তৃণমূলী ছাত্র পরিষদের দক্ষিনপন্থী সন্ত্রাস ও পশ্চিমবাংলা

সোমবার, জুলাই ১৩, ২০১৫ 0 Comments A+ a-

তৃণমূলী আক্রমনে এবার শিকার হলো কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে উপাচার্য পর্যন্ত। মুলনায়ক প্রফেসর শঙ্কু বাবুর চ্যালা সৌরভ অধিকারী ও তার মাথায় অভয়্দানের হাত রাখা রুদ্র প্রতাপ তৃণমূলী ছাত্র নেতৃত্ব। সারা বাংলা সহ সমগ্র ভারতবর্ষের গণতন্ত্রপ্রেমী ও প্রগতিশীল মানুষ, সত্যিকারের ছাত্র - ছাত্রীরা, শিক্ষক, অধ্যাপক থেকে শুরু করে বিদ্বজন, এরা -ওরা - আমরা - তোরা হয়ে মামুলি শ্রমজীবি মানুষ, যাদের আবার শিক্ষিত মানুষেরা সমগোত্রের না হওয়ার কারণে তীব্র ঘৃণার সাথে অছ্যুত গোষ্ঠীর বানিয়ে রাখেন, তাঁরা পর্যন্ত তীব্র প্রতিবাদের অংশ হলেন এই ফ্যাসিস্ট হামলার বিরোধিতা করে।  নেত্রী এই সব ক্ষেত্রে চুপ থাকেন না হলে তিনি চিত্কার করে পাল্টা হুমকি দেন বা শঙ্কু স্যারের বাহিনীকে কলকে খাইয়ে পথে নামান যাতে তারা চিত্কার করে, আস্ফালন করে, পেশী প্রদর্শন করে মানুষ কে ভয় দেখিয়ে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে সফল হয়।  

বস্তুত সিপিএমের পঁচা-গলা সমস্ত কারুকার্য মাছি মারা নকল করেই তৃণমূলী পান্ডারা দিদি - পিসির সরকার কে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছে এবং ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনটি "চুপ চাপ - জোড়া ফুলে ছাপ " করিয়ে নেওয়ার অনুশীলনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাংলার মানুষ ৩৪ বছরের তথাকথিত বাম শাসনের সবচেয়ে কালো ২০০৭-২০১১ কালেও সন্ত্রাসের এই নগ্ন চেহারা দেখেনি।  হয়তো বা বহুদিন ধরে ক্ষমতা থেকে দুরে থাকা চরম কংগ্রেসী প্রতিক্রিয়াশীল জোতদার -জমিদারদের গোষ্ঠীগুলি ও তাদের তাবেদার প্রমোটার মাফিয়া চক্র একটু বেশিই উত্সাহিত হয়ে গেছে শোষনের রোলার জনগণের উপর চালাতে। আর সবের উপরে আছে মমতাময় মুখ্যমন্ত্রী, যার কথা রাজ্যে শেষ কথা।  তার মুখে মুখে কথা বলায় ডাক্তার গড়াইয়ের মতন স্নায়ু চিকিত্সককে শুধু চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়া হয় না বরং দিদির গুড বুক এ নাম তোলার প্রচেষ্টায় রত, নেতার কুকুরের এসএসকেএম এ ডায়ালিসিসের সুপারিশ করা, তথাকথিত ডাক্তার নির্মল মাঝির দ্বারা এম সি আই স্বীকৃতি বাতিলের স্তর অবধি যেতে হয়।  সব শিল্প - কারখানা মালিকের সাথে ষড়যন্ত্র করে একদিকে এই রাজ্যের কলকারখানা বন্ধ করিয়ে প্রমোটার - মাফিয়াদের দিয়ে সেই জমিতে বহুতল ফ্ল্যাট বানাবার রমরমা শিল্প চলছে দিদির আশীর্বাদে, অন্যদিকে বেকার যুবরা মুখ্যমন্ত্রীর ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে জানতে পারছেন যে তেলে ভাজার শিল্পই যথার্থ শিল্প। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলার শুভ চেতনা সম্পন্ন মানুষ কোনো ভাবেই তৃণমূলী শাসন কে বরদাস্ত করতে পারছেন না।  বার বার তাঁরা ফেটে পড়ছেন বিক্ষোভে, প্রতিবাদে, এবং বার বার তাঁদের উপর নেমে আসছে পুলিশী লাঠি, তৃণমূলী বোমা - গুলি। কারণ সন্ত্রাস ছাড়া মানুষ কে পদদলিত করে রাখার কোনও পন্থা মমতা ব্যানার্জি ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের জানা নেই, আর এই পথই এদের গণতন্ত্রের একমাত্র পরীক্ষিত পথ যা দিয়ে মানুষ কে বশে রাখা যায়, বিশেষ করে এই রাজ্যে,  কারণ এই রাজ্যের নাম পশ্চিম বাংলা এবং এখানে তৃণমূলের বিকল্প তৃণমূল, আর গণতন্ত্রের সূর্য অস্ত গেছিল সেই সিদ্ধার্ত রায়ের জমানাতেই। তারপর থেকে পরে আছে শুধু মঙ্গল চন্ডির উপোস, শনি ঠাকুরের দুয়ারে মাথা ঠোকা, আর রাজনৈতিক নৈরাজ্য।  
                   
একদিকে তৃণমূলী বড় খোকারা সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে গ্রাম -মফ্ত্স্বল- শহর সর্বত্রে সৃষ্টি করেছে ব্যাপক আতঙ্কের পরিবেশ। অনুব্রত ওরফে কেষ্ট বোমা মেরে ও বোমা মারার হুমকি দিয়েও পাঁচ মিনিটে জামিন পায়, তাপস পাল ধর্ষণ করার হুমকি দিয়েও পাঁচ ঘন্টায় জামিন পায়, মনিরুল ইসলাম - আরাবুল ইসলামরা কলার চড়িয়ে ঘোরে, মদন মিত্র চ্যালা চামুন্ডাদের সাথে বসে জেলে মদের ফোয়ারা ছোটায়, আর রাজ্যের ১ নম্বর ভাইপো বিরোধীদের উদ্দ্যেশে হাত কেটে দেওয়ার - চোখ উপড়ে ফেলার হুমকি দিয়েও বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াতে পারে। এই দেখে ছোট খোকা তৃণমূলী ছাত্র পরিষদ উত্সাহ পায় কলেজে কলেজে সিপিএমের কায়দায় সন্ত্রাস চালিয়ে, ছাত্র চমকিয়ে, চাঁদা তুলে বড় দাদাদের গুড বুকে নাম তোলাতে।  বড়রা তাদের বকে না, বরং বলে 'যা এগিয়ে যা আমরা তো আছিই', আর এর ফলেই হয় কলেজে কলেজে ছাত্রদের উপর হামলা, ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি, বোমাবাজির মাধ্যমে, ছাত্র বোর্ড গড়ে কলেজ ফান্ডের টাকা আত্মসাত করে তৃণমূলী  ছাত্র পরিষদের এগিয়ে যাওয়া। 

সিন্ডিকেট রাজের থেকেও বড় এই রাজ্যে ছাত্র গুন্ডা নেটওয়ার্ক। তাদের টাকা না দিয়ে কোনও ভাবেই কলেজে ঢোকা যাবে না, ভর্তি হওয়া চলবে না এবং সর্বপরি কোনও ভাবে বামপন্থী কোনও ছাত্র সংগঠন করা চলবে না।  তৃণমূলেরই মদতে বস্তুত বেড়ে চলেছে বিদ্যার্থী পরিষদের প্রতিপত্তি, কারণ এই রাজ্যে এক কালে তৃণমূলের আঁচল ধরেই বিজেপির বিষধর সাপ প্রবেশ করেছিল এবং সেই সময় দুই ছাত্র সংগঠনের মিত্রতা খুবই মধুর ছিল।      

প্রশ্ন হলো তৃণমূলী ছাত্র পরিষদ করে কারা? তারা কাদের বাড়ির ছেলে - মেয়ে আর কি তাদের উদ্দেশ্য ? একটু ঘাঁটলে দেখা যাবে যে তৃণমূলী ছাত্র পরিষদ, কংগ্রেসী ছাত্র পরিষদ বা সংঘের বিদ্যার্থী পরিষদ একই শ্রেণী বিন্যাসের ছাত্র -ছাত্রীরা করে।  তারা সমাজের উচ্চ শ্রেনীর, মূলত বনেদী ও উচ্চ জাতির ছেলে মেয়ে, যাদের বাবা কাকারা হয় কংগ্রেসী বা তৃণমূলী বা আরএসএস এর নীতির প্রতি অভিভূত, যারা গরিবদের ঘৃনা করে, অথবা যে কোনও ধরনের দু নম্বরি কারবারে জড়িত। এদের পরিবারের প্রভাবেই ছোট বেলার থেকে এদের মধ্যে অতি দক্ষিনপন্থী চিন্তাধারার জন্ম হয়, তারা প্রথমে বাবা কাকার দৌলতে পাড়ার রংবাজিতে হাত পাকায়, ইস্কুলে মারামারি ঝামেলায় জড়িয়ে থাকে, এবং বাবা কাকার রাজনৈতিক যোগাযোগ থেকে তারা স্কুল পাশ করে কলেজে ভর্তি হয় যেখানে তাদের গুন্ডাগিরির হাতে খড়ি হয়।  প্রথমত তারা নিজেদের শিক্ষাগত অপারগতা ঢাকতে রাজনীতি কে হাতিয়ার করে, পরবর্তিতে সেই রাজনীতির প্যাঁচে ফেলে শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সকলকে তাদের প্রমোশন দিতে বাধ্য করে, আর এর ফাঁকে চলে ছাত্র - ছাত্রী মহলে নিজের প্রতিপত্তি বিস্তার করার সংগ্রাম। 

এই ভাবেই প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় অশোক - সৌরভ - শঙ্কুদের মতন গুন্ডা ছাত্র নেতাদের, যাদের লেখাপড়ার পাট তাড়াতাড়ি চুকে যায় কিন্তু ছাত্র নেতাগিরি চলতে থাকে বহু বছর অবধি। প্রতিরোধ না পেয়ে এরা কালসাপের মতন জড়িয়ে ধরে বাংলার ধুঁকতে থাকা শিক্ষা ব্যবস্থাকে, ফলে কলেজে ভর্তি থেকে মার্কশীট বার করার জন্যে তাদের বর্ধিত অঙ্ক তোলা তুলে আদায় করার ব্যবসাও ফুলে ফেঁপে চলে এবং বিরোধী শুন্য বাংলায় ছাত্র রাজনীতিকে এই ভাবে পাঁকে ডোবাবার ষোলো কলা পূর্ণ হয়। প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর, ইত্যাদি জায়গাগুলি যেখানে একটু মেধা সম্পন্ন বাঙালি ছাত্রদের সংখ্যা বেশি, সেগুলি বাদ দিলে বাকি পুরো বাংলার শিক্ষা জগতেই তৃণমূলের একচেটিয়া শাসন কায়েম হয়ে গেছে।  এবং তার সাথে এই তথাকথিত গনতন্ত্র প্রেমী মহিলার দলের বোমা গুলির শব্দে বার বার কেঁপে উঠছে তথাকথিত শিক্ষার মন্দির।  

এত সত্বেও এই বাংলার মাটিতে আর অতীতের মতন কোনও প্রতিবাদ প্রতিরোধ নেই।  যাদবপুরের পর আর কোথাও তৃণমূল কে প্রতিহত করতে ছাত্রদের কোনও সংঘবদ্ধ উদ্যোগ চোখে পরে না। যেহেতু বেশির ভাগ সম্পন্ন ঘরের ছেলে - মেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেই রাজ্য ছেড়ে চলে যায় উচ্চ শিক্ষা ও ভালো কর্ম সংস্থানের খোঁজে। গরিব মানুষের ছেলে মেয়েরা কোনও কালেই কলেজ তো দুরের কথা স্কুলের মুখ দেখতে পায় না, আর যারা পায় তাদের পক্ষে নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থায় রাজনৈতিক প্রতিরোধের চেয়ে কোনও মতে লেখাপড়া শেষ করে মা বাবার স্বপ্ন পূর্ণ করার তাগিদই বেশি থাকে।  কারণ তাঁদের উপর থাকে ভবিষ্যতে সংসার টানার চাপ আর তাই জলে থেকে কুমিরের সাথে বিবাদের পথ তাঁরা স্বাভাবিক ভাবেই নিতে পারেন না। আর এই কাল চক্রেই এই রাজ্যের শাসক দল ও তার পেটোয়া বাহিনী গর্ভধারণ থেকে কেওড়াতলার লাইন সব ক্ষেত্রেই নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখে এবং কোনও বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিকেই বেড়ে উঠতে দেয় না।  প্রতিবাদের - প্রতিরোধের দিন আজ পশ্চিম বাংলায় দরকার খুবই, না হলে আগামী দিনে মানুষের বেঁচে থাকা দায় হয়ে যাবে।  

পরিত্যক্ত বাম শিবির ও তার নেতা সিপিএমের দ্বারা মানুষ কে বাঁচানোর সংগ্রাম গড়ে তোলা অসম্ভব কারণ তাদের দলের অস্তিত্ব বাঁচবে কিনা সেই কথা বিমান -বুদ্ধ - সূর্যরা আজ হলফ করে বলতে পারবে না। এদের মিনমিনে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের কথা শুনে বাংলার মানুষের কানে ব্যথা হয়ে গেছে , তাই আজ খুবই দরকার হলো প্রগতিশীল বিকল্প বাম ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার, যার লক্ষ্য কলেজ বোর্ড গড়ার চেয়ে বেশি হতে হবে ছাত্র - ছাত্রী ও শিক্ষক সমাজ কে ঐক্যবদ্ধ ভাবে তৃণমূলী সন্ত্রাস ও বিদ্যার্থী পরিষদের ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্ববাদী আক্রমনের বিরোধিতায় ও প্রতিরোধে সামিল করা এবং বাংলার মাটিতে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলিকে পরাস্ত করা।  এই কার্য সিদ্ধি করতে প্রথমত বিকল্প প্রগতিশীল বাম ছাত্র সংগঠনগুলি কে ঐক্যবদ্ধ করা দরকার এক বৃহত যৌথ মঞ্চে এবং একটি সাধারণ কর্মসূচির দ্বারা পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার যা রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে তৃণমূলী সন্ত্রাস ও বিদ্যার্থী পরিষদের সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র কে প্রতিহত করতে পারবে। 

যতদিন না আমাদের বাম ছাত্র বন্ধুরা এই রকম কোনও উদ্যোগ নেওয়া শুরু না করছেন ততদিন পর্যন্ত কিন্তু বাংলার অন্যান্য ক্ষেত্র গুলি সহ  শিক্ষা ক্ষেত্রেও তৃণমূলী সন্ত্রাস ও একনায়কতন্ত্র কায়েম থাকবে এবং বাংলার ছাত্র সমাজের শিক্ষাগত মানের অবক্ষয় হতেই থাকবে। শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে তৃণমূল কে বিতাড়িত করার প্রচেষ্টায় যত দেরী হবে ততই ফাঁস গলার উপর শক্ত হয়ে চেপে বসবে।   
                

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে