বাংলাদেশের ব্লগারদের উপর হামলা - ধর্মীয় মৌলবাদকে রোখার একমাত্র পথ হলো সমাজ বদল
সম্প্রতি বাংলাদেশে নিজের বাড়ির ভিতর ইসলামী ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসবাদীদের হাতে নিহত হলেন প্রগতিশীল ব্লগার নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়, যিনি 'নীলয় নীল' নামে ব্লগ দুনিয়ায় পরিচিত ছিলেন। এই বছরের শুরুর থেকে এই নিয়ে ৪ জন ব্লগার প্রাণ হারালেন ইসলামী ফ্যাসিস্টদের হাতে।সর্বপ্রথম এই বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিকে ঢাকা বই মেলা প্রাঙ্গনের বাইরে ইসলামী সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও যুক্তিবাদী অভিজিত রায়কে, তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর ভাবে আহত হন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা।এর পরে সমগ্র বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক মহলে বিশাল প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায় মৌলবাদের সাথে আপসকামী আওয়ামি লিগ সরকারের বিরুদ্ধে এবং ক্ষোভ ফেটে পরে মৌলবাদী সন্ত্রাসী ও তাদের পৃষ্টপোষক সৌদি দালাল জামাত বাহিনীর বিরুদ্ধে।
অভিজিতের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই ইসলামী ফ্যাসিস্টরা খুন করে ওয়াশিকুর রহমান 'বাবু' নামক তরুণ ব্লগারকে। তাঁর পর অনন্ত বিজয় দাস এবং সর্বশেষ সংযোজন হল নীলয় নীল। এক একটি হত্যা একদিকে যেমন প্রগতিশীল চেতনা সম্পন্ন মানুষকে আঘাত করছে, তাঁদের মধ্যে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে তেমনি উল্টোদিকে এই সন্ত্রাস ইসলামী মৌলবাদীদের আরও বলিষ্ট করে তুলছে। তারা খোলাখুলি ফেসবুকের মতন সামাজিক মাধ্যমগুলিতে উল্লাস প্রকাশ করছে এবং নাস্তিক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক চেতনাসম্পন্ন মানুষদের হুমকি দিচ্ছে। এত সব দেখেও বাংলাদেশের সরকার হাতে হাত দিয়ে বসে আছে, তারা হত্যাকারীদের ওকালতি করছে এই বলে যে মানুষের "ধর্মীয় অনুভূতিতে" আঘাত করা অনুচিত। কিন্তু মানুষ খুন করা যে অনুচিত সে কথা সরকার বা মোল্লাতন্ত্র কারুর বিবৃতিতে শোনা গেলনা না।
অভিজিতের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই ইসলামী ফ্যাসিস্টরা খুন করে ওয়াশিকুর রহমান 'বাবু' নামক তরুণ ব্লগারকে। তাঁর পর অনন্ত বিজয় দাস এবং সর্বশেষ সংযোজন হল নীলয় নীল। এক একটি হত্যা একদিকে যেমন প্রগতিশীল চেতনা সম্পন্ন মানুষকে আঘাত করছে, তাঁদের মধ্যে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে তেমনি উল্টোদিকে এই সন্ত্রাস ইসলামী মৌলবাদীদের আরও বলিষ্ট করে তুলছে। তারা খোলাখুলি ফেসবুকের মতন সামাজিক মাধ্যমগুলিতে উল্লাস প্রকাশ করছে এবং নাস্তিক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক চেতনাসম্পন্ন মানুষদের হুমকি দিচ্ছে। এত সব দেখেও বাংলাদেশের সরকার হাতে হাত দিয়ে বসে আছে, তারা হত্যাকারীদের ওকালতি করছে এই বলে যে মানুষের "ধর্মীয় অনুভূতিতে" আঘাত করা অনুচিত। কিন্তু মানুষ খুন করা যে অনুচিত সে কথা সরকার বা মোল্লাতন্ত্র কারুর বিবৃতিতে শোনা গেলনা না।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জামাত এ ইসলামী ভারতবর্ষের আরএসএস - বজরং দল ও বিজেপির মতন ফ্যাসিস্ট ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। এদের মুক্তহস্তে দান ধ্যান করে সাহায্য করছে সৌদি আরব সহ আরব দুনিয়ার চরম প্রতিক্রিয়াশীল রাজতান্ত্রিক মৌলবাদী শক্তিগুলি, যারা মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আরব দুনিয়ায় বৈশ্যাবৃত্তি করে একদিকে নিজেদের শাসন টিকিয়ে রেখেছে, আরবের জনগণের প্রগতিশীল - গণতান্ত্রিক দাবির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনগুলিকে দমন করছে মার্কিণ সাহায্যে বলিয়ান হয়ে, আর ইসলাম ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজেদের ওয়াহাবী - সালাফি প্রভাব পৃথিবীর কোনায় কোনায় ছড়িয়ে দিচ্ছে মুঠো মুঠো অর্থ (পেট্রো ডলার) খরচা করে। সৌদি আরবের হাতে ইসলামের রাশ তুলে দিয়ে মার্কিণ একচেটিয়া লগ্নি পুঁজি ও তার তল্পিবাহকরা পৃথিবীতে দাঙ্গা - হাঙ্গামা - সন্ত্রাসবাদের আগুন জ্বালিয়ে নিজেদের শাসন - শোষণ ও লুণ্ঠনের ব্যবস্থাকে পাকা পোক্ত করছে। তাই তারা সৃষ্টি করলো এক সময় আল কায়েদা গোষ্ঠিকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়াকে সরিয়ে নিজেদের দাপট প্রতিষ্ঠা করতে। পরবর্তীতে সেই আল কায়েদা ও তার বিভিন্ন উপদলগুলি মার্কিণ একচেটিয়া পুঁজিকে সাহায্য করলো আফগানিস্তান ও ইরাক দখলের যুদ্ধের জমি প্রস্তুত করিয়ে।
এই ভাবেই সৃষ্ট হল ইসলামিক স্টেট নামক উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী শক্তির। যার অধিনায়কের আসনে অধিষ্ঠিত হল একদা মার্কিণ বন্দী পরবর্তীতে মার্কিণ গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এর চর - 'আল বাগদাদী' নামক এক দালাল। এদের মার্কিণ - সৌদি জোট সৃষ্টি করলো সিরিয়া থেকে আসাদের নেতৃত্বাধীন বাথ সমাজতান্ত্রিক সরকারকে উচ্ছেদ করে নিজেদের পেটোয়া সরকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং বিপুল অর্থ, অস্ত্র শস্ত্র ও নিজেদের দালাল প্রচার মাধ্যমগুলি দ্বারা এদের প্রচার চালালো - 'সিরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী' বলে। কিন্তু সিরিয়ার বিশাল অংশে কোত্কা খেয়ে এই 'স্বাধীনতা সংগ্রামীরা নিজেদের স্বরূপ ধারণ করে করলো ইরাক জুড়ে তান্ডব। এদের বারবৃদ্ধির পিছনে মার্কিণ ও সৌদি আরবের ইরানের পিছনে কাঠি করার তাগিদ ছিল বেশি। তাই তো আজও দেখা যাচ্ছে যে মার্কিণ - সৌদি জোট শুধু মাত্র মুখেই আই এস এর সন্ত্রাসের বিরোধিতা করছে এবং একমাত্র কুর্দিশ বাহিনী ওয়াই পি জি, সিরিয়ার জাতীয় সেনা, ইরানের মদতপুষ্ট মিলিশিয়া বাহিনী আই এস এর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
আজ বাংলাদেশের আরবিকরণের প্রচেষ্টায় রত সৌদি আরবের পোষা দালাল হাসিনা - খালেদা জুটি। এই উপমহাদেশের মুসলমান সম্প্রদায় যতদিন অবধি ওয়াহাবী - সালাফি মার্কা ইসলামের পাল্লায় পড়েননি ততদিন মুসলমানদের মধ্যে ফার্সি - উর্দু প্রভাবটা তীব্র ছিল, যা একদিক থেকে ছিল আজকের ইসলামের চেয়ে ঢের বেশি উদার, মানবতাবাদী ও প্রগতিশীল। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকেই বহু বিদ্বান - প্রগতিশীল মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ বেড়িয়ে এসেছেন, সাহিত্যে, সংস্কৃতিতে, শিল্পে, রাজনীতিতে যারা বিরাট অবদান রেখেছিলেন। কিন্তু ৬০-৭০ এর দশকের তীব্র বামপন্থী আন্দোলনের বৃদ্ধির ফলে আতঙ্কিত মার্কিণ তল্পিবাহক শিবির টেনে আনে তাদের দালাল সৌদি রাজতন্ত্র কে নিজেদের রক্ষা স্বার্থে। যদিও প্রায় দু শতাব্দী ধরে ওয়াহাবী সংস্কৃতি ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করে, কিন্তু তার তীব্রতা বাড়ে বাংলাদেশ গঠন থেকে শুরু করে আফগান যুদ্ধের সময় থেকে।
ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ও ভারতের মুসলমানদের আরবিকরণ চলতে থাকে, মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়তে থাকে, গরিব নিরীহ মুসলমানদের সেখানে মগজ ধোলাই করে ১৪০০ বছর পুরানো ধর্মীয় চোলাই খাইয়ে মৌলবাদের সমর্থনে এক বিশাল ধর্মীয় মাতাল শ্রেণী গড়ে তোলার কাজ চলতে থাকে। বাংলাদেশে যখন বেড়ে চলে জামাত - রাজাকার - মৌলবাদী ফ্যাসিস্টদের শক্তি, তখনই ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিন প্রান্তে হিন্দু ফ্যাসিবাদ শক্তিবৃদ্ধি শুরু করে সেই একই মালিকের প্রশ্রয়ে। এই আরবিকরণের ফলে ধীরে ধীরে একটি বিদেশী ভাষা ও সংস্কৃতি বাঙালি জাতির ভাষা ও সংস্কৃতিকে খুবই বিপদজনক ভাবে প্রভাবিত করতে থাকে। ইংরেজদের শাসনকালেও বাঙালি মুসলমানের সংস্কৃতি ও ভাষার এই রূপ ক্ষতি হয়নি যতটা ৩৫ বছরের আরবিকরণের মাধ্যমে আজ হয়েছে। বাঙালির খোদা হয় গেল আরবীয় আল্লা, মানুষ তাই আর খোদা হাফিজ না বলে বলতে থাকে 'আল্লা হাফিজ', আর নামাজ হলো গিয়ে সালাত। ঘোমটা দিয়ে হিজাব করা বাঙালি মুসলমানের মেয়েরা হঠাত পড়তে শুরু করল আরবীয় বোরখা আর বাঙালি মুসলমান পুরুষদের মধ্যে হঠাত সুন্নত পালন করার ধুম পরে গেল।
বাঙালি মুসলমানের এই পরিণতির মূল দায় অবশ্যই অর্থনীতির, যা যে কোনও সমাজের মূল ভিত্তি। এক বিকাশহীন পিছিয়ে পড়া আধা সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের জীবনযাপন করা দিন দিন দু:সাধ্য করে তোলে, এবং এর ফলে অসংখ্য মানুষকে রুটি রুজির খোঁজে বিদেশে পাড়ি দিতে হয়। এভাবেই ভারতীয় উপমহাদেশের অসংখ্য মুসলমান মানুষ কাজের খোঁজে পাড়ি দেয় সৌদি আরব সহ মধ্য পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে সস্তায় শ্রম বিক্রি করতে। এই সব দেশেই এই গরিব মানুষগুলিকে তাঁদের উপর চলতে থাকা শোষণ অত্যাচারের থেকে নজর ঘোরাতে শাসক শ্রেণী শরণ নেয় ধর্মের, এবং ধর্মীয় আচার আচরণ শেখাবার নামে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষদের এরা নিজ সংস্কৃতি ত্যাগ করে 'বিশুদ্ধ' আরবীয় সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে শেখায় ইসলামের নিয়ম হিসাবে। উদার বাঙালি মুসলমানকে পরিণত করে কট্টর ধর্মীয় মৌলবাদীতে।
তাই আজ দেখা যায় ভারতের পশ্চিম বাংলায়, আর বাংলাদেশের জেলায় জেলায় মাদ্রাসা শিক্ষার নামে বাঙালি শিশুদের দেওয়া হচ্ছে আরবিতে তালিম। এই আরবি শিক্ষা এই গরিব মানুষের সন্তানদের কর্মসংস্থানে বা ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনও সাহায্য করবে না। যেমন বিজেপি - আরএসএস কতৃক ভারতীয়দের সংস্কৃত শিক্ষার জিগির তোলা হয়, তেমনি জামাতিদের প্রশ্রয়ে বেড়ে চলে আরবি শেখার চল। এর ফলে ধীরে ধীরে বাঙালি মুসলমান তাঁর নিজের সংস্কৃতি ও বৈশিষ্টগুলি আরবীয় সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদের কাছে বিসর্জন দিয়ে আরবের জনজাতিগুলির একজন হিসেবে নিজেকে গণ্য করতে থাকে। বাংলাদেশের আওয়ামী লিগ বা জাতীয় পার্টি এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত। এদের যৌথ মদতেই ভারত ও বাংলাদেশে মার্কিণ পুঁজির এক চেটিয়া শোষণ শাসনের ধারা বজায় রাখতে ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তিগুলি আজ পথে নেমেছে।
বাংলাদেশের যুক্তিবাদী নাস্তিকদের আন্দোলন একটি মধ্যবিত্ত সুলভ আন্দোলন যা সমাজের আর্থ সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত বিচার না করেই ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে চায়। তাঁরা এইটা বিশ্বাস করে না যে ধর্ম সহ সমাজের সমস্ত উপরি কাঠামো আসলে অর্থনীতির ভিতের উপর দাঁড়িয়ে। যতদিন অর্থনৈতিক ভিত বদলাবে না তত দিন মানুষের মন থেকে পুরানো চিন্তা, কু সংস্কার কে শেষ করা যাবে না। তাই তাঁদের আন্দোলন সমাজ বদলাবার সংগ্রামের থেকে বিছিন্ন হয়ে রয়েছে। তবুও তাঁরা একটি প্রগতিশীল শক্তি, যাদের আজ বেশি করে সমাজের মূলটা বদলাবার সংগ্রামের সাথে নিজেদের যুক্ত করতে হবে।
কি ভাবে লড়াই করা যাবে মৌলবাদের সাথে ? কি ভাবে পরাস্ত করা যাবে ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলিকে? আমরা দেখেছি যে ভারত - পাকিস্তান - বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি মৌলবাদী ফ্যাসিস্টদের আক্রমণের বিরোধিতা করে মোমবাতি হাতে রাস্তায় মিছিল করেন, ফেসবুক - টুইটার প্রভৃতিতে লিখে লিখে বন্যা বইয়ে দেন। কিন্তু এই সব করে কি কোনও ভাবে ফ্যাসিবাদ কে রোখা যায় ? না, যায় না।
ফ্যাসিবাদীরা এটা জেনে আরও বেপরোয়া হয়ে যায় যে সরকার যেমন তাদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না, তেমনি প্রতিবাদী প্রগতিশীল শক্তিগুলি শুধুমাত্র গান্ধীবাদী আন্দোলনের মধ্যে নিজেদের প্রতিবাদ সীমিত রেখে তাদের খোলা মাঠে গোল মারার সুযোগ করে দেবে। তাই তারা বুক ফুলিয়ে একের পর এক খুন করে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর অকথ্য অত্যাচার করে, এবং মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে।
গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিগুলির প্রয়োজন আজ তীব্র গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা ফ্যাসিবাদী মৌলবাদের বিরুদ্ধে। এই প্রতিরোধ শুধু মাত্র খেটে খাওয়া মানুষদের রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে, এবং রাজনৈতিক ভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে এই লড়াইয়ে সামিল করিয়েই একমাত্র সম্ভব ফ্যাসিবাদ কে সন্ত্রাসিত করা। বাংলাদেশের যেখানেই ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা হানা দেওয়ার কথা ভাববে সেখানেই তাদের সামনে শ্রমিক - কৃষক - মেহনতি মানুষের জঙ্গি প্রতিরোধ দেখা দেবে, ইঁটের বদলে পাটকেল খাওয়ার ভয়ে ফ্যাসিস্টদের নিজেদের গুটিয়ে নিতে হবে, কারণ জন প্রতিরোধ কে কি করে ভাঙ্গতে হয় তা ফ্যাসিস্টদের মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব স্থিত বাবারাও জানে না।
বাংলাদেশের সরকারের কাছে বিচার ভিক্ষা করা এক অপরাধ। কারণ, খুনির কাছে কখনো খুনের ন্যায় বিচার চাইতে নেই। তাই আমাদের বাংলাদেশী বন্ধুরা, যারা আজ বিজ্ঞান, যুক্তি, প্রগতির কথা বলছেন তাঁদের আজ ঠিক করতে হবে যে তাঁরা কি শুধুই কথায় বাঘ মারার সংস্কারী চিন্তাভাবনা নিয়ে মৌলবাদী ফ্যাসিস্টদের সাথে ফেসবুকে তর্ক - গালাগাল করে জীবন কাটাবেন, না কি কঠিন বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণ করে সমস্যার মূলটা নিকেশ করার দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামে অংশ নেবেন। সমাজের আমূল রূপান্তরণ না হলে সমস্ত মৌলিক সমস্যাগুলির মতন ধর্মীয় মৌলবাদ ও ফ্যাসিবাদের সমস্যার সমাধান হবে না। এই সত্যটি আজ বিশেষ করে উপলব্ধি করতে হবে বাংলাদেশের নবীন প্রগতিশীল সমাজ কে। তাঁদের মনে রাখতে হবে যে তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নবীন প্রজন্মের ভবিষ্যত। তাঁরা যদি গাফিলতি করেন তাহলে ইতিহাস তাঁদের ক্ষমা করবে না।
তাই আজ দেখা যায় ভারতের পশ্চিম বাংলায়, আর বাংলাদেশের জেলায় জেলায় মাদ্রাসা শিক্ষার নামে বাঙালি শিশুদের দেওয়া হচ্ছে আরবিতে তালিম। এই আরবি শিক্ষা এই গরিব মানুষের সন্তানদের কর্মসংস্থানে বা ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনও সাহায্য করবে না। যেমন বিজেপি - আরএসএস কতৃক ভারতীয়দের সংস্কৃত শিক্ষার জিগির তোলা হয়, তেমনি জামাতিদের প্রশ্রয়ে বেড়ে চলে আরবি শেখার চল। এর ফলে ধীরে ধীরে বাঙালি মুসলমান তাঁর নিজের সংস্কৃতি ও বৈশিষ্টগুলি আরবীয় সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদের কাছে বিসর্জন দিয়ে আরবের জনজাতিগুলির একজন হিসেবে নিজেকে গণ্য করতে থাকে। বাংলাদেশের আওয়ামী লিগ বা জাতীয় পার্টি এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত। এদের যৌথ মদতেই ভারত ও বাংলাদেশে মার্কিণ পুঁজির এক চেটিয়া শোষণ শাসনের ধারা বজায় রাখতে ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তিগুলি আজ পথে নেমেছে।
বাংলাদেশের যুক্তিবাদী নাস্তিকদের আন্দোলন একটি মধ্যবিত্ত সুলভ আন্দোলন যা সমাজের আর্থ সামাজিক পরিপ্রেক্ষিত বিচার না করেই ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে চায়। তাঁরা এইটা বিশ্বাস করে না যে ধর্ম সহ সমাজের সমস্ত উপরি কাঠামো আসলে অর্থনীতির ভিতের উপর দাঁড়িয়ে। যতদিন অর্থনৈতিক ভিত বদলাবে না তত দিন মানুষের মন থেকে পুরানো চিন্তা, কু সংস্কার কে শেষ করা যাবে না। তাই তাঁদের আন্দোলন সমাজ বদলাবার সংগ্রামের থেকে বিছিন্ন হয়ে রয়েছে। তবুও তাঁরা একটি প্রগতিশীল শক্তি, যাদের আজ বেশি করে সমাজের মূলটা বদলাবার সংগ্রামের সাথে নিজেদের যুক্ত করতে হবে।
কি ভাবে লড়াই করা যাবে মৌলবাদের সাথে ? কি ভাবে পরাস্ত করা যাবে ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলিকে? আমরা দেখেছি যে ভারত - পাকিস্তান - বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি মৌলবাদী ফ্যাসিস্টদের আক্রমণের বিরোধিতা করে মোমবাতি হাতে রাস্তায় মিছিল করেন, ফেসবুক - টুইটার প্রভৃতিতে লিখে লিখে বন্যা বইয়ে দেন। কিন্তু এই সব করে কি কোনও ভাবে ফ্যাসিবাদ কে রোখা যায় ? না, যায় না।
ফ্যাসিবাদীরা এটা জেনে আরও বেপরোয়া হয়ে যায় যে সরকার যেমন তাদের বিরুদ্ধে কোনও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না, তেমনি প্রতিবাদী প্রগতিশীল শক্তিগুলি শুধুমাত্র গান্ধীবাদী আন্দোলনের মধ্যে নিজেদের প্রতিবাদ সীমিত রেখে তাদের খোলা মাঠে গোল মারার সুযোগ করে দেবে। তাই তারা বুক ফুলিয়ে একের পর এক খুন করে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর অকথ্য অত্যাচার করে, এবং মানুষের স্বাধীনতা হরণ করে।
গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিগুলির প্রয়োজন আজ তীব্র গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা ফ্যাসিবাদী মৌলবাদের বিরুদ্ধে। এই প্রতিরোধ শুধু মাত্র খেটে খাওয়া মানুষদের রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে, এবং রাজনৈতিক ভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে এই লড়াইয়ে সামিল করিয়েই একমাত্র সম্ভব ফ্যাসিবাদ কে সন্ত্রাসিত করা। বাংলাদেশের যেখানেই ধর্মীয় সন্ত্রাসীরা হানা দেওয়ার কথা ভাববে সেখানেই তাদের সামনে শ্রমিক - কৃষক - মেহনতি মানুষের জঙ্গি প্রতিরোধ দেখা দেবে, ইঁটের বদলে পাটকেল খাওয়ার ভয়ে ফ্যাসিস্টদের নিজেদের গুটিয়ে নিতে হবে, কারণ জন প্রতিরোধ কে কি করে ভাঙ্গতে হয় তা ফ্যাসিস্টদের মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব স্থিত বাবারাও জানে না।
বাংলাদেশের সরকারের কাছে বিচার ভিক্ষা করা এক অপরাধ। কারণ, খুনির কাছে কখনো খুনের ন্যায় বিচার চাইতে নেই। তাই আমাদের বাংলাদেশী বন্ধুরা, যারা আজ বিজ্ঞান, যুক্তি, প্রগতির কথা বলছেন তাঁদের আজ ঠিক করতে হবে যে তাঁরা কি শুধুই কথায় বাঘ মারার সংস্কারী চিন্তাভাবনা নিয়ে মৌলবাদী ফ্যাসিস্টদের সাথে ফেসবুকে তর্ক - গালাগাল করে জীবন কাটাবেন, না কি কঠিন বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণ করে সমস্যার মূলটা নিকেশ করার দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামে অংশ নেবেন। সমাজের আমূল রূপান্তরণ না হলে সমস্ত মৌলিক সমস্যাগুলির মতন ধর্মীয় মৌলবাদ ও ফ্যাসিবাদের সমস্যার সমাধান হবে না। এই সত্যটি আজ বিশেষ করে উপলব্ধি করতে হবে বাংলাদেশের নবীন প্রগতিশীল সমাজ কে। তাঁদের মনে রাখতে হবে যে তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নবীন প্রজন্মের ভবিষ্যত। তাঁরা যদি গাফিলতি করেন তাহলে ইতিহাস তাঁদের ক্ষমা করবে না।