এত ভীত কেন হে তুমি সখা ?

মঙ্গলবার, জুন ১৬, ২০১৫ 0 Comments A+ a-

সোমবার ১৫ই জুন ২০১৫, দুপুর বেলা খাওয়া সবে শেষের দিকে, ঠিক তখন ফুটপাথের হোটেলে মাছের কাঁটা বাছতে বাছতে চোখে পড়ল গোটা গনেশ চন্দ্র এভিনিউ পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ, পিছন থেকে শোনা যাচ্ছে ক্ষীণ স্লোগানের ধ্বনি। মুখ ধুয়ে উঠে ব্যাপারটা জানতে উত্সুক জনতার সাথে চোখ মেলালাম রাস্তায় দেখতে যে মিছিলটা ওদের না তাদের - কাদের বটে ? ও হরি ! দেখা গেল সারি বেঁধে একে অপরের কাঁধে হাত রেখে লাইন ঠিক রেখে এগিয়ে আসছেন দৃঢ় কদমে এক ডজন দৃষ্টিহীন মানুষ এবং তাঁদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক জন দৃষ্টিহীন, তাঁরা স্লোগান তুলছেন শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতি মানবিক আচরণের দাবির, তাঁরা চাইছেন রাজ্যে পরিবহন ক্ষেত্রে যেন তাঁদের উপর অযথা ভাড়া না চাপানো হয়, বাস - ট্রাম থেকে ধাক্কা মেরে না ফেলে দেওয়া হয়।  এর মধ্যে কোনো বিদ্রোহের গন্ধ নাই, কালাশনিকভ তাঁদের হাতে নাই, থাকলেও তাঁরা তাক করবেন কি ভাবে ও কাকে? তাই জনগণের চোখে, পথচলতি মানুষের চোখে এই গুটি কয়েক প্রতিবাদী মানুষগুলি নিরীহ এবং তাঁরাও মনে প্রাণে এই মিছিলের দাবি কে সমর্থন জানালেন। 

কিন্তু রাষ্ট্র সমব্যথী নয়, তার বেদনা নাই, অনুভূতি নাই। রাষ্ট্রের কাছে মাওবাদী, যাদবপুরবাদী, থেকে শুরু করে এই নিরীহ অন্ধ মানুষ কয়েকটিও শত্রু, এবং গীতা শত্রুর বিরুদ্ধে ধর্ম সংঘাত করতে উদ্বুদ্ধ যখন করে তখন আর কে অন্ধ কে খোঁড়া, পলিসি হলো মেরে তাড়া। তাই দেখি পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ হলো সারা রাস্তা।  ব্যারিকেড মেরে আটকে দেওয়া হলো যাতায়ত, লাঠিধারী - বন্দুকধারী খাকি আর সাদা পোশাক এবং তার সাথে লর্ড সিনহা রোড থেকে আসা স্পেশাল ব্রাঞ্চ ঘিরে ধরল মিছিলকে আটকে দিল তাদের পথ চলা। মানুষের একটাই প্রশ্ন থেকে গেল - কাকে এত ভয় ? ডিসি বাবু বললেন রুটিন প্রটোকল, এটাই করতে হয়।  বোঝা গেল পেটের বড় টান আর দড়িটা তো রয়েছে গঙ্গার ওপারে নবান্নের ঠান্ডা ঘরে।  তাই আজ রাষ্ট্র শত্রুর মত সন্দেহের চোখে দৃষ্টিহীন মানুষের মিছিল।  ১২টি লোক রুখতে আনতে হয় কোম্পানি পুলিশ, তৈরি রাখতে হয় জলকামান ব্যারিকেড আর বন্দুক। এই হয় পুলিশী গণতন্ত্র কে রক্ষা করার পুলিশী প্রয়াস।  

বাহ রে গণতন্ত্র !                    

তবুও তো বিজয় আসে না নবান্নের দ্বারে, কারণ এত প্রতিরোধের মধ্যেও তাঁরা তো চোখে দেখেননি পুলিশের বন্দুক আর লাঠি, তাঁরা তো জানেননা খাকি আর সাদা রঙের পার্থক্য বা কেমন হয় রক্তের রঙ।  তাই তাঁরা এগিয়ে চলেন পরিবহন দপ্তরের দিকে, দৃপ্ত তাঁদের কন্ঠস্বর, নির্ভিক তাঁদের মুখ। বেহায়া সরকারের ব্যারিকেড তাঁদের জোর করে থামিয়ে দিয়েও জিততে পারে না এক ইঞ্চিও, কারণ মানুষ তখন ওই মিছিলের পক্ষে।     
    

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে