#WorkersStrikeBack ২ সেপ্টেম্বরের দেশব্যাপী ধর্মঘটে সামিল হলেন ১৮ কোটি শ্রমজীবী জনতা

শনিবার, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৬ 0 Comments A+ a-

সারা দেশ জুড়ে ১৮ কোটি শ্রমজীবি মানুষ ও কর্মচারী বৃন্দ ধর্মঘটে যোগ দিলেন ২রা সেপ্টেম্বর

নরেন্দ্র মোদী যখন ভোটে জিতেছিল ২০১৪ সালে, তখন সারা দেশ ও বিদেশ জুড়ে কর্পোরেট সংবাদ মাধ্যম ব্যাপক প্রচার করেছিল যে ভারতবর্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আশা ও ভরসার প্রতিফলন নাকি ভোটের বাক্সে হয়েছে আর তার ফলে ক্ষমতায় এসেছে নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪ সালে ৮১ কোটি ৪৫ লক্ষ ভোটারের মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ৫৪ কোটি ৬৬ লক্ষ মানুষ এবং এই সংখ্যার ৩১ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ ১৬ কোটি ৭৬ লক্ষ মানুষ মোদী কে (বিজেপি কে) ভোট দেন। সেই ১৬ কোটি ৭৬ লক্ষ মানুষের ভোটে জিতে মোদী শুরু করে কর্পোরেট পদ লেহন। দেশ জুড়ে বিলগ্নিকরণ আর উদারীকরণের মনমোহন সিংহের তৈরি ব্যবস্থা কে আরও বলিষ্ঠ করে নরেন্দ্র মোদী। শ্রমিক বিরোধী, কৃষক বিরোধী এবং জনতা বিরোধী একের পর এক নীতি প্রয়োগ করা শুরু করে আরএসএস এর নেতৃত্বে চলা ভারত সরকার। আর এই সরকারের বিরুদ্ধে, এই ১৬ কোটির সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে ১৮ কোটি শ্রমজীবি মানুষ ও কর্মচারী বৃন্দ ধর্মঘটে যোগ দিলেন ২রা সেপ্টেম্বর। নরেন্দ্র মোদী সরকারের শ্রমিক মারা নীতির বিরুদ্ধে, ব্যাপক হারে দেশের সম্পদ বিদেশী পুঁজির কাছে লগ্নির নামে বিক্রি করে দেওয়ার বিরুদ্ধে, কর্পোরেট ফ্যাসিবাদ কে প্রশ্রয় দিয়ে শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে, ব্যাপক হারে বেড়ে চলা ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ করে ব্যাপক শোষণ করার বিরুদ্ধে এবং বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাযুজ্য রেখে সমগ্র দেশে শ্রমজীবি জনতার ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি করার দাবিতে এই ধর্মঘট ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ডাকে অনুষ্ঠিত হয় গত বছর এই একই দিনে এই দাবিগুলিতে ধর্মঘট হয়েছিল এবং তৎকালীন ধর্মঘটের সময়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কথা দিয়েছিল যে শ্রমিকদের দাবি খতিয়ে দেখা হবে। অথচ এক বছর ঘুরেও শ্রমিকেরা সেই একই তিমিরে রইলেন, মাঝখান থেকে মোদী সরকার শ্রমিক অধিকার হননের পথ থেকে না সরে বিপুল স্পর্ধা নিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিকে খারিজ করে। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সম্মিলিত আন্দোলন শুরু হতেই মোদীর চামচারা আলোচনার কথা বলে, আর সেই আলোচনার নামে নাটক চলে গোটা আগস্ট মাস জুড়ে।শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে শ্রমিকদের ধর্মঘটের পথে যেতে হয়। আর শাসকশ্রেণীর যাবতীয় চোখ রাঙানি আর ধমকানো কে অগ্রাহ্য করে, চরম উপেক্ষা করে সারা দেশের শ্রমজীবি মানুষ এই ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। এই একদিনে ভারতের কর্পোরেট রাঘব বোয়ালরা একদিনে ১৮ লক্ষ কোটি টাকার লোকসান দেখলো শ্রমিকদের সম্মিলিত ও সংহতিমূলক সংগ্রামের ফলে।  

  নামক হ্যাশট্যাগ দিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর এই ঐতিহাসিক সংগ্রামের খবর আজ প্রতিটি শহরের শ্রমিকদের কাছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কর্মচারীদের কাছে পৌঁছে গেছে, দেশের প্রতিটা কোনের সংগ্রামী শ্রমিকদের লড়াইয়ের খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং দেশ বিদেশের কোনে কোনে পৌঁছে গেছে। এই লড়াইয়ে ব্রাক্ষণত্ববাদী আরএসএস এর শ্রমিক সংগঠন বিএমএস গত বারের মতন এবারও বেইমানি করে শ্রমিক আন্দোলনের পিঠে ছুরি মারার জন্যে ধর্মঘট ভাঙ্গার কাজে নেমেছে। দিল্লি শহরের পরিবহন ও অন্যান্য শিল্পে মালিকশ্রেণীর দালাল হিসেবে কাজ করা বিএমএস সংগঠনের নেতাদের উপর ভর করে ২রা সেপ্টেম্বর অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও নরেন্দ্র মোদীর সরকার যৌথ ভাবে শ্রমিক ধর্মঘটের বিরোধিতা করতে নামে। বিএমএস সরকারি ভাবে একটি প্রতিপত্তিশালী ট্রেড ইউনিয়ন হয় সত্বেও এই ধর্মঘট কে রুখতে বিশেষ কিছু করে উঠতে অপারগ হয় কারণ ব্যাপক হারে শ্রমিকদের, এমনকি বিএমএস সমর্থক শ্রমিকদের মধ্যেও এই ধর্মঘটের প্রতি বিপুল সমর্থন ছিল। যে সমর্থনের বাতাস কে হিন্দুত্ববাদী ঘৃণার বাতাস দিয়ে দাবিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সংঘ পরিবারের তথাকথিত শ্রমিক নেতা সেজে থাকা বৃহৎ বিদেশী একচেটিয়া পুঁজি ও দেশী মুৎসুদ্দিদের পা চাটা শ্বাপদের দল। 

কলকাতায় মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজের শ্রমিক বিরোধী ভাবমূর্তি ও কর্পোরেট বান্ধব ছবি রক্ষা করার স্বার্থে ধর্মঘট ভাঙতে পথে নামিয়েছিল নিজের গুন্ডা ও পুলিশ বাহিনী। ব্যারাকপুর, দুর্গাপুর, আসানসোল, সহ বিভিন্ন প্রান্তে শাসক দলের আক্রমণের মুখে পড়েছেন আন্দোলনরত শ্রমিকেরা। শ্রমিক আন্দোলনে দীর্ঘদিন ধরে মালিক শ্রেণীর দালালি করে বিধায়ক হওয়া ব্রাক্ষণত্ববাদী শোভনদেব চাটুজ্যে খোলাখুলি শ্রমিক মারতে রাস্তায় নামিয়েছিল নিজের নেড়িদের। কলকাতা শহরে ও শহরতলীতে শ্রমিকদের ও কর্মচারীদের উপর জবরদস্তি করে ধর্মঘট ভাঙ্গার খেলায় নেমে মমতা দেশের কর্পোরেট মিডিয়ার ভীষণ পছন্দের নেত্রী হয়ে উঠেছে। পথে পথে পুলিশ কে ঢাল করে তৃণমূলী গুন্ডারা যে ভাবে ধর্মঘটী শ্রমিকদের আর কর্মচারীদের আক্রমণ করেছে, দলীয় লোকেদের আর পুলিশকে দিয়ে বাস আর ট্রাম চালিয়ে যে ভাবে মমতা প্রচার মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে কর্পোরেট বান্ধব সরকারের নেত্রী হিসেবে উঠে আসার চেষ্টা করেছে তা অতি ঘৃণ্য দক্ষিণপন্থী দেউলিয়াপনার একটা নিদর্শন।  

২রা সেপ্টেম্বরের ধর্মঘটের সবচেয়ে ভালো প্রভাব পড়েছিল দক্ষিণের অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক ও কেরলে, উত্তরের নয়ডা ও হরিয়ানার শিল্পাঞ্চলে  এবং অন্যান্য জায়গায়।শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ ও সংহতিমূলক সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয় মোদীর মনিব আম্বানি-আদানি সহ বিদেশী বৃহৎ পুঁজির মালিকেরা। তাদের নির্দেশে সমস্ত কর্পোরেট সংবাদ মাধ্যম, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে, হয় বারবার প্রচার করেছে যে  ধর্মঘট ব্যর্থ, না হয় একেবারে ব্ল্যাকআউট করে দিয়েছিল ধর্মঘটের নানা প্রান্তের লড়াইয়ের খবর, নানা প্রান্তের বিজয়ের খবর । এই প্রচারের বিশেষ নির্দেশ এসেছিল হোয়াইট হাউস থেকে, ওয়াল স্ট্রিট থেকে, যাতে ভারতের কর্পোরেট প্রেমী উচ্চ জাতির মধ্যবিত্তদের বোঝানো যায় যে শ্রমিক ধর্মঘট ব্যর্থ হয়েছে এবং এর ফলে গরিব মানুষের মনেও একটা হতাশা সৃষ্টি করা যায়।  

কর্পোরেট মিডিয়ার ব্ল্যাকআউট সত্বেও ২রা সেপ্টেম্বরের ধর্মঘটের প্রভাব সারা দেশে কম বেশি পড়েছে এবং কর্পোরেট দুনিয়ার ব্যাপক আর্থিক লোকসান হয়েছে। তবুও এ সম্ভাবনা ক্ষীণ যে মোদী সরকার এই বাৎসরিক প্রতীকী সংগ্রামে ভীত হয়ে শ্রমিক বিরোধী নীতি প্রণয়ন করা বন্ধ করবে। কারণ মোদী সরকার ভারতের বনিয়া ও কর্পোরেট সংস্থাগুলোর স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশী ও বিদেশী কর্পোরেটদের সৌজন্যে পাওয়া প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা খরচা করে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেছে, এবং ২০১৯ এর মধ্যেই এই সরকার যেনতেন প্রকারে দেশের সম্পদ বিদেশী বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজির কাছে বিক্রি করতে বদ্ধপরিকর। আর এই দেশ বিক্রি করার বিরুদ্ধে গর্জে ওঠা শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি জনগণ কে দমন করতে মোদীর সাথে হাত মিলিয়ে চলতে পিছপা হবে না মমতা-জয়াললিথা-কেজরিওয়াল বা কংগ্রেস। এদের রং আর ঢং আলাদা হলেও খোলের ভিতরে শাঁসটা একই। এই সমস্ত শাসক দলের টিকিটা কোনো না কোনো ভাবে বাঁধা আছে ওয়াল স্ট্রিটের বড় বড় দফতরে। তাই যেমন মমতা মুখে শ্রমিক-কৃষক দরদ দেখাতে পারে, সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম নিয়ে আবেগপ্রবণ ভাষণ দিতে পারে, মুখে বেসরকারিকরণের বিরোধিতা করতে পারে, তেমনি কাজে সে চিরকাল বৃহৎ বিদেশী একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে উদারীকরণ আর বিলগ্নিকরণের বিরোধিতা করতে পারে না বরং আড়াল থেকে সমর্থন জুগিয়ে চলে। ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত মমতার দল কংগ্রেসের মন্ত্রিসভায় ছিল আর বামপন্থী স্লোগানের আড়ালে নিজেদের লুকিয়ে রাখলেও, তলে তলে মনমোহন সরকারের সকল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে সমর্থন করে এসেছিল মমতা বন্দোপাধ্যায়। তেমনি কেজরিওয়াল থেকে জয়াললিথা, মুখে মোদী সরকারের কর্পোরেট প্রীতির বিরোধিতা করলেও আদতে সেই নীতির প্রণয়ন করে চলেছে নিজেদের রাজত্বে।        

নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির প্রধান শত্রু হলো শ্রমিক শ্রেণী। এই আর্থিক নীতির প্রবক্তারা চায় শ্রমিক শ্রেণীর পিঠের মাজা ভেঙে দিয়ে তাঁদের চরম শোষণ করে লাভের পাহাড় উঁচু করতে। তাই শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ হওয়া বা প্রতিবাদ, প্রতিরোধ সহ যে কোনো সংগ্রামে সামিল হওয়ার থেকে বিরত করতে শাসকশ্রেণীর কলমপেশা দালালেরা একের পর এক ঘৃণ্য শ্রমিক বিরোধী পরিকল্পনা করে চলেছে। ভারতবর্ষে আজকের দিনে শ্রম আইন সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কালের চেয়েও বেশি নির্লজ্জ্ব ভাবে মালিকশ্রেণীর, বৃহৎ বিদেশী একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থ রক্ষা করছে। ঔপনিবেশিক কালেও শ্রমিকদের যে ন্যূনতম অধিকারগুলি ছিল তা আজ মোদী সরকার কেড়ে নিচ্ছে।আর হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ কে আজ কর্পোরেট সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় বলিষ্ঠ ভাবে প্রসারিত করা হচ্ছে সারা দেশে যাতে শ্রমিক শ্রেণীর আর কৃষকের সংগ্রামী ঐক্যে ভাঙ্গন ধরানো যায় এবং এর মাধ্যমে এক নগ্ন দাস-মালিক ব্যবস্থার পত্তন করানো যায়।  সারা দেশে আজ হিন্দুত্ববাদ আর ব্রাক্ষণত্ববাদী ফ্যাসিবাদের মূল লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে খেটে খাওয়া জনগণ কে, বিশেষ করে দলিত ও আদিবাসী জনগণকে, যারা দেশের খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, বিদেশী একচেটিয়া পুঁজির মালিকানাধীন বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার থেকে বিরত করে ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গায় জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে।হিন্দুত্ববাদীদের নব উথ্বানের কারণ ছিল নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির আগমন আর এই ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনকে রুখতে আজ বেশি করে দরকার হলো ২রা সেপ্টেম্বরের ধর্মঘটের মতন শ্রমিক শ্রেণীর সংঘবদ্ধ এবং বিভিন্ন শিল্প জুড়ে এক অভিনব সংহতিমূলক লড়াইয়ের। পরিবহন শ্রমিকের লড়াইতে সাথে থাকতে হবে ইস্পাত শিল্পের শ্রমিকদের, ক্ষেত মজুরদের সংগ্রামে রুখে দাঁড়াতে হবে কয়লাখনির শ্রমিকদের, ঠিক শ্রমিকদের আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে স্থায়ী শ্রমিকদের। এই সংহতির মধ্যে দিয়ে গড়ে তোলা সম্ভব শ্রমিক শ্রেণীর ব্যাপক ঐক্য, লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই শ্রমিক শ্রেণীর চেতনা তীক্ষ হয় আর জাগ্রত হয় শ্রেণী ঐক্যের অনুভূতি।

মোদী সরকারের ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন কে রুখতে তাই আজ সারা দেশের শ্রমিক শ্রেণী কে এগিয়ে আসতে হবে এক ব্যাপক গণতান্ত্রিক বিপ্লবী সংগ্রামে আর এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব সিপিএম মার্কা সুবিধাবাদের পাঁকে ডোবা শাসক শ্রেণীর লাল চোলা পড়া দালালদের হাতে থাকলে শ্রমিক শ্রেণীর কোনো লাভ হবে না। তাই প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল বিপ্লবী শক্তিকে আজ এগিয়ে এসে এই লড়াই কে গড়ে তুলতে হবে, টাকা আনা পাইয়ের জন্যে নয়, ভোটে সিট্ বৃদ্ধির জন্যে নয়, বরং গোটা দেশ জুড়ে শ্রমিক শ্রেণীর ইজ্জ্বত প্রতিষ্ঠার জন্যে, শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্যে, শ্রমিক আর কৃষকের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্যে। এই লড়াই যদি আজ সমগ্র দেশে গড়ে উঠতে না পারে, এই লড়াইতে যদি দলিত-আদিবাসী-সংখ্যালঘু সমাজ-নিপীড়িত জনজাতির মানুষ কে এক সুঁতোয় না বাঁধা যায়, তাহলে ফ্যাসিবাদ কে পরাস্ত করার চিন্তা শুধু কেতাবি কথা হিসেবে থেকে যাবে আর দেশ জুড়ে শ্রমিক শ্রেণীর উপর আক্রমণ থামবে না। পাঠক মনে রাখবেন, শ্রমিক শ্রেণী হলো বিপ্লবের নেতা শ্রেণী এবং অন্য সমস্ত শ্রেণী কে শোষণের থেকে মুক্ত না করে সে নিজেকে যেমন মুক্ত করতে পারে না, ঠিক তেমনি তাঁর উপর নেমে আসা আক্রমণ কে যদি প্রতিহত না করা যায়, তাহলে শ্রমিকের পরে সেই আক্রমণ তীব্র হবে কৃষকদের উপর, তার পরে আরও তীব্র হবে আপনাদের মতন বুদ্ধিজীবী আর ছাত্র-যুবদের উপর।  আর এই কথা লেখার জন্যে আমাকে কোনো ভাবেই ভবিষ্যৎ বাণী করতে হচ্ছে না, কারণ গত ২৬ বছর ধরে যে হারে নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির দৌলতে সারা দেশ জুড়ে শ্রমিক শ্রেণীর উপর আক্রমণ হয়েছে, প্রতিরোধের অভাবে প্রথমে কৃষকদের উপর এবং পরে ছাত্র ও যুবদের উপর তারই পুনরাবৃত্তি আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে। আজ সময় এসেছে জেগে ওঠার, গর্জে ওঠার, দাসত্বের বাঁধন ভাঙ্গার লড়াই করার - আর এই লড়াইতে আঁতলামি নয়, চাই হিম্মত আর স্পর্ধা। লড়াই করার হিম্মত আর বিজয় অর্জন করা পর্যন্ত যুদ্ধ ক্ষেত্রে টিকে থাকার স্পর্ধা। কারণ শেষ বিচারে সত্যিই শ্রমিক শ্রেণীর আজকের দিনে হারাবার আর কিছু নেই, জেতার জন্যে আছে সারা বিশ্ব।       

     

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে