সুগত বসুর জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া ভাষণ তৃণমূলের সুবিধাবাদী অবস্থান স্পস্ট করলো

সোমবার, ফেব্রুয়ারী ২৯, ২০১৬ 0 Comments A+ a-

অবশেষে তৃণমূল জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় মুখ খুললো, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মুখে এই ইশ্যূতে কুলুপ আঁটা থাকলেও খুব কায়দা করে তৃণমূলের ব্যাক বেঞ্চ সাংসদ ও মার্কিন দেশের প্রাক্তন অধ্যাপক সুগত বসু কে দিয়ে শুদ্ধ ইংরাজী ভাষায় খুব মার্জিত ভাবে একটা বিরোধিতা করা হলো। সুগত বসুর ভাষণ শুনে অবশ্য বোঝা গেল না যে তিনি ও তাঁর পার্টি আদতে জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের উপর নৃশংস রাষ্ট্রীয় দমন পীড়নের বিরোধিতা করছেন না কি বিজেপির প্রতি একটা সুপ্ত সমর্থনের পরিবেশ তৈরি করছেন।

যে মমতা দেশের সব ব্যাপার নিয়ে গত দেড় বছর ধরে হট্টগোল করেন, যে দলের সাংসদরা এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের সকল জন বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে নানা রকম নর্তন কীর্তন করে নিজেদের দেশের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালাতো, আচমকা এমন কি হলো যে দেশের মানুষের উপর এত বড় একটা ফ্যাসিবাদী হামলার সময়ে সেই পার্টির কেষ্ট বিস্টুরা সবাই চুপ আর তাত্বিক বচন বাগীশ সুগত বসুর মতন লোক সংসদ ভবনে বগল বাজিয়ে নিজের জ্ঞানের বহর প্রকাশ করছেন?

সুগত বসু রাজনীতির ময়দানে নতুন মুখ হলেও আসলে তিনি মার্কিন বৃহৎ একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির বাঙালি মুখপত্র। তাঁর বক্তব্যের সার করলে দেখা যাবে তিনি খুব ধূর্ততার সাথে শাসক বিজেপি ও আরএসএস কে বুদ্ধি দিলেন যে হঠকারিতা না করে ছাত্র আন্দোলন কে খুব ঠান্ডা মাথায় দমন করতে । তিনি চতুরতার সাথে বললেন যে কানহাইয়া কুমারের ভাষণের কিছু অংশের সাথে তিনি সহমত, আর কিছু অংশের সাথে তিনি সহমত নন। তার মানে তিনি (এবং তাঁর পার্টি) এটা মানে যে জেএনইউ এর ছাত্রদের কার্যকলাপে "দেশদ্রোহ" রয়েছে। সুগত বাবু তাঁর পান্ডিত্য ঝেড়ে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিজেপি সরকারকে জানাতে চাইলেন যে মমতা বিজেপির পক্ষেই আছে শুধু প্রকাশ্যে নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারা বন্ধ করুক বিজেপি।

বিজেপির প্রতি মমতার যে সুপ্ত একটা সমর্থন আছে সে কথা সবাই জানেন। অতি মাত্রায় ব্রাক্ষণত্ববাদী মমতা বন্দোপাধ্যায় সর্ব প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের জমিতে খাল কেটে বিজেপির কুমির কে সেই ১৯৯৮ সালে ঢুকিয়েছিলেন।তার আগে যদিও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ১৯৪৭ সাল থেকেই শিবির গেড়ে বসে ছিল, তবুও মারোয়ারী ব্যবসায়ী, কিছু হিন্দি ভাষী উত্তর ভারতীয় উচ্চ জাতির হিন্দুদের ছাড়া কেউ এই হিন্দুত্ববাদী কেউটে সাপদের  কাছে ভিড়তো না। মমতা বন্দোপাধ্যায় কংগ্রেস ছাড়ার পরেই এই হিন্দুত্ববাদী নেংটিধারীদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হন এবং এদের কে পশ্চিমবঙ্গে ভিত গড়তে সাহায্য করেন। তিনি এই সেদিনও বিজেপির লেজ ধরে ঝুলছিলেন যেদিন মোদী ও তাঁর সাগরেদরা গুজরাটের মুসলমান নিধন যজ্ঞ করছিল। নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাটের মুসলমানদের গণহত্যা ও গণধর্ষণের মই বেয়ে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় অধিষ্ট হন সেই ২০০২ এর শেষ দিকে তখন এই মমতা বন্দোপাধ্যায় ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন মোদীকে।

২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে একমাত্র সাংসদ নির্বাচিত হয়ে এবং ২০০৬ সালের নির্বাচনে গো হারা হেরে মমতার আক্ষেপ শুরু হয় ভোট ব্যাঙ্ক খুয়ে যাওয়ায় এবং বামফ্রন্ট সরকারের সামাজিক-ফ্যাসিবাদী হামলায় যখন সিঙ্গুর - নন্দীগ্রামের মানুষ জেরবার হচ্ছিলেন ঠিক সেই সময়ে আচমকা মুসলমানদের দুঃখে বুক ফেটে গেল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মতন ব্রাক্ষণদের। শুরু হলো মুসলমান তোষণ, সেই প্রাচীন নেহরু-গান্ধী পদ্ধতিতে, যার মূল কথা হলো মোল্লা আর মুফতিদের তেল মেরে হাত করে সামগ্রিক মুসলমান সমাজের উপর নিজের প্রতিপত্তি কায়েম করার চেষ্টা করা। সামগ্রিক ভাবে মুসলমানদের দেখানো যে ব্রাক্ষণত্ববাদীরা তাঁদের মঙ্গল কামনা করে কিন্তু কার্যত সেই মুসলমানদের আরও পিছিয়ে দিতে, আরও বেশি ধর্ম ঘেঁষা, ধর্মান্ধ বানানোর প্রচেষ্টা বাদে এটা কিছুই না। ঠিক যেমন নেহরু-গান্ধীর সাথে চলতেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, যাঁর নীতি ছিল প্রতিক্রিয়াশীল এবং যিনি হাড়ে হাড়ে মুসলমানদের আধুনিক হওয়ার বিরোধিতা করতেন। সেই খেলায় আজ মজেছেন মমতা এবং তাই মুসলমানদের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক বিকাশ না করে শুধুই মৌলবাদী কিছু শক্তিকে বাঁশে ঠেলে উপরে চড়িয়ে যাচ্ছে এই সরকার।

মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই লুকোচুরি খেলা চলছে তৃণমূল আর বিজেপির। প্রথমে বিজেপির উপর আক্রমণ চালিয়ে নিজেকে ধর্ম নিরপেক্ষ হিসাবে পাচার করার প্রচেষ্টা চালান মমতা এবং পরবর্তীতে মমতার বিরোধিতা করে এগিয়ে এসে বিজেপি সারদা কান্ড নিয়ে হইচই করেও কিছু প্রসাদ আর সিন্নি খেয়ে ঠান্ডা হয়ে বসে গেল।

বিজেপি জেএনইউ তে পুলিশ ও আরএসএস এর গুন্ডা পাঠানোর অনেক আগেই মমতা ২০১৪ সালে যাদবপুরের বেচাল ছেলে মেয়েদের পিটুনি দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী পাঠান যার ফলে সৃষ্ট হয় 'হোক কলরব' আন্দোলনের। ২০১৪ সালের সেই বৃষ্টি ভেজা দিনগুলিতে পথে নামেন হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী, যার জবাব দিতে চট জলদি তত্কালীন পিসির আদুরে ভাইপো (বর্তমানে ব্রাত্য) প্রফেসর শঙ্কু ওরফে শঙ্কু পান্ডা তৃণমূলী ছাত্রদের (গাঁ ঝেঁটিয়ে তুলে আনা ভিড় আর সরকারী ছাত্র গুন্ডা বাহিনী) নিয়ে কলকাতায় মমতার আর এক ভাইপো অভিষেক বাড়ুজ্যের উস্কানিতে মিছিল করেন। সেদিনও আরএসএস এর সদস্য রাজ্যপাল ছাত্রদের কড়া ধমক দিয়ে ঠান্ডা করতে চেয়েছিলেন, শাঁসিয়েছিলেন এমন ভাবে যেন যাদবপুরের ছাত্ররা উত্তর প্রদেশ বা হরিয়ানার গো বলয়ের এবিভিপি সমর্থক, তাঁর শাসানি শুনে থমকে যাবে। যাদবপুর তবুও ছাত্র শক্তির জোর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আলিন্দে বসা মমতাকে দেখিয়েছিল, যার চাপে সেদিন ওই তৃণমূলের পদলেহী উপাচার্য অভিজিত চক্রবর্তী কে পদত্যাগ করে লেজ গুটিয়ে পালাতে হয়।

আজ যখন জেএনইউ এর ছাত্রদের পাশে, হিন্দুত্ববাদী-ব্রাক্ষণত্ববাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে যাদবপুর লড়াই করছে তখন ওই অবাঙালি কিছু আরএসএস গুন্ডা কে দিয়ে প্রথমে যাদবপুরে ভাঙচুর করিয়ে তারপর বিজেপির দ্রৌপদী রুপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চাটুজ্যে প্রভৃতি নাট্যকাররা আরএসএস এর বানর সেনা নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হাঙ্গামা করার চেষ্টা করেন, তখন মমতার গণতন্ত্র প্রেম কোথায় থাকে আর কোথায় লুকিয়ে পড়ে হিন্দুত্ববাদ বিরোধিতা, তা আর কারুর চোখে পড়ে না। মমতার মার্কিনি অধ্যাপক সাংসদ ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় চোখ থেকে কুম্ভিরাশ্রু ঝরান, আর মমতারই 'দুষ্টু' ছোট ছেলের দল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে ঢুকে অবস্থানকারী ছাত্রদের পেরেক লাগানো ডান্ডা দিয়ে পিটিয়ে বুক চিতিয়ে ঘোরে। দিল্লি পুলিশের তাঁবেদারি আর বর্ধমান পুলিশের তাঁবেদারির মধ্যে আদেও কি কোনো ফারাক আছে? আমার জন্মভূমি, শ্রমিক আন্দোলনের পবিত্র মাটি, কাজী নজরুলের পবিত্র মাটি, আসানসোলের (যে শহর থেকে অবাঙালি ও উচ্চ জাতির বাঙালি হিন্দু ভোটে জিতেছিলেন গাইয়ে সুপ্রিয় বড়াল, ওরফে বাবুল সুপ্রিয়) বুকে দাঁড়িয়ে বিজেপির অবাঙালি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ব্রাক্ষণত্ববাদী ফ্যাসিবাদী হুঙ্কার ছেড়ে ঘোষণা করে যে পশ্চিমবঙ্গে ভোটে জিতে উনি যাদবপুরের ছাত্রদের লাথি মেরে বের করে দেবেন। আর মমতার প্রশাসন শুধু ভিজে বেড়ালের মতন বসে থেকে পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রী, পশ্চিমবঙ্গের একটি নামী প্রতিষ্ঠানের নামে এই বিষ মেশানো ভাষণ শুনলো। কোথায় ছিল তখন মমতার বঙ্গ প্রীতি ?

মমতা আর মোদীর গট আপ গেম ভালোই চলছে, একজন মোল্লা তোষণ করছে তো অন্যজন অবাঙালি ও উচ্চ জাতির হিন্দু বাঙালি ভোটারদের মেরুকরণ করে চলছে। এই পাঁকে পশ্চিমবঙ্গের গরিব, শোষিত মানুষ কে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করার প্রচেষ্টা চলছে, যাতে বিদেশী বৃহৎ পুঁজি-দেশীয় দালাল পুঁজি-নব্য জোতদার-জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার থেকে এই ব্যাপক অংশের মানুষ কে বিরত করা যায়।

বাজপেয়ীর আমলে বিদেশী কর্পোরেটদের কোটি কোটি টাকা তখনও বিজেপির ঝুলিতে সেই ভাবে ঢোকেনি যেমনটি আজ মোদী শাসনকালে ঢুকছে। কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলি তাদের বিশাল অর্থ বলের সাহায্যে যে কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে কিনে রাখতে পারে। সংসদীয় বাম থেকে তৃণমূল কংগ্রেস, আদি কংগ্রেস থেকে বিজেপি আজ তাদের পকেটে। দেশের কোনায় কোনায় আদিবাসী জনগণ কে তাঁদের জল - জঙ্গল - পাহাড় থেকে খেদিয়ে সেই জমি আর জঙ্গল, যার নিচে লুকানো আছে খনিজ সম্পদ, আজ সস্তায় বিদেশী একচেটিয়া পুঁজি ও তার দেশীয় দালালদের কাছে খুচরো পয়সার দরে বিক্রি করে কমিশন কামাচ্ছে বিজেপি-কংগ্রেস সহ সকল শাসক পার্টি। যতদিন বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গের মসনদে বসে ছিল ততদিন তাঁরাও ভাগ পেয়েছে, আজ পাচ্ছে তৃণমূল, আর তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে কামাই থেকে বঞ্চিত সিপিএম কংগ্রেস এক হয়েছে।

দেশের সম্পদ, জমি, প্রকৃতির এই লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল জনগণ, ছাত্র-যুবরা আদিবাসী ও দরিদ্র কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। যদিও ভারত সরকার ২০০৯ সাল থেকে আদিবাসী সমাজকে তাঁদের জমি ও জঙ্গল থেকে ছুড়ে ফেলতে বিদেশী ও দিশি পুঁজির টাকায় চলা খনি কর্পোরেশনগুলির স্বার্থে এক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির প্রবক্তারা আজ দেশ জুড়ে কৃষক আত্মহত্যা, আদিবাসীদের উপর শোষণ অত্যাচারের বিরোধী আওয়াজ কে কন্ঠরুদ্ধ করতে চাইছে, দেশপ্রেমের জোয়ার তুলে দেশ বেচার প্রচেষ্টায় রত হয়েছে পরগাছা চাটুকার বিদেশী পুঁজির দালালদের দল, যাদের সদর দফতর আজ আরএসএস এর নাগপুর কেন্দ্র। 

কিন্তু বাংলার মাটিতে এই ভাঁড়দের প্রচেষ্টায় বাঁধা হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ খেটে খাওয়া কৃষক ও শ্রমিকের ঐক্য, যাঁরা দশকের পর দশক এক সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়েছেন, যাঁরা ভাগ করো শাসন করো নীতিকে ভালো করে জানেন, যাঁরা ধর্ম-বর্ণ-জাতের উর্দ্ধে এসে একসাথে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-জঙ্গল মহলের ব্যাপক সংগ্রাম গড়ে তুলতে পারেন। তাই তো বাংলার এই গরিব, খেতে না পাওয়া, শীর্ণ - জীর্ণ মানুষগুলোকে বিদেশী একচেটিয়া পুঁজি ও তাদের দেশী দালালরা এত ভয় পায়। তাই মমতার সমর্থনে বিজেপির ব্যাটন নাচ দেখছে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, ঠিক যেমন কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপির সমর্থনে তৃণমূলের খেমটা নাচ দেখছে দেশের মানুষ।

যাদবপুরে আমি কোনো দিন পড়িনি, জানি ওটা প্রেসিডেন্সির মতনই একটা এলিটিস্ট এবং অনেকাংশে জনগণ থেকে বিছিন্ন একটা প্রতিষ্ঠান, যেখানে ছাত্ররা আজ ব্যারিকেড গড়ে লড়াই করেও ছাত্র জীবনের শেষে পরীক্ষা দিয়ে হাকিম হবেন, নীতি নির্ধারক হবেন শাসক শ্রেণীর। তবুও বহু ছাত্র-ছাত্রী আবার ওই ক্যারিয়ার গড়ার ইঁদুর দৌড় থেকে দুরে থেকে শোষিত - নির্যাতিত মানুষের স্বার্থে কাজ করে যান। ঐতিহাসিক ভাবে দেখতে গেলে আমার ঠাকুরদা যাদবপুরের প্রথম ব্যাচের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস হতো মুরারীপুকুরের সেই বিখ্যাত বোমা বাড়ির কাছে। সেই সময়ে জঙ্গল কেটে  ১৯২৪ সালে অরবিন্দ ভবন তৈরি হওয়ার পরে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন যাদবপুরে চলে আসে, মার্কসবাদী দর্শন ভারতে সুপরিচিত হওয়ার আগেই, তখন ঠাকুরদা সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সাদা চামড়ার সাহেব ও তার নীল চোখের ঘোড়সাওয়ার পুলিশদের পেঁদিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়েছিলেন।

আজ যখন দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা রাজনৈতিক ভাবে বেশি চেতনাসম্পন্ন ও শক্তিশালী, যখন তাঁদের পক্ষে সমগ্র বিশ্ব দাঁড়িয়ে পড়তে পারে, তখন ওই ক্যাম্পাস থেকেই বিজেপির বাতুলতা কে আজ যাদবপুরের পূর্বতন ছাত্র ছাত্রীদের মতন  ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ের কায়দায় জবাব দিয়ে যাদবপুরের ছাত্র-ছাত্রীদের মানুষকে দেখাতে হবে যে ফ্যাসিস্ট শক্তিকে প্রতিরোধ করে পরাজিত করা যায়।সত্যি কারের দেশপ্রেম কি আর সত্যিকারের জাতীয়তাবাদ কি সেই শিক্ষা যাদবপুরের আর গোটা বাংলার ছাত্র-ছাত্রীদের অবাঙালি কৈলাশ বাবু ও তাঁর নাচিয়ে-গাইয়ে-বাজিয়েদের অবশ্যই দিতে হবেই। গরিব মানুষের সকল সংগ্রাম কে, শ্রমিক - কৃষক, দলিত-আদিবাসী-সংখ্যালঘুদের সকল সংগ্রাম কে আজ বিশেষ করে হিম্মত দেবে ছাত্র-ছাত্রীদের বীরত্বপূর্ণ লড়াই। 

ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে সরোজ দত্ত বলে গেছেন যে 'কোঁতকা বাপ বলাবে' - সংসদীয় বাম রাজনীতিবিদরা যখন দেশের ছাত্র শক্তিকে ভেড়ার পাল বানাবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তীব্র ফ্যাসিস্ট আক্রমণের মুখে ঠিক তখনই ওই কোঁতকা ভীষন জরুরী হয়ে পড়েছে ফ্যাসিস্টদের ভিতরে ভীতির সঞ্চার করতে। ছাত্র শক্তির পাল্টা প্রতিরোধের সংগ্রামই তৃণমূল ও বিজেপির ঐক্য কে, সুগত বসুর দ্বিচারিতা কে এবং রুপা-লকেট-দিলীপদের ফাঁপা দেশপ্রেমের  হাঁড়ি হাটের মাঝে ভাঙবে।

ফ্যাসিস্ট জাতীয়তাবাদ আর মেকি দেশপ্রেমের চোঙ্গা পড়ে থাকা বিজেপির অবাঙালি দাঙ্গাবাজদের আজ বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলার সময় এসেছে। মনে রাখবেন, যত দেরী করবেন তত বেশি কামড়াবে ফ্যাসিবাদ। সময় থাকতে ওদের বিষ দাঁত কে প্রতিরোধ সংগ্রামের মাধ্যমে গুঁড়িয়ে দিতেই হবে।   

        

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে