কর্পোরেটমুখী উন্নয়নের চরণামৃত চেটে পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষ চলে না নরেন্দ্র
![]() |
Photo Credit: rishibando via Compfight cc |
যাই হোক আমরা সবাই মানছি যে বামফ্রন্ট বিরাট বড় জগদ্দল পাথর ছিল, আমাদের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের সংগ্রামের কেউ যদি আপামর ক্ষতি করে থাকে তাহলে সেটা ওই জ্যোতি আর বুদ্ধের বামফ্রন্ট।এককালে বিপ্লব আর সমাজ বদলের বুলি কপচালেও পরবর্তী কালে ওই নয়া উদারনৈতিক অথনীতির দালালি ওরা ঠিক তোমার মতনই করেছিল। সেই যেমন তোমাদের পছন্দের চীনা নেতা বলেছিল বেড়াল কালো হোক বা সাদা আসল ব্যাপার হলো সেটা ইঁদুর ধরতে পারছে কিনা, ঠিক তেমনই আমাদের বামফ্রন্ট সরকার আমাদের ওই সালেম আর টাটার জন্যে ইঁদুর দৌড়ে নামিয়েছিল, গর্তে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে আমাদের পেছনে সাদা, কালো, হলুদ, খয়েরি, ইত্যাদী নানা রঙের বেড়াল ছেড়ে দিয়েছিল। সেদিন হঠাৎ তোমার পুরানো সখী মমতা ক্ষিপ্ত হয়ে পথে নেমে ভীষন বিপ্লবী সেজেছিল বলে আজ তোমার সাধের গুজরাটে রতন টাটা ওর স্বপ্নের একলাখি গাড়ির কারখানা তুলে নিয়ে গিয়ে তোমায় শিল্পবান্ধব হিসেবে পরিচিত করালো। জানা নেই ওই সিঙ্গুরে কেন তোমার গুরু আদবানি সেদিন ৮০ গাড়ির কনভয় নিয়ে গেছিল আর মমতার কানে কানে কি প্রস্তাব দিয়ে এসেছিল। কারণ গাড়ির কারখানার নামে যে জমি দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন ভূ মাফিয়া গোষ্ঠী দখল করেছিল সেই ২০০৬ সালে তা আজও কৃষকরা ফেরত পাননি, তাঁদের কপালে জুটেছে শুধু বেচারাম মান্না।সে এক লম্বা গল্প, অন্যদিন করবো, কিন্তু ওই বামফ্রন্টের উন্নয়নের গুঁতো আমাদের সহ্য হয়নি। মানে আমরা যারা দিন আনি, দিন খাই, আমরা যারা কোনদিন মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যাইনা, আমরা যারা বেশির ভাগ দিন আলুসিদ্ধ-কাঁচালঙ্কা দিয়ে ভাত খেয়ে সন্তুষ্ট হই, সেই আমরা ওই বেড়াল ছাপ উন্নয়ন চাইনি কোনদিন। আমরা তাই পরিবর্তনের বোতামে চাপ দিয়েছিলাম, কিন্তু আমরা মোটেই মমতার কাছ থেকে পরিবর্তন, মানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আশা করিনি। আমরা চেয়েছিলাম ছিপিএম মানে সিপিএম থেকে মুক্তি।তাই যখন দেখলাম লোকাল কমিটির অফিসগুলো জ্বলে যাচ্ছে আমাদের মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি জাগতো, এই অফিসগুলো থেকে আমাদের খাওয়া, পড়া, হাগা, মোতা সব এক সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা হতো আর আজ ওই অফিসগুলো হয় নীল সাদা - তিরঙ্গা না হয় ভেঙ্গে চুরে খান খান হয়ে গেছে, আর কিছু যা টিকে আছে তাতে আজ দোকান খুলে ধুপ ধুনো দেওয়ার লোক পাওয়া যায়না।
মমতার শাসনে আমরা যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই থাকলাম একথা সত্য আর আমরা অবশ্যই মমতার থেকে বেশি কিছু চাইনি। সমস্যা হলো ৩৪ বছর ক্ষমতার থেকে দুরে থাকায় যে ক্ষিদেটা এই কংগ্রেসী / তৃণমূলী ভাইদের আর ছোট ছানাদের মধ্যে ছিল তার ফলে এদের লোকেরা আশপাশের সবকিছু বেমালুম ভুলে গিয়ে নেংটা হয়ে জনসমক্ষে শুধু চুরি করেই গেছে এবং নিজেদের মহলে মানুষের হাড় জমা করেছে, নারীর ইজ্জত লুটেছে, হার্মাদদের করনীয় সবকিছুই খুব সুন্দর ভাবে করেছে। মাঝে মদন-মুকুল-কুণাল চুরি করে ধরা পড়েছে আর কেউ জেলে গেছে কেউ ঘুষ দিয়ে আর বাটোয়ারা করে নিজেকে হাজত থেকে বাঁচিয়েছে।এতো জ্যোতির ভাষায় - এমনটা তো হয়েই থাকে-গোছের কেস। তাই পশ্চিমবঙ্গের জনগণ চুরি দেখেও, মমতার খিল্লি উড়িয়েও মমতাকে ভোট দিয়েছে কারণ পাড়ার দাদা, ক্লাবের পল্টু, মহাজন, জোতদার, পঞ্চায়েত প্রধান, সিন্ডিকেট কারবারিদের চাপ ছিল।