হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত ছাত্র নেতা রোহিথ ভেমুলার মৃত্যু ব্রাক্ষণত্ববাদী ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মুখোশ খুলে দিল

সোমবার, জানুয়ারী ১৮, ২০১৬ 0 Comments A+ a-

হায়দ্রাবাদের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত ছাত্র নেতা ও বিজ্ঞান গবেষক রোহিথ ভেমুলার আত্মহত্যার খবর চাউর হয়ে যেতেই দেশের কোনে কোনে ব্রাক্ষণত্ববাদী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র ও যুব সম্প্রদায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। প্রায় ১২ দিন ধরে হোস্টেল থেকে বিতারিত হয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়ে ধর্না ও অনশন আন্দোলন চালানোর পরে ১৭ই জানুয়ারী বিকেলবেলায় রোহিথ ভেমুলা আত্মহত্যা করেন।

রোহিত ভেমুলা সহ মোট পাঁচজন দলিত সম্প্রদায়ের ছাত্রদের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে হোস্টেল থেকে বিতাড়িত করে হায়দ্রাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্র - ছাত্রীদের মতে ভেমুলার মৃত্যু শুধু আত্মহত্যা নয়, এটা জাতি বিদ্বেষী হত্যা যার জন্যে দায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আরএসএসের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি,  বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বন্দ্রায়ু দত্তাত্রেয়া, ও ব্রাক্ষণত্ববাদী প্রশাসন।

রোহিথ ভেমুলা ও তাঁর সাথীরা নব্য বামপন্থী দলিত আন্দোলনে জড়িত এবং আম্বেদকর ছাত্র সমিতির সাথে জড়িত ছিলেন। গত বছরের ২রা অগাস্ট মুজ্জাফারনগর দাঙ্গার উপর বানানো চলচিত্র প্রদর্শনে বাঁধা দিয়ে আরএসএস এর ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের গুন্ডারা যে সন্ত্রাস চালায় দেশের মুক্ত ও স্বাধীন চেতনার মানুষদের উপর, তার তীব্র প্রতিবাদ করে রোহিথ ও তাঁর সাথীরা হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত ছাত্রদের তরফ থেকে কঠিন ভাষায় নিন্দা করেন। এরই সাথে তাঁরা তীব্র বিরোধিতা করেন ইউসুফ মেমনের ফাঁসির, যা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নেতাদের তুষ্ট করার এক রাষ্ট্রীয় প্রয়াসের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না।  

রোহিথ ও তাঁর সঙ্গীদের আরএসএসের ব্রাক্ষণত্ববাদী ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে  এই তীব্র আক্রমণ বন্দ্রায়ু দত্তাত্রেয়া ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের প্রচন্ড উত্তেজিত করে তোলে, কারণ আম্বেদকর ছাত্র সমিতির ছেলে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে মুসলমান ও দলিত ছাত্র ছাত্রীদের অধিকারের কথা বলে আরএসএসের ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলছিলেন। ক্ষিপ্ত দত্তাত্রেয়া তাঁর সাগরেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কে নির্দেশ দেয় যেন এই “দেশদ্রোহী” এবং “উগ্রপন্থী” ছাত্র ছাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যার ফলস্বরূপ বহু দিন ধরে চলা বিভিন্ন ধরনের বিভেদমূলক আচরণ করার পর একদিন আচমকা এই আম্বেদকর ছাত্র সমিতির পাঁচ মেধাবী ছাত্র ও গবেষককে হোস্টেল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় উপাচার্যের আদেশে। ব্রাক্ষণত্ববাদী নিয়মে তাঁদের প্রায় এক ঘরে করে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর, তাঁদের অবাধ চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে উপাচার্য’র দফতর।

এই ঘৃণ্য ব্রাক্ষণত্ববাদী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এই পাঁচ ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনেই অবস্থানে বসেন। তাঁরা প্রতিবাদ করেন এবং সেই প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি সারা ভারতে এবং ক্রমেই বিদেশেও শোনা যায়। দেশের প্রগতিশীল ও বাম - গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনগুলি এই পাঁচ দলিত ছাত্র ও তাঁদের লড়াইয়ের সমর্থনে সংহতিমূলক আন্দোলন গড়ে তোলেন দেশের কোনায় কোনায়। হায়্দ্রাবাদেও লড়াই তুঙ্গে ওঠে, যার ফলে এক সময়ে প্রশাসনিক দফতর দখল করার আন্দোলনেরও সাক্ষী থাকে এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

এই জঙ্গী আন্দোলনে এবং প্রগতিশীল ছাত্র জোট এবিভিপি ও সংঘ পরিবারকে এত আতঙ্কিত করে তোলে যে তারা সাম্প্রদায়িক ও জাতি বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে দলিত ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করা শুরু করে। অতি দক্ষিণপন্থীদের নিত্য করা জাতি বিদ্বেষ মাখানো কটুক্তি ও নিম্ন মানের সমালোচনা শুনেও এই ছাত্ররা তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যান। কিন্তু একটা স্তরে এসে ব্রাক্ষণত্ববাদী এবিভিপি, আরএসএস দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা ব্যবস্থার চরম ঘৃণ্য ব্যবস্থা রোহিথ ভেমুলার অন্তরকে নাড়িয়ে দেয়। ধীরে ধীরে হত্যা করে তাঁর স্বপ্ন ও ইচ্ছাগুলিকে, এবং এর ফলে একদিন এই চাপের সামনে নতি স্বীকার করার চেয়ে মৃত্যুকেই সহজ মনে করেন রোহিথ।

দলিত-আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু মানুষের উপর যে ভাবে আদি সনাতনী সামন্ত প্রথায় এই দেশে আক্রমণ আজও চলছে স্বাবর্ণ শাসক শ্রেণী ও তাঁদের পোষা প্রচার মাধ্যম ক্রমাগত সেই সংবাদকে বিছিন্ন ঘটনা বলে চতুরতার সাথে ঢেকে দেয় নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির ঢাক বাজিয়ে।

রোহিথের মৃত্যু আজ সংবাদ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু উচ্চ জাতির শাসক শ্রেণীর মুখপত্র ও প্রচার মাধ্যমগুলি রোহিথের মৃত্যুকে শুধু এক আত্মহত্যা বলে প্রচার করে তাঁর নিদারুণ পীড়ন, বেদনা ও কষ্টকে শুধুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা হিসেবে দেখিয়ে ঢেকে দিতে চাইবে ভারতবর্ষে দলিত-আদিবাসী ও সংখ্যালঘু মানুষের উপর স্বাবর্ণ শাসক শ্রেণীর অত্যাচার কে। এই ঘটনার পিছনের রাজনীতিকে, আর্থ - সামাজিক শোষণ ও অত্যাচারকে লুকিয়ে রেখেই তো সম্ভব শোষিত ও নিপীড়িত জাতির যেটুকু অধিকার এই দেশে আছে, যেমন উচ্চ শিক্ষায় ও সরকারি চাকরিতে সামান্য সংরক্ষণ, তার বিরুদ্ধে দেশের স্বাবর্ণ উচ্চ শ্রেণীর মানুষদের ক্ষেপিয়ে তোলা, ঠিক যেমনটা একদিন কর্পোরেট প্রচার মাধ্যম ২০০৬ সাল নাগাদ করেছিল দিল্লিতে দলিত ছাত্রদের বিরুদ্ধে স্বাবর্ণ সমাজকে পথে নামিয়ে।

বিদেশী বৃহৎ একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির বাঁশের ডগায় চেপে আরএসএস ও বিজেপি ব্রাক্ষণত্ববাদী ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার রাস্তায় আজ ভীষণ জোরে দৌড়াচ্ছে। পেছনে ধোঁয়া দিচ্ছে কর্পোরেট প্রচার মাধ্যম। দেশজুড়ে স্বাবর্ণ উচ্চ ও মধ্যবিত্ত হিন্দু সমাজকে ধর্মের মেরুকরণের মাধ্যমে এক ছাতার তলায় আনা হচ্ছে। যাতে করে সংখ্যালঘু ও দলিত-আদিবাসী সমাজের দমন পীড়নের স্বার্থে এবং শ্রমিক কৃষকের আন্দোলন ভাঙ্গার স্বার্থে এক চরম ফ্যাসিবাদী বর্ণ বিদ্বেষী ব্রাক্ষণত্ববাদী ব্যবস্থার গোড়া পত্তন করা যায়।

ভারতবর্ষ আজ সারা দুনিয়ার সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির লুণ্ঠনের এক স্বর্গ রাজ্য। এই বেহেস্তে ৭২টি সুন্দরী কুমারী পরীর জায়গায় আছে সস্তা শ্রম, অবাধ কাঁচা মাল ও প্রাকৃতিক সম্পদের পাহাড়। আর এই দেশকে নির্বিবাদে লুট করার স্বার্থে দরকার শ্মশানের শান্তি। সেই শান্তি আজকের পরিস্থিতিতে একমাত্র শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের ঐক্য ভেঙ্গে, তাঁদের একে অপরের রক্ত পিপাসু নেকড়েতে পরিণত করেই সম্ভব। তাই তো আজ হিন্দুর সাথে মুসলমানের যে কোনো মূল্যে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিতে শাসক শ্রেণীর তল্পিবাহক খাকি হাফ প্যান্ট বাহিনী এত উদগ্রীব। তাই তো স্বাবর্ণ হিন্দুদের পদ লেহন করতে অস্বীকার করা দলিত সমাজের উপর নেমে আসে নির্মম অত্যাচারের খাঁড়া। এই অবাধ লুণ্ঠনের স্বার্থেই তো আজ আদিবাসী জনগণের থেকে জল-জমি-জঙ্গল কেড়ে নেওয়ার স্বার্থে চালানো হচ্ছে অপারেশন গ্রীন হান্ট নামক সামরিক অভিযান। আর আদিবাসী দলিত ও সংখ্যালঘু মানুষের উপর অত্যাচারের বিরোধিতা যে বা যাঁরা করছেন তাঁদের হয় রাষ্ট্রদ্রোহী বলে গারদের পিছনে পুরে দেওয়া হচ্ছে অথবা রোহিথের মতন মৃত্যুর পথে জোর করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

রোহিথের মৃত্যু চোখে আঙ্গুল তুলে সমাজের সেই রক্ষকদের ভন্ডামো কে আবার দেখিয়ে দিল, যারা কথায় কথায় প্রকান্ড ঐক্যবদ্ধ হিন্দু সমাজের গান গায় এবং দলিতদের ভোট ব্যাঙ্ক দখল করতে দলিতদের দুঃখ কষ্ট নিয়ে কুম্ভিরাশ্রুর বান ছোটায়। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি জাস্টিস মার্কান্ডেয় কাটজু যেমন রোহিথের মৃত্যুতে বলেছেন যে এ দেশে এক সম্পূর্ণ সমাজ বিপ্লব ছাড়া এই সকল ঘৃণ্য ব্যবস্থা থেকে ভারতীয় জনগণের মুক্তির কোনো পথ নেই; ঠিক সেভাবেই বিশ্লেষক মনে করে যে এক সমাজ বিপ্লবের মাধ্যমে বর্তমান ব্রাক্ষণত্ববাদী শাসক শ্রেণী ও তাঁদের তাঁবেদারদের উৎখাত করে শ্রমিক কৃষক ও মেহনতি মানুষের স্বার্থে, দলিত-আদিবাসী ও সংখ্যালঘু মানুষের স্বার্থে এক স্বাধীন, মুক্ত ও নয়া গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষ গড়া ব্যাতিরেকে হাজার বাতলামো করলে দেশের জ্বলন্ত সমস্যাগুলির কোনো সুরাহা হবে না।

সিদ্ধান্ত আজ দেশের কাঁচা চুলের গরীব ঘরের যুবদের নিতে হবে যে তাঁরা কি এই শোষণ অত্যাচার আর বঞ্চনার মাঝে নিজেরা মরে মরে বাঁচবেন এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও সেই জীবনই দিয়ে যাবেন, না কি নিজের সর্বশক্তি দিয়ে শাসক শ্রেণী ও তাঁদের তল্পিবাহকদের বিরুদ্ধে লড়ে নিজের দেশের উপর নিজের অধিকার কায়েম করবেন।

          

তৃণমূলের গাড়ির চাকায় পিষ্ট হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ

শুক্রবার, জানুয়ারী ১৫, ২০১৬ 0 Comments A+ a-

অডি গাড়িকে আমি অনেকদিন শুধু অলিম্পিকের গাড়ি ভাবতাম, ওই চক্র লাগানো গাড়িটা যে বিশাল দামী কিছু একটা সে খবর কখনও রাখিনি৷ যাই হোক রাস্তায় দুই দশক সাইকেল চালিয়ে এই সত্যটা খুব হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম যে যত দামী গাড়ি তার নিচে ততই বেশি চাপা পড়ে মরার সম্ভাবনা৷ অতএব আমরা যারা সাধারণ পথচলতি মানুষ তাঁরা চিরকাল ওই গাড়ির গর্জনে ভয় পাই৷

হয়তো সেই বায়ুসেনার কর্মী অত কিছু জানতেন না৷ জানলে বোধহয় এভাবে বেঘোরে প্রাণ হারাতেন না৷ আবার বায়ু সেনার কর্মী, রেড রোড এলাকায় ২৬ জানুয়ারীর আগে গাড়িতে পিষ্ট হয়ে মৃত্যু, আর গাড়ির মালিক মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রীর দলের লোক, তাই তো মৃত্যুর ঘটনা রাজ্য রাজনীতিকে নাড়া দিল৷ নয়তো জ্যোতি বাবু তো বলেই গেছেন - এমনটা তো হয়েই থাকে৷

সত্যিই তো, এমনটাই তো হয়ে থাকে৷ অর্থবল, রাজনৈতিক ক্ষমতা, ইত্যাদির নেশায় বুঁদ হয়ে যখন বাবুদের অথবা বাবুদের হাফ-বাবু ড্রাইভারদের পা এক্সিলারেটরে চাপ দেয় তখন তো সাধারণ মানুষেরই সাবধান হয়ে চলা উচিত৷ কারণ সেই গাড়ির চালকের কাছে তাঁরা সামান্য কীট পতঙ্গের বেশি কিছু নন৷ যখন তখন আমাদের উড়িয়ে দিয়ে সেই অডি বা মার্সিডিজ তো পগার পার আর আমরা পটল তুলে পরের দিনের খবরের কাগজের অন্যন্য খবরের তালিকায় "পথ দুর্ঘটনায় হত" শিরোনামে হয় একটি নাম জুড়ে দেব না হয় অজ্ঞাত পরিচিত থেকে যাব৷ শুধু বাড়ির লোক পথ চেয়ে বসে থাকবে ফিরে আসার অপেক্ষায়, যতক্ষণ না কাঁটাপুকুর থেকে খবর এসে  অপেক্ষার ইতি টানবে৷

মমতা বলেছেন দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে, পুলিশ ধরবে, এই হবে আর সেই হবে, ইত্যাদী হম্বিতম্বি৷ সত্যই এই দুর্ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তির কপাল একদিক থেকে ভালো যে বায়ু সেনার চাপে সরকার স্বীকার করেছে যে দুর্ঘটনায় একজনের প্রাণ গেছে৷ নাহলে তো "সাজানো ঘটনা", "ষড়যন্ত্র", ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত হতে হতো মৃত্যুর পরে৷ কারণ গাড়ি তো শাসকদলের নেতার, যাদের পেশী পশ্চিমবঙ্গে সরকারি সীলমোহরের চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷

চাপে পড়ে মমতা ব্যানার্জী বলেছেন যে ঘটনার তদন্ত হবে, ফেরার অভিযুক্তকে পুলিশ ধরবে, ইত্যাদি৷ অথচ সেই নৌ সেনার প্রাক্তন প্রধানের নাতির দ্বারা চালিত বিএমডব্লিউ'র তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু, সলমান খানের গাড়িতে পিষ্ট হয়ে ফুটপাথবাসীদের মৃত্যু (আদালতের রায় বলছে সেই খুনি গাড়ি কেউই চালাচ্ছিল না), আর এই গত বছরে হেমা মালিনীর গাড়িতে চাপা পরে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ভারতবাসী সাধারণ মানুষদের কি এই শিক্ষা দেয়নি যে বড়লোকের গাড়ি চাপা পড়ে মরলে কোনো বিচারব্যবস্থাই গাড়ির চালক বা মালিককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারে না?

তৃণমূলের পুলিশ প্রশাসন যে সত্যিই দোষীদের ধরে বিচারে পাঠাবার সাহস দেখাবে সে কথা বদ্ধ উন্মাদ ও অন্ধ তৃণমূল ভক্ত বাদে পশ্চিমবঙ্গের কোনো নাগরিক বিশ্বাস করেন না৷ যে রাজ্যে পুলিশকে পেঁদিয়ে পুলিশের খাতায় ফেরার থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে হাঁটা যায়, যে রাজ্যে তৃণমূল না করলে বাড়ির রেশন বন্ধ হয়ে যায়, যে রাজ্যে শাসকদলের যাত্রা নায়ক সাংসদ ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে বিরোধী দলের মহিলা সমর্থকদের ধর্ষণ করার হুমকি দেয়;  সেই রাজ্যে আইন মেনে তৃণমূল নেতার শাস্তি হবে ভোটের বছরে সে আশা গুড়ে বালি৷

বিশ্লেষকের বিশ্লেষণ হলো যে লোক দেখানো তদন্ত হবে এবং তার দুই ধরনের ফলাফল হতে পারে:

১) সাত তাড়াতাড়ি একজন ড্রাইভার সেই হিন্দি সিনেমার কায়দায় আত্মসমর্পণ করে দুর্ঘটনার দায় নিজের কাঁধে নিয়ে রেড রোডের অডি কান্ডের ইতি টেনে মোটর গাড়ি আইন মোতাবেক কয়েক বছরের জন্যে ঘানি টেনে ফিরে আসবেন৷ তৃণমূল নেতা অথবা নেতা পুত্র কেউই সেদিন বা কোনদিনই ওই অডিতে চড়েননি সেকথা আদালতে প্রমাণ করা তৃণমূলের দুঁদে উকিল বাহিনীর কাছে নস্যি৷

২) চেনা ছকের থেকে বেড়িয়ে দেখা যাবে আচমকা পুলিশ বাহিনী সেই অভিযুক্ত কে জেলে বন্দী করলো এবং রীতিমত মোকদ্দমা দায়ের করা হলো৷ চারিদিকে তখন শুধু জয় মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর নিরপেক্ষ প্রশাসনের জয়৷ কিছু নিন্দুকেরা জিভ কামড়ে কালীঘাটে পাঁঠা বলি দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করবেন৷ অথচ সেই অভিযুক্ত জামিনের আবেদন করে কিছুদিন পরেই বাইরে চলে আসবেন, হয়তো একেবারে ভোটের আগেই৷ তখন ভোটের বাজারে নানা খবরের ঠেলায় এই কেসের খবর কারুর মনেই থাকবে না৷ ঠিক যেমন মানুষ আজ মনে করতে পারেন না যে সিদ্ধার্থ বশীষ্ঠ ওরফে মনু শর্মা লোকটা কে৷

বিচারের বাণী শ্রেণী বিভক্ত সমাজে চিরকাল নিভৃতে কাঁদবে যদি না অভিযুক্ত গরীব আর আভিযোগকারী ধনী হয়৷ শ্রমিক কৃষক ও মেহনতি মানুষ পথে ঘাটে, চাষের ক্ষেতে, বন্ধ কারখানার কোয়ার্টারে বা চা বাগানের চিলতে কুঠিরে শোষণের আর লুণ্ঠনের রোলারের নিচে চাপা পড়ে রোজ রোজ মরে৷ আর এভাবে মরতে হয় বলেই হয়তো নিজ শ্রেণীর শাসন স্থাপন করার উদ্দ্যেশ্য বারবার উত্তোলিত হয়ে আগুয়ান হয় সমাজ বিপ্লবের পথে৷ হয়তো সেই সমাজে গাড়ি চড়ে ঘোরা শিক্ষা ও সাফল্যের মানদণ্ড হবে না এবং তীব্র গতিতে বেপরোয়া হয়ে গাড়ি চালানো কোনো বীরত্বের পরিচয় হবে না৷

বাংলায় বিরহ শেষ হয়ে আবার মিলনের পর্বে সিপিএম - কংগ্রেস

বুধবার, জানুয়ারী ১৩, ২০১৬ 0 Comments A+ a-

প্রণয়ের যে কত জোর তা আমরা ৮০-৯০ এর দশকের বাংলা ছায়াছবির পর্দায় চিত্তপুরী যাত্রার কায়দায় ব্যক্ত হতে দেখেছি৷ এক সুন্দর প্রেমের কাহিনীতে হয় মনুষ্য সৃষ্ট অথবা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির দ্বারা সৃষ্টি হওয়া কারণে প্রেমিক যুগলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়৷ তবুও সমস্ত বাঁধা বিপত্তি পার করে প্রেমিক যুগল একত্রিত হয়, বিচ্ছেদ শেষে মিলনের মধুময় সঙ্গীতে ভুবন ভরে যায়৷ মোটামুটি ভাবে বলতে গেলে এই ছকে চলেই বোম্বাই মার্কা প্রেমের ছবি বানাবার প্রচেষ্টা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা সিনেমার পশ্চাত্দ্বারে আঘাত হেনে গেছে৷

যাই হোক, আজ বাংলার বুকে ঠিক সেই রকমই একটি বিচ্ছেদে শোকাহত প্রেমিক যুগলের প্রণয়ের পর্বে নতুন করে মিলনের পর্ব ফিরে আসছে৷ যদিও দুষ্টু লোকগুলো এখনো ব্যঙ্গ করছে আর বিদ্রুপের তীর ছুড়ছে, তবুও এ মিলনের মধুর পর্ব কে কেউ এবেলা ঠেকাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না৷ কারণ মিলন তো প্রণয়ে আবদ্ধ সিপিএম আর কংগ্রেসের, যে সে কংগ্রেস নয়, একেবারে খাঁটি দিশি জাতীয় কংগ্রেস, সেই কংগ্রেস যার দালাল বলে জ্যোতি বাবুরা এক কালে হিরেন বাবুদের গাল পারতেন৷

আগে লুকোচুরি করে চুমু খাওয়া চলতো সজনে গাছের তলায়, পরে ব্যাপারটা অনেকটা সেই - পাড়ায় সবাই জানে কার সাথে কার ইয়ে চলছে কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলেনা- অবস্থা ছিল৷ পরবর্তীকালে সিপিএমের এককালের শত্রুর কাছে জ্যোতি বোস - হরকিষেণ সুরজীতরা ধুতির কাছা খুলে খোলাখুলি প্রেম নিবেদন করে সেই ৯০ এর দশকের শেষ কালে, যার পরিনাম স্বরূপ সংসদীয় বামেদের কাঁধে চেপে কংগ্রেসের ২০০৪ সালে দিল্লীর মসনদ দখল৷ মধুচন্দ্রিমা পর্ব শেষ হওয়ার পর অবশ্য সম্পর্কে প্রকাশ্যে চিড় ধরে৷

প্রকাশ কারাতের তীব্র গগনভেদী বিপ্লবী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী হুঙ্কার আর নীতির দ্বন্ধ সেই সম্পর্কে অবনতির কারণ হিসাবে জ্ঞানী-গুণী-সুধীগণ দেখাতে চাইলেও ব্যাপারটা একটু বেশি গভীর ছিল৷ ভারতবর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি বাম সিপিএমের তাগিদ ছিল নিজের বাম গন্ধ যুক্ত আলখাল্লাটি ধারণ করে রাখা৷ সব ঠিক চলছিল কিন্তু পশ্চিম বাংলায় টাটা ও সেলিমের পুঁজির জন্যে খেমটা নাচার সময় আচমকা সিপিএমের ঘোমটা খুলে যায়৷ সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রামে পুলিশ আর জোতদারদের খুনি বাহিনী দিয়ে প্রতিবাদী কৃষকদের উপর নির্মম অত্যাচারের যখন সারা দেশে আর বিদেশে বিরোধিতা হচ্ছে আর রাজনৈতিক ভাবে ২০০৪-২০০৬ সালের নির্বাচনের পর শেষ হয়ে যাওয়া তৃণমূল যখন জনদরদী বামপন্থী স্লোগানের আড়ালে বাংলার মাটিতে ভিত্তি তৈরি করছে, ঠিক সেই সময়ে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এবং বাংলার মানুষকে ক্ষণিকের জন্যে বিভ্রান্ত করতে কারাতের সেই কংগ্রেস বিরোধী আস্ফালন জন্ম নিয়েছিল৷

যাই হোক ২০০৮ সাল থেকে মোটামুটি ভাবে সিপিএম ও সরকারি বামফ্রন্টের নির্বাচনী পতন শুরু হয়৷ কংগ্রেসের নির্বাচনী বিপত্তি শুরু ২০১৩ থেকেই৷ পশ্চিমবাংলার মসনদে মমতাকে শিখন্ডি করে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসলেও কিছুদিনের মধ্যেই ওদের মধ্যে গদির চামড়া নিয়ে কামড়া কামড়িতে কংগ্রেসীদের চাকরী যায়৷

অনেক পাঁড় কংগ্রেসী যারা এক কালে ঘাড়ে পাউডার লাগিয়ে টিভি চ্যানেলে মমতাকে গাল পারতেন, তাঁরাও পরে নিজের থুতু নিজে চেটে মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রীর দলে নাম লেখান৷ শেষে এক সময়ে অবস্থাটি সেই ৯৭-৯৮ সালের মতন হয়ে যায়, কে যে মূল আর কে তৃণমূল ঠাওর করা মুশকিল হয়ে যায়৷

একটা পর্বে আবার সিপিএম ও কংগ্রেস দুই দলেরই দোকান থুড়ি আপিস খুলে ধূপ ধুনো জ্বালাবার লোকের অভাব প্রচন্ড ভাবে প্রকট হয় আর নিজ রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদ দুই শিবিরে চোখে পড়ে৷ মানুষের স্বার্থ বলে অশোক ভট্টাচার্য মশাই কংগ্রেস - বিজেপি সবাই কে নিয়ে শিলিগুড়ি মডেল গড়ে তোলেন৷ এই মডেলের মূল কথা হলো নীতি চুলোয় যাক, যে করেই হোক ক্ষমতা চাই৷

এই শিলিগুড়ি মডেলের 'পথনির্দেশক তাত্বিক ভিত্তির' উপর দাঁড়িয়ে সিপিএম আজ সার্বিক জোটের পক্ষে ওকালতি করছে, বুদ্ধ - গৌতম - ইয়েচুরি-সূর্য সব শেয়ালের এখন এক রা, কংগ্রেসের সাথে জোট গড়ে তোলো বাংলায়৷ জোটের পক্ষে ওকালতি করার সময়ে অবশ্যই সেই "এটা একটা রণকৌশল কমরেড" আর "কংগ্রেস একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল" সুর দুটিকে আবার ঝেড়ে মুছে পুরানো গ্রামোফোনে বাজানো হচ্ছে৷

বস্তুতঃ এই জোটের খবরে আনন্দবাজার মার্কা বাজারী কর্পোরেট মিডিয়া গোষ্ঠীর আনন্দের শেষ নেই৷ আনন্দবাজার খুব খুশি যে সিপিএমের প্লেনামে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে কোন লোক দেখানো হম্বিতম্বি নেই৷ মালিকের উপর থেকে সিপিএমের কটু কথার আক্রমণ শেষ হতেই আনন্দবাজার দু হাত তুলে শাসকশ্রেণীর পক্ষ থেকে সিপিএমের সাথে কংগ্রেসের জোটের সম্ভাবনা কে সাধুবাদ জানিয়েছে৷ এর মানে অবশ্য এই নয় যে শাসকশ্রেণী মমতার পক্ষ থেকে সরে গেছে৷ সম্প্রতি বঙ্গে বিশ্ব ও দিশি বৃহৎ পুঁজির সমাবেশে মমতা নর্তন কীর্তন করে জানান দিয়েছেন - "মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক - আমি তোমাদেরই লোক"৷ তাই মমতার পতন যে ২০১৬ তে সহজে হবে সে কথা বাতুলতা৷

পশ্চিমবাংলার রাজনীতির নীতি আদর্শ ও তথাকথিত কৌশলের যদি একটি মূল্যায়ন করা হয় তাহলে নিম্ন লিখিত সূত্রগুলি বের হয়:

১. তৃণমূল কংগ্রেস - জন্ম হয়েছিল কংগ্রেস কে সিপিএমের বি টিম বলে, বিশেষ করে সোমেন মিত্তির, সুব্রত মুখুজ্জ্যে, ইত্যাদী কে গাল পেড়ে মমতার তৃণমূলের জন্ম৷ পরবর্তীকালে সেই সুব্রত আর সোমেন তৃণমূলের টিকিটে জেতে৷ প্রথমে মমতার তৃণমূল টিকে থাকে বিজেপির ভেলায় চেপে, পরবর্তী কালে সেই বিজেপির সাথ ছেড়ে কংগ্রেসের সাথে জোট গড়ে সরকার গঠন এবং তারপর কংগ্রেস কে লাথি মারা হয় সরকার থেকে, বর্তমানে তৃণমূল পুরানো মিত্র বিজেপির বৃহৎ বিরোধী সাজার প্রচেষ্টায় রত৷ নিন্দুকেরা বলেন যে ভিতরে ভিতরে গট আপ কেস, তৃণমূলের মদতে বাংলায় কল্কে পেয়েছে আরএসএস আর বিজেপি৷

২. বিজেপি - বাংলায় মমতার হাত ধরে প্রবেশ, পরে মমতা বিজেপিকে অচ্ছুত বললেও বিজেপি মমতাকে টানার প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে অবিরত৷ শোনা যায় সারদা কান্ডের চাপে গোপন বোঝাপড়া হয়েছে ধর্মের ভিত্তিতে কিছু কেন্দ্রে তীব্র বিভাজন সৃষ্টি করার স্বার্থে৷ একার দমে বাংলার মাটিতে কোনো নির্বাচন জেতার ক্ষমতা নেই৷

৩. কংগ্রেস- বিজেপির মতন নিজের ক্ষমতায় নির্বাচনে জিততে পারবে না, চাই সহযোগিতা৷ মমতার সাথে জোটে গেলে পার্টির স্বাধীন অস্তিত্ব আর থাকবে না৷ কংগ্রেস কে ব্যবহার করে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল এবং এবার সিপিএম ও মেকি বামেরা সেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছে৷

৪. সিপিএম ও বামফ্রন্ট - একার জোরে এক কালে ভোটে জেতার ক্ষমতা রাখলেও বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা নিমতলার ঘাটে এসে ভিড়েছে। পার্টি ফান্ডে দেওয়ার লোক নেই, পার্টি আপিসে ধুপ ধুনো দেওয়ার লোক নেই, মে রিগিং করে ভোটে জেতানোর মেশিনটাই তৃণমূলি ভেলায় ভিড়েছে। ফলে আজ প্রচেষ্টা হলো কংগ্রেস কে সাথে নিয়ে যে করেই হোক ভোটের হার বাড়িয়ে মমতাকে গদিচ্যুত করা।       ​

এত সবের মাঝে যখন বিশ্লেষকের দৃষ্টি থেকে এই পুরানো মদ নতুন বোতলে চোলাই হওয়া দেখি, এবং তার সাথে সাথে দেখি মমতা আর বিজেপির পশ্চিমবাংলার মানুষকে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও অসহনশীলতার ভিত্তিতে গোপনে ভাগ করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা তখন সব চেয়ে বেশি করে রাগ হয় সেই সব তথাকথিত বামপন্থীদের উপর যারা পত্র-পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে সিপিএম তথা সমগ্র বামফ্রন্ট কে এই জোটের বিরুদ্ধে যেতে বলছে শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষের স্বার্থের কথা বলে৷

এই মেকি বাম সংসদীয় তুলসী পাতা বেটে খাওয়া আঁতেলদের একটা অংশ এই সিপিএমের সাথে জোট গড়ে কিছুদিন আগে বিহারের নির্বাচন লড়েছিল, আর বিরাট বাম ঐক্যের কথা বলে পশ্চিমবাংলার মাটিতেও বৃহৎ বামফ্রন্টের পক্ষে ওকালতি করেছিল৷

এদের এই সমালোচনা কিছু সুধীগণের কাছে বাম রাজনীতির বিশুদ্ধতা রক্ষার লক্ষণ মনে হলেও আদতে এই প্রচেষ্টা বিশ্ব একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির স্বার্থে রক্ষিতার মতন জনগণের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছে৷ তাঁদের প্রচেষ্টা হলো যে সিপিএম জনগণের চোখে হেয় হয়ে গেছে, সাম্রাজ্যবাদ ও দালাল দিশি বৃহৎ পুঁজির কাছে আত্মসম্মান বিক্রি করেছে আর কংগ্রেসের দালাল হিসাবে পরিচিত হয়েছে, সেই সিপিএম যে আজও শ্রমিক-কৃষকের স্বার্থের ধ্বজাধারক তা প্রতিপন্ন করা৷ এই আধুনিক কালের কাউত্স্কি মার্কা আঁতেলদের দল সিপিএমের খুলে ফেলা বিপ্লবী মুখোশ আবার বুদ্ধ-ইয়েচুরির মুখে জোর করে লাগাতে চায়৷

বর্তমানে ভারতবর্ষের জনগণের জীবন ও জীবিকার উপর যখন আরএসএস-বিজেপির সাম্প্রদায়িক ব্রাক্ষণবাদী ফ্যাসিবাদের খড়্গ ঝুলছে, যে সময়ে দেশের সম্পদ ও জনতাকে পাইকারি দরে মার্কিন ও পশ্চিমী বৃহৎ একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির কাছে মোদী সরকার বিক্রি করছে, যে সময়ে পশ্চিমবাংলার মানুষ কে তৃণমূল ও বিজেপির সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও হিংসার রাজনীতির সম্মুক্ষীন হতে হচ্ছে, সেই সময়ে সব চেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হচ্ছে এক দেশজোড়া বৃহৎ ফ্যাসিবিরোধী ফ্রন্ট গড়ে তোলা৷ যে ফ্রন্ট শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষের ঐক্য রক্ষার্থে বিভাজন ও লুণ্ঠনকারী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে শক্তিশালী এক প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারবে৷ আর ঠিক এই নীতির মোড়কে সিপিএম আজ মৃতপ্রায় কংগ্রেস কে আবার বাঁচিয়ে তুলতে চাইছে৷ সেই কংগ্রেস যার সাথে গরু বাদে বিজেপির নীতিগত কোনো পার্থক্য নেই৷

তাই আজ প্রকৃত ফ্যাসিবিরোধী শক্তির কর্তব্য সিপিএম কে নীতি জ্ঞান দেওয়া নয়, বরং তীব্র কষাঘাত করে সিপিএমের স্বরূপ সমগ্র দেশের শ্রমিক ও কৃষকের কাছে প্রকাশ করা এবং মৃতপ্রায় সিপিএম ও তার লেজুড় সরকারি ও আধা সরকারি বামেদের আজ দেশজোড়া গণতান্ত্রিক ফ্যাসিবিরোধী ফ্রন্ট থেকে আলাদা করা৷ যে সকল লোকেরা আজ সিপিএম - কংগ্রেসের অবৈধ মিলনের বিরোধিতা করছেন তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন অথবা ভুলিয়ে দিতে চাইছেন যে সিপিএম ও কংগ্রেস যুগ যুগ ধরে প্রণয়ের সম্পর্কে আবদ্ধ, এ কোনো নতুন কৃষ্ণ লীলা নয়৷ তাই তাঁদের সিপিএম কে দেওয়া জ্ঞান ভস্মতে ঘৃত ঢালার চেয়ে বেশি কিছু নয়৷ জাগ্রত জনতার তীব্র গণসংগ্রামের ঢেউ এই নীতিকথা শোনানো বিভীষণদের পশ্চাত্দেশে সপাটে লাথি কবে মারবে সেই অপেক্ষায় অধীর (চৌধুরী নয়) হয়ে অপেক্ষা করি৷

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে