বাংলাদেশের স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রামের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো

রবিবার, আগস্ট ১২, ২০১৮ 0 Comments A+ a-

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাস্তার দখল ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের হাতে। রাষ্ট্র যখন জনতা কে পেটাতে, যাকে তাকে ধরে ক্রসফায়ারে মেরে, কয়লা চুরি করিয়ে বিজলী উৎপাদন রুখে দিয়ে, দেশের সম্পদ দেশী-বিদেশী পুঁজির কাছে বেচে আর সুন্দরবন কে ধ্বংস করে দেশ কে সর্বনাশের শেষ প্রান্তে পাঠাতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই হাজারো ছোট ছোট স্কুলপড়ুয়ারা দলে দলে রাস্তায় নেমে আজ ঢাকার যান চলাচল নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। নিজেদের ছোট ছোট হাতে বড় বড় গাড়ি আটকে তাঁরা করেছেন লাইসেন্স চেক এবং যাঁদের লাইসেন্স পাওয়া যায়নি তাঁদের ধরে খাতায় “আমার লাইসেন্স নাই” বারবার লিখিয়েছেন। এই স্কুল পড়ুয়াদের  আন্দোলন কে, যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২৯ জুলাই ঢাকায় দুই স্কুলপড়ুয়ার সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর থেকে, নানা ভাবে রুখবার চেষ্টা করেও ফ্যাসিবাদী ভারত-দালাল হাসিনা সরকার দমিয়ে দিতে পারেনি। টিসির ভয় কাটিয়ে, পুলিস আর লীগের গুন্ডাদের আক্রমণের মোকাবিলা করে ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলন সারা দেশেই নয়, বিদেশেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেক তথাকথিত রাজনৈতিক বিদ্বান ও পোড় খাওয়া বুদ্ধিজীবী’রা এই আন্দোলন কে ছেলেখেলা, হঠকারিতা, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি বলে গালাগালি করেও শেষ পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রীদের সংঘবদ্ধ প্রয়াস কে হারাতে পারেননি।



কেন হঠাৎ করে আরও অনেক দুর্ঘটনার মতনই একটি দুর্ঘটনা কে কেন্দ্র করে এক নজিরবিহীন আন্দোলনের সৃষ্টি হলো বাংলাদেশে? কী করে স্কুলপড়ুয়া অসংখ্য ছাত্র ছাত্রী ঐক্যবদ্ধ হয়ে গড়ে তুললেন এক ঐতিহাসিক লড়াই? কী করে তথাকথিত অশ্রাব্য গালাগালি আন্দোলনের নতুন ভাষা, প্রতিরোধের নতুন রূপ ধারণ করলো? এই সমস্ত প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজতে গেলে আমাদের বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজ ও শ্রেণী-বিভাজনের দিকে ভীষণ বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হবে। আমাদের দেখতে হবে ঢাকা শহরের নাগরিক জীবন কে, বাংলাদেশের বিগত ৪৬ বছরের ইতিহাস কে এবং বুঝতে হবে সামগ্রিক ভাবে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্র যন্ত্র ও তার পেয়াদা ব্যবস্থার প্রতি এত আক্রোশ কেন?

ঢাকা শহরের মধ্যেই এক জায়গার থেকে আর এক জায়গায় যেতে যে কোন লোকের ৪-৫ ঘণ্টা লেগে যেতে পারে তীব্র যানজট ও নিয়মহীন ভাবে পরিবহন ব্যবস্থা কাজ করায়। বিআরটিসি একটি অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা যার কাজ গরিব কে হয়রান করা ও বড়লোকের থেকে ঘুষ খাওয়া। না কোনদিন বাংলাদেশের সরকার রাস্তায় চলা গাড়ির চালকদের লাইসেন্স আছে না নেই তা নিয়ে মাথা ঘামায় আর না সরকারের কোনদিন সড়ক পরিবহনের সমস্ত যানবাহনের অবস্থা যাচাই করার ইচ্ছা হয়েছে।  ফলে শুধু পুলিশ আর বিআরটিসি কে টাকা খাইয়ে যে কোন লোক গাড়ি বের করে চালিয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে আর তারপরে আবার ঘুষ খাইয়ে ছাড় পেয়েছে। গোটা বাংলাদেশ জুড়ে এই কারবার চললেও এই দুর্নীতি ও সড়কের দুর্দশা সবচেয়ে জলজ্যান্ত রূপে ঢাকা শহরে দৃশ্যমান হয়। যখন ২৯ জুলাই দুই স্কুলপড়ুয়া দুর্ঘটনার শিকার হন, তখন বাংলাদেশের এক প্রভাবশালী হাসিনা-দালাল মন্ত্রী, শাহজাহান খান পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বোসের মতন মন্তব্য করে যে “এমন তো হয়েই থাকে” আর পরিসংখ্যান দিয়ে নিজে নিস্তার পাওয়ার চেষ্টা করে তখন কিন্তু বহুদিন ধরে প্রাণ হাতে করে রাস্তা পারাপার করে স্কুল যাওয়া কিশোর-কিশোরীদের আত্মসম্মানে ঘা লাগে। তাঁদের সহপাঠীর লাশ রক্তের বন্যায় যখন ভাসছে তখন মন্ত্রী হাসিমুখে বিবৃতি দিচ্ছে দেখে কৈশোরের বিদ্রোহী চেতনা আগ্নেয়গিরির ন্যায় ফেটে পড়ে, লাভা তার ছড়িয়ে যায় সর্বত্রে।  

কী কী করেছেন ছাত্র ছাত্রীরা এই কয়েকদিনে? তাঁরা যে শুধু নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে, বিনা কোন প্রশিক্ষণে বেশ নিপুন ভাবে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছেন তাই নয়, বরং তাঁরা প্রথমবার ঢাকা শহরের যানজট সমস্যা সমাধান করে দেখালেন যে ইচ্ছা থাকলে সব কিছুই সম্ভব। এই প্রথমবার ঢাকার রাজপথে এমার্জেন্সি করিডর দেখা গেল, এই প্রথম দেখা গেল গণহারে গাড়ির লাইসেন্স চেকিং আর তাতে সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ, মন্ত্রী-সান্ত্রী সবার গাড়িই ফাঁসলো। হাসিনা সরকার এই আন্দোলনের ব্যাপ্তি ও জনগণের এর পিছনে অভূতপূর্ব সমর্থন দেখে থতমত খেয়ে গেল। শেখ হাসিনা বারবার স্কুল পড়ুয়াদের স্কুলে ফিরে যেতে বললেন আর তাঁর আদেশ কে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে কচিকাচারা এক নতুন বিদ্রোহ শুরু করলেন।

“আমার ভাইয়ের রক্তে লাল, পুলিশ কোন চ্যাটের বাল”, “পুলিশ খানকির পোলা”, “মন্ত্রী চুদি না”, “লাঠি চার্জ চুদি না”, সহ বিভিন্ন খিস্তি দেওয়া স্লোগান গণ আন্দোলনের নতুন স্লোগান হিসেবে চিহ্নিত হলো। দেশ জুড়ে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ যে ভাষায় কথা বলেন এবং নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঠিক সেই ভাষাই, যাকে সম্ভ্রান্ত লোকেরা “রাস্তার ভাষা” বলে অভিহিত করেন, সেই ভাষাই আজ রাস্তার লড়াইয়ে ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সবার প্রতিবাদের ভাষা হলো। বিচারপতি কে যেহেতু নিজের মুখ লুকোতে হলো তাই পিছনে ফিরে শুধু ছি ছি করার চেয়ে বেশি শাসক শ্রেণীর দালালেরা আর কিছুই করতে পারলো না। এই নতুন প্রতিবাদের ভাষা, জেগে ওঠা বাংলাদেশের নব্য প্রজন্মের মুখ থেকে সজোরে উচ্চারিত হয়ে যখন ঢাকা কাঁপিয়ে সারা বিশ্বের বুকে প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো, তখন কিন্তু বাংলাদেশের শাসক শ্রেণীর ও তাঁদের মালিক ভারতীয় শাসক শ্রেণীর আতঙ্ক উচ্চগামী হলো।  

পুলিশ ও ৱ্যাব দিয়ে ছোট ছেলে মেয়েদের উপর আক্রমণ করে, আওয়ামী লীগের গুন্ডাদের, বিশেষ করে ছাত্র লীগ ও শ্রমিক লীগের ভাড়া করা গুন্ডাদের বন্দুক, পিস্তল ও নানা ধরণের ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের দমন করতে পাঠিয়ে শ্রীমতি হাসিনা ভীষণ উৎফুল্ল হয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন আন্দোলন হয়তো দুই দিনে শেষ হয়ে যাবে বা ছাত্র লীগ ও শ্রমিক লীগের ভাড়াটে গুন্ডাদের আক্রমণে অল্পেই ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে এবং অভিভাবক’রা  আর তাঁদের সন্তানদের রাস্তায় নেমে লড়াই করতে দেবেন না। কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের তীব্র বিক্ষোভ আন্দোলনগুলো যে ভাবে পুলিশ ও লীগের সন্ত্রাসের মাধ্যমে রক্তের বন্যায় ডুবিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি করেই শেখ হাসিনা আশা করেছিলেন নিরাপদ সড়কের লড়াই শেষ হবে। তবে যেহেতু তিনি না বোঝেন দেশের মানুষের নাড়ি আর না বোঝেন কৈশরের আক্রোশ কে, তাই তাঁর সকল ধরণের ষড়যন্ত্র কে ছিন্ন ভিন্ন করে এই স্কুলপড়ুয়াদের বিক্ষোভ ও আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। ৱ্যাব থেকে পুলিশ, ছাত্র লীগ থেকে শ্রমিক লীগের গুন্ডাদের আক্রমণ, সব কিছুর মোকাবিলা করে ছাত্র-ছাত্রীরা তাই রাষ্ট্র কে মধ্যম আঙ্গুল দেখিয়ে রাজপথে রাজত্ব করতেই থাকেন।

বর্তমানে বাংলাদেশের নানা ধারার বাম ও উপবামপন্থী মহলে এই ছাত্র আন্দোলন নিয়ে মহা অশান্তি চলছে। অনেকের মতে এই আন্দোলন অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত যাতে করে বিএনপি ও জামাত শিবির যেন এর কোন লাভ না তুলতে পারে, অনেকের মতে যেহেতু সিআইএ’র টাকা খাওয়া আল-কায়দার নেতা এখন এই আন্দোলন নিয়ে নাকি মাথা ঘামাচ্ছে তাই এই আন্দোলন তুলে দেওয়া উচিত, পাছে আন্দোলনের লেজ ধরে ইসলামিক জঙ্গীদের কার্যকলাপ আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, আবার অনেকের মতে এই আন্দোলন তো ঠিকই আছে তবে ছোট-ছোট ছেলে মেয়েগুলো যেন ওই “অশ্রাব্য ভাষা” ব্যবহার না করেন। নানা পক্ষের পত্র-পত্রিকাগুলো, সংবাদ মাধ্যম আজ অবধি এই আন্দোলন কে নিয়ে নিস্তব্ধ থেকে থাকলেও বর্তমানে তাঁরা আর এই আন্দোলন কে উপেক্ষা করতে পারছেন না, চেপে যেতে পারছেন না। কিন্তু এই আন্দোলন কে শুধুই নিরাপদ সড়কের জন্যে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ-আন্দোলন হিসেবে দেখিয়ে তাঁরা ওই ছোট ছেলে মেয়েগুলোর মধ্যে ভিসুভিয়াসের মতন বিস্ফোরিত হতে  থাকা রাষ্ট্র-বিরোধী, শাসক শ্রেণী-বিরোধী ও অন্যায়-অবিচার বিরোধী চেতনা কে স্রেফ চেপে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

তাই পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল ঢাকার কথা নগন্য ভাবে উপস্থিত। শুধুই যেন ছাত্র-ছাত্রীরা সড়কের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন সেইরকম একটা প্রচার আর চেপে যাওয়া হচ্ছে পুলিশের সাথে তাঁদের সংঘর্ষ, ছাত্র লীগ আর শ্রমিক লীগের সাথে তাঁদের সংঘর্ষের কথা। চেপে যাওয়া হচ্ছে কী ঘৃণ্য ভাবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সাগরেদরা ছোট ছেলেমেয়েদের রক্তের বন্যায়  ডুবিয়ে নিজেদের কতৃত্ব কে রক্ষা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই চেপে যাওয়া, বাদ দেওয়া সত্ত্বেও কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের ভূত বাংলাদেশের শাসকশ্রেণী কে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা লুম্পেন ছাত্র লীগ আর হাসিনা সরকার কে কাঁচকলা দেখিয়ে নেমে এসেছেন রাস্তায়, গড়ে উঠছে আর একটা শাহবাগ আর তাতেই যত আতঙ্ক মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর।

এটা সত্যিই যে কিশোর-কিশোরীদের এই অভূতপূর্ব সংগ্রাম কোন বৈপলবিক লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়নি। এই সংগ্রামের প্রধান লক্ষ্য হলো ঢাকা মহানগরের যানবাহন চলাচল কে ঠিক করা এবং সড়কগুলিকে সবার জন্যে সুরক্ষিত করা যাতে করে আর কোন ফুলের কুঁড়ির মতন শৈশব কে রক্তে স্নান করে ঝরে না যেতে হয়। আর এর সাথে জুড়েছিল মন্ত্রী শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে তাঁর অমানবিক বক্তব্যের জন্যে ক্রোধ। তবে যেহেতু বর্তমান যুগে, যে যুগে বিপ্লবই প্রধান প্রবণতা, সকল ধরনের সরকার বিরোধী লড়াই অচিরে বিদ্রোহের রূপ নেয় তাই এই স্কুলপড়ুয়াদের সংগ্রামও একটি জনপ্রিয় সরকারবিরোধী সংগ্রামের রূপ নেয় এবং সাধারণ মানুষ, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শাসন ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা দিন-আনি-দিন-খাই মানুষ আজ এই ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের পাশেই কিন্তু দাঁড়িয়েছেন পরিবহন শ্রমিকেরা, অফিসের কর্মচারীরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আর দেশের অসংখ্য গণতন্ত্রপ্রিয়, মৌলবাদ-বিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় স্নাত মানুষ।

বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির অভাব বাংলাদেশে বহুদিন ধরেই তীব্র ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। নানা ধারায় বিভক্ত বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলনে আজ নেতৃত্ব দান করার মতন কোন কেন্দ্রীয় শক্তি নেই, কোন বিপ্লবী কতৃত্বও নেই, আছে শুধু আঁতেলদের আড্ডা, সিপিবি-ওয়ার্কার্স পার্টি-জাসদের মুণ্ডুপাত করতে করতে চৌ এনলাইয়ের সংশোধনবাদী তত্ত্ব কপচানো কিছু মধ্যবিত্ত স্বপ্ন বিলাসী এবং আছে অসংখ্য গণসংগঠন যাদের দিয়ে গণআন্দোলন গড়ে সেই আন্দোলন কে বিপ্লবের প্রাথমিক স্তর বানাতে চাওয়া অনেক দিকভ্রান্ত বিপ্লবী। এই চরম দিশাহীনতার রাজত্বে আমাদের ছোট ছেলে মেয়েদের যে কোন বিপ্লবী এগিয়ে এসে নেতৃত্ব দেবে তা হয়ে উঠবে না। তার বদলে শাসকদের অত্যাচার কে, শাসকদের ভাড়াটে গুন্ডাদের আক্রমণ ও সেই আক্রমণে আক্রান্ত হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে তীব্র প্রচার করে একটা ভয়ের আবহাওয়া তৈরী করার, নিরাশার সৃষ্টি করার ও ছাত্র-ছাত্রীদের চরম ভাবে demoralise করার কাজ কিন্তু এক শ্রেণীর “বিপ্লবী” ছাত্র-যুবরা করে যাবে।

চোখের সামনে স্কুলের ছাত্রদের এরা ছাত্র লীগের গুন্ডাদের হাতে আক্রান্ত হতে দেখেও এগিয়ে এসে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন না, পাছে রাষ্ট্র বহিরাগত দমনের নাম করে আক্রমণ করে; এরা এলাকায় এলাকায় জনগণ কে ছাত্রদের সমর্থনে লীগকে রুখতে লড়াই করার আহ্বান জানাবেন না, পাছে রাষ্ট্র রাগ করে। এদের গণসংগঠন ও গণআন্দোলন কেন্দ্রিকতা শুরুর থেকেই এদের রাষ্ট্রের পোষা বাহিনীর নজরে রেখেছে, তাই এরা যে নিজেদের গন্ডির বাইরে গিয়ে ছাত্রদের লড়াই কে রাজনীতি দিয়ে সচেতন করে তাঁদের বিপ্লবী সত্ত্বা কে জাগাবার চেষ্টা করবেন সে আশাও গুড়ে বালি। তেমন হলে কোটা আন্দোলনের সময়েই এই তথাকথিত বিপ্লবীরা অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে পারতেন।  

বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের আজ স্পষ্ট ভাবে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের বোঝানো উচিত যে নিরাপদ সড়ক শুধু এমন সমাজেই সম্ভব যে সমাজে মানব জীবন কে অমূল্য বলে মনে করা হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গিয়ে, তাঁদের পাশে থেকে লড়াই করে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের তাঁদের বোঝাতে হবে যে সেই সমাজ গঠন করতে গেলে বর্তমান পঁচা গলা সমাজ, যে সমাজের ভিত্তি হচ্ছে মানুষের উপর মানুষের শোষণ, সেই সমাজ কে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে হবে আর তার ধ্বংসস্তূপের উপর এক শোষণহীণ, মুক্ত-স্বাধীন বাংলাদেশ গঠন করতে হবে।  বিপ্লবী কমিউনিস্টদের কর্তব্য এই সকাল আট’টা-ন’টার সূর্যের রোদ্দুরের মতন উজ্জ্বল ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানো যে তাঁদের ঐতিহাসিক কর্তব্য হলো শ্রমিক-কৃষকের সাথে একাত্ম হওয়া এবং তাঁদের কাছে বিপ্লবের বার্তাবাহক হিসেবে পৌঁছে যাওয়া। বুর্জোয়া শিক্ষা ব্যবস্থার নোংরা চরিত্রটা, বাংলাদেশের জনগণের গভীর দুঃখ ও দুর্দশার কথা তাঁদের কাছে সবিস্তারে বলে এই ছাত্র-ছাত্রীদের আগামী দিনে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষদের জাগিয়ে তোলার জন্যে তৈরি করা আজ বিপ্লবী কমিউনিস্টদের কর্তব্য।

বাংলাদেশের স্কুলপড়ুয়াদের বিক্ষোভ থেকে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব হবে না আর তাঁদের লড়াই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিপ্লবী সংগ্রামের রূপ নেবে না। অথচ এই সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে কিন্তু ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রাষ্ট্রের চরিত্র বুঝতে শিখছে আর তাঁরা শিখছে আগামী দিনে রাজপথে নেমে লড়াই করে হক কী ভাবে আদায় করতে হয় সেটা। আমাদের উচিত তাঁদের এই বিদ্রোহী মেজাজের কাছে নতজানু হয়ে শেখার এবং তাঁদের কে রাজনীতি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করে শ্রেণীর কাছে পাঠিয়ে এই বিপ্লবী-বিদ্রোহী মেজাজটিকে একটি সঠিক রূপ দেওয়া। যে লড়াই আজ বাংলাদেশের ছাত্ররা করে দেখাচ্ছেন এবং যে ভাবে ভারতের সম্পসারণবাদী শাসক শ্রেণী ভয় পাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে আগামী দিনে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে হাসিনা’র প্রতিক্রিয়াশীল ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে জন বিক্ষোভ ফেটে পড়বে। সেদিনের জন্যে তৈরি থেকে বিপ্লবী কমিউনিস্টরা যদি সঠিক বিপ্লবী লাইনের উপর ভিত্তি করে একটি অভিন্ন কেন্দ্র না গড়ে তোলেন তাহলে সেই বিদ্রোহের বাঁধ ভাঙলে তাঁরা লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হবেন এবং বিএনপি-জামাতের মতন প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি নেপো হয়ে দই খাবে। ছাত্রদের বর্তমান লড়াই কে কেন্দ্র করেই ভবিষ্যতের বৃহৎ লড়াইয়ের জন্যে আজ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া ভীষণ জরুরী।

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে