কর্পোরেটমুখী উন্নয়নের চরণামৃত চেটে পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষ চলে না নরেন্দ্র
নরেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে বারবার ফিরে আসছে আর হিন্দি ভাষায় বাঙালি কে জ্ঞান দিচ্ছে যে বিজেপি জিতলে সে কি ভাবে বাংলার চতুর্দিক উন্নয়ন দিয়ে ভরিয়ে দেবে।কি ভাবে বাংলার দুর্দশা দূর হবে আর বাঙালি উন্নয়নের প্লাবনে গা ভাসাবে। নরেন্দ্র আরও বললো যে সে নাকি প্রচুর টাকা মমতার সরকারকে দিয়েছে কিন্তু মমতা নাকি কোনো কাজ করেনি, সেই টাকা নাকি মারা গেছে। তাই বাংলার মানুষের যদি সঠিক পরিবর্তন চাই তাহলে এই বাংলার পাঁকে এবার পদ্মফুল কে ফুটবার সুযোগ করে দিতেই হবে। নরেন্দ্র আর অমিত উপুর হয়ে মাথা ঠেকছে বাঙালির পায়ে ভোটের জন্যে এর চেয়ে বেশি ভালো দৃশ্য আর কি হতে পারে সেই দেশে যে দেশে গুজরাটি ব্যবসায়ী শ্রেণী চিরকালই বাঙালিদের, এমনকি খাস কলকাতা শহরের বুকে হেয় করে এসেছে।
![]() |
Photo Credit: rishibando via Compfight cc |
যাই হোক ফিরে আসি উন্নয়নের প্রশ্নে। নরেন্দ্র বলেছে যে মূল সমস্যা হলো উন্নয়নের আর বিজেপি আসলে রাজ্যের উন্নয়ন হবে, এমন উন্নয়ন যে তাতে আমাদের সব ক্ষোভ - দুঃখ - বেদনা - ঘৃণা - প্রতিশোধের স্পৃহা মুছে যাবে ঝাঁ চকচকে পিচের রাস্তা, বিজলি বাতি, হুশ হুশ করে চলে যাওয়া গাড়ি, ট্যাপ কলের জল, হাগু করার পায়খানা ঘর, হেগে জল ঢালার ফ্লাশ মেশিন, ঘরের বাইরে রেলগাড়ি, ইত্যাদী সব দেখে একেবারে মানিক বাবুর সোনার কেল্লার দুষ্টু লোকের মতন ভ্যানিশ হয়ে যাবে। মুকুল দেখবে যে তাঁর আতঙ্কের বস্তুটি গায়েব।তা বেশ নরেন্দ্র, তুমি আমাদের এই রূপ নগরে পাঠাতে চাও তাহলে তো বেশ ভালো কথা, কিন্তু বাপু ঘর পোড়া গরুর মতন আমরা ভেতো বাঙালিরা একটু সিঙ্গুরে মেঘ দেখে ডরাই তো - তাই কটা কথা ভীষন জানতে ইচ্ছে করে।
এই যে তুমি উন্নয়নের পাঁচালি আমাদের প্রতিবার ভোটের আগে এসে শোনাও তার উপর ভিত্তি করে আমরা জানতে চাই যে গরিব মানুষের স্বার্থ রক্ষা হয়, শ্রমিক ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষা হয়, আদিবাসী ও দলিত সমাজের স্বার্থ রক্ষা হয় এই রকম কতগুলি উন্নয়ন প্রকল্প তুমি এ জন্মে রুপান্তরিত করেছ? আমরা তো এযাবৎ কাল দেখে এসেছি যে তোমার সকল প্রকল্প, সকল উন্নয়ন কর্মসূচি সাধারণ খেটে খাওয়া জনগণের নয় বরং ওই উচ্চবিত্তদের, দালাল পুঁজিপতি আর সামন্তপ্রভুদের স্বার্থ রক্ষা করে। ২০১৪ সালে যেদিন তুমি দিল্লির মসনদে দেশের ৩১ শতাংশ জনগণের রায় নিয়ে বসলে, সেদিন থেকে তোমার মোদী সরকার কি ভাবে একের পর এক প্রতিশ্রুতির থেকে পিছনে সরে গেছে সে জিনিসটা দেশের জনগণ ভালোভাবেই দেখেছেন। শুধু এক জায়গায় তোমার কোনো জুড়ি মেলা ভার। তা হলো তোমার মতন নির্লজ্জ বেহায়া হয়ে কেউই দেশী ও বিদেশী পুঁজির জুতো চাটতে পারবে না। তোমার মতন কানকাটা হয়ে কেউই বলবে না যে সে বিদেশের মাটিতে এসেছে ভারত বিক্রির চেষ্টায়, ইংরাজীতে বললে - হার্ড সেলিং ইন্ডিয়া। এমনকি নিজ মুখে তোমার পূর্বসুরী এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাঠপুতুল মনমোহন সিংহ স্বীকার করে নিয়েছে যে তোমার মতন গুজরাটি বিক্রি বিদ্যা তার জানা না থাকায় তাকে একটা পর্বে এসে গর্তে সেঁধিয়ে যেতে হয়েছে।
যাই হোক আমরা সবাই মানছি যে বামফ্রন্ট বিরাট বড় জগদ্দল পাথর ছিল, আমাদের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের সংগ্রামের কেউ যদি আপামর ক্ষতি করে থাকে তাহলে সেটা ওই জ্যোতি আর বুদ্ধের বামফ্রন্ট।এককালে বিপ্লব আর সমাজ বদলের বুলি কপচালেও পরবর্তী কালে ওই নয়া উদারনৈতিক অথনীতির দালালি ওরা ঠিক তোমার মতনই করেছিল। সেই যেমন তোমাদের পছন্দের চীনা নেতা বলেছিল বেড়াল কালো হোক বা সাদা আসল ব্যাপার হলো সেটা ইঁদুর ধরতে পারছে কিনা, ঠিক তেমনই আমাদের বামফ্রন্ট সরকার আমাদের ওই সালেম আর টাটার জন্যে ইঁদুর দৌড়ে নামিয়েছিল, গর্তে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে আমাদের পেছনে সাদা, কালো, হলুদ, খয়েরি, ইত্যাদী নানা রঙের বেড়াল ছেড়ে দিয়েছিল। সেদিন হঠাৎ তোমার পুরানো সখী মমতা ক্ষিপ্ত হয়ে পথে নেমে ভীষন বিপ্লবী সেজেছিল বলে আজ তোমার সাধের গুজরাটে রতন টাটা ওর স্বপ্নের একলাখি গাড়ির কারখানা তুলে নিয়ে গিয়ে তোমায় শিল্পবান্ধব হিসেবে পরিচিত করালো। জানা নেই ওই সিঙ্গুরে কেন তোমার গুরু আদবানি সেদিন ৮০ গাড়ির কনভয় নিয়ে গেছিল আর মমতার কানে কানে কি প্রস্তাব দিয়ে এসেছিল। কারণ গাড়ির কারখানার নামে যে জমি দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন ভূ মাফিয়া গোষ্ঠী দখল করেছিল সেই ২০০৬ সালে তা আজও কৃষকরা ফেরত পাননি, তাঁদের কপালে জুটেছে শুধু বেচারাম মান্না।সে এক লম্বা গল্প, অন্যদিন করবো, কিন্তু ওই বামফ্রন্টের উন্নয়নের গুঁতো আমাদের সহ্য হয়নি। মানে আমরা যারা দিন আনি, দিন খাই, আমরা যারা কোনদিন মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যাইনা, আমরা যারা বেশির ভাগ দিন আলুসিদ্ধ-কাঁচালঙ্কা দিয়ে ভাত খেয়ে সন্তুষ্ট হই, সেই আমরা ওই বেড়াল ছাপ উন্নয়ন চাইনি কোনদিন। আমরা তাই পরিবর্তনের বোতামে চাপ দিয়েছিলাম, কিন্তু আমরা মোটেই মমতার কাছ থেকে পরিবর্তন, মানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আশা করিনি। আমরা চেয়েছিলাম ছিপিএম মানে সিপিএম থেকে মুক্তি।তাই যখন দেখলাম লোকাল কমিটির অফিসগুলো জ্বলে যাচ্ছে আমাদের মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি জাগতো, এই অফিসগুলো থেকে আমাদের খাওয়া, পড়া, হাগা, মোতা সব এক সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা হতো আর আজ ওই অফিসগুলো হয় নীল সাদা - তিরঙ্গা না হয় ভেঙ্গে চুরে খান খান হয়ে গেছে, আর কিছু যা টিকে আছে তাতে আজ দোকান খুলে ধুপ ধুনো দেওয়ার লোক পাওয়া যায়না।
মমতার শাসনে আমরা যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই থাকলাম একথা সত্য আর আমরা অবশ্যই মমতার থেকে বেশি কিছু চাইনি। সমস্যা হলো ৩৪ বছর ক্ষমতার থেকে দুরে থাকায় যে ক্ষিদেটা এই কংগ্রেসী / তৃণমূলী ভাইদের আর ছোট ছানাদের মধ্যে ছিল তার ফলে এদের লোকেরা আশপাশের সবকিছু বেমালুম ভুলে গিয়ে নেংটা হয়ে জনসমক্ষে শুধু চুরি করেই গেছে এবং নিজেদের মহলে মানুষের হাড় জমা করেছে, নারীর ইজ্জত লুটেছে, হার্মাদদের করনীয় সবকিছুই খুব সুন্দর ভাবে করেছে। মাঝে মদন-মুকুল-কুণাল চুরি করে ধরা পড়েছে আর কেউ জেলে গেছে কেউ ঘুষ দিয়ে আর বাটোয়ারা করে নিজেকে হাজত থেকে বাঁচিয়েছে।এতো জ্যোতির ভাষায় - এমনটা তো হয়েই থাকে-গোছের কেস। তাই পশ্চিমবঙ্গের জনগণ চুরি দেখেও, মমতার খিল্লি উড়িয়েও মমতাকে ভোট দিয়েছে কারণ পাড়ার দাদা, ক্লাবের পল্টু, মহাজন, জোতদার, পঞ্চায়েত প্রধান, সিন্ডিকেট কারবারিদের চাপ ছিল।
যাই হোক আমরা সবাই মানছি যে বামফ্রন্ট বিরাট বড় জগদ্দল পাথর ছিল, আমাদের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের সংগ্রামের কেউ যদি আপামর ক্ষতি করে থাকে তাহলে সেটা ওই জ্যোতি আর বুদ্ধের বামফ্রন্ট।এককালে বিপ্লব আর সমাজ বদলের বুলি কপচালেও পরবর্তী কালে ওই নয়া উদারনৈতিক অথনীতির দালালি ওরা ঠিক তোমার মতনই করেছিল। সেই যেমন তোমাদের পছন্দের চীনা নেতা বলেছিল বেড়াল কালো হোক বা সাদা আসল ব্যাপার হলো সেটা ইঁদুর ধরতে পারছে কিনা, ঠিক তেমনই আমাদের বামফ্রন্ট সরকার আমাদের ওই সালেম আর টাটার জন্যে ইঁদুর দৌড়ে নামিয়েছিল, গর্তে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে আমাদের পেছনে সাদা, কালো, হলুদ, খয়েরি, ইত্যাদী নানা রঙের বেড়াল ছেড়ে দিয়েছিল। সেদিন হঠাৎ তোমার পুরানো সখী মমতা ক্ষিপ্ত হয়ে পথে নেমে ভীষন বিপ্লবী সেজেছিল বলে আজ তোমার সাধের গুজরাটে রতন টাটা ওর স্বপ্নের একলাখি গাড়ির কারখানা তুলে নিয়ে গিয়ে তোমায় শিল্পবান্ধব হিসেবে পরিচিত করালো। জানা নেই ওই সিঙ্গুরে কেন তোমার গুরু আদবানি সেদিন ৮০ গাড়ির কনভয় নিয়ে গেছিল আর মমতার কানে কানে কি প্রস্তাব দিয়ে এসেছিল। কারণ গাড়ির কারখানার নামে যে জমি দেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন ভূ মাফিয়া গোষ্ঠী দখল করেছিল সেই ২০০৬ সালে তা আজও কৃষকরা ফেরত পাননি, তাঁদের কপালে জুটেছে শুধু বেচারাম মান্না।সে এক লম্বা গল্প, অন্যদিন করবো, কিন্তু ওই বামফ্রন্টের উন্নয়নের গুঁতো আমাদের সহ্য হয়নি। মানে আমরা যারা দিন আনি, দিন খাই, আমরা যারা কোনদিন মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যাইনা, আমরা যারা বেশির ভাগ দিন আলুসিদ্ধ-কাঁচালঙ্কা দিয়ে ভাত খেয়ে সন্তুষ্ট হই, সেই আমরা ওই বেড়াল ছাপ উন্নয়ন চাইনি কোনদিন। আমরা তাই পরিবর্তনের বোতামে চাপ দিয়েছিলাম, কিন্তু আমরা মোটেই মমতার কাছ থেকে পরিবর্তন, মানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আশা করিনি। আমরা চেয়েছিলাম ছিপিএম মানে সিপিএম থেকে মুক্তি।তাই যখন দেখলাম লোকাল কমিটির অফিসগুলো জ্বলে যাচ্ছে আমাদের মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি জাগতো, এই অফিসগুলো থেকে আমাদের খাওয়া, পড়া, হাগা, মোতা সব এক সময়ে নিয়ন্ত্রণ করা হতো আর আজ ওই অফিসগুলো হয় নীল সাদা - তিরঙ্গা না হয় ভেঙ্গে চুরে খান খান হয়ে গেছে, আর কিছু যা টিকে আছে তাতে আজ দোকান খুলে ধুপ ধুনো দেওয়ার লোক পাওয়া যায়না।
মমতার শাসনে আমরা যে তিমিরে ছিলাম সেই তিমিরেই থাকলাম একথা সত্য আর আমরা অবশ্যই মমতার থেকে বেশি কিছু চাইনি। সমস্যা হলো ৩৪ বছর ক্ষমতার থেকে দুরে থাকায় যে ক্ষিদেটা এই কংগ্রেসী / তৃণমূলী ভাইদের আর ছোট ছানাদের মধ্যে ছিল তার ফলে এদের লোকেরা আশপাশের সবকিছু বেমালুম ভুলে গিয়ে নেংটা হয়ে জনসমক্ষে শুধু চুরি করেই গেছে এবং নিজেদের মহলে মানুষের হাড় জমা করেছে, নারীর ইজ্জত লুটেছে, হার্মাদদের করনীয় সবকিছুই খুব সুন্দর ভাবে করেছে। মাঝে মদন-মুকুল-কুণাল চুরি করে ধরা পড়েছে আর কেউ জেলে গেছে কেউ ঘুষ দিয়ে আর বাটোয়ারা করে নিজেকে হাজত থেকে বাঁচিয়েছে।এতো জ্যোতির ভাষায় - এমনটা তো হয়েই থাকে-গোছের কেস। তাই পশ্চিমবঙ্গের জনগণ চুরি দেখেও, মমতার খিল্লি উড়িয়েও মমতাকে ভোট দিয়েছে কারণ পাড়ার দাদা, ক্লাবের পল্টু, মহাজন, জোতদার, পঞ্চায়েত প্রধান, সিন্ডিকেট কারবারিদের চাপ ছিল।
এবার নিজের নাম্বার বাড়াতে তোমার পেছনে যে নাগপুর খুব চাপ দিয়েছে বোঝা যাচ্ছে। উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে তুমি উচ্চ জাতির বড়লোক আর সচ্ছল উচ্চবিত্তদের ভোট ভালোই কামাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু গরিব মানুষের কাছে পশ্চিমবঙ্গে সমস্যার কারণটা উন্নয়ন নয়, বরং অধিকারের, যে অধিকার থেকে তাঁদের চিরকাল বঞ্চিত করে রেখেছে তোমার মালিকরা। তাই আধপেটা খেয়ে ওই গরিব চাষা, চা বাগানের অনাহার ক্লিষ্ট শ্রমিকগুলো, জুটমিল আর বন্ধ কারখানার শ্রমিকরা সিপিএম-তৃণমূল সবার বিরুদ্ধেই লড়ছে একটা এজেন্ডা নিয়ে আর তা হলো মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার অধিকার পাওয়া। তোমার গোয়ালে বাঁধা তপন ঘোষের মতন ষাঁড়েরা হয়তো সাম্প্রদায়িক লড়াই ছড়াবার জন্যে অনেক মণ ঘী পুড়িয়েছে, হিন্দুসেনা, বাঁদর সেনা,ইত্যাদি বানিয়ে তোমরা অনেক হুজজতি করে কালিয়াচক থেকে শুরু করে বসিরহাট আর বীরভূম করার চেষ্টা করেছো, রূপা আর রাহুল কে দিয়ে গরিবের বন্ধু সেজে পেছনে বাঁশ দেওয়ার চেষ্টাও অনেক করেছো, তবু বাংলার গরিব মানুষগুলো কিন্তু ভালোই জানে যে তোমাদের উন্নয়নের মডেলে তাঁদের জন্যে অপেক্ষা করছে আরও বস্তি উচ্ছেদ, কৃষি জমির উপর কর্পোরেট আগ্রাসন, হকার খেদিয়ে রাস্তা সাজানো, শ্রমিকের বেঁচে থাকা কয়েকটি অধিকার কেড়ে নিয়ে তাঁদের ক্রীতদাসে পরিণত হওয়া। এ ছাড়া দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষকে তোমাদের উন্নয়নের গুজরাট মডেল কি দিয়েছে? নরেন্দ্র, বছর খানেক আগে তুমি মহারাষ্ট্রে বিজেপির জন্যে উন্নয়নের নামে ভোট চেয়েছিলে, তোমার ভোট ভিক্ষার নাটকে সারা দিয়ে মানুষ বিজেপি কে দলে দলে ভোট দিল মহারাষ্ট্রে। আজ সেই মহারাষ্ট্রে সর্বাধিক কৃষক প্রাণ হারাচ্ছেন হয় খরার কবলে তৃষ্ণায়, না হয় দেনা আর শোষণের তাড়নায় নিজেই আত্মহত্যা করে। যখন মহারাষ্ট্রের কৃষকের জীবন দুর্বিষহ হচ্ছে দেনা আর খরায় ঠিক তখনই তোমার দোস্তের মেয়ে, যে বাপের মৃত্যুর খোরপোষ হিসেবে মন্ত্রিত্ব পেয়েছে, সেই পঙ্কজা মুন্ডে নেচে কুঁদে সেলফি তুলছিল খরা কবলিত এলাকায়। কই! উন্নয়নের কান্ডারী তোমার উন্নয়নের জাদুদন্ড যখন বোম্বাই থেকে আহমেদাবাদের মধ্যে গুজরাটি ব্যবসায়ীদের স্বার্থে বুলেট ট্রেন বানাতে ব্যস্ত তখন তোমায় দেখলুম না তো খরা কবলিত এলাকার কৃষকদের ঋণ মকুবের ব্যবস্থা করতে! ওই কৃষকদের পোষা গরু-বলদ যখন জল তৃষ্ণার কারণে ছটফট করে মরছে তখন দেখলাম না তো গো মাংস নিষেধ কে শিথিল করে গরিব মানুষগুলোর একটু সুরাহা করতে। তোমার সাধের গুজরাট জ্বলছে, ছত্তিসগড়ের আদিবাসীদের উপর বায়ু সেনা হেলিকপ্টার নিয়ে হামলা করছে, আর তুমি বাংলার মাটিতে ন্যাকা কান্না কেঁদে পাবলিককে বলদ বানাবার চেষ্টা করছো? নরেন্দ্র জেনে রাখো এই বাংলার মাটিতে, এই ভারতের মাটিতে, গরিব খেটে খাওয়া শ্রমিক আর কৃষকরা তোমাদের ঢেমনামো ঢের দেখেছেন। তাঁরা ভালোই জানেন যে তোমার ওই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি গুটিকয়েক আম্বানি, আদানি, টাটা, এসার, বেদান্ত, পস্কো, আর জিন্দালদের হাতে মাটি, জঙ্গল, জল আর পাহাড় বেচার পরিকল্পনার অংশ। গরিব মানুষ ভালোই জানে যে ভূমি সংস্কার করে দরিদ্র আর ভূমিহীন কৃষকদের জমি দেওয়ার কথা তোমাদের বলা নিষেধ, বেসরকারিকরণ করে চাকরির নিরাপত্তা কেড়ে নেওয়া তোমাদের কাছে আজ জল ভাত, জঙ্গল সাফ করে খনি আর আকরিক কারখানা করা আজ তোমাদের প্রধান লক্ষ্য, আর এই লুট তরাজ কে আজ উন্নয়নের প্যাকেজে ভেজাল করে চালাবার চেষ্টা করছো? নরেন্দ্র, মমতা আর সূর্যের মতন তোমার উন্নয়নের ভাঁট বকবক আসলে ওই উচ্চ জাতির ব্রাক্ষণত্ববাদী উচ্চবিত্ত আর উচ্চ মধ্যবিত্ত সমাজের স্বার্থে তৈরি, যা বাংলার ৮৫ শতাংশ মানুষের পেটে আর পশ্চাৎ দেশে লাথি মেরে ১৫ শতাংশের উদরপূর্তির ব্যবস্থা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। তোমার হিন্দু পিরিত যদি এতই বেশি তাহলে সারা দেশজুড়ে হিন্দু শ্রমিকদের জন্যেই ন্যূনতম মজুরি ১৫,০০০ টাকা করে দেখাতে। যদি তোমাদের উন্নয়নের চরণামৃত খেয়ে যে কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন তাঁদের মধ্যে সবাই তো হিন্দু, কই তাঁদের তো ঋণ মকুব বা কৃষি সঙ্কট সমাধানের কোনো প্রচেষ্টা তোমরা করছো না। তোমার উন্নয়নের মডেল হলো ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, ওড়িশা। ওই জ্বলন্ত বাস্তার তোমার উন্নয়নের মডেল। কিন্তু আমাদের বাংলার আপামর গরিব মানুষগুলো তোমার ওই উন্নয়নের মডেল কে ঘৃণা সহ বর্জন করেছেন, তাঁরা চান সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে এবং তাই তাঁরা চান শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি এবং সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার, তাঁরা চান চাকরী এবং বেতনের সুরক্ষা, তাঁরা চান প্রভিডেন্ট ফান্ড যেন বাজারে লগ্নি করা না হয়, তাঁরা চান কৃষিতে ভর্তুকি বৃদ্ধি, তাঁরা চান সুষম ভাবে ভূমিসংস্কার ও বন্টন, তাঁরা চান গ্রামাঞ্চল থেকে সামন্তপ্রথার উচ্ছেদ, তাঁরা চান বিনা সুদে কৃষি ঋণ, সার ও বীজের মূল্য হ্রাস, খাদ্য সুরক্ষা ও দুর্নীতি মুক্ত গণবন্টন ব্যবস্থা, বিনামূল্যে সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসার ব্যবস্থা (সস্তার স্বাস্হ্য বীমা নয়), তাঁরা চান আন্দোলনের অধিকার, জল-জঙ্গল-জমির উপর কর্পোরেট আগ্রাসন বন্ধ হোক এই তাঁদের দাবি, আর এবার অমিতকে জিজ্ঞাসা করো, জিজ্ঞাসা করো তোমার পিতৃতুল্য মোহনকে, তোমার হাতখরচ যে আদানি, আম্বানি, বেদান্তের আগারওয়াল দেয় তাদের জিজ্ঞাসা করো যে এত কিছু কি দেওয়া যেতে পারে? যেদিন হ্যাঁ শুনবে সেদিন এসো আমাদের দোরে গড় করতে, কারণ ততদিন ওই উচ্চ জাত হিন্দু শহুরে উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত বাঙালি ও অবাঙালি বনিয়ারা ছাড়া কেউ তোমার দিকে মুখ করে মোতাও পছন্দ করবে না। এটাই বাংলার মাটির কথা নরেন্দ্র, শুনে নাও আর বাংলার মাটি থেকে দূর হটো।