জেএনইউ এর ছাত্রদের ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে কি দিল্লীর বসন্তের শুরু ?
জাতীয়তাবাদ ও দেশ প্রেম নিয়ে বেশ একটা কীর্তন শুরু হয়েছে কর্পোরেট মিডিয়াগুলিতে, সৌজন্যে আফজাল গুরু ও জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়৷ গত ৯ই ফেব্রুয়ারী জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন বা ডিএসইউ এর তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি অনুষ্ঠান করার জন্যে উপাচার্যের কাছে আবেদন করা হয়৷ কর্মসূচী ছিল আফজাল গুরু ও মকবুল ভট্ট এর রাষ্ট্রীয় হত্যার বিরোধিতা করা এবং কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের গণতান্ত্রিক অধিকার কে স্বীকার করা৷
স্বভাবতই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এই আবেদনে সাড়া দেননি৷ এর ফলে ডিএসইউ এর ছাত্র ছাত্রীরা এই অনুষ্ঠান সরিয়ে আনে সবরমতি ধাবাতে৷ এই অনুষ্ঠানের কথা শুনেই রে রে করে তেড়ে আসে আরএসএস এর ছানারা, অর্থাৎ এবিভিপি' র গুন্ডাবাহিনী, নেতৃত্বে অবশ্যই এক ব্রাক্ষণ সন্তান সৌরভ শর্মা, যে জোতদারদের ছেলে মেয়েদের ভোটের জোরে জিতে জেএনইউ এর ছাত্র ইউনিয়নের একমাত্র গেরুয়া ব্রাক্ষণত্ববাদী মুখ৷ গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়নের উপর হামলা কে রুখে দিতে এগিয়ে আসেন সামগ্রিক ভাবে সমস্ত বাম ও গনতান্ত্রিক ছাত্র ছাত্রীরা৷ নিজেদের সংগঠনের বেড়ি ভেঙ্গে ছাত্র ছাত্রীরা যে এভাবে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন তা সৌরভ শর্মা বা তাঁর আরএসএস এর অভিভাবকরা ভাবতে পারেননি৷ তাই শিয়ালের মতন চেঁচিয়ে সৌরভ শর্মা আর তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা বিজেপির দ্বারস্থ হয়, শুরু হয় হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন এক ঘটনার পুনরাবৃত্তি৷ বিজেপির পূর্ব দিল্লীর সাংসদ মহেশ গিরি আচমকা দক্ষিণ দিল্লীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কে তাঁর মালিক কর্পোরেট সংস্থাগুলির পোষা মিডিয়ার সাহায্যে বিকৃত করে দেখিয়ে দেশের মধ্যে তীব্র কমিউনিস্ট বিরোধিতার আবহাওয়া সৃষ্টি করতে চাইলেন।
আরএসএস এর খাকি নেংটি পরিহিত বানর সেনা জেএনইউ এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বামপন্থী ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে, বিশেষ করে কমিউনিস্ট এবং আদ্যন্ত নাস্তিক উমর খালিদের সাথে পাকিস্তানের জঙ্গী কমিউনিস্ট বিরোধী লশকর এ তইবা ও জয়শ মুহম্মদ গোষ্ঠীর সঙ্গে খালিদের সংস্রব থাকার মিথ্যা প্রচার শুরু করে।
দেশের গৃহ মন্ত্রীর আদেশে বিজেপির ভৃত্য
দিল্লীর ঘুষখোর পুলিশ শুরু করে ছাত্রদের উপর দমনপীড়ন৷ ছাত্র ইউনিয়নের প্রধান কানহইয়া কুমার কে গ্রেফতার করা হয় এবং এবিভিপি বাদে সমস্ত ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছাত্র ছাত্রীদের উপর পুলিশি নির্যাতন শুরু হয়৷ প্রবীণরা স্মৃতিচারণ করেন যে এভাবে হোস্টেলে একমাত্র ইন্দিরা গান্ধীর জরুরী অবস্থার সময় ব্যতিরেকে কখনোই পুলিশি হামলা হয়নি৷ গত বছর মোদীর এককালের গুরু এবং এখনকার বিরোধী আডবানি বলেছিলেন যে দেশে জরুরী অবস্থার মতন পরিস্থিতি এখনো বিরাজ করছে৷ সেই সত্যটা যে ছত্তিশগড়-ঝাড়খন্ড-কাশ্মীর-মণিপুর-নাগাল্যান্ড পেরিয়ে দিল্লীর মাটিতে বাস্তবায়িত হবে এ কথা বিজেপির অনেক বড় বড় নিন্দুকেরা ভাবতে পারেনি৷
কানহইয়া কুমার, সিপিআই এর গোবেচারা নিরামিষাশী ছাত্র সংগঠন এআইএসএফ'র কর্মী এবং তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে৷ বিহারের গরীব দলিত পরিবারের সন্তান আজ ব্রাক্ষণত্ববাদী সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট আরএসএস ও বিজেপির চক্ষুশূল, কারণ এই দলিত - মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাথে কিছু প্রগতিশীল উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের সমর্থনে জেএনইউ চিরকালই বামপন্থী ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে জিতিয়েছে৷ আর দেশের যে কোনো অংশে ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমিক-কৃষক, দলিত-আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ফ্যাসিস্ট শক্তির ও রাষ্ট্র যন্ত্রের আক্রমণের বিরুদ্ধে জেএনইউ চিরকালই সোচ্চার থেকেছে৷ যে ভাবে দেশের বৃহৎ ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজগুলোর ক্যাম্পাসে আরএসএস ও বিজেপির সাম্প্রদায়িক ব্রাক্ষণত্ববাদী ফ্যাসিবাদের প্রসার হয়েছে সে ভাবে জেএনইউ জাতীয় প্রতিষ্ঠানে গেরুয়া সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলি কল্কে পায়নি৷ অথচ দেশ কে, দেশের মাটিকে, দেশের সম্পদ কে বিদেশী বৃহৎ একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির কাছে বেচার শর্তই হলো এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা আজ অবধি চলতে থাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্ট কেরানী বানাবার শিক্ষা ব্যবস্থার চেয়েও বেশি প্রতিক্রিয়াশীল এবং চরম ভাবে সাম্প্রদায়িক মশলা পূর্ণ হবে৷ গত কয়েক বছর ধরে এই দাবি করে আসছে বিজেপি ও কংগ্রেসের মনিব বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ ও ডব্লিউটিও৷
তাই ক্ষমতায় এসেই মোদী প্রথমে দেশের সমস্ত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর আরএসএস এর খবরদারি বাড়াবার সিদ্ধান্ত নেন এবং শুরু করেন দেশের অন্যতম চলচিত্র ও টিভি শিল্পের প্রতিষ্ঠান, পূণা স্থিত এফটিআইআই এর অধ্যক্ষের পদে আরএসএস এর চামচা এবং কিছু ফ্লপ বি গ্রেড পর্ণ সিনেমায় কাজ করা গজেন্দ্র চৌহান কে বসিয়ে। যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে পথে নামেন এফটিআইআই এর পড়ুয়ারা এবং সাথে দাঁড়ায় সমগ্র ভারতের প্রগতিশীল ছাত্র-ছাত্রীরা, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা৷
এর পরেই ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে নেট পরীক্ষা ব্যতিরেকে অন্যন্য ছাত্র -ছাত্রীদের গবেষণার বৃত্তি বন্ধ করে দেওয়া হবে৷ এই সিদ্ধান্তকে উচ্চ শিক্ষাকে ডব্লিউটিওর হুকুম মেনে পণ্যে পরিণত করার ষড়যন্ত্র বলে চিন্হিত করে দিল্লী সহ সমগ্র দেশে ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে, যা #occupyUGC আন্দোলন হিসাবে খ্যাতি লাভ করে৷ শেষ পর্যন্ত সরকারকে পিছিয়ে আসতে হয় এবং ইউজিসির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হয়৷
এ বছরের জানুয়ারী মাসে হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বন্দারু দত্তরেয়া ও স্মৃতি ইরানীর আদেশে ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্যে পাঁচ জন দলিত ছাত্র কে বহিষ্কার করে এবং তাঁদের হোস্টেল থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলা হয়৷ রোহিথ ভেমুলা সহ পাঁচ জন ছাত্র ক্যাম্পাসের খোলা আকাশের নিচে আন্দোলন চালিয়ে যান এবং তাঁদের সমর্থনে উত্তাল হয় গোটা দেশের প্রগতিশীল ছাত্র-ছাত্রীরা৷ জেএনইউ পিছিয়ে থাকে না৷ ঠিক এই সময় ফ্যাসিবাদী এভিবিপি'র অত্যাচার, জাতিবাদী লাঞ্ছনা ও বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের ব্রাক্ষণত্ববাদী শোষণের চাপে রোহিথ ভেমুলা কে নিজের প্রাণ দিতে হয়৷
এর পর সারা দেশের প্রগতিশীল ছাত্র শক্তি তীব্র আন্দোলনে ফেটে পড়ে, দেশের রাজপথে ব্রাক্ষণত্ববাদী ফ্যাসিস্ট আরএসএস ও বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন ছাত্র - ছাত্রীরা৷ জেএনইউ এগিয়ে আসে দিল্লীর রাজপথে, নেতৃত্ব দেয় জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির৷ তাঁদের মিছিলে হামলা চালায় দিল্লী পুলিশ ও আরএসএসের যৌথ বাহিনী৷ দিল্লীর ছাত্র রাজনীতির মণ্ডপে পিছিয়ে পড়ে এবিভিপি ও অন্যন্য দক্ষিণপন্থী ছাত্র সংগঠন৷ দলিত ছাত্র ছাত্রীদের থেকে তারা বিশেষ করে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ভারতবর্ষে বামপন্থী জঙ্গী ছাত্র আন্দোলনে সেই আশির দশক থেকে ভাঁটা শুরু হয়, যে ফাঁক গলে মন্ডলপন্থী, উগ্র হিন্দুত্ববাদী, দলিত বিরোধী, সংরক্ষণ বিরোধী এবং অন্যন্য ছাত্র রাজনীতি নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠে৷ জেএনইউ তারই মধ্যে টিমটিম করে জ্বলতে থাকা এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতন টিকে ছিল৷ টিকে ছিল কারণ সেখানকার পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের এই নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির সময়েও, বিশ্বায়ন ও উদারীকরণের সময়েও দ্বান্ধিক ভাবে, বস্তুগত ভাবে দেশ, সমাজ ও বিশ্ব কে দেখার ও বিশ্লেষণ করার জন্যে সিনিয়রদের তরফ থেকে প্রেরণা দেওয়া হতো৷ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল থেকে আসা গরীব ও দলিত - আদিবাসী সমাজের ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেরই মার্কসবাদে হাতেখড়ি এই জেএনইউ তেই৷ তাই চিরকালই এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সরকারের চক্ষুশূল হয়ে থেকেছে৷ তা সে কংগ্রেস সরকার হোক বা বিজেপি সরকার।
জেএনইউ তে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট ছাত্র সংঘ কে শক্তিশালী করার দ্বায়িত্ব সংঘ পরিবার গুজরাটের প্রাক্তন গুন্ডা, দাঙ্গাবাজ ও বর্তমান বিজেপির অধ্যক্ষ অমিত শাহ কে দেয়৷ অমিত শাহের নির্দেশে মোদীর সরকার হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট ও সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানোয় ওস্তাদ সুব্রামনিয়াম স্বামী কে জেএনইউ এর উপাচার্য পদের জন্যে নির্বাচিত করে৷ খবর প্রকাশ হতেই স্বামী ঘোষণা করেন যে জেএনইউ "রাষ্ট্রদ্রোহীদের" আড্ডা, এবং তিনি আধা সামরিক বাহিনীর সাহায্যে জেএনইউ তে দমন পীড়ন চালিয়ে ছাত্রদের কাবু করবেন৷ এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং সামগ্রিক ভাবে সুব্রামনিয়াম স্বামীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগেই মোদী সরকার চালাকি করে ঘোষণা করায় যে জেএনইউ তে উপাচার্যের জন্যে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি৷
এবার জেএনইউ তে ভোটে জেতার জন্যে ফ্যাসিস্ট হিন্দুত্ববাদীদের প্রয়োজন হবে বাম ছাত্রদের দুর্বলতার৷এবং তাই আচমকা শুরু হলো আফজাল গুরুর ফাঁসির বিরোধিতা করার মধ্যে দিয়ে ছাত্র -ছাত্রীদের বিরুদ্ধে বিজেপি - আরএসএস ও কর্পোরেট মিডিয়ার অপপ্রচার।
এদের প্রচারে সমস্ত যুক্তি, তর্ক, প্রশ্ন এক পাশে রেখে শুধু উগ্র হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদ কে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জাগিয়ে তোলার প্রচেষ্টা চলতে থাকলো। কিন্তু জেএনইউ থাকলো জেএনইউ তেই, পুলিশী সন্ত্রাসের কারণে কিছু ছাত্র কে আত্মগোপন করে কাজ চালাতে হলো ঠিকই, কিন্তু প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের জন জোয়ার সৃষ্টি করে দিল্লীতে, নিজেদের বাড়ি ও স্বজনদের থেকে দুরে থাকা নিরস্ত্র ছাত্র ছাত্রীরা অকুতোভয় হয়ে শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে লড়তে থাকলেন।আন্দোলনের চাপে নাস্তানবুদ হয়ে শেষ পর্যন্ত শাসক শ্রেণী নগ্ন আক্রমণ শুরু করে। দিল্লীর রাস্তায় যেকোনো দাড়িওয়ালা, ঝোলা ওয়ালা বা একটু বেপরোয়া দেখতে ছেলে মেয়েদের ধরে জেলে পোরা শুরু করে ক্ষত্রিয় রাজনাথ সিংহের পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় অধ্যাপক এস.এ.আর গিলানি কে, যিনি বহু বছর পুলিশের মিথ্যে মামলার (সংসদ ভবন হামলার কেসে, এবং এই কেসেই আফজল গুরুর ফাঁসি হয়) কারণে জেলে ছিলেন এবং প্রায় ১১ বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে মুক্তি দেয় প্রমাণ ও তথ্যের অভাবে। তাঁকে আবার দেশদ্রোহী বলে শুরু করা হয় অকথ্য অত্যাচার।কানহইয়া কুমারকে বিচারের জন্যে আনার সময়ে পাটিয়ালা আদালত চত্বরে বামপন্থী কর্মী, ছাত্র, শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের উপর বেপরোয়া আক্রমণ চালানো হয়, এবং দেশকে নির্লজ্জ ভাবে বৃহৎ বিদেশী একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজির কাছে বিক্রি করার সওদাগর মোদীর সেপাইরা এই আক্রমণ করে দেশপ্রেমের নামে, যা আসলে দেশভক্তির চেয়ে বেশি রাষ্ট্র ভক্তির পরিচয় - উগ্র ব্রাক্ষণত্ববাদের উপক্রম।
কোর্ট চত্বরে অল্প বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলার নেতৃত্ব দেন বিজেপির দিল্লীর তিন বিধায়কের একজন, ব্রাক্ষণ সন্তান ও.পি শর্মা। তিনি ক্যামেরার সামনে সিপিআই এর এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাকে মাটিতে ফেলে পেটান এবং তাঁর সাথে যুক্ত হয়ে আদালত চত্বরের গেরুয়া উকিল বাহিনী নির্মম ভাবে ছাত্র - ছাত্রী ও সাংবাদিক দের প্রহার করেন। আর এই নির্লজ্জ কীর্তি দেখে মুচকি হাঁসি হাসে ভীম সিং বাসসির দিল্লি পুলিশ। এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এই বছর অবসর গ্রহণ করার পরে বাসসি তাঁর খাকি প্যান্ট দর্জি কে দিয়ে ছোট করিয়ে পড়বেন যাতে করে নাগপুরের প্রভুদের কৃপায় তাঁর একটা রাজ্যপাল বা কোনো সরকারি বিশেষজ্ঞ পদ জোটে।
কোর্ট চত্বরে অল্প বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলার নেতৃত্ব দেন বিজেপির দিল্লীর তিন বিধায়কের একজন, ব্রাক্ষণ সন্তান ও.পি শর্মা। তিনি ক্যামেরার সামনে সিপিআই এর এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাকে মাটিতে ফেলে পেটান এবং তাঁর সাথে যুক্ত হয়ে আদালত চত্বরের গেরুয়া উকিল বাহিনী নির্মম ভাবে ছাত্র - ছাত্রী ও সাংবাদিক দের প্রহার করেন। আর এই নির্লজ্জ কীর্তি দেখে মুচকি হাঁসি হাসে ভীম সিং বাসসির দিল্লি পুলিশ। এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে এই বছর অবসর গ্রহণ করার পরে বাসসি তাঁর খাকি প্যান্ট দর্জি কে দিয়ে ছোট করিয়ে পড়বেন যাতে করে নাগপুরের প্রভুদের কৃপায় তাঁর একটা রাজ্যপাল বা কোনো সরকারি বিশেষজ্ঞ পদ জোটে।
এত সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রের নগ্ন ফ্যাসিবাদী আক্রমণের পরেও সরকারি বামপন্থী দলগুলি সেই নিয়ম রক্ষার কায়দায় গণতন্ত্র কে রক্ষা করা এবং বিজেপির হাত থেকে সংবিধান রক্ষার পুরানো বুলি কপচানো বাদে আর কিছু করছে না। নির্লজ্জের মতন নিজ ঘটি বাটি বাঁচাবার স্বার্থে কাশ্মীরের স্বাধীনতা বা আফজালের ফাঁসি সংক্রান্ত কোনো স্লোগান দিতে ছাত্র যুবদের মানা করছেন। তবুও ছাত্র ছাত্রীরা স্লোগান দিচ্ছেন, গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী উমর খালিদের সমর্থনে দাঁড়াচ্ছেন এবং বৃদ্ধ শোধনবাদী শৃগালদের প্রবচন না শুনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে একাই লড়ে চলেছেন এক যুদ্ধ। কারণ ছাত্র ছাত্রীরা বুঝেছেন যে আদতে আক্রমণ জেএনইউ এর নামে শুরু হলেও হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের আসল লক্ষ্য হলো লাল ঝান্ডা এবং লাল ঝান্ডার নিচে সমবেত সকল শ্রমিক-কৃষক-দলিত-আদিবাসী-সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। যেহেতু জেএনইউ তে বামপন্থী ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা বেশি তাই শাসক শ্রেণী ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীদের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। তাই আজ একসাথে আক্রান্ত হচ্ছেন সমস্ত দলের বামপন্থী কর্মী সমর্থকরা।
দেশদ্রোহী বলে যাঁরা রাষ্ট্র শক্তির আউটসোর্স্ড বাহিনী হয়ে আজ ছাত্র ছাত্রী এবং প্রতিবাদী সাংবাদিকদের পেটাচ্ছে তাদের সাথে মুসোলিনির পেটোয়া বাহিনীর কোনো গুণগত পার্থক্য আছে কি? একদিকে ভারতের মাটি, জল, আকাশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ সবকিছুই পাইকারি দরে বিদেশী একচেটিয়া পুঁজি ও তাদের তাঁবেদার দিশি দালাল পুঁজিপতিদের কাছে মোদী সরকার বিক্রি করছে, অন্যদিকে অপারেশন গ্রীন হান্টের নামে গরীব আদিবাসী জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। জল, জমি, জঙ্গল থেকে আদিবাসী মানুষদের উচ্ছেদ করে সেই জমি "দেশের উন্নয়নের " নামে বড় বড় আকরিক খনি কোম্পানিগুলির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আর দেশের ৮০ ভাগ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার, তাঁদের বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারগুলিকে রক্ষা করার সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের দেশ দ্রোহী বলে জেলে বন্ধ করা হচ্ছে, গুম খুন করা হচ্ছে এবং এই ফ্যাসিবাদের জয়ধ্বনি তুলে একটা পঁচা গলা অত্যাচারী ব্যবস্থাকে রক্ষা করার ব্রত নিয়েছে ওই বিদেশী একচেটিয়া পুঁজির দ্বারা চালিত সংবাদমাধ্যম ও তাদের পেটোয়া দালাল সাংবাদিকরা।
ঠিক যখন জেএনইউ এর নামে ও.পি শর্মা এবং তাঁর সাগরেদরা বামপন্থী কর্মীদের রাস্তায় ফেলে পেটাচ্ছে, ঠিক তখনই সুদূর ছত্তিশগড়ে আদিবাসী জনগণের জঙ্গলের উপর থেকে সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে রমণ সিং এর বিজেপি সরকার, যাতে জঙ্গল, পাহাড়, নদী সব কিছু বিদেশী আর দিশি পুঁজিপতিরা লুটে পুটে খেতে পারে। সারা দেশের সংবাদে যখন শুধুই জেএনইউ, ঠিক সেই সময়ে এই সিদ্ধান্ত আদতেই কি আমাদের খুব একটা আশ্চর্য করেছে? আজ এই ৮০ ভাগ মানুষের স্বার্থে, খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থে লড়াই করা যদি দেশদ্রোহ হয় তবে সকল প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীনতা প্রেমী মানুষকে বলিষ্ঠ ভাবে বলতে হবে যে -হ্যাঁ, আমি দেশদ্রোহী, কারণ তোমাদের মতন আমার কাছে দেশ মানে মাটি, বালি, জল, পাথর আর কাঁটা তার নয়। আমার কাছে দেশ মানে দেশের মানুষ, টাটা-বিড়লা-আম্বানি-আদানি নয় বরং নিজের শ্রম দিয়ে সম্পদ সৃষ্টি করা, খেটে খাওয়া শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি জনগণ, যাঁদের বেশির ভাগের পেটে আজ তোমাদের তথাকথিত দেশপ্রেমের কারণে দুইবেলা ভাত যায় না। আমরা দেশদ্রোহী কারণ আমাদের কাছে ভারত মাতা মানে এক কাল্পনিক মূর্তির পূজা নয়, যতবার তোমরা আর তোমাদের মনিব ওই জোতদার-জমিদার-দালাল পুঁজিপতি- ওই উচ্চ জাতির ব্রাক্ষণত্ববাদী শয়তানরা-ওই উর্দি গায়ে রাইফেলধারী বাহিনী আমাদের মা আর বোনদের ধর্ষণ করো দেশের প্রান্তে প্রান্তে ততবার আমাদের ভারত মাতা লাঞ্ছিত হয় এবং তোমাদের ওই ডাইনী ভারত মাতার লম্পট সন্তানদের বিরুদ্ধে আমাদের লাঞ্ছিত গরীব ভারতমাতার সন্তানরা লড়ে যাবে। লড়ে যাবে ততদিন যতদিন তোমাদের সিংহাসন থেকে টেনে নোংরা নর্দমায় ফেলে তোমাদের মুখে মূত্র ত্যাগ না করতে পারছে এ দেশের গরীব ও শোষিত জনতা- এ দেশের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণ-আদিবাসী-দলিত-সংখ্যালঘু নারী ও পুরুষ।
আজ থেকে ১৪ বছর আগে ২০০২ এর এমনই এক ফেব্রুয়ারি মাসে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের আদর্শ পুরুষ নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন "যা হচ্ছে তা নিউটনের তৃতীয় নিয়ম -প্রতিটি ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে অনুকরণে হচ্ছে"। মোদী বলেছিলেন গুজরাটে মুসলমান নিধন যজ্ঞের সময়ে এবং আজ সময় এসেছে দেশের সমস্ত প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক মানুষের এই প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বিপ্লবী সংগ্রামের আগুনে সাম্প্রদায়িক ব্রাক্ষণত্ববাদী ফ্যাসিবাদ ও তার আনুষঙ্গিক সমস্ত শয়তানি পরম্পরা কে জ্বালিয়ে দিয়ে নিউটনের দ্বারা আবিষ্কৃত মহান বৈজ্ঞানিক নিয়মের সম্মান করা। আজ যদি আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগোতে দ্বিধা থাকে তাহলে কিন্তু সত্যিই পিছিয়ে পড়বো। বসন্ত প্রাগে এসেছিল, বসন্ত এসেছিল আরবে, এবার বসন্ত দিল্লীতে।