মমতার নন্দীগ্রাম: তৃণমূল শাসনের ভাঙ্গন ভাঙড় থেকে শুরু

বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ১৯, ২০১৭ 0 Comments A+ a-

ভাঙড়ে ১০ই জানুয়ারির প্রতিবাদ সভার ছবি। Credit: sanhati.com
ভাঙড়ে ১০ই জানুয়ারির প্রতিবাদ সভার ছবি। Credit: sanhati.com  

ভাঙড়ে ভাঙ্গন শুরু তৃণমূল রাজত্বের  

ভাঙড়ে ভাঙলো তৃণমূল আর মমতার কৃষক দরদী ভাবমূর্তি আর প্রকাশিত হলো বুদ্ধদেবের বামফ্রন্টের সাথে “মা-মাটি-মানুষের” সরকারের সাদৃশ্য। পুলিশের সাথে হাত মিলিয়ে নিজের হার্মাদ বাহিনী নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঢুকে মানুষকে খুন করে, গুম করে, মেয়েদের শ্লীলতাহানি করে লক্ষণ শেঠের ভূমিকাটা ভাল ভাবে পালন করলো আরাবুল ইসলাম। মঙ্গলবার ১৭ই জানুয়ারি যখন পুলিশের গুলিতে আন্দোলনরত মফিজুল খান আর আলমগীর শেখ যখন লুটিয়ে পড়লেন তখনও নন্দীগ্রামের দশ বছর হতে প্রায় দুই মাস বাকি, সেই নন্দীগ্রাম যেখান থেকে বামফ্রন্টের পতনের আর মমতার উথ্বানের শুরু।

ভাঙড় মানেই তৃণমূলের একাধিপত্য, আরাবুল ইসলামের খাস তালুক, যেখানে আরাবুলের সামনে মাথা নত না করলে সেই মাথা কেটে নেয় দিদির দুষ্টু ভাইয়েরা। ভাঙড়ের আরাবুল বাম জমানার মজিদ মাস্টার বা হলদিয়ার লক্ষণ শেঠের তৃণমূলী সংস্করণ। যার এমন দাপট যে তাকে একবার দল থেকে তাড়িয়ে দিয়েও ভোট ব্যাঙ্ক (রিগিং ব্যাঙ্ক) ধরে রাখতে ঠিক ভোটের মুখেই আবার দলে ফিরিয়ে আনতে হয় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মতন ব্রাক্ষণত্ববাদী নেত্রী কে। সেই ভাঙড়ে কিন্তু এবার ভাঙ্গন ধরলো তৃণমূলের সমর্থন ভিত্তিতে। আরবুলের পিস্তল-বোমা আর চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে এলাকার গরিব মানুষ রুখে দাঁড়ালেন নিজেদের জমি ও জীবিকা রক্ষার স্বার্থে, পরিবেশ কে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে।

ভাঙড়ের কৃষক সংগ্রামের প্রেক্ষাপট ও ঘটনাক্রম 


ভাঙরের  কৃষকেরা দীর্ঘদিন আগেই তৃণমূলের চাপে ভয়ে ভয়ে নিজেদের জমি দিয়ে দিয়েছিলেন আরাবুলের বাহিনীকে, বলা হয়েছিল যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়া হবে এবং প্রচুর সাধারণ মানুষ চাকরি পাবেন।কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা গেল পুরোটাই গল্প, বরং নামমাত্র মূল্যে বন্দুক আর বোমার জোরে জমি কেড়ে নিয়ে আরাবুল ইসলাম আর তৃণমূল কংগ্রেস সেই জমি চড়া দামে বিক্রি করবে পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন কে যারা ভাঙ্গরে গড়ে তুলবে পাওয়ার গ্রিড বা বিদ্যুৎ গ্রিড। ফলে সেই প্রকল্পে চাকরি হবে হাতেগোনা কিছু তৃণমূল কর্মীদের আর বাকিদের পক্ষে রইলো কাঁচকলা। পাওয়ার গ্রিডের হাই টেনশন তারের ফলে আবার প্রকৃতি ও মানুষের জীবন জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল হয়ে ওঠে। এর মধ্যে দূষণের ফলে বিদ্যাধরী নদীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে এবং মাছের ভেড়ি থেকে মাছ ধরে রোজগারও বন্ধ হয়ে যেতে থাকে।

এই পরিস্থিতিতে ভাঙড়ের সাধারণ জনগণ শুরু করেন নিজেদের প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করতে; আরাবুলের বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এই লড়াইয়ে প্রথমে তৃণমূলের রেজ্জাক শিবিরের মদত থাকলেও পরবর্তী কালে এই লড়াইয়ের জঙ্গিরূপ দেখে রেজ্জাক সাহেবেরও পিলে চমকে ওঠে। গ্রামে গ্রামে প্রতিবাদীরা সংগঠিত হন এবং বিদ্যুৎ গ্রিডের বিপদ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য মানুষকে সহজ ভাষায় বোঝাতে অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা এই এলাকায় যান। গড়ে ওঠে জমি-জীবিকা-পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা কমিটি। যে কমিটির নেতৃত্বে সমগ্র ভাঙরে তৃণমূলের স্বেচ্ছাচারী সরকারের বিরুদ্ধে, আরাবুল ও তার চেলাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে সংগ্রাম।

২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে লড়াই তুঙ্গে ওঠে পাওয়ার গ্রিডের নির্মাণ কার্যের  বিরুদ্ধে।  অবস্থা বেগতিক থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার ২৮শে ডিসেম্বর খামারাইট এর ১.৫কিঃমিঃ ব্যাসার্ধ জুড়ে  জারি করে ১৪৪ ধারা। গ্রামবাসীদের সমাবেত হওয়ার থেকে বিরত করতে এবং আন্দোলন কে ভাঙতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ভাঙড় দুই নম্বর ব্লকে। সাথে সাথে এই  সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং  বিদ্যুৎ গ্রিডের প্রকল্প বাতিল করার দাবিতে সেই ২৮শে ডিসেম্বরেই মাছিভাঙ্গার খালপাড়ে বিশাল সমাবেশ করেন এলাকার জনগণ। সেই মিছিলে দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষকে ঠেকাতে নিজের ভাড়াটে হার্মাদদের রাস্তায় নামায় আরাবুল আর সাথে থাকে পুলিশ। তবুও জনজোয়ার ঠেকাতে আরাবুল অপারগ হয়। জয় হয় ভাঙড়ের জনগণেরই।  

জানুয়ারি ২০১৭ থেকে গণ আন্দোলনের ঢেউ এত তীব্র হতে শুরু করে যে আরাবুলের নিজের গ্রাম গাজীপুরে তার স্বৈরতন্ত্র কে উচ্ছেদ করতে গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসেন। আরাবুলের বোমা-পিস্তল-ভোজালি দেখে মানুষ ভয় পাওয়া বন্ধ করতেই আরাবুল নবান্নের শরণাপন্ন হয় নিজের দাপট ও খাস তালুক রক্ষা করতে। আরাবুলের সংকটের সুযোগ নিয়ে যদিও রেজ্জাক এলাকায় নিজের প্রতিপত্তি কায়েম করার চেষ্টা করে তবু গণ জোয়ারের সামনে ওর সিপিএম থেকে পাল্টি খাওয়া তৃণমূলী গুন্ডারা খড় কুটোর মতন ভেসে যায়।

নবান্ন ভাঙড়ে তৃণমূলের আধিপত্য কায়েম রাখতে  পুলিশি সন্ত্রাস বাড়িয়ে দেয় এবং ঠিক সেই নন্দীগ্রামের কায়দায় পুলিশের সাথে পুলিশের জ্যাকেট পড়ে, মুখে মাফলার বেঁধে আরাবুলের গুন্ডারা দফায় দফায় আক্রমণ শুরু করে কিন্তু প্রায় ২০০০ মানুষের ঐকবদ্ধ প্রতিরোধ আরাবুল কে তার দলবল সহ গাজীপুর এলাকার থেকে তাড়িয়ে দেয় জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই।

সোমবার ১৫ই জানুয়ারি আধা-সামরিক বাহিনীর সমর্থনে পুলিশ হামলা শুরু করে নতুনহাট আর খামারাইট এলাকায়। গ্রামবাসীদের বাড়িতে ঢুকে বেধড়ক পেটানো হয় পুরুষদের, নারীদের শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করে রাজ্য পুলিশ ও অবাঙালি আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা। অনেক দোকানপাটে পুলিশ লুঠপাট আর ভাঙ্গচুর চালায়। এলাকা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে থাকে আর তখনই গাজীপুর থেকে গণ আন্দোলনের কর্মী কালু শেখ কে পুলিশ গ্রেফতার করে। সমগ্র গাজীপুর সহ ভাঙড় দুই ব্লক গর্জে ওঠে প্রতিবাদে আর গড়ে ওঠে প্রতিরোধ। গণ আক্রোশের চাপে পড়ে পুলিশ কে কালু শেখ কে ছেড়ে দিতে হয়।

আরাবুল পুলিশের কর্তাদের সাথে মিলে গাজীপুর, নতুনহাট, মাছিভাঙ্গা, শ্যামনগর ইত্যাদি অঞ্চলে মঙ্গলবার ১৭ই জানুয়ারি সকাল থেকে আক্রমণ শুরু করে। প্রতিটি আক্রমণে পুলিশের সাথে আরাবুলের হার্মাদ বাহিনী ছিল এবং সমস্ত গ্রামবাসীদের সাথে এদের তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয় যাতে ক্ষিপ্ত  পুলিশ কর্মীরা আরাবুলের তৃণমূলী হার্মাদ বাহিনীর নির্দেশে খুব কাছ থেকে গুলি করে আলমগীর ও মফিজুল কে হত্যা করে। ক্ষিপ্ত জনগণ পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলতেই পইপই করে ছুটে পালায় তৃণমূলী হার্মাদ বাহিনী ও পুলিশ।

দুই যুবকের মৃত্যুর সাথে প্রায় ১৬ জন আন্দোলনকারীর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ নন্দীগ্রামের সংগ্রামী গ্রামবাসীদের গুম করে খুন করে মৃতদেহ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনার সাথে ভাঙড়ের এই ঘটনার তুলনা করছেন। লক্ষণ শেঠের চেয়েও নিপুণ ভাবে আরাবুল এই কাজ সেরেছে বলে অভিযোগ। ঘটনার সত্যতা নিয়ে পুলিশ এখনো সংবাদ মাধ্যমের সামনে কোন বিবৃতি দেয়নি। মমতা বন্দোপাধ্যায় বা তৃণমূলের নেতৃত্বও এই নিয়ে টু শব্দ করেনি।

গণ আন্দোলনের ফলে ভয় পেয়ে যদিও মমতা বন্দোপাধ্যায় পাওয়ার গ্রিড প্রকল্প কে বাতিল করার কথা ঘোষণা করে, ঠিক যেমন নন্দীগ্রামের জমি অধিগ্রহণের নোটিস পরে ফেরত নেয় বামফ্রন্ট সরকার, তবুও আন্দোলনরত কৃষকদের এই নাটকে ভোলানো যায়নি। ক্ষিপ্ত হয়ে মমতা “বহিরাগত নকশাল” ধরার আদেশ দিয়ে পুলিশ কে বকলমে সন্ত্রাস তীব্র করার অনুমতি দিচ্ছে আর তার ফলে ভাঙড়ের মাটিতে তাড়া খেয়ে মুকুল আর রেজ্জাক কে পালিয়ে ফিরতে হচ্ছে কলকাতায়।

 ভাঙড়ে মমতার নন্দীগ্রাম পর্ব শুরু 


ভাঙড়ের গ্রামবাসীদের উপর পুলিশি সন্ত্রাস ও আরাবুলের নৃশংস অত্যাচারই শুধু যে নন্দীগ্রাম পর্বের বামফ্রন্ট সরকারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে তা কিন্তু নয়, বরং সামগ্রিক ভাবে দেখতে গেলে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আস্ফালন, তৃণমূল কংগ্রেসের মেজাজ, এবং সরকারি যন্ত্রের প্রচারের ধরন দেখেও বুদ্ধের সরকারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। গ্রামবাসীদের জাগ্রত চেতনা কে, আরাবুলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো কে মমতা বন্দোপাধ্যায় কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। কারণ ভাঙড়ের জনগণের জাগ্রত চেতনা মানেই তো তৃণমূলের সিন্ডিকেটবাজির সন্ত্রাসের অন্তর্জলি যাত্রা শুরু, আরাবুলের পতনের শুরু, সামগ্রিক ভাবে মুসলমান সমাজ কে টুপি-বোরখা পড়িয়ে মোল্লা শাসনে রাখার চক্রান্তের পতন, ও সর্বোপরি মমতার অহংকারের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয় যাত্রার সূচনার ডঙ্কা বেজে ওঠা।

তাই বুদ্ধের পথ ধরে মমতা আজ আবার “মাওবাদী” আর নকশাল ভূতের গন্ধ শোঁকা শুরু করেছে। ভোটপন্থী নিরামিষাশী সিপিআই (এম-এল) রেডস্টার কে ভাঙড়ের আন্দোলনে পেয়ে ওই দলের কর্মী সমর্থকদের উপর অকথ্য অত্যাচার করার জন্যে পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে। জনগণের ক্ষোভ ও তৃণমূলের প্রতি তীব্র ঘৃণা কে “বহিরাগতদের উস্কানি” বলে মমতা আর তৃণমূল চেপে দিচ্ছে আর তার সাথে ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের গ্রামবাসীদের সাথে একাত্ম হয়ে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তোলার কাজে বাঁধা দিতে সমস্ত গোয়েন্দা দফতর কে হুকুম দেওয়া হচ্ছে। ২০০৭ সালে বুদ্ধ আর বিমানের কর্ম পদ্ধতিও একই রকমের ছিল বলে তো মনে পড়ছে।

বোঝাই যাচ্ছে যে এই ভাবে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার ঝুটো কেস দিয়ে গ্রামবাসীদের রাজনৈতিক ভাবে সক্ষম করে তুলতে যে সব রাজনৈতিক কর্মীরা কাজ করছেন, তাঁদের উপর পুলিশি নিপীড়ন চালাবে।  আর এর সাথেই কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায় ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি  দিতে তৃণমূলের ছত্রছায়ায় লালিত পালিত এবং সরকারি কোষাগার থেকে ভাতা প্রাপ্ত ইমাম ও মোল্লাদের এবার ভাঙড়ের গ্রামবাসীদের ভাগ করতে পাঠাবে। যারা অবশ্যই ভাঙড়ের সংগ্রামী মুসলমান গ্রামবাসীদের “বহিরাগত” কাফেরদের থেকে মুক্ত হয়ে  ‘মুমিন ভাই’ আরাবুল কে আপন করে নিতে চাপ দেবে কাল্পনিক সব হাদিস শুনিয়ে।

ইতিহাসের পাতায় এক দশক আগে সিপিএম এর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট  সরকার এই সকল চালগুলোই চেলেছিল জনগণ কে লড়াইয়ের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে। কিন্তু সেই ইতিহাসই আজ সাক্ষী দেবে যে সেই প্রচেষ্টার কি ফল বামফ্রন্ট পেয়েছিল আর আজ ইতিহাসের কোন আস্তাকুঁড়েতে বুদ্ধ আর বিমান নিক্ষেপিত হয়েছে। সেদিন যে মহিলা একা স্বল্প শক্তি নিয়ে তেড়েফুঁড়ে বামফ্রন্টের রোলার সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রামে থামিয়েছিল সেই মহিলা আজ ওই রোলারের ড্রাইভারের আসনে বসে, তাই হিসেবটা একটু উল্টো পাল্টা হয়ে গেল। তবে যেহেতু ইতিহাসের রসিকতা বড়ই নিষ্ঠুর তাই মমতার বর্তমান অবস্থা দেখে তার তীব্র প্রতিদ্বন্ধীরও ভীষণ মায়া হবে।

মমতার “মা-মাটি-মানুষের সরকার” আজ সেই বামফ্রন্টের পথে চলে নিজের কবর খোঁড়ার বন্দোবস্ত করছে। তৃণমূল ছাড়ার সময়ে সোমেন মিত্র বলেছিল যে মমতার শাসন কালে মা ধর্ষিতা, মাটি লুন্ঠিত, আর মানুষ প্রতারিত, শোষিত, অত্যাচারিত। সোমেন মিত্রের কথার সাথে বাস্তবের মিল পশ্চিমবঙ্গের জনগণ প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে টের পাচ্ছেন।  ভাঙড় আজ চোখে আঙ্গুল তুলে দেখাচ্ছে যে কৃষকের জমি না কাড়ার, কৃষি জমির থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করে শিল্প না করার মমতার প্রতিশ্রুতি কতই ভঙ্গুর।  ফলে দলে দলে মানুষ আজ মমতার বিরুদ্ধে, তৃণমূলের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে, আরাবুল আর রেজ্জাকদের মতন ভূ-মাফিয়াদের সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে পথে নামছেন, এমনকি মৃত্যু ভয় কে জয় করেও।

মমতা বন্দোপাধ্যায়ের জেনে রাখা উচিত যে জনগণ তাকে ও তার পার্টিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে সেই জনগণ কিন্তু রাস্তায় নেমে তার সরকার কে সিংহাসন থেকে টেনে নামাতেও সক্ষম। তাই মমতা বন্দোপাধ্যায় যদি জনগণ কে ভীতু এবং রাজনৈতিক ভাবে অন্ধ ভেবে নিজের স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় চলে পুলিশি সন্ত্রাসের সাহায্যে গণ আন্দোলন কে পরাস্ত করতে চায় তাহলে ভাঙড় থেকে যে ফুলকি গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে তা এক এমন গণরোষের  সৃষ্টি করবে যার সামনে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দাপট আর আরাবুলের দাদাগিরি নিমেষে উড়ে যাবে। মমতা বন্দোপাধ্যায় ভালো করেই জানে যে জনগণের রোষের সামনে পড়ে বড় বড় দাপুটে রাজনৈতিক নেতারা আজ কি ভাবে অস্ত গেছে পশ্চিমের আকাশে। মমতা বন্দোপাধ্যায় বা তৃণমূল কংগ্রেসের শত চেষ্টা সত্বেও, বিজেপির সাথে মিলেমিশে পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কে নষ্ট করার শত প্রচেষ্টা সত্বেও, জাগ্রত কৃষকের - জাগ্রত শ্রমিকের রোষানলে তৃণমূলের সরকার খুব শীঘ্রই পতিত হবে পাথুরে জমিতে। ভাঙড় থেকে তৃণমূলের ডাঙায় ভাঙ্গন ধরার শুরু হলো, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে যার ফল তৃণমূল হাতেনাতে পাবে।

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে