সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল কে কেন বুড়ো আঙ্গুল দেখালেন কাশ্মীরের জনতা ?

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬ 0 Comments A+ a-


The future of Kashmir on the curfewed streets
কার্ফুর মধ্যে হেঁটে চলেছে কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ 

বহুদিন ধরে ভূস্বর্গে আগুন জ্বলছে। সমগ্র কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে রক্ত,  স্বজন হারানোর বিষাদ, আর স্বাধীনতার দাবি।কাশ্মীর জুড়ে যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ পথে নেমেছে, লাঠি-গুলি-ছররা বন্দুক কে তোয়াক্কা না করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে স্লোগান দিচ্ছে - ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ দূর হট - ঠিক সেই সময়ে ভারতের ব্রাক্ষণত্ববাদী শাসক শ্রেণীর শ্রেষ্ঠ দালাল হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিস্ট আরএসএস - বিজেপির নেতৃত্বে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল নিয়ে উত্তর প্রদেশের ক্ষত্রিয় জোতদার পুত্র রাজনাথ সিংহ হঠাৎ কাশ্মীর ভ্রমণে গেল। ইস্যু ছিল কাশ্মীরের জনগণের কথা শোনা। তা জনতা বাহাদুর তো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের রেখে যাওয়া কার্ফু আর দেশদ্রোহের আইনে হয় বাড়িতে না হয় জেলে বন্দি আর ভারতের থেকে আসা সংসদীয় প্রতিনিধিদলের লোকেদের সাথে দেখা করার কোনো ইচ্ছা যে কাশ্মীরের জনগণের নেই সে কথা বলতে তো আর "সমগ্র" রাজনৈতিক বিজ্ঞানে ডিগ্রির দরকার পড়ে না। তাই যখন দেখা গেল যে কৃষির সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আসা কিছু জোতদার আর বাগান মালিক ছাড়া রাজনাথের দরবারে কেউ আসেনি, তখন সরকার বাহাদুরের আক্কেল গুড়ুম হলো। এই না আসার সোজা মানে ছিল ভারতের সম্প্রাসারণবাদীদের সাথে কাশ্মীরের জনগণ কোনো আলোচনা করবেন না যতদিন না ভারত সরকার কাশ্মীর থেকে সেনা প্রত্যাহার না করছে, আফস্পা প্রত্যাহার না করছে, সাধারণ মানুষের হত্যাকারী সেনা ও আধা সেনার অফিসার ও সৈন্যদের শাস্তি না দিচ্ছে ও সর্বোপরি কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কে স্বীকার করে না নিচ্ছে।

গোটা দেশের কর্পোরেট মিডিয়া ও রাজনৈতিক মহলে গেল গেল রব পড়তেই রাজনাথের অনুমতি নিয়ে সিপিএম নেতা ইয়েচুরি, সিপিআই নেতা ডি রাজা, আর জেডিইউ নেতা শরদ যাদব কে সাথে রওনা দিলে কাশ্মীরের রাজধানী চষে এমন নেতাদের বের করতে যাঁরা এদের কথা শুনবে, ভারতের শাসক শ্রেণীর ফরমানে জি হুজুর বলবে।আশা ছিল যে হুরিয়াত কনফারেন্সের নেতৃত্ব অন্তত গায়ে বাম বাম গন্ধওয়ালা নেতাদের সাথে চায়ের কাপে আলোচনা আর তর্কের ঝড় তুলবে। হুরিয়াত কনফারেন্স একটি মধ্যপন্থী ও সুবিধাবাদী মঞ্চ যেখানে কাশ্মীরের আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবিতে রাজনীতি করা বিভিন্ন শাসক শ্রেণীর লোকেরা একজোট হয়ে শলা পরামর্শ করে আর সাংবাদিক সম্মেলন করে। এই দলের নেতারা ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের থালা চেটে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করে এবং কাশ্মীরের মানুষের মুক্তি নিয়ে এদের আসলে কোনো মাথাব্যথা নেই। এদের পাণ্ডা সৈয়দ গিলানি সাহেব আবার ভীষণ বিপ্লবী সেজে বসে থাকা কাশ্মীরের জ্যোতি বোস না হলেও বিনোদ মিশ্রের কিছু কম না। মুখে গরম বুলি, স্বাধীনতার দাবিতে আস্ফালন আর সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকারের নির্দেশ মেনে ভারত আর পাকিস্তান উভয়ের শাসক শ্রেণীর সাথে হাত মিলিয়ে কাশ্মীরের জাতীয় সংগ্রাম কে একটি পরিকল্পিত ও ব্যাপক গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পথ থেকে সরিয়ে উগ্র জঙ্গীবাদ ও ইসলামিক মৌলবাদের বিভ্রান্তিকর পথে আটকে রাখার পক্ষে ওকালতি করে এই হুরিয়াত কনফারেন্স। এদের তুলনা ভারতের ঔপনিবেশিক কালের লাল-বাল-পাল চক্রের থেকে বেশি কারুর সাথে করা চলে না। তবুও আজ জনগণের বিদ্রোহী মেজাজ ও ব্যাপক ক্ষোভের বহ্নিশিখা দেখে এই হুরিয়াত নেতারাও ভীত ও সন্ত্রস্ত। তাই বাড়ির দুয়ারে আসা ইয়েচুরি, রাজা, যাদবদের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়ে নিজের রাজনৈতিক পশ্চাৎদেশ রক্ষা করতে হচ্ছে গিলানির মতন দালালি করা নেতাদের। অন্যদিকে আরএসএস এর মুসলমান প্রতিবিম্ব এমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসি কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে জেলের মধ্যে বন্দি মীরওয়াইজ ওমর ফারুকের সাথে দেখা করে তাঁকে ভারত রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণীর উপদেশ আর বার্তা দিয়ে এসেছে। এই সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের আসল কাজ ছিল কাশ্মীরে ঘুরে সেনা ও আধা সেনার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট প্রদান করা ও কাশ্মীরি জনতা কে ভয় দেখানো, কিন্তু হালে পানি না পেয়ে এই নেতারা রাজনাথের কোলে বসে বিদেশী একচেটিয়া পুঁজির মালিকানাধীন কর্পোরেট মিডিয়ার কাছে নালিশ ঠোকে কাশ্মীরের মানুষের বিরুদ্ধে। দিল্লির হত্যাকারী সরকারের প্রতিনিধিদের গোঁসা হয়েছে যে কাশ্মীরে শান্তির আলোচনা আর শান্তি জল ছেটাতে এসেও এদের কেউ ভালো চোখে দেখছে না।
 
রাজনাথ সিংহ আর ওর প্রতিনিধি দলের আসল উদ্দেশ্য বিফলে যাওয়ায় আর খুব ধুমধাম করে হওয়া কাশ্মীর যাত্রার ফানুস ফেটে যাওয়ায় বিদেশী কর্পোরেট মিডিয়ার কাছে শেয়ালের মতন চিৎকার করে সমস্ত নেতারা যখন গলা ফাটাচ্ছিল কাশ্মীরের জনগণ কিন্তু ঠিক সেই সময়ে একটা নতুন রাজনীতির আভাস দিচ্ছিলেন। প্রায় ২৬ বছর আগে যখন কাশ্মীরের বহু ছেলে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, অনেকে আবার পাকিস্তানের কাছে ট্রেনিং নিতে গেছিল, সেই সময়ে অনেক প্রবীণরা তবুও আশা রেখেছিলেন যে আলোচনার মধ্যে দিয়ে কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবি পেশ করা দরকার। ভারতের সেনা ও আধা সামরিক বাহিনীর দ্বারা গণ হত্যা, গণ ধর্ষণ, লুট আর গ্রামে আগুন লাগানোর মতন ঘটনাগুলো সমগ্র নব্বই এর দশক জুড়ে উত্তাল করে রেখেছিল কাশ্মীরের জমিকে। ব্যাপক হারে যে জনতা স্বাধীনতার দাবিতে, ন্যূনতম মানব অধিকারের জন্যে লড়তে আসেন, তাঁরা কাশ্মীরের নানা সংগঠনের পরস্পর বিরোধী ও দিশাহীন নীতির দরুণ অস্থির হয়ে ওঠেন। পাকিস্তানের চরমপন্থী জঙ্গীদের দাপটে আর কাশ্মীরের মধ্যে উগ্রপন্থার দিশাহীনতায় বহু মানুষের মনে হয়েছিল যে আলোচনার পথই শ্রেষ্ঠ পথ। কিন্তু ২০০৩ সাল থেকে বহু প্রচেষ্টা করেও কাশ্মীরের জনতা নয়া দিল্লি কে নিজের স্বাধীন হওয়ার আকঙ্খা বোঝাতে পারেননি। যতবার চেষ্টা হয়েছে ততবার গুলি আর ছররা তেড়ে এসেছে, বিদ্ধ করেছে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা কে। স্বাধীনতার দাবিতে নয়, বরং দুর্নীতির বিরোধিতা করে, সাধারণ গণ আন্দোলনে সামিল হওয়া জনতাকে, লোডশেডিং আর নিত্য জীবনের বিভিন্ন সমস্যার বিরুদ্ধে পথে নামা মানুষকে গুলি মেরে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল ২০০৮, ২০১০ সালে, তা জনগণের সামনে স্পষ্ট করে যে ভারতের সরকার চিরকাল ঔপনিবেশিক জনতার উপর চরম অত্যাচার করবে। নয়া দিল্লির পুরানো দালাল আব্দুল্লাহ পরিবারের উপর তিতি বিরক্ত হয়ে কাশ্মীরের জনগণ চেয়েছিলেন পরিবর্তন আর তাই ২০১৪ সালের নির্বাচন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বয়কট করলেও কাশ্মীরে  ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি বা পিডিপি। কিন্তু কাশ্মীরের মানুষের মুখ্য ধারার মুখপত্র হিসেবে বুক বাজানো পিডিপি শুধু রাজ্যের মসনদে বসার তাগিদে হিন্দুত্ববাদের ধবজ্জা তুলে কাশ্মীরের উপর ভারতের ব্রাহ্মণত্ববাদী শাসক শ্রেণীর শাসনকে সুদৃঢ় করতে চাওয়া বিজেপির হাত মেলানোয় কাশ্মীরের জনতার সামনে বেইমান হিসেবে চিহ্নিত হয়। সাথে সাথে কাশ্মীরে হিন্দুত্ববাদের প্রচার তীব্র করতে পিডিপির গোপন সমর্থন, বিজেপি কে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ দেওয়া, আরএসএস কে কাশ্মীর
           

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে