মাদার টেরেসার উপর ব্রাক্ষণত্ববাদী শক্তির আক্রমণ সংঘ পরিবারের সংখ্যালঘুদের উপর ঘৃণার প্রতিফলন

রবিবার, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৬ 0 Comments A+ a-


মাদার টেরেসা শেষ পর্যন্ত ভ্যাটিকান শহরে সন্ত উপাধিতে ভূষিত হলেন মৃত্যুর পরে চমৎকার করে দুই জন মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য। সেন্ট টেরেসা অফ ক্যালকাটা হলেন মাদার টেরেসা, মৃত্যুর ১৯ বছর পরে। সুষমা স্বরাজ মোদী সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভ্যাটিকান শহরে যেমন উপস্থিত ঠিক তেমনি উপস্থিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নিজের গাইয়ে নাচিয়ে সাংসদদের প্রতিনিধি দল নিয়ে। নানা ভড়ং বাজির শেষে পোপ ফ্রান্সিস মাদার কে সন্ত ঘোষণা করেন এবং সাথে সাথে কলকাতা সহ ভারতবর্ষ জুড়ে শুরু হয় উচ্ছাস আর কুৎসার বন্যা, আনন্দ আর ঘৃণার বর্ষা।

আগ্নেস ওরফে টেরেসা, সিস্টার হিসেবে সেই ১৯৩৭ সালের আশে পাশে কলকাতায় আসেন এবং লরেটো কনভেন্টে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত হন। তারপর তিনি ক্যাথলিক চার্চের নির্দেশে কলকাতার গৃহহীন, হতদরিদ্র, কুষ্ঠ রোগী, অনাথ শিশুদের সেবার কাজে নিয়োজিত হন এবং প্রতিষ্ঠা করেন মিশনারিজ অফ চ্যারিটি। নিজের কর্মের ক্ষেত্রে টেরেসা চিরকাল ধর্মকে প্রাধান্য দিয়েছেন, কিন্তু ধার্মিক মৌলবাদের প্রচার করেননি, হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকল ধর্মের, সকল জাতের মানুষের সমানভাবে সেবা করেছেন। টেরেসা ভাববাদে বিশ্বাসী ছিলেন, বিজ্ঞানের বিশ্লেষণ তিনি ধর্মীয় গোঁড়ামির থেকে করতেন, ডাক্তারি চিকিৎসার থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি প্রার্থনা ও আশীর্বাদের মাধ্যমে অলৌকিক উপায়ে রোগ নিরাময়ের প্রথায় বিশ্বাস করতেন। টেরেসার চিকিৎসার তত্ব ছিল যন্ত্রণার তত্ব, যন্ত্রণাকে, বেদনাকে আপন করে নেওয়ার তত্ব। যীশু খ্রিষ্ট যেরকম ভাবে ক্রুশ বিদ্ধ হয়েও বেদনাতে ভীত হননি বরং বেদনায় মুক্তি খুঁজেছিলেন, বেদনাকে ঈশ্বরের কাছে যাওয়ার রাস্তা হিসেবে দেখেছিলেন, ঠিক তেমনি ক্যাথলিক বিশ্বাসে বিশ্বাসীদের কাছে যন্ত্রণা কে মুক্তি হিসেবে দেখাবার একটা ধারা বহুকাল ধরে ভীষণ তীব্র আছে, টেরেসার বিশ্বাসও তাতেই ছিল। বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি বাদ দিয়ে মুমূর্ষু রোগীদের টেরেসা ঈশ্বরের বাণী শোনাতেন, খ্রিষ্ট কে স্মরণ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে বলতেন। কারুর সঠিক চিকিৎসা টেরেসা করেননি ডাক্তার দিয়ে, কারণ তাতে তিনি ঈশ্বর বিরোধিতা দেখতেন।

মাদার টেরেসা গর্ভপাত বিরোধী ছিলেন, ১৯৭১ সালে খান সেনাদের আর রাজাকার বাহিনীর হাতে ধর্ষিত নারীদের তিনি গর্ভপাতের বিরুদ্ধে গিয়ে সন্তান জন্ম দিতে বলেন। উনি চিরকাল নারীমুক্তি আন্দোলনের বিরোধিতা করতেন, এবং নারীর শরীরের ওপর নারীর অধিকার মানতে অস্বীকার করতেন ক্যাথলিক শাস্ত্র অনুসারে। পূর্ব ইউরোপের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও টেরেসা ছিলেন পোপ জন পলের মতনই তীব্র কমিউনিস্ট বিরোধী। তিনি চরম ভাবে শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন, নকশালবাড়ি কৃষক আন্দোলন সহ যে কোনো কৃষক বিদ্রোহকে তিনি ভ্যাটিকানের হুকুম শুনে বিরোধিতা করে এসেছিলেন। তিনি নাস্তিকদের নরকবাসী ভাবতেন এবং নিজের পেশা অনুসারে তিনি গরিব মানুষের মুক্তির পথ হিসেবে খ্রিষ্ট ধর্মকে তুলে ধরতেন, অভাব, শোষণ আর অনাহারক্লিষ্ট জনতাকে টেরেসা প্রার্থনায় ডুবে থাকতে বলতেন। এইরূপ মত টেরেসা দিতেন কারণ তিনি নিজের ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এইসব অবৈজ্ঞানিক তত্বে বিশ্বাস করতেন। এর ফলেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আর তার দালালদের প্রিয় পাত্রী হিসেবে তিনি ২৯,০০০ মানুষকে যন্ত্রণাময় মৃত্যু দেওয়ার কারণে নোবেল পুরস্কার পান। ম্যাকনামারার মতন ব্যক্তিরা তাঁর নাম নোবেলের জন্যে সুপারিশ করে। আর্থিক অনুদান নেওয়ার ক্ষেত্রেও টেরেসা ও আশা রাম বা সত্য সাঁই বাবাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। চোর, ডাকাত, খুনি, স্মাগলার, সবার থেকে টেরেসাও কোটি কোটি টাকা নিয়ে দান করেছে ভ্যাটিকানে।

রোমান ক্যাথলিক চার্চ দীর্ঘ দুই শতাব্দী ধরে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজেকে পরিবর্তন করেছে, আর বিশ্ব পুঁজিবাদের বৃহৎ সমর্থনকারী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের থেকেই ধর্মে বিশ্বাস মানুষের কমতে থাকে আর প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মালম্বীদের বিভিন্ন ধারার উৎপত্তি ও শক্তিবৃদ্ধির কারণে ক্যাথলিক চার্চ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে আর জনগণের জীবনের উপর ক্যাথলিক চার্চের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হতে শুরু হয়। তার অনেক আগের থেকেই, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের থেকেই, বিশেষ করে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে সারা দুনিয়ার ভীত-সন্ত্রস্ত-দুর্বল সাম্রাজ্যবাদী শক্তিদের আধ্যাত্মিক রক্ষা কর্তা হিসেবে ক্যাথলিক চার্চ এশিয়া-আফ্রিকা-দক্ষিণ আমেরিকার পথে নামে। দেশে দেশে গরিব মানুষের মধ্যে দান খয়রাত ও সেবা দ্বারা সরকার বা শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও ঘৃণা কে বিলীন করে শোষিত মানুষদের বিপ্লব-বিদ্রোহ বিমুখ করার কাজ শুরু করে ভ্যাটিকান। সাধে তো কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তাহার লেখার শুরুতেই মার্কস আর এঙ্গেলস পোপ কে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেননি।

টেরেসার ধর্ম ও কুসংস্কার ভর্তি দৃষ্টিভঙ্গী সত্বেও তিনি যে ভাবে আর্তের সেবা করেছেন তা আমাদের ভদ্রলোকেরা পারেনি। টেরেসা মাদার হিসেবে জনতার কাছে চিহ্নিত হয়েছেন নিজের সেবার জন্যে, প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তার জন্যে নয়। আমাদের অবশ্যই তাঁর দুই ভাগ করে ভালো আর মন্দকে বস্তুনিষ্ঠ ভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। মাদার টেরেসা যে ভাবে ব্রাক্ষণত্ববাদী গোঁড়া হিন্দু সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন যে কুষ্ঠ রোগ ছোঁয়াচে নয়, পূর্ব জন্মের পাপ নয়, বরং একটি অসুখ যাতে চিকিৎসা সেবা আর ভালবাসার দরকার, তা কিন্তু অনেক নাম করা হিন্দু পন্ডিতেরা বা গুরুদেবেরা করেনি। মাদার টেরেসা যে ভাবে ১৩ জন সিস্টারদের নিয়ে পথে পথে ঘুরে গরিব মানুষের সেবা করেছেন, তাঁদের তুলে এনেছিলেন কালীঘাটের নির্মল হৃদয়ে, যে ভাবে তিনি গরিবদের স্বার্থে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছিলেন নিজে ঘুরে ঘুরে, তা তো কোনো কর্পোরেট গুরুদের করতে দেখা যায়না। যদিও গরিবের প্রতি প্রেম বা দরদ থেকে নয়, টেরেসা এ সব করতেন স্বর্গে নিজের স্থান পাকা করার জন্যে। কিন্তু যেটা তিনি আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গার থেকে করতেন তা অন্য কেউ করে উঠতে পারেনি। তিনি সেবা ধর্মে যে ভাবে বিনা বাছ বিচার করে সকল ধর্মের মানুষ কে সমান ভাবে দেখার কথা বলেছিলেন তা কোনো ধর্মগুরু আজ করে না। 

যারা আজ টেরেসার নামে কুৎসা করছে তারা কিন্তু টেরেসার প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাভাবনা, রোমান ক্যাথলিক চার্চের বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজির সাথে দহরম মহরম দেখে ক্ষেপে যায়নি। তারা ক্ষেপেছে কারণ টেরেসা নিচু জাতের হিন্দু ও দলিতদের খ্রিষ্ট ধর্মে ব্যাপটাইজ করেছেন। টেরেসা একটি ধার্মিক সংস্থার পক্ষ থেকে কাজ করতে এসেছিলেন এবং তাঁর কর্মকাণ্ড কখনোই ক্যাথলিক চার্চের গন্ডির বাইরে যেতে পারতো না। ধর্ম প্রচার করা ও ব্যাপটাইজ করা রোমান ক্যাথলিক চার্চের ইভাঞ্জেলিস্টদের প্রধান কাজ, টেরেসা ব্যতিক্রম ছিলেন না। আরএসএস পরিচালিত বনবাসী কল্যাণ নামক সংস্থাটিও নিত্য আদিবাসী জনগণ কে হিন্দু বানায়, তাও আবার অর্থের ভিত্তিতে দ্বিজ বা ব্রাক্ষণও হয় কেউ কেউ, যা হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে চরম ভেজাল কারবার। যাই হোক টেরেসা সব কিছুই চার্চের নির্দেশে করেছেন, রোমের নির্দেশে করেছেন, এবং তিনি এই সকল বুজরুকিতে এই জন্যে বিশ্বাস করতেন যে তিনি নিজে একজন ঘোর ক্যাথলিক ছিলেন, তাঁর গোঁড়া ধর্মবিশ্বাস তাঁর চেতনাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। আর এর ফলে সে কোনোদিন ধর্মের গন্ডির বাইরে চিন্তা করতে পারেনি। 


আজ যখন টেরেসার এই সেন্ট উপাধি প্রাপ্তিতে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের উল্লাসিত হওয়ার সত্যিই কোনো কারণ নেই, তেমনি টেরেসা কে খিস্তি খেউর করে অপমান করার অধিকারও কারুর নেই, বিশেষ করে তাদের যারা কোনোদিনই কোনো কুষ্ঠ রোগী কে ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখেননি, যাদের কাছে কুষ্ঠ রোগ পূর্ব জন্মের পাপ, যারা কুষ্ঠ রোগীদের বাড়ির থেকে তাড়িয়ে দেয়। উঁচু জাতের বনেদি বাঙালি ভদ্রলোকের কাছে কলকাতার রাস্তায় পড়ে থাকা ভিখারি আর অনাহারে মরা মানুষগুলো আসলে কীট পতঙ্গের চেয়ে বেশি নয়। ওই অর্ধ নগ্ন লোকগুলোর শরীর থেকে যদি রক্ত আর পুঁজ গড়ায় তাহলে কে আর নিজেকে অশুদ্ধ করে সেই ঘা নিরাময় করার প্রচেষ্টা করবে? টেরেসার সিস্টার বাহিনী কিন্তু সেই কাজ করেছিল। 


গোটা দেশজুড়ে যে ভাবে হিন্দুত্ববাদী আরএসএস এর চ্যালারা, মোদীর চ্যালারা, আজ মাদার টেরেসা কে গালাগাল করছে তাতে স্পষ্ট হচ্ছে এই ব্রাক্ষণত্ববাদী শ্বাপদদের দলের লোকেরা কত বেশি করে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, কত ঘৃণা এদের মধ্যে ভরা হয়েছে ভিন্ন ধর্ম ও জাতির লোকেদের সম্বন্ধে, কত ঘৃণার চোখে এরা সমস্ত নারীদের দেখে। টেরেসার নামে ঘৃণ্য আর অশ্লীল কটূক্তি পড়ে যে কেউই বুঝতে পারবেন যে কি পরিমানের বিষ আজ আরএসএস এই দেশে ঢালছে, কত বিষাক্ত হয়ে গেছে আপনার প্রতিবেশী ওই বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার যুবকের হৃদয়টা। কারণ ব্রাক্ষণত্ববাদ রন্ধে রন্ধে ছুটে চলেছে আর ব্রাক্ষণত্ববাদ সমাজে সকলকে নিজের থেকে নিচে থাকা স্তরের মানুষদের ঘৃণা করবে শেখায়, হত্যা করতে, ধর্ষণ করতে, শোষণ করতে শেখায়। মাদার টেরেসার নামে ব্রাক্ষণত্ববাদীরা ক্ষেপে উঠছে আর তাঁকে ধর্ম পরিবর্তনের সেপাই বলছে কারণ মাদার টেরেসা বা অন্যান্য খ্রিষ্টান নানেরা ভারতবর্ষে মূলত দলিত ও আদিবাসীদের মধ্যে কাজ করেন ও এদের হিন্দু ধর্মের প্রভাব থেকে বের করে আনেন, জাতি শোষণের থেকে অল্পের জন্যে হলেও মুক্তি দেওয়ান। এর ফলে একদিকে যেমন আরএসএসের মতন সন্ত্রাসবাদী হিন্দু সংগঠনের দাঙ্গার স্বার্থে গড়ে তোলা ঐক্যবদ্ধ হিন্দু সমাজের তত্ব বিশ বাঁও জলে পড়ে যায়, ঠিক তেমনি দলিত, আদিবাসী ও নিচু জাতির হিন্দুরা ব্রাক্ষণত্ববাদের ভিত্তিতে সৃষ্টি করা জাতি ব্যবস্থার দমন পীড়ন মানতে নারাজ হন এবং মাথা তুলে দাঁড়িয়ে সমান অধিকার দাবি করেন। যা আবার হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর পক্ষে ভয়াবহ। তাই তো বজরং দলের লোকেরা যখন উড়িষ্যার কন্ধমলে খ্রিষ্টান নানেদের ধর্ষণ করেছিল তখন তারা 'ভারত মাতার জয়' বলে স্লোগান দিয়ে প্রমাণ করেছিল যে নানেদের এরা কি পরিমান ঘৃণা করে এবং খ্রিষ্টানদের এরা ভারতবর্ষের বাইরের লোক হিসেবে গণ্য করে। 

মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকে আর ওবামার কাছে ধমক খাওয়ার পরেও সংঘ পরিবারের পক্ষ থেকে, বজরং দল কে ব্যবহার করে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য। একের পর এক গির্জায় আক্রমণ করা হয়েছে, গির্জার পাদ্রী কে মারা হয়েছে, অল্টার এ হনুমান বসানো হয়েছে। এই সব কিছু হয়েছে দেশের জনগণের অন্তরে সুপ্ত ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণা কে খ্রিষ্ট ধর্মের দিকে মুড়িয়ে।

সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে দেখবেন টেরেসা কে নিয়ে সেই সব সামন্ততান্ত্রিক ঔরসে জন্মানো লোকেদের কটু কথা যারা নিজের জীবনে টেরেসার কর্মকান্ডের, এমনকি সবচেয়ে মামুলি কর্মকান্ডেরও নখের যোগ্য হবে না। আর এই সব পড়ে হয়তো যে কোনো শুভ চেতনা সম্পন্ন মানুষ হয়তো ক্যাথলিক চার্চের পাদ্রীর মতন বলবেন যে পরম পিতা ঈশ্বর এদের ক্ষমা করুন। কিন্তু ক্ষমার চেয়ে বেশি আজ এদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, এদের শিরায় শিরায় ছুটে চলা ব্রাক্ষণত্ববাদের বিষ যেন আপনাকে স্পর্শ না করতে পারে, আরো মানুষকে যেন কোন ভাবেই বুদ্ধিভ্রষ্ট না করতে পারে তার জন্যে লড়তে হবে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে।
ভারতবর্ষে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ চালাবার জন্যে, ইভাঞ্জেলিস্ট কাজকর্মের জন্যে অনেক বিদেশী সংস্থা টাকা দেয়, কিন্তু তার চেয়ে বেশি বিদেশী লগ্নি বকলমে করা হয় মোদী কে ভোটে জেতাতে, মোদীর ব্যবসায়িক প্রকল্পে, মোদীর দ্বারা উদার করে দেওয়া প্রতিরক্ষা, রেল, বীমা, সহ অন্যান্য শিল্পে। সেই সময়ে বিদেশী পুঁজির বলে বলীয়ান হয়ে চলা কর্পোরেট সংস্থার থেকে বেতন নিয়ে যে সব পাকা ব্রাক্ষণত্ববাদী লোকেরা বারে বসে ব্ল্যাক ডগ খায় আর সপ্তাহান্তে পরিবারকে নিয়ে বিদেশী পুঁজিতে চলা কম্পানির মাল্টিপ্লেক্সে বিদেশী পুঁজির লগ্নিতে বানানো সিনেমা দেখে মার্কিন দেশের পুঁজিতে চলা কোম্পানির ঠান্ডা পানীয় গিলতে গিলতে, তখন তাদের হিন্দুত্বের উপর গর্ববোধ হয়তো শৌচালয়ে যায়। 


এই লড়াইতে যোগদান করার আগে আজ গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিকে আজ নিজেদের ও সংঘ পরিবারের লোকেদের মধ্যে মাদার টেরেসা নিয়ে একটা বিভেদ রেখা স্পষ্ট করতে হবে। আমরা যে কোনো মূল্যেই মাদার টেরেসার ধর্মীয় কুপমুণ্ডুকতা, কুসংস্কার, বুজরুকি, ও অবৈজ্ঞানিক প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাভাবনার নির্মম সমালোচনা করবো, আমরা নিশ্চয় দেখাবো যে কি ভাবে মিশনারিজ অফ চ্যারিটির মতন সংস্থাগুলো আসলে দেশের মানুষের মধ্যে শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও ঘৃণা কে ডান খয়রাতের মাধ্যমে নির্মূল করার চেষ্টা করে এই মানুষদের বিপ্লবী আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে আনে। কিন্তু আমরা কোনো ভাবেই সংঘ পরিবারের সংখ্যালঘু বিরোধী, খ্রিষ্টান ও ক্যাথলিক বিরোধী ফাঁদে পা দেব না, কোনো ভাবেই একজন নারীর নামে ঘৃণ্য অপবাদ শুনবো না। আমাদের কলমে, কিবোর্ডে, আর মুষ্টিবদ্ধ হাতের আঘাতে চূর্ণ চূর্ণ করতে হবে শাসক শ্রেণীর গেরুয়া বসন পরিহিত দালালদের।

প্রভু না হলে আমাদের ক্ষমা করবেন না যে।

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে