বাজারী খবরের ঝোলায় স্থান নেই কালবুর্গির

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৫ 0 Comments A+ a-

বাজারী সংবাদপত্রগুলিতে খুললেই পড়তে পারবেন মুম্বাই শহরের শিনা বরা হত্যাকান্ড থেকে শুরু করে দুর্গাপুরের সুচেতা - দীপাঞ্জনা হত্যাকান্ডের খবর, এবং এই হত্যাকান্ডগুলি নিয়ে নানা ধরণের গবেষণা বিশ্লেষণ। পরকীয়া, প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতা, লোভ, লালসা, যৌনতা মেশানো এই সব গল্পের মাধ্যমে আমাদের বোঝানো হচ্ছে যে মানুষ আজ কত অমানবিক হয়ে উঠেছে, কেউ নিজের মেয়েকে নিজের প্রাক্তন স্বামীর সাথে মিলে হত্যা করছে তো কেউ শিশু কন্যা সহ এক মহিলাকে হত্যা করে ইলেকট্রিক কাটার দিয়ে টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে নদীতে বইয়ে দিচ্ছে। সত্যি ! ঘটনাগুলি বড় অমানবিক। কিন্তু অবাক হই যখন বাজারী কাগজগুলির প্রথম পাতায়, আর ভিতরের পাতায় শুধুই পড়ি ইন্দ্রানী মুখার্জীর পরকীয়ার কাহিনী, একের পর এক পুরুষ সঙ্গী বদল করে আরও ধনী হওয়ার প্রয়াস। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সমরেশ কি খেল, লক আপে কি ভাবে ঘুমুলো তার গল্প তাড়া করে হারাতে চাইছে কোটিপতি ইন্দ্রানীর গল্পকে। আর এই সব খবরের মাঝে ছোট হয়ে গেল কর্ণাটকের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও লিঙ্গায়ত জাতির উপর বিশিস্ট গবেষক এম.এম কালবুরগির হত্যাকান্ড। যে হত্যাকান্ড মহারাষ্ট্রের দাভলকার, গোবিন্দ পানসারে হত্যাকান্ডের সাথে যুক্ত করলো বিশিস্ট শিক্ষাবিদের নাম।  

এম.এম কালবুরগি ছিলেন একজন মুক্তমনা গবেষক ও শিক্ষাবিদ, এক কালে তিনি কন্নাডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন, এবং লিঙ্গায়ত জাতি, যা উত্তর কর্ণাটকের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি এবং বিজেপি - আরএসএস এর প্রধান সমর্থক ভিত্তি, সেই জাতির ইতিহাসের উপর গবেষণা করে তিনি এক সমালোচকের দৃষ্টিকোণ থেকে সামন্তবাদী ধার্মিক রীতি নীতি ও অন্ধবিশ্বাসের প্রবল সমালোচনা করেন। বিশেষত যে বাসব কে লিঙ্গায়াত জাতি তাদের জাতির প্রতিষ্ঠা পুরুষ হিসাবে গন্য করেন, সেই বাসবের জীবনের এক দ্বান্ধিক বিশ্লেষণ তিনি করেন ১৯৮৯ সালে যা লিঙ্গায়াতদের মৌলবাদীদের ভীষন ভাবে ক্ষুন্ন করে।  এই গবেষণার ফলে কালবুর্গির জীবনের উপর নেমে আসে অন্ধকারের ছায়া। তাঁর বিরুদ্ধে তত্কালীন সময়ের হিন্দুত্ববাদীরা চড়াও হয়, তাঁর মৃত্যু পরোয়ানা পর্যন্ত বের হয় এবং তাঁকে বাধ্য হয়ে পুলিশের সুরক্ষা নিতে হয়। তাঁর পরিবার ও তাঁর জীবন সংকট হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তাঁকে রফা সূত্র বের করতে হয় নিজের গবেষণা থেকে বাসবের উপর লেখা অনেকাংশ বাদ দিয়ে, যা পরবর্তীকালে তিনি তাঁর মধ্যেকার 'বুদ্ধিজীবি সত্তার আত্মহত্যা' বলে অভিহিত করেন।  

কালবুর্গির হত্যা হয় তাঁর বাড়ির ভিতর, বসার ঘরে। দুইজন আততায়ী ৩০শে অগাস্ট সকালবেলায় তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে হত্যা করে খুব সহজে পালিয়ে যায় এবং এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এই বিশিস্ট মুক্তমনা বুদ্ধিজীবির হত্যাকান্ড নিয়ে বাজারী সংবাদ মাধ্যম বেশি মাথা ঘামাতে রাজি নয় কারণ এই খবরে যৌন আবেদন নেই, বিকৃত মানসিকতার বহি:প্রকাশ নেই, নেই সাসপেন্স ও থ্রিলার, তাই বাজারে এক প্রবীন বুদ্ধিজীবির হত্যার খবর খাবে না, তার উপর কালবুর্গির হত্যার অভিযোগের তীর যখন ঘুরছে গেরুয়া সন্ত্রাসীদের দিকে তখন তো সেই বিষয়ে লেখা নৈব নৈব চ।  বাজার চায় বিকৃত মানসিকতা, বাজার চায় যৌন অনুভূতিতে সুরসুরি দেওয়া খবর এবং বাজারী চাটুকার সংবাদ মাধ্যম ও তার সাংবাদিকরা তাই কাঠি নিয়ে সেই সুরসুরি দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে গোটা দেশজুড়ে।  তাই দেশের সব খবর থাক ভিতরে - প্রধান খবর ইন্দ্রানী মুখার্জীর কেচ্ছা কাহিনী আর সমরেশের মানসিক বিকৃতি। 

                     

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে