নিচ দিয়ে চলে যাওয়া ট্রামের ঘন্টা শোনার দিনগুলি যে আর মাত্র কিছুদিন সে কথা হলফনামা দিয়ে বলা যায়। 

বিগত পঁচিশ বত্সর যাবত রাজনৈতিক দলগুলির আশীর্বাদে, মস্তানদের পেশিবলে, ও বিদেশী পুঁজির শক্তিতে বলীয়ান হয়ে প্রমোটারী ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে, এবং বর্তমানে শিল্পে মন্দা চলা পশ্চিম বাংলায় মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর পছন্দের শিল্প তেলে ভাজার দোকানের চেয়েও তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে এই শিল্পের।  তার সাথে যুক্ত হয়েছে পাড়ার কাউন্সিলর থেকে এলাকার বিধায়ক থেকে পুলিশ, আমলা, মন্ত্রী, সান্ত্রী সবাই। আর এর ফলেই আগ্রাসিত হয়েছে কলকাতা শহরের বেঁচে থাকা ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি।  একের পর এক এলাকায় পুরানো বাড়িগুলির শরিকদের অন্তর্দ্বন্ধ কে কাজে লাগিয়ে বাড়িগুলি কোলাবরেশনের নামে হাতিয়ে সেগুলি ভেঙ্গে নির্মিত হচ্ছে বিশাল বিশাল ফ্ল্যাট - এপার্টমেন্ট এবং বর্গ ফিট এর হিসাবে খেলে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়ে নিছে প্রমোটার চক্র।  আর হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস। 

যখন ছোট ছিলাম তখন দেখতাম চারদিকে খেলার মাঠ, সেই মাঠ পেরিয়ে পাঁচিলের ভিত্তি, পরে একটু বড় হতে হতে দেখলাম যে সেই মাঠ ঢেকে গেছে একের পর এক উঁচু বিল্ডিং এ আর পুকুর বুঝিয়ে তৈরি হয়েছে শপিং কমপ্লেক্স থেকে ফ্ল্যাট বাড়ি। আরও বড় হয়ে মাঠ, ঘাট, সবুজ আর জল সব হারিয়ে যেতে দেখলাম চোখের সামনে, আর তার পর আজ দেখছি পুরানো বাড়ি ভেঙ্গে নতুন বাড়ি গড়ার প্রক্রিয়া। এতদিন জমি থাকায় প্রমোটারদের নজর বাড়িগুলির উপর পরেনি, কিন্তু জমির সংখ্যা কমতেই দিল্লি ও মুম্বাই এর কায়দায় এই শহরের প্রমোটার গোষ্ঠীগুলির নজর পরেছে শহরের বাড়িগুলির উপর, বিশেষ করে পুরানো বাড়িগুলির উপর।  সরকার চিরকালই প্রমোটার সম্পর্কে উদাসীন থাকে, কারণ চাঁদা থেকে পেশী শক্তির যোগান তো প্রমোটার গোষ্ঠী ছাড়া একক ভাবে খুব কম গোষ্ঠিই তাড়াতাড়ি যোগান দিতে পারে, তার সাথে আবার পাড়ার ক্লাব - শাসক দলের নেতা - রিয়েল এস্টেট দালাল -প্রমোটার চক্রটি একটি সফল মিলিজুলি সরকার চালিয়ে এসেছে, যা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যস্তরে গঠিত যে কোনও সরকারের চেয়ে বেশি টেকসই।  

বর্তমানে ফ্ল্যাট বাড়ি গড়ে ওঠার পিছনে কাজ করছে কয়েকটি কারণ, যেমন শহরে ক্রমাগত জনসংখ্যার চাপ, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি ও তার স্বাধীন ভাবে থাকার ইচ্ছা, জমির অপ্রতুলতা ও বেড়ে চলা দাম, ইত্যাদী।  জমির দাম কে কেন্দ্র করে বাড়ি বা ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করার প্রবণতা মার্কিন মুলুক থেকে এই দেশে আমদানি হয়েছে, এবং এর পিছনে যে অর্থনৈতিক সুত্র কাজ করে তা হলো যে ভবিষ্যতে যখন রিয়েল এস্টেটের দাম আরও বাড়বে তখন বেশি টাকায় ফ্ল্যাট বা বাড়ি বেচে দেওয়া।  এই কারণেই ধনিক ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের মধ্যে প্রবল হয়েছে রিয়েল এস্টেট শিল্পে বিনিয়োগ। তার দুটি প্রধান ধরন হচ্ছে হয় ফ্ল্যাট কিনে ফেলে রাখা বা ভাড়ায় তুলে দেওয়া ভবিষ্যতে দাম বাড়া অবধি, নয়তো, রিয়েল এস্টেট কোম্পানির শেয়ার বা প্রজেক্টে এক লপ্তে মোটা টাকা বিনিয়োগ করা।  বলাই বাহুল্য যে এই সমস্ত স্কিমে গরিব - নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ বিনিয়োগ করতে অপারগ, এবং শহর জুড়ে চলতে থাকা রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় গরিব মানুষের মাথার উপর ছাদের বন্দোবস্ত কোনওদিন হবে না।  বরং প্রতিদিন বেশি বেশি করে ধনিক ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ এই শিল্পে বিনিয়োগ করতে থাকবে বেশি লাভের আশায়।  ভারতবর্ষের নতুন গড়ে ওঠা বড় বড় রিয়েল এস্টেট প্রজেক্টগুলির উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রায় ৪০ শতাংশের উপর বিক্রিত আবাসে মানুষ বাস করে না, বরং ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে এই বাড়িগুলি কেনা হয়েছে ভবিষ্যতে দাম বাড়ার আশায়।  এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে আর একটা বৃহত সাব প্রাইম ক্রাইসিস এর মতন অবস্থা। কারণ যে হিসেবে রিয়েল এস্টেট শিল্পে বৃদ্ধি হচ্ছে এবং একের পর এক জায়গায় সারি বেঁধে গজিয়ে উঠছে সুউচ্চ অট্টালিকাগুলি, এবং সেই তুলনায় যখন ব্যাপক জনগণের ক্রয় ক্ষমতা দিনে দিনে হ্রাস হচ্ছে, তখন অচিরেই একদিন আসবে যখন প্রয়োজনের তুলনায় যোগান যাবে বেড়ে, ফলে দাম যাবে কমে, এবং এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আশায় জল পড়বে অঝরে। আর যেহেতু বিনিয়োগকারীদের সিংহ ভাগই ঘরের টাকা না লাগিয়ে ব্যাঙ্কের ঋণ লাগিয়েছে এই সম্পত্তি কিনতে তাই ব্যাঙ্কের টাকা ডুববে জলে।  যদিও বা ব্যাঙ্ক সমস্ত সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে ফেলে সেখানে ব্যাঙ্কের দায় বেড়ে যাবে কারণ সেই সমস্ত সম্পত্তির কর দিয়ে নতুন ক্রেতা খুঁজে সেই সম্পত্তি বিক্রি করেও লাভ তো দূরস্থান, মূল ঋণের টাকা আদায় করতে নাকানি চোবানি খেতে হবে ব্যাঙ্ককে।  

ব্যাঙ্কগুলি, বিশেষত সরকারী ব্যাঙ্কগুলি যদি এই সংকটে পড়ে তাহলে তাদের ঋণের বোঝা লাঘব করে তাদের ঘরে টাকার যোগান দেওয়ার দায় হবে সরকারের এবং এর ফলে সাধারণ মানুষের করের টাকা ঢুকবে উচ্চ বিত্ত ও ধনিক শ্রেনীর ফাটকা খেলার মাশুল হিসাবে।  তখন এই প্রমোটার চক্রকে দেখা যাবে না কোনও ভাবে দেশের স্বার্থে দাঁড়াতে। কারণ টাকা তুলে তারা তখন নিজের ঘর ঠিক গুছিয়ে নেবে, শুধু অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগে পিষে যাবে সাধারণ খেটে খাওয়া জনগণ। অর্থনীতির এই সাধারণ সুত্র ধরেই আমেরিকায় ২০০৮ সালে নেমে এসেছিল ভয়াবহ মন্দা যার জেরে বিশ্ব অর্থনীতিকে ভুগতে হয় দীর্ঘ দিন, এমনকি আজও বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার থেকে মুক্ত হয়ে ওঠেনি।

পাঠক প্রশ্ন করবেন যে এত সাধারণ যদি সুত্র হয় তাহলে কি তাঁবর তাঁবর ব্যাঙ্ক, পুঁজিপতিরা কি এই সম্পর্কে অবহিত নয় ? নিশ্চয় তারা অবহিত, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পুঁজিবাদী অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি - লাভের লোভের। গত এক শতাব্দী ধরে পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ রূপ - একচেটিয়া পুঁজি বা লগ্নি পুঁজি পৃথিবীর উপর রাজত্ব করছে।  তার মূলমন্ত্র শুধু লাভ করা নয় বরং চরম লাভ করা।  এই চরম লাভের লোভেই সে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছুটে বেড়ায় এবং যেখানে লাভের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা দেখে সেখানেই লগ্নি করে বসে। তাই ভারতের রিয়েল এস্টেট শিল্পেও এসেছে বিদেশী লগ্নি পুঁজির বিনিয়োগ, এর ফলে শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে ডিএলএফ থেকে শুরু করে মাঝারি ছোট অনেক সংস্থার, এবং তীব্র গতিতে বেড়েছে জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে কোলাবরেশনের খেলা।  আর এই লাভের গুড়ের লোভেই পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি এবং তাই মন্দা এখানে নিত্য নৈমিত্ত একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।                                                       

এত ভীত কেন হে তুমি সখা ?

মঙ্গলবার, জুন ১৬, ২০১৫ 0 Comments A+ a-

সোমবার ১৫ই জুন ২০১৫, দুপুর বেলা খাওয়া সবে শেষের দিকে, ঠিক তখন ফুটপাথের হোটেলে মাছের কাঁটা বাছতে বাছতে চোখে পড়ল গোটা গনেশ চন্দ্র এভিনিউ পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ, পিছন থেকে শোনা যাচ্ছে ক্ষীণ স্লোগানের ধ্বনি। মুখ ধুয়ে উঠে ব্যাপারটা জানতে উত্সুক জনতার সাথে চোখ মেলালাম রাস্তায় দেখতে যে মিছিলটা ওদের না তাদের - কাদের বটে ? ও হরি ! দেখা গেল সারি বেঁধে একে অপরের কাঁধে হাত রেখে লাইন ঠিক রেখে এগিয়ে আসছেন দৃঢ় কদমে এক ডজন দৃষ্টিহীন মানুষ এবং তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক জন দৃষ্টিহীন, তাঁরা স্লোগান তুলছেন শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি মানবিক আচরণের দাবির, তাঁরা চাইছেন রাজ্যে পরিবহন ক্ষেত্রে যেন তাঁদের উপর অযথা ভাড়া না চাপানো হয়, বাস - ট্রাম থেকে ধাক্কা মেরে না ফেলে দেওয়া হয়।  এর মধ্যে কোনো বিদ্রোহের গন্ধ নাই, কালাশনিকভ তাঁদের হাতে নাই, থাকলেও তাঁরা তাক করবেন কি ভাবে ও কাকে? তাই জনগণের চোখে, পথচলতি মানুষের চোখে এই গুটি কয়েক প্রতিবাদী মানুষগুলি নিরীহ এবং তাঁরাও মনে প্রাণে এই মিছিলের দাবি কে সমর্থন জানালেন। 

কিন্তু রাষ্ট্র সমব্যথী নয়, তার বেদনা নাই, অনুভূতি নাই। রাষ্ট্রের কাছে মাওবাদী, যাদবপুরবাদী, থেকে শুরু করে এই নিরীহ অন্ধ মানুষ কয়েকটিও শত্রু, এবং গীতা শত্রুর বিরুদ্ধে ধর্ম সংঘাত করতে উদ্বুদ্ধ যখন করে তখন আর কে অন্ধ কে খোঁড়া, পলিসি হলো মেরে তাড়া। তাই দেখি পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ হলো সারা রাস্তা।  ব্যারিকেড মেরে আটকে দেওয়া হলো যাতায়ত, লাঠিধারী - বন্দুকধারী খাকি আর সাদা পোশাক এবং তার সাথে লর্ড সিনহা রোড থেকে আসা স্পেশাল ব্রাঞ্চ ঘিরে ধরল মিছিলকে আটকে দিল তাদের পথ চলা। মানুষের একটাই প্রশ্ন থেকে গেল - কাকে এত ভয় ? ডিসি বাবু বললেন রুটিন প্রটোকল, এটাই করতে হয়।  বোঝা গেল পেটের বড় টান আর দড়িটা তো রয়েছে গঙ্গার ওপারে নবান্নের ঠান্ডা ঘরে।  তাই আজ রাষ্ট্র শত্রুর মত সন্দেহের চোখে দৃষ্টিহীন মানুষের মিছিল।  ১২টি লোক রুখতে আনতে হয় কোম্পানি পুলিশ, তৈরি রাখতে হয় জলকামান ব্যারিকেড আর বন্দুক। এই হয় পুলিশী গণতন্ত্র কে রক্ষা করার পুলিশী প্রয়াস।  

বাহ রে গণতন্ত্র !                    

তবুও তো বিজয় আসে না নবান্নের দ্বারে, কারণ এত প্রতিরোধের মধ্যেও তাঁরা তো চোখে দেখেননি পুলিশের বন্দুক আর লাঠি, তাঁরা তো জানেননা খাকি আর সাদা রঙের পার্থক্য বা কেমন হয় রক্তের রঙ।  তাই তাঁরা এগিয়ে চলেন পরিবহন দপ্তরের দিকে, দৃপ্ত তাঁদের কন্ঠস্বর, নির্ভিক তাঁদের মুখ। বেহায়া সরকারের ব্যারিকেড তাঁদের জোর করে থামিয়ে দিয়েও জিততে পারে না এক ইঞ্চিও, কারণ মানুষ তখন ওই মিছিলের পক্ষে।     
    

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে