সালাফি ইসলামের জঙ্গীবাদ থেকে বাংলাদেশের মুক্তির পথ কি?

শুক্রবার, জুলাই ০৮, ২০১৬ 0 Comments A+ a-

বাংলাদেশের ব্যাপার নিয়ে আমি ততদিন বেশি মাথা ঘামাতাম না যতদিন না মৌলবাদীরা একে একে হুমায়ুন, রাজীব, অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, নীলয় নীল, প্রভৃতি মুক্তমনাদের চাপাতির কোপ মারা শুরু করলো। শাহবাগের লড়াইকে পরাস্ত করতে আক্রমণ শুরু হল আর যখন পেট্রোল বোমা বর্ষণ করে সাধারণ মানুষ মারা শুরু হলো।  ২০১৫ থেকে রক্ত ঝড়ানো বেড়ে গেছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মৌলবাদীদের উল্লাস। দাড়ি, টুপি, ছহি ইসলামের দোহাই মাড়িয়ে বহুদিন ধরে প্রচেষ্টা চলছে বাংলাদেশের আরবীকরণ করার। আশির দশক থেকেই এই প্রচেষ্টা উপমহাদেশে শুরু হয় আর বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়ার থেকে কোনো ভাবেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি। যতদিন গেছে তত বেশি করে ইসলাম ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে রাজনৈতিক ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা করেছে এবং এই কাজে নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতি ও বিশ্বায়নের চোলা গায়ে চাপিয়ে মার্কিন বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজি ইন্ধন জুগিয়ে গেছে।

যত দোষ নন্দ ঘোষ মার্কা রাজনীতি করে বাংলাদেশের শাসক শ্রেণী জনগণের মধ্যে একটা ধারণা গড়ে তুলতে চাইছে যে সকল সমস্যার জন্যে দায়ী খালেদা জিয়া, যে খোলাখুলি জামাতিদের খুনি বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশে তালিবানি শাসন কায়েম করে দেশটাকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চাইছে। প্রধানমন্ত্রীর চামচা তৌফিক ইমাম তো ইন্ডিয়ান মিডিয়া কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামাতি বাহিনীর সাথে সাথে আবার “বামপন্থী জঙ্গীদের” এই চক্রের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলে। অথচ এই দোষারোপের খেলায় খুব আশ্চর্যজনক ভাবে আড়াল হয়ে যায় ইসলামী মৌলবাদের প্রতি আওয়ামী লীগ আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপ্ত সমর্থনের কথা।

যখন বাংলাদেশ জুড়ে ধর্মনিরপেক্ষ, নাস্তিক ও যুক্তিবাদীদের কাঠ মোল্লারা চপার দিয়ে কোপাচ্ছিল তখন অপরাধীদের গ্রেফতার করা তো দূর অস্ত, বরং ধর্মীয় অনুভূতি আহত হচ্ছে বলে অনেক বার প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রকাশ্যেই মুক্তমনা ব্লগারদের হত্যাকারীদের পক্ষে সওয়াল করেছে। জামাতি আর বিএনপির থেকে কট্টর মোল্লা ভোট নিজের পালে টানতে আওয়ামী লীগ বরাবর নিজেদের বেশি বড় ইসলাম সমর্থক হিসেবে দেখাতে চায়। আর মধ্য প্রাচ্যের সাথে সখ্যতা গড়তে জরুরী হয়ে ওঠে বাংলাদেশ কে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করার তাগিদ। এই “ধর্মনিরপেক্ষ” ইসলামিক রাষ্ট্র যে কত বড় বাঁশ তা এক দশক আগেও এত চরম ভাবে টের পাওয়া যায়নি। কথায় কথায় ধর্মীয় অনুভূতির গুঁতো মেরে বাংলাদেশে ইসলামিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সমস্ত আওয়াজ কে ক্রমাগত দাবিয়ে দেয় হাসিনার সরকার। এর ফলে আরও বেশি উদ্দীপিত হয়ে বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামী সন্ত্রাস জমি পেয়েছে এবং নিজের পরিধি বিস্তৃত করার সুযোগ পেয়েছে। অবাধে খুন করেছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ , আহমদিয়া, ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ কে। ওয়াহাবি-সালাফি ইসলামের যে কালো ছায়া বাঙালি মুসলমানের জীবনকে গ্রাস করছিল তার বিরুদ্ধে হাসিনার সরকার কোনদিন মুখ খোলেনি পেট্রো ডলার এর সাপ্লাই বন্ধ হওয়ার ভয়ে।

ঢাকার গুলশানে এক রেস্তোরাঁতে হঠাৎ রাতের  আঁধারে যে কয়েকজন সন্ত্রাসী হামলা চালালো তাদের গল্প নিয়ে এখন দুই বাংলার পত্র পত্রিকার পাতা ভরে গেছে আর টিভির পর্দা ছয়লাপ। এই হামলার পিছনে আইএস আছে না আল কায়েদা না জামাতি-আইএসআই যোগ তা নিয়ে তথাকথিত ওস্তাদরা বাজি লড়ছে, তর্ক-বিতর্ক করছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সেই তসলিমা নাসরিনের নির্বাসনের সময় থেকে যে ভাবে ইসলামিক মৌলবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তার সবচেয়ে বিষাক্ত অভিব্যক্তি দেখা গেল। এই বিগত কিছুদিন অবধি নিজেদের “বন্দুক যুদ্ধে” জঙ্গী মারা বাঘ প্রতিপন্ন করা রেব ও পুলিশ বাহিনীর আসল ক্ষমতা (পড়ুন অক্ষমতা) সামনে এল আর আরও স্পষ্ট হলো যে কিভাবে মিথ্যা আর প্রতারণার গল্প করে নিরীহ গরিব মানুষকে হত্যা করে আজ অবধি ইসলামিক জঙ্গী সমস্যার ধারে কাছে যেতে পারেনি এই সরকারি বাহিনী।

কিন্তু এই ঘটনার মর্মে যদি ঢোকা যায় তাহলে দেখা যাবে যে বাংলাদেশের ভিতর দেশি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই যেমন হয়তো আফগানিস্তানে বা ইরাকে মার্কিন হানার ফলে তৈরি হয়েছে, সিরিয়ায় মার্কিন মদতে তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির ভক্ত; বাংলাদেশের কাঁচা মাল, শ্রম, ও বাজার সস্তায় বৃহৎ বিদেশি পুঁজির কাছে উপঢৌকন দেওয়া সরকারকে উৎখাত করার জন্যে কোনদিনই ক্রুজ মিসাইল ছোড়া হয় না, ড্রোনের হামলাও হয় না। ফলে প্রতিশোধের স্পৃহার থেকে বাংলাদেশের ভেতো বাঙালি মুসলমানদের একটা অংশ যে সালাফিবাদে বিশ্বাস নিয়ে আত্মঘাতী জঙ্গী হচ্ছে সে কথা অমূলক। তাহলে কি ইসলামী দীনের আন্তর্জাতিকতাবাদের দোহাই দিয়ে সালাফি ইসলামের প্রবক্তারা বাংলাদেশের মুসলমান যুবকদের জঙ্গী হওয়ার অনুপ্রেরণা দিচ্ছে? ঘটনা প্রবাহ ও তথ্যগুলো কিন্তু এই দিকেই আঙুল দেখাচ্ছে।

যে ছেলেগুলো সেই রাতে গুলশানের হোলেই এত্তেরি বেকারিতে হামলা করেছিল তারা প্রত্যেকেই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা প্রত্যেক তরুণের মতনই জীবন কাটাচ্ছিল, আনন্দ আর হৈ হুল্লোড় করে। আচমকা তারা এক এক করে নিরুদ্দেশ হলো আর তাদের পুনরায় আবির্ভাব হলো সেই অভিশপ্ত রাতের ইশার নামাজের আজানের পর। মুসলমান না মুসলমান নয় এই প্রশ্ন তুলে তারা একের পর এক মানুষকে খুন করলো কুপিয়ে আর গুলি করে। ছহি ইসলামের হুজুরদের ভাষণবাজির মতন সত্যিই নর আর নারীতে আল্লার এই পেয়াদারা কোনো বিভেদ রাখেনি, একত্রে কুপিয়ে মানুষ মেরে এরা সেই মধ্যযুগীয় উল্লাসে মত্ত হয়েছিল। কারণ এদের বদ্ধমূল ধারণা যে কাফের মেরে মরলে এদের কপালে জুটবে ৭২টি সুন্দরী কুমারী, দুধ, সূরা, আর মধুর ঝর্ণা। এদের কাছে জীবনে খেটে খাওয়ার চেয়ে কাল্পনিক পরজীবনের সুখের জীবন বেশি কাঙ্খিত। ছোটবেলার থেকেই পরিবার ও মসজিদে এই বাচ্চারা পরজীবনের নামের এই কাল্পনিক কথাগুলো শিখেছে এবং প্রশ্ন করার সুযোগ না থাকায়, বড়রা যা বলেন, হুজুররা যা বলেন, তা করতে হয় বলে বাকি সমস্ত ধর্মীয় চেতনার মতনই এই ছহি ইসলাম এই সমস্ত বাচ্চাদের গ্রাস করে ফেলে। খেলাধুলো আর লেখাপড়ার চেয়ে বেশি এরা নামাজ পড়া, রোজা রাখা, প্রভৃতি কাজে বেশি মগ্ন হয়ে ওঠে। আর এই সুযোগেই সেই পরকালের স্বপ্নে বিভোর মানুষদের অমানুষ বানাবার কার্যে রত সালাফিরা এদের জঙ্গী বানাতে সক্ষম হয়। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং গোটা বিশ্বেই হচ্ছে। মদতদাতা অবশ্যই সৌদি আরবের রাজ বংশ ও শাসক শ্রেণী যারা নিজেদের একদিকে ইসলামের প্রধান কর্তা হিসেবে দেখতে চায় ও নিজেদের অর্থে নিজেদের ইসলামকে সেই বিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকেই পৃথিবীতে রপ্তানি করছে তেলের সাথে, অন্যদিকে এরাই আবার নাটক করে ইসলামিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা ঘোষণা করে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পা চাটা এই নেড়ি শেখদের দল গোটা বিশ্বের মুসলমানদের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার রাস্তা থেকে হুজুরি বাণী শুনিয়ে বিভ্রান্ত করে সরিয়ে আনছে মৌলবাদী সন্ত্রাসের পথে। তাই তো প্যালেস্টাইনে যখন ইসরাইলি বাহিনী নির্মম ভাবে আবাল বৃদ্ধ বনিতাদের হত্যা করছে, মার্কিন বোমা সিরিয়ার মানুষকে ছিন্ন ভিন্ন করছে, তখন কোথাও এই দুই রাষ্ট্র যন্ত্র বা শাসক শ্রেণীর উপর আক্রমণ না করে সাধারণ মানুষ, স্বাস্থ্য কর্মী, রেস্তোরাঁতে বসে থাকা মানুষদের গলা কেটে এই ক্লীব সালাফি ছহি মুসলিমরা আজ বীরত্ব দেখাচ্ছে। আসল জায়গায় হামলা করার মুরোদ নেই কারণ হুজুরেরা বলবে যে কোনো কাফের মেরে দিলেই চলবে ওই ১৪০০ বছর পুরানো বইতে লেখা আছে যে! তাই কে আর আমেরিকা বা ইজরাইলের সাথে লড়তে চাইবে? রাস্তায় একখানা হিন্দুরে কুপিয়ে বীরত্ব প্রদর্শন হয়ে যাবে আর জান্নাতে ৭২টি হুরের সাথে বুকিং তো পাক্কা।

সালাফি ইসলামের প্রচার কারকরা বাংলাদেশ সহ গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে পঙ্গপালের মতন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার কারণ হলো এই উপমহাদেশের আধা সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্কের কারণে এক বিশাল সংখ্যার পিছিয়ে থাকা চেতনার মানুষের যোগান পায়। শুধু যে গ্রামের মাদ্রাসায় তাই নয়, এমনকি শহরের তথাকথিত অভিজাত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, বড় বড় বহুজাতিক করপোরেশনের কর্মীদের মধ্যে, এবং অন্য অনেক জায়গায়। ঠিক যেমন ভারতের হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলি রিক্রুটমেন্ট চালায় ভুলভাল তথ্য আর আপামর মিথ্যার সাহায্যে মানুষের মধ্যে জাতি ও সাম্প্রদায়িক ঘৃণা গড়ে তুলতে, তেমনি করে বাংলাদেশের ছহি ইসলামের হুজুরেরা কখনো কেঁদে, কখনো হেঁসে, কখনো চাঁদা নিয়ে, কখনো চাঁদা দিয়ে, গড়ে তোলে উগ্রপন্থীদের বাহিনী যাদের প্রতি পদে কাফের মারার শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করা হয়, ধর্মের জন্যে বাঁচা ও মরা কে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য বানিয়ে দেওয়া হয়। আর ওই সমস্তের মূলে আছে এই আধা সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার ফলে উৎপন্ন আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পশ্চাৎপদ অবস্থা।

ইসলামিক সন্ত্রাস নিয়ে যারা গলা ফাটায়, যারা এই সুযোগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক অস্পৃশ্যতা সৃষ্টি করে, তারা কিন্তু সৌদি আরবের প্রশ্নে চুপ থাকে। কারণ বড় কর্তা মার্কিনদের হাত তো সৌদি রাজার মাথায়। ধরুন আমাদের ভারতের হিন্দুত্ব মৌলবাদীরা, যারা একদিকে মুসলিম-খ্রিস্টান বিরোধী হাওয়া তোলে আর অন্যদিকে দলিত ও আদিবাসীদের দমন করে, তারা কিন্তু কোনো কারণেই সৌদি আরবের রাজতন্ত্র কে উৎখাত করার বিরোধী। এই ধরুন আমাদের নরেন্দ্র মোদী, লোকটা হাজারো মুসলমানকে জীবন্ত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে, মুসলমান মহিলাদের শুধু ধর্ষণই করায়নি বরং ওদের গর্ভ কেটে ভ্রুণ বের করে আগুনে জ্বালিয়েছে; সেই নরেন্দ্র কে ইসলামের তথাকথিত কান্ডারী ও সালাফি ইসলামের প্রবক্তা ওই সৌদি রাজতন্ত্র অর্ডার অফ সৌদি আরব বা ওএসএ পুরস্কার, যা সৌদি রাজতন্ত্রের অসামরিক পুরস্কারের মধ্যে অন্যতম, তা প্রদান করেছে। সেই সৌদি রাজতন্ত্র আবার অন্যদিকে সালাফি ইসলামের প্রচারক জাকির নায়েক কে পুরস্কার দেয়। অথচ বড় বড় হুজুরেরা আর হিন্দু ধর্মের পান্ডারা কিন্তু এই যোগসূত্র কে আড়াল করে রাখে, মানুষ কে জানতে দিতে চায়না যে কি ভাবে পৃথিবীর সমস্ত মৌলবাদের একে অপরের সাথে যোগাযোগ মার্কিন মদতে শক্তিশালী হচ্ছে।

ইসলামিক জঙ্গী সমস্যার মূল দুইটি কেন্দ্র, প্রথমতঃ বাংলাদেশ সহ এশিয়া-আফ্রিকার বিস্তীর্ন অঞ্চলে আধা ঔপনিবেশিক ও আধা সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, এবং দ্বিতীয়তঃ সৌদি আরব ও তার রাজতন্ত্র। এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোয় যতদিন আধা ঔপনিবেশিক ও আধা সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা টিকে থাকবে ধর্মীয় মৌলবাদ তার মানুষের যোগান পেতেই থাকবে। অন্যদিকে যতদিন না আরব থেকে সৌদি রাজের অবসান হবে ততদিন ওই প্রতিক্রিয়াশীল মার্কিন দালাল রাজবংশের লোকেরা গোটা বিশ্ব জুড়ে ওদের ঘৃণ্য সংস্করণের ইসলামের রফতানি করবে মৌলবী আর পেট্রো ডলারের সাথে সাথে। সমস্ত সরকার মাথা ঝুঁকিয়ে এই রাজবংশের দান খয়রাতের, যা আসলে বকলমে মার্কিন ব্যবসায়িক লগ্নি, সেই অর্থের জন্যে লালায়িত হবে।

বাংলাদেশের পত্তন পাকিস্তানি মৌলবাদী ফ্যাসিবাদ কে পরাস্ত করে কোনো গণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে হয়নি, বরং চরম কমিউনিস্ট বিরোধী ভারতীয় ও সোভিয়েত দালাল শেখ মুজিব ইন্দিরার ট্যাঙ্কের নলে চেপে পাকিস্তানি শাসন শেষ করে ভারতীয় নয়া ঔপনিবেশিক শাসন বাংলাদেশে কায়েম করেছিল এবং এর ফলে ভূমি সংস্কার কোনোদিন সম্ভব হয়নি, বরং গরিব আরো গরিব হয়েছে আর জোতদার জমিদাররা মসজিদের ইমামদের দালালির দৌলতে আজ বাংলার গ্রামে গ্রামে নিজেদের খুঁটি আরো শক্ত করেছে। ধর্মপ্রাণ ছহি মুসলিমের কাছে গরিব হিন্দু পুরুত কাটা সুন্নত, মুসলিম জোতদারের থেকে জমি ও রাজনৈতিক ক্ষমতা কাড়া চরম হারাম, এই শিক্ষাই আজ অজ পাড়া গাঁয়ের মসজিদে চোস্ত আরবি ও উর্দু বলতে পারা ইমামরা গরিব কৃষকের মাথায় ঢোকাচ্ছে।

ইসলামিক জঙ্গীবাদের শুরু হয়েছিল মার্কিন পুঁজির কমিউনিস্ট বিরোধী যুদ্ধের এক অভিন্ন অংশ হিসেবে। আরব দুনিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যে কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রতি বিংশ শতাব্দীর ষাটের ও সত্তরের দশকে যে আকর্ষণের সৃষ্টি হয় শ্রমিক-কৃষক-যুব ও নারী মহলে তার থেকে জনতাকে বের করে আনার স্বার্থে সেই সময়ে সালাফি ইসলামের প্রভাব বিস্তার শুরু হয় মূলতঃ কৃষক জনতা ও শ্রমিকদের মধ্যে পিছিয়ে থাকা অংশকে সাম্রাজ্যবাদের পদাতিক বাহিনীতে পরিণত করে, দুনিয়ার থেকে ক্রমেই হ্রাস হয়ে যেতে থাকা উগ্র ইসলামিক ফ্যাসিবাদ কে প্রতিষ্ঠিত করতে।

এই ইসলামিক জঙ্গীবাদের শেষটাও তাই হতে হবে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনতা-নারী-যুব-ছাত্রদের বিপ্লবী সংগ্রামের আগুনে সালাফি ছহি ইসলামের চিতা জ্বালিয়ে, আধা সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থাকে উৎখাত করেই এই ধর্মীয় মৌলবাদের উৎপাদন শেষ করা সম্ভব। বাকি সব পথ ও মত ততটাই অলীক যতটা জান্নাতে বয়ে চলা দুধ, সূরা, ও মধুর বন্যা, বা যৌন সংসর্গের জন্যে প্রস্তুত ৭২টি কুমারী রূপসী হুর। তাই সঠিক আর বেঠিকের বিচার করে এই হত্যাকারী ব্যবস্থার থেকে নিষ্কৃতি পেতে বাংলাদেশের মানুষকে আজ অসমাপ্ত গণতান্ত্রিক বিপ্লবের পথ ধরতেই হবে।

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে