রাম নবমীর নামে সশস্ত্র মিছিল করে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক আগুন লাগাবার পরিকল্পনা কে কারা আজ রুখবে ?

বুধবার, এপ্রিল ০৫, ২০১৭ 0 Comments A+ a-

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একজোট হোন।


৫ই এপ্রিল সমস্ত পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে রাম নবমী পালনের ডাক দিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। গেরুয়া শিবিরের এই দুই দলের দাবি পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে এবার রাম প্রীতি জাগাতে হবে এবং উত্তর ভারতের ন্যায় পশ্চিমবঙ্গেও রাম-ভিত্তিক রাজনীতি, যার আর একটি অংশ হলো তীব্র ভাবে নিরামিষাশী খাদ্য অভ্যাস পালন করা, শুরু করতে হবে। রাম নবমী বাঙালি হিন্দুরা পালন করবেন, না করবেন না, সে প্রশ্নটা আমাদের আলোচনার বিষয় হতে পারে না, আর কেউ যদি পশ্চিমবঙ্গে রাম নবমী পালনও করতে চান তাহলে তাদের বাধা দেওয়া হবে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কে উল্লঙ্ঘন করা। তবে আরএসএস আর ভিএইচপি যেহেতু রাম নবমী পালনের ডাক দিয়েছে তাই এই ডাকের পিছনে যে সরল ধর্ম বিশ্বাস কাজ করছে তা নয়, বরং আছে এক গূঢ় অভিসন্ধি যা ফাঁস করে হাটের মাঝে হাঁড়ি ভাঙলে স্বয়ং বিজেপির নেতা ও বিধায়ক দিলীপ ঘোষ।



রাম নবমীর মিছিলের নামে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ত্রিশূল ও তলোয়ার সহযোগে সশস্ত্র মিছিল করতে চায় আরএসএস ও ভিএইচপি এবং এদের সাথে রাজ্য জুড়ে বিজেপিও এই অনুষ্ঠানে সামিল হতে চায়। এই সশস্ত্র মিছিল নিয়ে আরএসএস এর নেতা জিষ্ণু বোস ও ভিএইচপি নেতা শৌরিশ মুখার্জী রাজ্য জুড়ে প্রচার কার্য শুরু করেছে।  আরএসএস এর পশ্চিমবঙ্গের সম্পাদক বিদ্যুৎ মুখার্জী এই কাজের জন্যে ক্রমাগত সমস্ত শাখা কর্মীদের উপর চাপ দিয়ে চলেছে ভাড়াটে লোক জোগাড় করে মিছিলগুলোয় ভিড় বাড়ানোর জন্যে। সশস্ত্র মিছিল করার পুলিশি বা আইনি কোন অনুমতির ধার ধারেনা হিন্দুত্ব শিবির, কারণ ব্রাক্ষণত্ববাদী প্রশাসন কোনদিনই এদের জঙ্গী কার্যকলাপের রাশ টেনে ধরেনি, বরং বার বার এদের কে সাহায্য করেছে শক্তি বৃদ্ধি করতে, আর তাই আজ দিলীপ ঘোষের মতন লোকেরা সংবাদ মাধ্যমে জোর গলায় ঘোষণা করছে যে পশ্চিমবঙ্গে সশস্ত্র মিছিল হবেই এবং সেই মিছিল’কে রুখবার শক্তি নাকি কারুর নেই।

পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ নিজের হাতে হাতকড়া পড়ে বসে আছে, মমতা বন্দোপাধ্যায় আর হুঙ্কার দিচ্ছে না, পাছে আবার মদন জেলে যায় আর নারদার হাঁড়ি হাটে ভেঙে ফেলে দুই পাত্তর মদ গিলে। অথচ ঠিক এই সময়েই বোলপুরে বিশ্বভারতীর প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীদের উপর তৃণমূলী সন্ত্রাস নামিয়ে আনা হলো, রাজ্য জুড়ে বাম আন্দোলনের উপর নামানো হলো অত্যাচারের খড়গ, তবে যেহেতু তৃণমূলের সাথে বিজেপির ইয়ারিটা সেই দুই দশক পুরানো, তাই বর্তমানে বিজেপি কে কোলে পিঠে করে পশ্চিমবঙ্গে ধেড়ে বানাবার দায়িত্ব তৃণমূল কংগ্রেসের কাঁধেই চেপেছে। নরেন্দ্র মোদীর সাথে উপরে ঝগড়া করার ভাওঁতা করে তলে তলে গেরুয়া শিবিরের সাথে হাত মিলিয়ে রাজ্যে ভোটারদের ধর্মীয় মেরুকরণের ছাঁচে ফেলার তৃণমূলী ষড়যন্ত্র কিন্তু আর চাপা নেই। তবুও আজ মমতা নিজের ধর্ম নিরপেক্ষ ইমেজ বজায় রাখতে সক্ষম কারণ বহু সালাফি সংগঠন আজ পশ্চিমবঙ্গ ও দেশের অন্যান্য কোনায় মমতার মতন একজন চরম মুসলমান বিদ্বেষী ব্রাক্ষণত্ববাদী নেত্রীকে মুসলমানদের রক্ষা কর্ত্রী হিসেবে চিহ্নিত করে চলেছে কিছু টাকা ও অঢেল রাজনৈতিক সমর্থনের বিনিময়ে।

পশ্চিমবঙ্গের সাবর্ণ ভদ্রলোক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে ভাবে মুসলমান, খ্রীস্টান ও দলিত-আদিবাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের তরল গরল বেয়ে চলেছিল সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকে, তা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে বিগত ৩০ বছরে, সেই রাম মন্দির আন্দোলনের  সময় থেকে, যখন সাধারণ হিন্দু বাঙালিদের আরএসএস এর বাইরের থেকে পাঠানো নেতারা নানা কায়দায় বোঝাতে শুরু করেছিল যে ভারতবর্ষে মুসলমানরা নাকি রাজার হালে আছে আর প্রত্যেকটি সরকার নাকি এদের তোষণ করে ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে। আপনি গোটা কলকাতা চষে যদি ঘোরেন, ট্রামে, বাসে, লোকাল ট্রেন বা মেট্রোতে এই আলোচনা বহুবার শুনবেন আর বারবার আপনাকে জানান দেওয়া হবে যে হিন্দুরা নাকি মুসলমানদের হাতে আক্রান্ত হচ্ছে এই পশ্চিমবঙ্গেরই প্রতিটি মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায়। তথ্য নেই, কোন সূত্র নেই, তবুও পার্ক সার্কাসের চার নম্বর বস্তি থেকে মেটিয়াবুরুজ এলাকায় খুপরির মধ্যে বাস করা গরিব ও অনাহার ক্লীষ্ট মুসলমান শ্রমিক, মুচি, বা মিস্ত্রিরা নাকি আরব দেশের দালাল বা পাকিস্তানের চর, এই শিক্ষাটা আপনাকে ছোট বেলার থেকেই দেওয়া হবে যদি আপনি এই উচ্চ জাতির হিন্দু বাড়িতে জন্মান।  সেই পশ্চিমবঙ্গে আজ যখন বিজেপি দাঁড়াবার জায়গা খুঁজে পেয়েছে তখন ধীরে ধীরে প্রাক্তন লাল আর সবুজদের অনেক বড় খেলোয়াড়ই আজ গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার আশায় বুক বাঁধছে। ভদ্রলোক সম্প্রদায়ের ভদ্রতার মেকি আবাস খুলে ভয়ঙ্কর নগ্ন শরীরটা আজ আলোয় আসছে।

উত্তর প্রদেশের আরএসএস এর পদচিহ্ন অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গের বুকে বিগত পাঁচ বছর ধরে তীব্র ভাবে জঙ্গী কার্যকলাপ ও বিকৃত তথ্য ও মিথ্যা সংবাদের ভিত্তিতে হিন্দুত্ববাদী শিবির গ্রাম থেকে শহর সব জায়গায় জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বিষবাস্প ছড়িয়ে দাঙ্গা লাগাবার রসদ সংগ্রহ করে চলেছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের শাসনে অকুতোভয় হয়ে। মিথ্যা খবর, গুজব, ও এক শ্রেণীর দালাল সাংবাদিকদের সাহায্যে হিন্দুত্ববাদী শিবিরের সবচেয়ে জঙ্গী শক্তি হিন্দু সংহতি আজ পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় দাঙ্গা লাগিয়েছে, খোলাখুলি আমেরিকা ও জায়নবাদী ইসরায়েলের টাকা খেয়ে রাস্তায় নেমে মুসলমান বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়িয়েছে এবং আজ অবধি এই অগুনতি দাঙ্গা হাঙ্গামার জন্যে এদের লোকেদের একজনকেও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকি শিলিগুড়ি লাইনের (বিজেপির সাথে বেসরকারি জোট) স্বার্থে সিপিএম ও কংগ্রেসও এই রাজ্যে বেড়ে চলা সাম্প্রদায়িক হিংসা ও ঘৃণার প্রচারের বিরুদ্ধে কোন পাল্টা কর্মসূচি না নিয়ে শুকনো বিবৃতি দিয়ে নিজেদের দায় সেরেছে।

রাম নবমীর মতন অবাঙালি উৎসব কে কেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি হিন্দুদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে? কেন জোর করে গ্রামে গঞ্জে হিন্দি ভাষার প্রচলন বাড়ানো হচ্ছে আরএসএস এর স্কুলগুলোর মাধ্যমে? এর কারণ হলো যে বিজেপি এবার পশ্চিমবঙ্গ কে পাখির চোখ করে উত্তর প্রদেশ ও আসামের মডেল অনুসরণ করে দখল করতে চায়। আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের দুই নম্বর পার্টি হয়ে ওঠা বিজেপির তাৎক্ষণিক লক্ষ্য এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস কে সরিয়ে ক্ষমতার আলিন্দে আসা এখন একটি দীর্ঘ মেয়াদের প্রকল্প গেরুয়া শিবিরের। এই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের আগে পশ্চিমবঙ্গের মাটি থেকে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও শ্রমজীবি মানুষের অধিকার রক্ষার সংগ্রামগুলিকে শেষ করা ও পশ্চিমবঙ্গের শ্রমজীবি মানুষের লড়াকু ঐতিহ্য কে শেষ করা ভীষণ জরুরী, আর তাই এই লড়াইগুলো কে এবং লড়াইয়ের ঐতিহ্য কে শেষ করতে আজ আরএসএস এর কর্মসূচী হলো দাঙ্গা হাঙ্গামার মাধ্যমে, হিন্দুত্ববাদের মতাদর্শের ভিত্তিতে জাতি ও ধর্ম ঘৃণার উপর ভর করে, রাজ্যের গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে নিজের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা ও বিজেপির ঝুলিতে বৃহৎ হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক গড়ে মেরুকরণের ফসল ঢোকানো।

যেহেতু আরএসএস ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী শক্তি মারাঠি ও গুজরাটি বাদে অন্যান্য কোন জাতির স্বতন্ত্র অস্তিত্ব, বিবিধতা, ও ভাষা এবং সংস্কৃতির বৈচিত্র কে আরবি ওয়াহাবি কায়দায় অস্বীকার করে ও ঘৃণা করে, তাই তাদের পক্ষে আজ পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষের মধ্যে হিন্দি ভাষার প্রচলন কে বাড়িয়ে তাঁদের কে হিন্দি ভাষা ও উত্তর ভারতীয় হিন্দু সংস্কৃতির ক্রীতদাসে পরিণত করা ভীষণ জরুরী। তাই রাম নবমী পালন, রাম ও হনুমান আরাধনার প্রচলন শুরু করা, আমিষ খাওয়ার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করার থেকে শুরু করে হিন্দি ভাষা কে  বাঙালি, তামিল, সাঁওতাল, অহমীয়, ইত্যাদী সকল জাতির প্রধান ভাষা হিসেবে স্থাপিত করতে আজ লেগে পড়ে লেগেছে আরএসএস। আর এই কাজে সমস্ত গেরুয়া সংগঠনগুলি আজ কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।  

যুক্তি অবশ্যই হেগড়েওয়ার-গোলওয়ালকার-সাভারকারের মতন ব্রাক্ষণত্ববাদীদের সৃষ্ট “অখন্ড ভারতের” দর্শন, যে ভারতে রাজত্ব করবে উত্তর ভারতীয়, গুজরাটি, মারাঠি, ও মাড়োয়ারি উচ্চ জাতির হিন্দুরা আর যে ভারতের একটিই ভাষা হবে -হিন্দি, একটিই ধর্ম হবে - হিন্দুত্ব আর একটিই সংস্কৃতি হবে - হিন্দুত্ববাদ।  সেই ভারতের প্রয়োজনেই আজ প্রতিটি অঞ্চলের স্বতন্ত্রতা কে, বৈচিত্র কে শেষ করে এক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কে পত্তন করতে উদগ্রীব হয়েছে বৃহৎ একচেটিয়া বিদেশী পুঁজি ও দেশি মুৎসুদ্দি আর জোতদারদের টাকায় চলা আরএসএস ও বিজেপি। তাই আজ নরেন্দ্র মোদীর কাছে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরালা, মনিপুর, আসাম, ইত্যাদী আজ ভীষণ জরুরী, কারণ এই রাজ্যগুলোয় আরএসএস ও হিন্দুত্ববাদের ঝান্ডা কে শক্তিশালী ভাবে খাড়া করতে পারলে আর দেখতে হবে না, উত্তর প্রদেশের মতন জাতি দ্বন্ধ ও সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত আবহাওয়ায়  ভরিয়ে দেওয়া হবে এই সব রাজ্যের আকাশ আর বাতাস আর শেষ করে দেওয়া হবে এই রাজ্যগুলোয় বাস করা মানুষের বৈচিত্র্যময় নিজস্ব সংস্কৃতি ও সমস্ত ভাষাগুলো কে।

বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতি কে এই উত্তর ভারতীয় ব্রাক্ষণত্ববাদী আগ্রাসনের থেকে রক্ষা করতে দক্ষিণ বা বামপন্থী কোন পার্টি বা সংগঠন এগিয়ে আসছে না নিজেদের “সর্বভারতীয়” ও “রাজনৈতিক ভাবে সঠিক” ইমেজ বজায় রাখতে।  প্রাদেশিকতার “প্রতিক্রিয়াশীল” দাগ লাগার থেকে বাঁচার জন্যে পশ্চিমবঙ্গ সহ সকল অ-হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলোর প্রধানধারার রাজনৈতিক দলগুলো আজ আরএসএস এর হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তানের আগ্রাসী ফ্যাসিবাদী আক্রমণের সামনে উরু গেড়ে বসে আছে। তাঁরা আজ প্রতিবাদ করার স্পর্ধা দেখাতে পারছে না, পাছে মোদী সরকার ওদের কুকীর্তিগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরে! তাই, এমনকি বাঙালির স্বাতন্ত্রতা নিয়ে হাওড়া ব্রিজ থেকে বড়বাজারের দেওয়ালে স্লোগান লেখা আমরা বাঙালি’ও আজ নিশ্চুপ হয়ে আরএসএস এর সাথে হাত মিলিয়ে মুসলমান নিধন যজ্ঞের কান্ডারীদের দলে নাম লিখিয়েছে। আজ নিজেদের আদিবাসী সমাজের দাবিগুলো কে আস্তাকুঁড়েতে ছুড়ে ফেলে শুধু মাত্র টাকার লোভে সাওঁতাল ও বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর থেকে উঠে আসা প্রধানধারার রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব আরএসএস এর সাথে হাত মিলিয়েছে ও অপারেশন গ্রীন হান্ট থেকে শুরু করে খ্রীষ্টান মিশনারিগুলোর উপর আক্রমণ নামিয়ে আনতে হিন্দুত্ববাদ কে সাহায্য করছে।

এই পরিস্থিতিতে রাম নবমীর নামে যখন হাতে ত্রিশূল, তলোয়ার, ভোজালি সহ ভয়ানক সব ধারালো অস্ত্র নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় রাস্তায় হিন্দুত্ববাদী আরএসএস -ভিএইচপি-হিন্দু সংহতি সহ সকল গেরুয়া সন্ত্রাসীদের দলের গুন্ডারা তাণ্ডব করবে, যখন ভদ্রলোক সমাজের শিরায়-উপশিরায় বাস করা ব্রাক্ষণত্ববাদের সুপ্ত চেতনা কে খুঁচিয়ে জাগিয়ে তুলতে একের পর এক মিথ্যা ও কুৎসার সাহায্যে মুসলমান ও খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ সংগঠিত করবে আরএসএস ও বিজেপি, তখন কে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে, জনগণের ঐক্য কে সুদৃঢ় করে শত্রুর আক্রমণ কে রুখে দিতে পথে নামবে? কে তৃণমূলের সাহায্যে আরএসএস ও বিজেপির এই ঘৃণ্য তাণ্ডবকে প্রতিহত করবে আর গেরুয়া শিবির কে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উৎখাত করবে? একমাত্র সংগ্রামী কমিউনিস্টরাই এই কাজ করতে সক্ষম, কিন্তু অসংখ্য ভাগে ভাগ হয়ে থাকা বিপ্লবী বামপন্থীরা, জনগণের স্বার্থ কে সামনে রেখে কি এক হওয়ার সাহস বা সদিচ্ছা দেখাতে পারবেন? অমুক নেতা ভাল না, তমুক নেতার লাইন মানিনা, অমুকের সংগঠন তমুক লাইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব এনেছিল - এই দ্বন্ধগুলো কে নিজের জায়গায় রেখে, নিজেদের মধ্যে মতাদর্শগত সংগ্রাম কে বজায় রেখেও কি তাঁরা এক হয়ে ফ্যাসিবাদের কবর খোঁড়ার সদিচ্ছা দেখাতে পারবেন? কে অতি বাম আর কে ক্ষতি বাম এই তর্ক কে গৌণ করে ফ্যাসিবাদ কে পরাস্ত করা কে প্রধান কর্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করতে পারবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে ঢোল বাজিয়ে কাফকা আর কিউবা না আউড়ে শ্রমিক কৃষকের বস্তিতে আর বাসায় গিয়ে তাঁদের রাজনীতি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে নামাতে পারবেন?

মার্কসবাদ-লেনিনবাদের অসংখ্য ব্যাখ্যার মতনই আমাদের দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, অসংখ্য কমিউনিস্ট পার্টি ও গ্রুপ আছে, যদিও এই প্রবন্ধে তাদের সকলকেই বিপ্লবী বা প্রতিবিপ্লবী বলে আখ্যা দেওয়াটা লক্ষ্য নয়, তবুও এদের বেশির ভাগের মধ্যেই সুবিধাবাদ ও সংসদীয় ব্যবস্থার মোহটা এতই গভীরে প্রোথিত যে এদের পক্ষে রাস্তায় নেমে, সরকারি পন্থা বাদ দিয়ে সরাসারি গণসংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জনগণের স্বার্থে, খেটে খাওয়া মানুষের ঐক্যের স্বার্থে আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বার্থে আরএসএস এর নেতৃত্বাধীন, দিলীপ আর তপন ঘোষের নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্ববাদের রথের চাকা ভেঙে দেওয়ার লড়াই করার কোন সম্ভাবনা নেই। তবুও এই সকল দলের অধিকাংশ কর্মী ও সমর্থকই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট শক্তির চরম বিরোধী আর তাই আজ সকল প্রগতিশীল বামপন্থীদের কর্তব্য হলো পার্টিবাজির সংকীর্ণ গন্ডির বাইরে বেরিয়ে অন্যান্য দলের কর্মী ও সমর্থকদের সাথে কথা বলা, মত বিনিময় করা, এবং একসাথে সঙ্কল্প নিয়ে সক্রিয় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদী গেরুয়া শিবির কে পশ্চিমবঙ্গের মাটির থেকে এবং বাঙালি ও আদিবাসী জনগণের মনন থেকে উৎখাত করা। এই লড়াইয়ে আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো ঐক্য আর এই ঐক্য আজ অর্জন করা যেতে পারে নিজেদের মধ্যে লাইন আর নীতিগত পার্থক্য বজায় রেখেও।

আজ যদি পাল্টা প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মাধ্যমে পদে পদে হিন্দুত্ববাদের বানর সেনা কে আটকানো না হয়, যদি ওদের মুসলিম বিদ্বেষী, খ্রীস্টান বিদ্বেষী, নারী বিদ্বেষী, এবং খেটে খাওয়া মানুষের লড়াই বিদ্বেষী প্রচার ও মিথ্যাচারের যন্ত্র কে ভেঙে দিয়ে জনগণের মধ্যে সত্য প্রচারের স্বার্থে ব্যাপক প্রচার কার্য না করা হয়, তাহলে কিন্তু আগামী কাল পশ্চিমবঙ্গের মাটি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের রক্তে সিক্ত হবে, উত্তর ভারতীয় হিন্দি আগ্রাসীদের চক্রান্তে ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় লিপ্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই রাজ্য কে শেষ পর্যন্ত আর একটা গুজরাট বা উত্তর প্রদেশের মতন সাম্প্রদায়িক হিংসার আঁতুড়ঘরে পরিণত করবেন। সেই ভবিষ্যৎ আগামী প্রজন্ম ও বাঙালি জাতির পক্ষে, হিন্দু-মুসলমান-খ্রীস্টান-বৌদ্ধ-বাউল-আদিবাসী-জৈন-শিখ সহ পশ্চিমবঙ্গের সকল মানুষের পক্ষে হবে ভয়াবহ। আজ যদি রাম নবমীর নামে সশস্ত্র মিছিল ও দাঙ্গার মাধ্যমে আমরা পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস এর নেতৃত্বাধীন গৈরিক বাহিনী কে নিজেদের প্রতিপত্তি কে বলিষ্ঠ ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে দিয়ে ফেলি তাহলে আগামী প্রজন্ম ও ইতিহাস আমাদের কোনদিন ক্ষমা করবে না। তাই সাধু সাবধান ! তোমার মা-মাটি-মানুষ আজ হিন্দুত্ববাদের হাতে আক্রান্ত-লুন্ঠিত-পদদলিত। সময় এসেছে রুখে দাঁড়ানোর, সময় এসেছে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার। পশ্চিমবঙ্গের আকাশের লাল সূর্যের উত্তাপে জ্বালিয়ে দিন হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজদের সকল চক্রান্ত কে আর রক্তিম আভা দিয়ে পথ দেখান সমগ্র ভারতবর্ষকে আগামী দিনে এক সৌভ্রাতৃত্বে পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সমাজ নির্মাণ করার।   

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে