মানসের তৃণমূলে ডিগবাজি কংগ্রেসী রাজনীতির দেউলিয়াপনা কে আরও একবার প্রকাশ্যে আনলো

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬ 0 Comments A+ a-

অবশেষে মানসের উইকেট পড়ে গেল, অভিষেক বাঁড়ুজ্যের বলে কংগ্রেসের আরও এক বিধায়ক ডিগবাজি খেয়ে তৃণমূলের কোলে আশ্রয় নিল, আর এই বিধায়ক যে সে বিধায়ক নয়, একেবারে খাস মানস ভুঁইয়া, যে মানস ভূইঁয়া এই নির্বাচনের কিছুদিন আগে পর্যন্ত তৃণমূলের বিরুদ্ধে গর্জন করছিল, সূর্যের উদয়ের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের মসনদে গদির চামড়া খাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। নির্বাচনে জোট জেতেনি সেটা কোন ব্যাপারই নয়, যুদ্ধ - প্রেম ও সংসদীয় রাজনীতিতে কোনো কিছুই কিন্তু অন্যায্য নয়। ফলে আব্দুল মান্নান চেঁচামিচি করতে থাকলো আর তার দলের নেতা ও পুরানো খেলোয়াড় মানস ভূইঁয়া পিএসি সভাপতির দাবি ছেড়ে একেবারে মন্ত্রিসভায় সিঁধ কেটে ঢুকতে তৃণমূলে যোগ দিল। তার সাথে সাথে আবার পিতৃ দেবের দোহাই দিয়ে জানান দিল যে সে তার স্বর্গীয় পিতৃদেবের কথা শুনে কংগ্রেসী ঘরানার রাজনীতিতেই আছে, সে জাতীয় না হয়ে যদিও তৃণমূল কংগ্রেস। প্রকারন্তরে মানস ভূইঁয়া রাজ্যের মানুষ কে জানান দিল যে চাইলেই সে বিজেপির ঝুলিতেও যেতে পারতো তবুও ওই পিতৃদেব কে কথা দিয়ে রাখার জন্যে এখনই সেদিকে পা বাড়াচ্ছে না। হয়তো যদি বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় থাকতো তাহলে মানস বাবুর মনে হতো যে আসল কংগ্রেস এখন বিজেপিই বাকি সব ধাপ্পা !

কংগ্রেসী রাজনীতি করে পরিচিতি পাওয়া মানস ভূইঁয়া তারকাহীন প্রদেশ কংগ্রেসের পরিচিত নেতা ও প্রদেশ সভাপতির জৌলুসহীন সিংহাসনেও একবার বসেছিল। কংগ্রেসের ভাঙনে অনেকদিন তাকে টলাতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস বরং বহু বছর ধরে অধীর-দীপা গোষ্ঠীর সাথে মধুর সম্পর্ক রেখে কংগ্রেস অফিসে বসে মানস ভূইঁয়া তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের পর এক শব্দবাণ নিক্ষেপ করেছিল। কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি সবং এর মুকুটহীন বাদশা মানস ভূইঁয়া ওই সবং কলেজে তৃণমূলী ছাত্র পরিষদের হাতে কংগ্রেসী ছাত্র পরিষদ কর্মী খুন হওয়ার ঘটনা কে নিয়ে রাজ্য রাজনীতি গরম করে ফেলেছিল। মূলত সিপিএম কংগ্রেসের জোট সেই সময়ের থেকেই বাস্তবায়ন শুরু হয়। সিপিএমের যা ছিল গৌতম দেব, কংগ্রেসের তাই হলো মানস ভূইঁয়া। ফলে এই উইকেট তুলে নিয়ে যথার্থ ভাবে মমতার ভাইপো অধিকারী পরিবার কে টেক্কা দিল।

এই সমস্ত আয়ারাম ও গয়ারাম রাজনীতির মাঝে যে প্রশ্নটা চোখে আঙুল দিয়ে খুঁচিয়ে চলেছে তা হলো জনগণ কে কি মনে করে এই দক্ষিণপন্থী সহ সমগ্র সংসদীয় দলের কর্তা ব্যক্তিরা? যে দল বা সরকারের বিরুদ্ধে একটা লোক ভোট পেল, সেই লোকটা যদি ভোটে জিতে ভল্ট খেয়ে একেবারে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে সেই দল বা সরকারে যোগ দেয় তাহলে কি সেই কীর্তিকে জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা বলা উচিত নয়? আবার তৃণমূল যখন মানস ভূইঁয়া কে দলে সামিল করলো তখন কি সবং এর মাটিতে যে তৃণমূল কর্মীরা তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনে পরিশ্রম করেছিল তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করলো না? আবার মনে প্রশ্ন জাগে যে সবং বিধানসভা কেন্দ্রে নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন তৃণমূল মানস ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে যা যা প্রচার করেছিল তা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেরত নিয়েছে? আরো জানতে ইচ্ছে করে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই সেইদিন, পিএসি সভাপতির পদ নিয়ে দ্বন্ধ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত, যে সকল অভিযোগ মানস ভূঁইয়া করতো তাও কি সে ফেরত নিয়ে নিয়েছে?

সমস্যা হলো যে এত কথা জানতে চাইলেই তৃণমূলী চোখ লাল হয়ে যায়, কিন্তু উত্তরগুলো আজ ভীষণ দরকার। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে তৃণমূলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যে জনগণ অনেকগুলো মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে, সেই মানস ও সূর্যের পরিবর্তনের পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি শুনে বিরোধীদের ভোট দিয়েছিলেন, এই তথাকথিত গণতন্ত্রে যখন তাঁদেরই "মূল্যবান" ভোটে জয়ী প্রার্থী শিবির বদলে সেই দলে যোগ দেয় যে দলের বিরুদ্ধে লড়ে সে ভোটে জিতেছিল, তখন কি সেই জনগণের সাথে বেইমানি হয় না? যদি কেউ নীতিগত কারণে বা নিজ দলের সাথে মনমালিন্যর কারণে অন্য দলে যোগ দেয় তাহলে তার কি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির পদ থেকে পদত্যাগ করে আবার নির্বাচনে জিতে আসা নৈতিক ভাবে জরুরী নয়? ভারতবর্ষের রাজনীতিতে একটা সামন্ততান্ত্রিক প্রথা রয়েছে যার ফলে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের জনতার চাকর না ভেবে শাহেনশাহ ভাবে আর নিজের নির্বাচনী ক্ষেত্র কে খাস তালুক, তারা মনে করে লোকে তাদের দেখে ভোট দিয়েছে ফলে তারা কোন পার্টিতে যাবে বা কার সাথে হাত মেলাবে তার সাথে নির্বাচনী ফলাফলের কোন যোগ নেই। এই চিন্তাধারাই এই সকল সংসদীয় রাজনীতিবিদদের চরম ভাবে জন বিরোধী করে তোলে। মানস ভূঁইয়াও এর চেয়ে কম নয়।

বেশ কিছুদিন আগেই পশ্চিমবঙ্গে মমতার বিরোধী জন প্রতিনিধিদের ভাঙ্গিয়ে তৃণমূলের দখলে পৌরসভা আর জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে একেবারে গ্রাম পঞ্চায়েত আনার ঘৃণ্য রাজনীতি প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে বহু সমালোচনার ঝড় উঠেছিল এবং সেই সমালোচনাগুলোকে নির্দ্বিধায় মমতা পাশ কাটিয়ে শুভেন্দু আর অভিষেকের ঘাড়ে চেপে রাজ্য বিরোধী শূন্য করার খেলায় মেতে থাকায় স্পষ্ট বোঝা যায় যে একদলীয় স্বৈরতন্ত্র কে চরম ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় তৃণমূল। অথচ আজ যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ময়দানে ঠুনকো গণতন্ত্রের চুনকাম উঠে যাচ্ছে তখন কিন্তু সেই বিদ্বজন, বিক্ষুব্ধ গণতন্ত্র প্রেমীদের, শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবিদের আর পথে নেমে প্রতিবাদ করতে দেখি না, দেখি না কাউকেই এই অনৈতিক এবং অত্যন্ত জঘন্য রাজনীতির বিরোধিতা করতে। এত নগ্ন ভাবে তৃণমূল যখন বিরোধীদের ভাঙাচ্ছে তখন কেন রাজ্যের রাজপথ উত্তপ্ত হচ্ছে না? তাহলে কি বুঝতে হবে যে সমস্ত আঁতেল সমাজের রন্ধে রন্ধে আজ শাসক দলের দালালি করার জীবাণু ছুটে চলেছে?

মানস ভূঁইয়ার তৃণমূলে ডিগবাজি দিয়ে ঢোকাটা যেমন কংগ্রেসী রাজনীতির চরম দেউলিয়াপনা দেখালো, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তর ভারতের রাজনীতির ঘোড়া কেনা বেচা দেখালো, ঠিক তেমনি এই তথাকথিত গণতন্ত্রের স্বরূপ জনগণের সামনে তুলে ধরলো। আরো একবার প্রকাশ্যে আসলো যে রাজনীতিকে ধান্দাবাজি হিসেবে গণ্য করে কি নির্লজ্জ্ব ভাবে সংসদীয় দলের নেতারা জনতাকে ধাপ্পা দেয়, জনতার রায় কে উল্টে দেয় একটু বেশি পয়সা রোজগারের আশায় বা একটা ক্যাবিনেট বার্থ পাওয়ার আশায়। আর এই ঘৃণ্য রাজনীতিকে আজ বদল করার যে সময় এসেছে তা আর চিৎকার করে বলতে হবে না। এবার সময় হয়েছে এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনতার পথে নামার ও এই ব্যবস্থা কে আমূল পরিবর্তন করার। এই লড়াইতে আপনি যোগ না দিলে কিন্তু আপনি মানসের পক্ষে থাকবেন।


এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে